alt

অর্থ-বাণিজ্য

ঢাকা চেম্বার এর আয়োজনে ‘টেকসই নদী খনন: চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকার’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শনিবার, ৩১ জুলাই ২০২১

অর্থনীতিতে নদীপথের অবদান বাড়ানোর লক্ষ্যে নদীপথের অভিগম্যতা বৃদ্ধি ও টেকসই নদী খনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ, জাতীয় বাজেটে এখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, ড্রেজিং কার্যক্রমে ব্যবহৃত ক্যাপিটাল মেশিনারী আমদানিতে আমদানি শুল্ক, ভ্যাট ও অগ্রীম কর হ্রাসকরণ, নদী খনন ও ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন কার্যক্রমকে সরকারের ফাষ্ট-ট্রাক’র আওতায় অর্ন্তভূক্তিকরণ, মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষনে আর্থিক প্রণোদনা ও নীতি সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে ডিসিসিআই। ৩১ জুলাই ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘টেকসই নদী খনন: চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকার’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এ আহ্বান জানানো হয়।

ওয়েবিনারে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। এফবিসিসিআই’র প্রাক্তন সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন), এমপি এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার উক্ত ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, নদীপথে সাশ্রয়ীমূল্যে পণ্য পরিবহনের সুবিধা থাকায় সুপ্রাচীন কাল থেকেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনায় নদীপথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে, তবে ক্রমাগত পলি জমে নদীগুলোর গভীরতা হ্রাস পাওয়া সহ বেশকিছু কারণে নদীপথ সংকীর্ণ হওয়ার কারণে আমাদের অর্থনীতি সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে বেগবান করতে নদী পথে অভিগম্যতা বাড়তে টেকসই নদী খনন ও ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মত প্রকাশ করেন, ডিসিসিআই সভাপতি। তিনি জানান, অতীতে বর্ষা মৌসুমে আমাদের নদীপথের দৈঘ্য ২৪,০০০ বর্গমাইল হলেও, বর্তমানে তা ৬,০০০ বর্গমাইলে নেমে এসেছে এবং শুকনো মৌসুমে এটি ৩,৬০০ বর্গমাইলে গিয়ে পৌঁছায়। তিনি বলেন, সরকার দেশের আভ্যন্তরীন নদীপথের প্রায় ১০,০০০ কিলোমিটার ক্যপিটাল ড্রেজিং-এর মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী করার কার্যক্রম গ্রহণ করলেও তা থেকে আশানুরূপ সুফল পাওয়া যায়নি। তিনি উল্লেখ করেন, নদী খনন প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করার ক্ষেত্রে যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন, নদী শাসন এবং নদী তীরবর্তী এলাকার ব্যবহার প্রভৃতি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিসিসিআই সভাপতি দেশে একটি টেকসই নদী খনন কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে জাতীয় বাজেটে এখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, ড্রেজিং কার্যক্রমে ব্যবহৃত ক্যাপিটাল মেশিনারী আমদানিতে আমদানি শুল্ক, ভ্যাট ও অগ্রীম কর হ্রাসকরণ এবং এ ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রমকে সরকারের ফাষ্ট-ট্রাক’র আওতায় নিয়ে এসে প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করার প্রস্তাব করেন। সেই সাথে এখাতে বেসরকারীখাতের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে আর্থিক প্রণোদনা ও নীতি সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানান ঢাকা চেম্বারের সভাপতি।

প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সারাদেশে নদীরগুলোর নব্যতা ফিরিয়ে আনতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে এবং এলক্ষ্যে নদী ব্যবস্থাপনার প্রতি বেশি জোরারোপের পাশাপাশি বর্তমান সরকার আরো ৩৫টি ড্রেজার সংগ্রহে কাজ করে যাচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, সারাদেশে নদী খননে ড্রেজার ব্যবহার দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়ায় অনেকাংশে স্বচ্ছতা আনায়ন করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, ইতোমধ্যে মংলা বন্দরের স্বক্ষমতা চট্টগ্রাম বন্দরের ন্যায় উন্নীত করা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎখাতের সাফল্যকে উদাহরণ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে, দেশের নদ-নদী খনন ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে সরকার যুগোপযোগী ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করছে।

বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে মোঃ শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন), এমপি বলেন, এ কাজে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ড্রেজিং এর সাথে সম্পৃক্ত সরকারের সকল সংস্থার মধ্যকার সমন্বয় বাড়ানো আবশ্যক। তিনি বলেন, ড্রেজিং মেশিনারীজ আমদানিতে সম্প্রতি সরকার প্রবর্তিত বিভিন্ন শুল্ক আরোপ বেসরকারীখাতকে নিরুৎসাহিত করেছে এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এগুলো হ্রাসকরণের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসবে, সেই সাথে ড্রেজিং কাজের জন্য দরপত্র আহ্বানে ডিপিএম ব্যবস্থা ব্যবহারের উপর তিনি জোরারোপ করেন। এছাড়াও তিনি দেশীয় ও বিদেশী উদ্যোক্তাদের জন্য সমান সুযোগ তৈরির আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে কবির বিন আনোয়ার বলেন, যথাযথ নদী খনন কার্যক্রম বাস্তবায়নে মানব সম্পদ ও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সমন্বিত নীতিমালা আবশ্যক এবং এলক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সারাদেশে নদী খনন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আমাদের ৫০০টি ড্রেজারের প্রয়োজন হলেও সর্বমোট রয়েছে ১৫৬টি, এমন বাস্তবতায় সরকারের পাশাপাশি দেশের বেসরকারীখাতকে এখাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি জানান, সারাদেশে ছোট-বড় মিলিয়ে অসংখ্য নদী রয়েছে এবং গ্রামীণ এলাকার নদীপথ, পুকুর ও হাওর-বাউর উন্নয়নে সরকার ইতোমধ্যে নানামুখী প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তিনি আরো বলেন, বর্ষা মৌসুম ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের লক্ষ্যে সারাদেশে ৬৯টি বড় পুকুর পুনঃখনেন কাজ করা হচ্ছে। সিনিয়র সচিব নদী খননের ক্ষেত্রে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টির প্রতি আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান এবং একই সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ-এর মধ্যকার সমন্বয় বাড়নোর উপর জোরারোপ করেন। বিশেষকরে ক্যাপিটাল ড্রেজিং কার্যক্রমে আরো বেশি হারে উদ্যোগি হওয়ার জন্য তিনি বেসরকারীখাতের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি জানান, দেশে একটি হাইড্রেজিক্যাল ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট’ স্থাপনের লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত। তিনি জানান, ড্রেজিং প্রধানত মেইট্যানেন্স ও ক্যাপিটাল দুই ধরনের হয়ে থাকে এবং এক্ষেত্রে নদীর চ্যানেল ব্যবস্থাপনা ও গভীরতা বৃদ্ধি, বন্দর উন্নয়ন, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহার প্রভৃতি বিষয়সমূহ অতীব জরুরী। তিনি জানান, টেকসই ড্রেজিং-এর ক্ষেত্রে সবসময়ই অর্থনীতি, সমাজ ও পরিবেশকে প্রধান্য দেওয়া হয় এবং এ বিষয়ে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। তিনি আরো বলেন, ড্রেজিং’র ক্ষেত্রে টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে, আমদের অর্থনীতি আরো উপকৃত হবে। বাংলাদেশের নদী ও খাল সমূহের ড্রেজিং’র জন্য একটি মাষ্টার প্ল্যান প্রণয়ন এবং এজন্য বেসরকারীখাতকে সম্পৃক্ত করা আবশ্যক বলে, তিনি মত প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন, ড্রেজিং কার্যক্রম সফল করার লক্ষ্যে দক্ষ মানবসম্পদ, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যার ব্যবহার এবং ড্রেজিং এর কারণে পরিবেশে কি ধরনের প্রভাব পড়বে তা নিরূপন করার বিষয়ে আমাদের আরো মনোযোগী হতে হবে।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)’র চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক, পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড’র সহ-সভাপতি রবার্ট হেনেসি, ডিবিএল গ্রুপ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জাব্বার এবং ইন্সটিটিউট অফ ওয়াটার মডেলিং-এর নির্বাহী পরিচালক আবু সালেহ খান অংশগ্রহণ করেন।

মুক্ত আলোচনায় ডিসিসিআই পরিচালক খায়রুল মজিদ মাহমুদ এবং স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ইঞ্জিঃ মোঃ নূরুল আকতার অংশগ্রহণ করেন। ডিসিসিআই’র ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এন কে এ মবিন অনুষ্ঠানে

ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

ছবি

রাজধানীতে ঈদের পরও চড়া সবজির বাজার

ছবি

সয়াবিন তেলের লিটার প্রতি দাম বাড়ল ৪ টাকা

ছবি

সূচকের পতনে পুঁজিবাজারে চলছে লেনদেন

ছবি

ব্যাংক এশিয়া কিনবে পাকিস্তানি ব্যাংক আলফালাহর বাংলাদেশ অংশ

ছবি

এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫.৭%: আইএমএফ

ছবি

একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় থাকা ব্যাংক চাইলে সরে যেতে পারবে, তবে শর্তসাপেক্ষে : কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ছবি

পণ্যের দাম ঠিক রাখতে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে : প্রতিমন্ত্রী

ছবি

একীভূত ব্যাংক : পাঁচটির বাইরে আপাতত আর না

ছবি

ঈদে মানুষের মাঝে স্বস্তি দেখেছি : বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

ছবি

বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বিশ্ব ব্যাংকের চেয়ে বেশি দেখছে এডিবি

ছবি

মার্চে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯.৮১ শতাংশ

ছবি

ঈদের আগে পাঁচ দিনে দেশে এলো ৪৬ কোটি ডলার

ছবি

শিল্পাঞ্চলের বাইরের কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুৎ আর নয়, পাবেনা ঋণও

এবার ঈদে পর্যটন খাত চাঙ্গা হওয়ার আশা

ছবি

জাতীয় লজিস্টিক নীতির খসড়ার অনুমোদন

সোনালীতে একীভূত হচ্ছে বিডিবিএল

ছবি

সোনার দাম আবার বাড়লো, ভরি ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৭৩ টাকা

ছবি

সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় বেসিক ব্যাংক

ছবি

বিজিএমইএর দায়িত্ব নিলেন এস এম মান্নান কচি

ছবি

বাজার মূলধন কিছুটা বাড়লো, তবু লাখ কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি

ছবি

নতুন বিদেশী ঋণ নিয়ে পুরনো ঋণ শোধ করছে সরকার : সিপিডি

ছবি

ব্যাংক একীভুতকরনে নীতিমালা জারি

রাষ্ট্রীয় চার ব্যাংক একীভূত হয়ে হবে দুই

ছবি

এবার একীভূত হচ্ছে ‘সোনালীর সাথে বিডিবিএল’ ও ‘কৃষির সাথে রাকাব’

ছবি

শেয়ার প্রতি ১ পয়সা লভ্যাংশ দেবে একমি পেস্টিসাইড

এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানী লিমিটেডের কর্মীদের জন্য মেটলাইফের বীমা সুরক্ষা

গাজীপুরে এক বছরে ট্রাফিক পুলিশের ৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয়

ছবি

প্রবৃদ্ধি কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হবে: বিশ্বব্যাংক

ছবি

সিএসআর ফান্ডের আওতায় কৃষকদের আর্থিক সহযোগিতা করল সাউথইস্ট ব্যাংক

ছবি

ডেমরায় বাস গ্যারেজে আগুন

ছবি

নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও সেইহারে বাড়েনি তামাকপণ্যের দাম

ছবি

প্রকাশ্যে ঘুষ নেওয়া সেই ভূমি অফিস কর্মী সাময়িক বরখাস্ত

ব্যাংক ঋণের সুদহার আরও বাড়লো

ছবি

বেক্সিমকোর ২ হাজার ৬২৫ কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন দিলো বিএসইসি

শ্রমিকের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে কাজ করব : শ্রম প্রতিমন্ত্রী

ছবি

ঈদে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট বাড়াল বিমান

tab

অর্থ-বাণিজ্য

ঢাকা চেম্বার এর আয়োজনে ‘টেকসই নদী খনন: চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকার’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শনিবার, ৩১ জুলাই ২০২১

অর্থনীতিতে নদীপথের অবদান বাড়ানোর লক্ষ্যে নদীপথের অভিগম্যতা বৃদ্ধি ও টেকসই নদী খনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ, জাতীয় বাজেটে এখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, ড্রেজিং কার্যক্রমে ব্যবহৃত ক্যাপিটাল মেশিনারী আমদানিতে আমদানি শুল্ক, ভ্যাট ও অগ্রীম কর হ্রাসকরণ, নদী খনন ও ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন কার্যক্রমকে সরকারের ফাষ্ট-ট্রাক’র আওতায় অর্ন্তভূক্তিকরণ, মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষনে আর্থিক প্রণোদনা ও নীতি সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে ডিসিসিআই। ৩১ জুলাই ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘টেকসই নদী খনন: চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকার’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এ আহ্বান জানানো হয়।

ওয়েবিনারে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। এফবিসিসিআই’র প্রাক্তন সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন), এমপি এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার উক্ত ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, নদীপথে সাশ্রয়ীমূল্যে পণ্য পরিবহনের সুবিধা থাকায় সুপ্রাচীন কাল থেকেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনায় নদীপথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে, তবে ক্রমাগত পলি জমে নদীগুলোর গভীরতা হ্রাস পাওয়া সহ বেশকিছু কারণে নদীপথ সংকীর্ণ হওয়ার কারণে আমাদের অর্থনীতি সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে বেগবান করতে নদী পথে অভিগম্যতা বাড়তে টেকসই নদী খনন ও ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মত প্রকাশ করেন, ডিসিসিআই সভাপতি। তিনি জানান, অতীতে বর্ষা মৌসুমে আমাদের নদীপথের দৈঘ্য ২৪,০০০ বর্গমাইল হলেও, বর্তমানে তা ৬,০০০ বর্গমাইলে নেমে এসেছে এবং শুকনো মৌসুমে এটি ৩,৬০০ বর্গমাইলে গিয়ে পৌঁছায়। তিনি বলেন, সরকার দেশের আভ্যন্তরীন নদীপথের প্রায় ১০,০০০ কিলোমিটার ক্যপিটাল ড্রেজিং-এর মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী করার কার্যক্রম গ্রহণ করলেও তা থেকে আশানুরূপ সুফল পাওয়া যায়নি। তিনি উল্লেখ করেন, নদী খনন প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করার ক্ষেত্রে যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন, নদী শাসন এবং নদী তীরবর্তী এলাকার ব্যবহার প্রভৃতি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিসিসিআই সভাপতি দেশে একটি টেকসই নদী খনন কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে জাতীয় বাজেটে এখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, ড্রেজিং কার্যক্রমে ব্যবহৃত ক্যাপিটাল মেশিনারী আমদানিতে আমদানি শুল্ক, ভ্যাট ও অগ্রীম কর হ্রাসকরণ এবং এ ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রমকে সরকারের ফাষ্ট-ট্রাক’র আওতায় নিয়ে এসে প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করার প্রস্তাব করেন। সেই সাথে এখাতে বেসরকারীখাতের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে আর্থিক প্রণোদনা ও নীতি সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানান ঢাকা চেম্বারের সভাপতি।

প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সারাদেশে নদীরগুলোর নব্যতা ফিরিয়ে আনতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে এবং এলক্ষ্যে নদী ব্যবস্থাপনার প্রতি বেশি জোরারোপের পাশাপাশি বর্তমান সরকার আরো ৩৫টি ড্রেজার সংগ্রহে কাজ করে যাচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, সারাদেশে নদী খননে ড্রেজার ব্যবহার দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়ায় অনেকাংশে স্বচ্ছতা আনায়ন করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, ইতোমধ্যে মংলা বন্দরের স্বক্ষমতা চট্টগ্রাম বন্দরের ন্যায় উন্নীত করা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎখাতের সাফল্যকে উদাহরণ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে, দেশের নদ-নদী খনন ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে সরকার যুগোপযোগী ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করছে।

বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে মোঃ শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন), এমপি বলেন, এ কাজে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ড্রেজিং এর সাথে সম্পৃক্ত সরকারের সকল সংস্থার মধ্যকার সমন্বয় বাড়ানো আবশ্যক। তিনি বলেন, ড্রেজিং মেশিনারীজ আমদানিতে সম্প্রতি সরকার প্রবর্তিত বিভিন্ন শুল্ক আরোপ বেসরকারীখাতকে নিরুৎসাহিত করেছে এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এগুলো হ্রাসকরণের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসবে, সেই সাথে ড্রেজিং কাজের জন্য দরপত্র আহ্বানে ডিপিএম ব্যবস্থা ব্যবহারের উপর তিনি জোরারোপ করেন। এছাড়াও তিনি দেশীয় ও বিদেশী উদ্যোক্তাদের জন্য সমান সুযোগ তৈরির আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে কবির বিন আনোয়ার বলেন, যথাযথ নদী খনন কার্যক্রম বাস্তবায়নে মানব সম্পদ ও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সমন্বিত নীতিমালা আবশ্যক এবং এলক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সারাদেশে নদী খনন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আমাদের ৫০০টি ড্রেজারের প্রয়োজন হলেও সর্বমোট রয়েছে ১৫৬টি, এমন বাস্তবতায় সরকারের পাশাপাশি দেশের বেসরকারীখাতকে এখাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি জানান, সারাদেশে ছোট-বড় মিলিয়ে অসংখ্য নদী রয়েছে এবং গ্রামীণ এলাকার নদীপথ, পুকুর ও হাওর-বাউর উন্নয়নে সরকার ইতোমধ্যে নানামুখী প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তিনি আরো বলেন, বর্ষা মৌসুম ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের লক্ষ্যে সারাদেশে ৬৯টি বড় পুকুর পুনঃখনেন কাজ করা হচ্ছে। সিনিয়র সচিব নদী খননের ক্ষেত্রে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টির প্রতি আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান এবং একই সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ-এর মধ্যকার সমন্বয় বাড়নোর উপর জোরারোপ করেন। বিশেষকরে ক্যাপিটাল ড্রেজিং কার্যক্রমে আরো বেশি হারে উদ্যোগি হওয়ার জন্য তিনি বেসরকারীখাতের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি জানান, দেশে একটি হাইড্রেজিক্যাল ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট’ স্থাপনের লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত। তিনি জানান, ড্রেজিং প্রধানত মেইট্যানেন্স ও ক্যাপিটাল দুই ধরনের হয়ে থাকে এবং এক্ষেত্রে নদীর চ্যানেল ব্যবস্থাপনা ও গভীরতা বৃদ্ধি, বন্দর উন্নয়ন, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহার প্রভৃতি বিষয়সমূহ অতীব জরুরী। তিনি জানান, টেকসই ড্রেজিং-এর ক্ষেত্রে সবসময়ই অর্থনীতি, সমাজ ও পরিবেশকে প্রধান্য দেওয়া হয় এবং এ বিষয়ে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। তিনি আরো বলেন, ড্রেজিং’র ক্ষেত্রে টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে, আমদের অর্থনীতি আরো উপকৃত হবে। বাংলাদেশের নদী ও খাল সমূহের ড্রেজিং’র জন্য একটি মাষ্টার প্ল্যান প্রণয়ন এবং এজন্য বেসরকারীখাতকে সম্পৃক্ত করা আবশ্যক বলে, তিনি মত প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন, ড্রেজিং কার্যক্রম সফল করার লক্ষ্যে দক্ষ মানবসম্পদ, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যার ব্যবহার এবং ড্রেজিং এর কারণে পরিবেশে কি ধরনের প্রভাব পড়বে তা নিরূপন করার বিষয়ে আমাদের আরো মনোযোগী হতে হবে।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)’র চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক, পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড’র সহ-সভাপতি রবার্ট হেনেসি, ডিবিএল গ্রুপ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জাব্বার এবং ইন্সটিটিউট অফ ওয়াটার মডেলিং-এর নির্বাহী পরিচালক আবু সালেহ খান অংশগ্রহণ করেন।

মুক্ত আলোচনায় ডিসিসিআই পরিচালক খায়রুল মজিদ মাহমুদ এবং স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ইঞ্জিঃ মোঃ নূরুল আকতার অংশগ্রহণ করেন। ডিসিসিআই’র ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এন কে এ মবিন অনুষ্ঠানে

ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

back to top