অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মাধ্যমিক স্তরের বাংলা, ইংরেজি ও গণিত ২০ জানুয়ারির মধ্যে সারাদেশে পৌছে দেয়ার ‘সর্বাত্ত্বক’ চেষ্টা করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে দ্বিতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে দশম শ্রেণীর সব বই চলতি মাসের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে পাঠানোর চেষ্টা করছে সংস্থাটি। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই ছাপা শেষ হবে।
যদিও ছাপাখানা মালিকরা বলেছেন, দেশে কাগজের ‘সঙ্কট’ প্রকট। এনসিটিবির দরপত্রের শর্ত ‘স্পেসিফিকেশন’ অনুযায়ী নিজেদের চাহিদার অর্ধেক কাগজও পাচ্ছেন না। কাগজ সঙ্কটে প্রায় ছাপাখানা ‘বন্ধ’ রাখতে হচ্ছে।
এনসিটিবি থেকে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় ২০ শতাংশের কম বই সরবরাহ হয়েছে বা সরবরাহের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সব শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা সব বই ছাড়াই ২০২৫ শিক্ষাবর্ষ শুরু করেছে।
২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত চার কোটি ৩৪ লাখ তিন হাজার ২৮৩ জন শিক্ষার্থী ধরা হয়েছে। এই শিক্ষার্থীদের জন্য মোট ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ কপি বই ছাপছে সরকার। এ ছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সাড়ে আট হাজারের বেশি ব্রেইল বই এবং শিক্ষকদের জন্য ছাপা প্রায় ৪১ লাখ সহায়িকা বই ছাপা হচ্ছে।
এ বিষয়ে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বৃহস্পতিবার সংবাদকে বলেছেন, তারা বেশি দাম দিয়েও ‘স্পেসিফিকেশন’ অনুযায়ী কাগজ কিনতে পাচ্ছেন না। ২০ বা ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই ছাপা শেষ করার ‘সম্ভাবনা কম’। কাগজ উৎপাদনকারী কারখানাগুলি ‘রেশনিং’ করে ছাপাখানা গুলিকে কাগজ সরবরাহ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার নিজের প্রতিদিন দরকার ৪০ টন; কিন্তু আমাদের দিচ্ছে ১০ টন, ৯ টন, ২০ টন করে।’
এতে প্রায় মিল বন্ধ রাখতে হচ্ছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য ছাপাখানার মালিকরাও আমাদের এই সঙ্কটের কথা জানাচ্ছেন।’
ছাপাখানার মালিকদের দাবি, দেশে ৫৮টি কারখানায় কাগজ উৎপাদন হয়। এক বছরে সারাদেশে মোট চার লাখ মেট্রিক টন কাগজের চাহিদা থাকে। এসব কাগজের সিংহ ভাগই প্রয়োজন হয় বছরের শেষের দিকে।
এবার এনসিটিবির বই ছাপাতে মোট এক লাখ ২৭ হাজার টন কাগজের প্রয়োজন হচ্ছে। নোট-গাইড বই ছাপাতে লাগছে এক লাখ ৪০ হাজার টন। এছাড়া খোলা বাজারে বিক্রি হওয়া নানা রকম খাতার জন্য প্রায় ৪০ হাজার টন কাগজের প্রয়োজন হয়। আর সারা বছরে আরও সোয়া লাখ টন কাগজের প্রয়োজন হয় বলে মুদ্রুণ শিল্প সমিতির নেতা জানান।
মাত্র ৫/৬টি মিল এনসিটিবির ‘স্পেসিফিকেশন’র কাগজ উৎপাদন করে দাবি করে তোফায়েল খান বলেন, ‘এনসিটিবির কাগজ উৎপাদন করতে পাল্প (কাগজ তৈরির মন্ড) দরকার, যা আমদানি করতে হয়। এবার বই ছাপা শুরুর সময় পাল্প দিয়ে তৈরি এক টন কাগজের দাম ছিল এক লাখ ৭/৮ হাজার টাকা। বাড়তে বাড়তে এক টন কাগজের দাম এখন এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা হয়েছে। এরপরও ব্যবসায়ীরা চেষ্টা করছেন যথাসময়ে বই ছাপা শেষ করতে।’
এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একেএম রিয়াজুল হাসান সংবাদকে বলেছেন, ‘ছাপাখানার মালিকরা খুব পিচ্চিল লোক। তারা কম দামে কাগজ খুঁজছে। বাজারে কাগজের কোনো সঙ্কট নেই।’
ছাপাখানার ‘অপকৌশলের’ কাছে নতিস্বীকার না করার কারণে বই ছাপা কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এনসিটিবি বইয়ের গুণগত মানের দিকে নজর দিয়েছে। মানে ‘আপোষ’ করছে না; সেটি করলে ডিসেম্বরের মধ্যেই বই পাওয়া যেত বলে জানান এনসিটিবি চেয়ারম্যান।
এনসিটিবির হিসাব অনুযায়ী- বাংলা, ইংরেজি ও গণিত তিনটি বই- ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর প্রায় সোয়া দুই কোটি শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় সাত কোটি বই প্রয়োজন। এসব বইয়ের মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ছাপা হয়েছে প্রায় তিন কোটি বই। সেই হিসেবে এই স্তরের সব শিক্ষার্থী তিনটি করেও বই পাচ্ছে না।
রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের তিন শাখায় (মতিঝিল, মুগদা ও বনশ্রী) প্রায় ৩২ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীই নতুন বই হাতে পায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিষ্ঠানটির দু’জন শিক্ষক জানিয়েছেন, মতিঝিল শাখায় মাধ্যমিকের কিছু বই পাঠানো হয়েছে। বাকি দুই শাখায় কোনো বই পৌছেনি। ১ জানুয়ারি বনশ্রী শাখার শিক্ষার্থীদের বইয়ের চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে এনসিটিবির কাছে।
বনশ্রী শাখার একজন শিক্ষক জানান, ক্লাশ শুরু হলেও বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুব কম।
এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে তড়িগড়ি করে যে কারিকুলাম (শিক্ষাক্রম) বাস্তবায়ন শুরু করেছিল; অন্তর্বর্তী সরকার তা বাতিল করে পরিমার্জনসহ বই তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেজন্য নতুন দরপত্র আহ্বান করতে হয়েছে; বইয়ের উৎপাদন কাজ তদারকির জন্য ইন্সপেকশন এজেন্ট নিয়োগেও দেরি হয়েছে; শর্ত অনুযায়ী কাগজের অভাব ও কাগজের ‘বাস্টিং’ না মেলাসহ নানা কারণে বই ছাপার কাজ পিছিয়ে গেছে।
এবার মোট বইয়ের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকের দুই কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৯ শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হচ্ছে ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫৫টি বই। এর মধ্যে গত সোমবার পর্যন্ত মোট চার কোটি ৫১ লাখ ৮৮ হাজার ৫০০ কপি বইয়ের ছাপা শেষ হয়েছে এনসিটিবির দাবি। সেই হিসেবে প্রাথমিক স্তরের মোট বইয়ের প্রায় ৫৫ শতাংশ বই সম্পন্ন হয়েছে।
২০২৫ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিকের ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর দুই কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৪ শিক্ষার্থীর জন্য ৩০ কোটি ৯৬ লাখ ১২ হাজার ৮৪৭ বই ছাপার কথা রয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিন কোটি ৮২ লাখের মতো বই ছাপা শেষ হয়েছে। এটি মাধ্যমিকের মোট বইয়ের ১০ শতাংশের কম।
এ বিষয়ে এনসিটিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, বেশির ভাগ ছাপাখানার মালিকই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরের বই ছাপার কাজ পেয়েছেন। একই সময়ে দুই স্তরের বই ছাপার কাজ করছেন। সেজন্য তাদের ‘বেশি চাপ’ দিলেও কাজের গতি ‘খুব’ একটা বাড়ছে না।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, অনেক উপজেলায় এখন পর্যন্ত একটি বইও পৌছেনি। তারা চেষ্ট করছেন ২০ জানুয়ারির মধ্যে সব উপজেলায় মাধ্যমিকের অন্তত তিনটি করে হলেও বই পৌছে দেয়ার।
এনসিটিবি থেকে জানা গেছে, প্রাক-প্রাথমিকের মোট ৬২ লাখ ১৮ হাজার ৩৩৪ কপি বইয়ের মধ্যে ৩০ লাখ ৯৩ হাজার ৩২৯ কপি উপজেলা পর্যায়ে পৌছেছে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর ৭০টি লটের মোট তিন কোটি ৯ লাখ ৭৪ হাজার কপি বইয়ের মধ্যে প্রায় তিন কোটি বই উপজেলায় পৌছেছে। তবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় দুই লাখ বইয়ের শতভাগ উপজেলা সরবরাহ হয়েছে।
আর প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর ২৮টি লটের এক কোটি ২৮ লাখ ৯৩ হাজার ৪৬০ কপি বইয়ের মধ্যে ৪৮ লাখ তিন হাজার বই উপজেলায় সরবরাহ হয়েছে; যা মোট বইয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ।
এছাড়া চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর চার কোটি তিন লাখ ৬১ হাজার ৪০০ বইয়ের মধ্যে প্রায় ৭১ লাখ বই ছাপা শেষ হয়েছে। এই দুই শ্রেণীর প্রায় তিন কোটি বই ছাপা বাকি।
পাঠ্যবইয়ের সফট কপির ওপর জোর
সব পাঠ্যবইয়ের পূর্ণাঙ্গ সফট কপি (পিডিএফ) অনলাইনে পাওয়ার তথ্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) জানানো হয়েছে। পাশাপাশি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলার সব উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাকে তা জানাতে বলা হয়েছে। সব বই ডাউনলোডের লিঙ্ক সংযুক্ত করে সব ডিসিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই বিতরণ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘৩০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই বিতরণ সম্পন্ন হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার সুবিধার্থে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের সব পাঠ্যপুস্তকের সফট কপি এনসিটিবি ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে এবং সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন প্রকাশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সহজেই তাদের প্রয়োজনীয় রিসোর্সে এক্সেস এবং ওয়েবসাইট থেকে পাঠ্যপুস্তকসমূহ ডাউনলোড করতে পারবে।’
শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মাধ্যমিক স্তরের বাংলা, ইংরেজি ও গণিত ২০ জানুয়ারির মধ্যে সারাদেশে পৌছে দেয়ার ‘সর্বাত্ত্বক’ চেষ্টা করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে দ্বিতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে দশম শ্রেণীর সব বই চলতি মাসের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে পাঠানোর চেষ্টা করছে সংস্থাটি। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই ছাপা শেষ হবে।
যদিও ছাপাখানা মালিকরা বলেছেন, দেশে কাগজের ‘সঙ্কট’ প্রকট। এনসিটিবির দরপত্রের শর্ত ‘স্পেসিফিকেশন’ অনুযায়ী নিজেদের চাহিদার অর্ধেক কাগজও পাচ্ছেন না। কাগজ সঙ্কটে প্রায় ছাপাখানা ‘বন্ধ’ রাখতে হচ্ছে।
এনসিটিবি থেকে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় ২০ শতাংশের কম বই সরবরাহ হয়েছে বা সরবরাহের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সব শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা সব বই ছাড়াই ২০২৫ শিক্ষাবর্ষ শুরু করেছে।
২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত চার কোটি ৩৪ লাখ তিন হাজার ২৮৩ জন শিক্ষার্থী ধরা হয়েছে। এই শিক্ষার্থীদের জন্য মোট ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ কপি বই ছাপছে সরকার। এ ছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সাড়ে আট হাজারের বেশি ব্রেইল বই এবং শিক্ষকদের জন্য ছাপা প্রায় ৪১ লাখ সহায়িকা বই ছাপা হচ্ছে।
এ বিষয়ে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বৃহস্পতিবার সংবাদকে বলেছেন, তারা বেশি দাম দিয়েও ‘স্পেসিফিকেশন’ অনুযায়ী কাগজ কিনতে পাচ্ছেন না। ২০ বা ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই ছাপা শেষ করার ‘সম্ভাবনা কম’। কাগজ উৎপাদনকারী কারখানাগুলি ‘রেশনিং’ করে ছাপাখানা গুলিকে কাগজ সরবরাহ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার নিজের প্রতিদিন দরকার ৪০ টন; কিন্তু আমাদের দিচ্ছে ১০ টন, ৯ টন, ২০ টন করে।’
এতে প্রায় মিল বন্ধ রাখতে হচ্ছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য ছাপাখানার মালিকরাও আমাদের এই সঙ্কটের কথা জানাচ্ছেন।’
ছাপাখানার মালিকদের দাবি, দেশে ৫৮টি কারখানায় কাগজ উৎপাদন হয়। এক বছরে সারাদেশে মোট চার লাখ মেট্রিক টন কাগজের চাহিদা থাকে। এসব কাগজের সিংহ ভাগই প্রয়োজন হয় বছরের শেষের দিকে।
এবার এনসিটিবির বই ছাপাতে মোট এক লাখ ২৭ হাজার টন কাগজের প্রয়োজন হচ্ছে। নোট-গাইড বই ছাপাতে লাগছে এক লাখ ৪০ হাজার টন। এছাড়া খোলা বাজারে বিক্রি হওয়া নানা রকম খাতার জন্য প্রায় ৪০ হাজার টন কাগজের প্রয়োজন হয়। আর সারা বছরে আরও সোয়া লাখ টন কাগজের প্রয়োজন হয় বলে মুদ্রুণ শিল্প সমিতির নেতা জানান।
মাত্র ৫/৬টি মিল এনসিটিবির ‘স্পেসিফিকেশন’র কাগজ উৎপাদন করে দাবি করে তোফায়েল খান বলেন, ‘এনসিটিবির কাগজ উৎপাদন করতে পাল্প (কাগজ তৈরির মন্ড) দরকার, যা আমদানি করতে হয়। এবার বই ছাপা শুরুর সময় পাল্প দিয়ে তৈরি এক টন কাগজের দাম ছিল এক লাখ ৭/৮ হাজার টাকা। বাড়তে বাড়তে এক টন কাগজের দাম এখন এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা হয়েছে। এরপরও ব্যবসায়ীরা চেষ্টা করছেন যথাসময়ে বই ছাপা শেষ করতে।’
এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একেএম রিয়াজুল হাসান সংবাদকে বলেছেন, ‘ছাপাখানার মালিকরা খুব পিচ্চিল লোক। তারা কম দামে কাগজ খুঁজছে। বাজারে কাগজের কোনো সঙ্কট নেই।’
ছাপাখানার ‘অপকৌশলের’ কাছে নতিস্বীকার না করার কারণে বই ছাপা কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এনসিটিবি বইয়ের গুণগত মানের দিকে নজর দিয়েছে। মানে ‘আপোষ’ করছে না; সেটি করলে ডিসেম্বরের মধ্যেই বই পাওয়া যেত বলে জানান এনসিটিবি চেয়ারম্যান।
এনসিটিবির হিসাব অনুযায়ী- বাংলা, ইংরেজি ও গণিত তিনটি বই- ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর প্রায় সোয়া দুই কোটি শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় সাত কোটি বই প্রয়োজন। এসব বইয়ের মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ছাপা হয়েছে প্রায় তিন কোটি বই। সেই হিসেবে এই স্তরের সব শিক্ষার্থী তিনটি করেও বই পাচ্ছে না।
রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের তিন শাখায় (মতিঝিল, মুগদা ও বনশ্রী) প্রায় ৩২ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীই নতুন বই হাতে পায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিষ্ঠানটির দু’জন শিক্ষক জানিয়েছেন, মতিঝিল শাখায় মাধ্যমিকের কিছু বই পাঠানো হয়েছে। বাকি দুই শাখায় কোনো বই পৌছেনি। ১ জানুয়ারি বনশ্রী শাখার শিক্ষার্থীদের বইয়ের চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে এনসিটিবির কাছে।
বনশ্রী শাখার একজন শিক্ষক জানান, ক্লাশ শুরু হলেও বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুব কম।
এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে তড়িগড়ি করে যে কারিকুলাম (শিক্ষাক্রম) বাস্তবায়ন শুরু করেছিল; অন্তর্বর্তী সরকার তা বাতিল করে পরিমার্জনসহ বই তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেজন্য নতুন দরপত্র আহ্বান করতে হয়েছে; বইয়ের উৎপাদন কাজ তদারকির জন্য ইন্সপেকশন এজেন্ট নিয়োগেও দেরি হয়েছে; শর্ত অনুযায়ী কাগজের অভাব ও কাগজের ‘বাস্টিং’ না মেলাসহ নানা কারণে বই ছাপার কাজ পিছিয়ে গেছে।
এবার মোট বইয়ের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকের দুই কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৯ শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হচ্ছে ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫৫টি বই। এর মধ্যে গত সোমবার পর্যন্ত মোট চার কোটি ৫১ লাখ ৮৮ হাজার ৫০০ কপি বইয়ের ছাপা শেষ হয়েছে এনসিটিবির দাবি। সেই হিসেবে প্রাথমিক স্তরের মোট বইয়ের প্রায় ৫৫ শতাংশ বই সম্পন্ন হয়েছে।
২০২৫ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিকের ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর দুই কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৪ শিক্ষার্থীর জন্য ৩০ কোটি ৯৬ লাখ ১২ হাজার ৮৪৭ বই ছাপার কথা রয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিন কোটি ৮২ লাখের মতো বই ছাপা শেষ হয়েছে। এটি মাধ্যমিকের মোট বইয়ের ১০ শতাংশের কম।
এ বিষয়ে এনসিটিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, বেশির ভাগ ছাপাখানার মালিকই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরের বই ছাপার কাজ পেয়েছেন। একই সময়ে দুই স্তরের বই ছাপার কাজ করছেন। সেজন্য তাদের ‘বেশি চাপ’ দিলেও কাজের গতি ‘খুব’ একটা বাড়ছে না।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, অনেক উপজেলায় এখন পর্যন্ত একটি বইও পৌছেনি। তারা চেষ্ট করছেন ২০ জানুয়ারির মধ্যে সব উপজেলায় মাধ্যমিকের অন্তত তিনটি করে হলেও বই পৌছে দেয়ার।
এনসিটিবি থেকে জানা গেছে, প্রাক-প্রাথমিকের মোট ৬২ লাখ ১৮ হাজার ৩৩৪ কপি বইয়ের মধ্যে ৩০ লাখ ৯৩ হাজার ৩২৯ কপি উপজেলা পর্যায়ে পৌছেছে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর ৭০টি লটের মোট তিন কোটি ৯ লাখ ৭৪ হাজার কপি বইয়ের মধ্যে প্রায় তিন কোটি বই উপজেলায় পৌছেছে। তবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় দুই লাখ বইয়ের শতভাগ উপজেলা সরবরাহ হয়েছে।
আর প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর ২৮টি লটের এক কোটি ২৮ লাখ ৯৩ হাজার ৪৬০ কপি বইয়ের মধ্যে ৪৮ লাখ তিন হাজার বই উপজেলায় সরবরাহ হয়েছে; যা মোট বইয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ।
এছাড়া চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর চার কোটি তিন লাখ ৬১ হাজার ৪০০ বইয়ের মধ্যে প্রায় ৭১ লাখ বই ছাপা শেষ হয়েছে। এই দুই শ্রেণীর প্রায় তিন কোটি বই ছাপা বাকি।
পাঠ্যবইয়ের সফট কপির ওপর জোর
সব পাঠ্যবইয়ের পূর্ণাঙ্গ সফট কপি (পিডিএফ) অনলাইনে পাওয়ার তথ্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) জানানো হয়েছে। পাশাপাশি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলার সব উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাকে তা জানাতে বলা হয়েছে। সব বই ডাউনলোডের লিঙ্ক সংযুক্ত করে সব ডিসিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই বিতরণ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘৩০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই বিতরণ সম্পন্ন হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার সুবিধার্থে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের সব পাঠ্যপুস্তকের সফট কপি এনসিটিবি ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে এবং সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন প্রকাশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সহজেই তাদের প্রয়োজনীয় রিসোর্সে এক্সেস এবং ওয়েবসাইট থেকে পাঠ্যপুস্তকসমূহ ডাউনলোড করতে পারবে।’