alt

শিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি: গুচ্ছে থাকতে ‘তৃতীয় অনুরোধ’ মন্ত্রণালয়ের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেরিয়ে যাওয়া এবং আরও কয়েকটির এমন উদ্যোগের মধ্যে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের আবার ‘অনুরোধ’ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সোমবার মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, “সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব উদ্যোগে পৃথকভাবে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা করছে।

“এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য বাড়তি আর্থিক ও মানসিক চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি জনমনে শিক্ষা প্রশাসনের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করবে।”

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় বেরিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মত ‘অনুরোধ’ জানাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের ‘সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়’ শাখার উপসচিব মো. শাহীনুর ইসলাম বলেন, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয়কে গুচ্ছ পদ্ধতির সুফল বিবেচনা করে এ পদ্ধতি বজায় রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আহ্বায়ক ছিলেন টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজীম আকন্দ।

তিনি বলেন, “নানা সংকটে গুচ্ছভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করা যাচ্ছে না। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এ প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে যেতে চাচ্ছে। তবে আশা করছি, সংকটগুলো কাটিয়ে দ্রুত গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।”

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি কমাতে ২০২০ সাল থেকে দেশের সরকারি সাধারণ, কৃষি, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়।

গত শিক্ষাবর্ষে ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় এই পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম চালায়। তবে নতুন (২০২৪-২৫) শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছের প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি।

এর মধ্যে গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, তারা এবার গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।

এমন প্রেক্ষাপটে গত ১ ডিসেম্বর গুচ্ছ পদ্ধতিতে থাকার অনুরোধ জানিয়ে উপাচার্যদের চিঠি দেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

চিঠিতে তিনি বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে থাকলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে।”

শিক্ষা উপদেষ্টার পর গত ১০ ডিসেম্বর গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের একই অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সেখানে বলা হয়, “বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।”

সোমবারের সবশেষ চিঠিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, “উচ্চশিক্ষার উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রম হিসেবে গুচ্ছ পদ্ধতি ইতোমধ্যে জনমনে আস্থা অর্জন করেছে। এই পদ্ধতিতে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথকভাবে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের যাতায়াত, আবাসন, এবং অন্যান্য খরচ বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে।

“গুচ্ছ পদ্ধতির মাধ্যমে একটি মানসম্মত প্রশ্নপত্রের ভিত্তিতে মেধাভিত্তিক ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি অভিভাবকগণ একাধিক ভর্তি পরীক্ষার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেয়েছেন।”

চিঠিতে বলা হয়, “এমন অবস্থায় উপাচার্যদের নেতৃত্বে তার বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।”

শিক্ষা উপদেষ্টা যেদিন (১ ডিসেম্বর) চিঠি পাঠান, সেদিনই ভর্তি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের প্রাথমিক আবেদন চলে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

গত ১৮ ডিসেম্বর ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। তারা আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অনলাইনে ভর্তিচ্ছুদের আবেদন করতে বলেছে।

গত ১৯ ডিসেম্বর ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তারা আবেদন নেবে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত।

আগের বারের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কমিটির প্রধান অধ্যাপক আনোয়ারুল আজীম বলেন, “তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে পত্রিকা মারফত জানতে পেরেছি। যেটি তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত, এটি গুচ্ছের সিদ্ধান্ত নয়।

“গত শনিবার আমরা একটি সভা করেছি। সেখানে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা বলছে। তবে এও বলেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় জোরালোভাবে বললে তারা এই প্রক্রিয়ায় থাকতে পারে।”

তবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, “গুচ্ছ পদ্ধতিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থাকছে না। নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তির সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে হয়ে গেছে।”

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, “গুচ্ছ পদ্ধতিতে থাকা না থাকা নিয়ে এখনও আমাদের একাডেমিক কাউন্সিল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় কিছু ভোগান্তি আছে।”

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান বলেন, আমাদের একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভার অধিকাংশ শিক্ষক গুচ্ছ থেকে বেরিয়া যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।

“এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জরুরি একাডেমিক কাউন্সিলের সভা আহ্বান করা হয়েছিল। তবে বিষয়টি পর্যালোচনা করতে সভাটি আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।”

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল বলেন, বেশিরভাগ শিক্ষক গুচ্ছ ভর্তি থেকে বেরিয়ে যেতে চান। তবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেয়নি।

ছবি

শিক্ষার্থীর ‘কটূক্তি’র অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাময়িক বহিষ্কার

ছবি

এইচএসসি পরীক্ষায় বসছে সাড়ে ১২ লাখ শিক্ষার্থী

ছবি

২৬ জুন শুরু এইচএসসি, কেন্দ্র এলাকায় চলাচলে ডিএমপির বিধিনিষেধ জারি

ছবি

রাতের ঘটনায় আসন বাতিল, শৃঙ্খলা কমিটিতে তদন্ত প্রতিবেদন জমার প্রস্তুতি

পরীক্ষার আগের সপ্তাহ পর্যন্ত ফরম পূরণের সুযোগ, জানাল শিক্ষা বোর্ড

ছবি

মহামারির আশঙ্কায় এইচএসসি কেন্দ্রে মাস্ক, স্যানিটাইজার ও ডেঙ্গু প্রতিরোধের নির্দেশ

পরীক্ষা পেছানোর পরিকল্পনা নেই, প্রস্তুত শিক্ষা বোর্ডগুলো

ছবি

ভিসি নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি, আবেদন শেষ ২৬ জুন

ছবি

আদালতের রায়ে এক যুগ পর চাকরিতে ফিরছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী

ছবি

‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ চালু না হওয়া পর্যন্ত ইউজিসির অধীনেই চলবে সাত কলেজ

ছবি

উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি, আন্দোলনে ছাত্রদলসহ শিক্ষার্থীরা

ছবি

শাহরিয়ার সাম্য হত্যার ঘটনায় ঢাবিতে অর্ধদিবস শ্রদ্ধা, নিরাপত্তা জোরদারে উদ্যোগ

ছবি

বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল স্থানান্তর ও রাজস্ব ফাঁকিতে দুদকের নজরে দুই প্রতিষ্ঠান

ছবি

কোরবানির ঈদ আর গ্রীষ্ম: লম্বা ছুটিতে যাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

ছবি

১৬ কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন, বাদ শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী নেতাদের নাম

ছবি

কুয়েটে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষকদের অনড় কর্মবিরতি, অনিশ্চয়তায় শিক্ষার্থীরা

ছবি

৬ বছর পর ইইডিতে উপপরিচালক পদায়ন

ছবি

শিক্ষার্থী-শিক্ষক উত্তেজনায় কুয়েটে অনিশ্চয়তায় একাডেমিক কার্যক্রম

ছবি

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে নিয়মিত কমিটি গঠন স্থগিত

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ২৪ মে

ছবি

মে মাসের মাঝামাঝিতে তারিখ ঘোষণার লক্ষ্যে ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ

ছবি

কক্সবাজারে পরীক্ষা দিচ্ছে সেই ১৩ শিক্ষার্থী

ছবি

ভিসি অপসারণ একমাত্র দাবি: কুয়েট শিক্ষার্থীদের এক দফা আন্দোলন

ছবি

কৃষি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ১২ এপ্রিল

ছবি

বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা, অংশ নেবে ১৯ লাখের বেশি শিক্ষার্থী

ছবি

১৩৫ কলেজে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ দিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়

ছবি

শিক্ষা সংস্কারে পদক্ষেপ নেই, বাজেট বাড়ানোর দাবি শিক্ষাবিদদের

ছবি

এসএসসি পরীক্ষার জন্য কোচিং সেন্টার বন্ধ ও কেন্দ্রের আশপাশে ১৪৪ ধারা

ছবি

ঢাবির ‘গ’ ইউনিটের ফল প্রকাশে দুই মাসের স্থগিতাদেশ

ছবি

পেছালো এসএসসির গণিত পরীক্ষা, নতুন সময়সূচি প্রকাশ

ছবি

ঢাবির সহিংসতা: ১২৮ জনের তালিকা চূড়ান্ত নয়, পুনঃতদন্তে কমিটি

ছবি

নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি’ অনুমোদিত

ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহিংসতা: ১২৮ জনের তালিকা প্রকাশ

ছবি

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলো তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা

ছবি

অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মৃত্যুতে ঢাবিতে রোববার ছুটি

ছবি

শাবিপ্রবির ভর্তি পরীক্ষায় আপাতত সব কোটা স্থগিত

tab

শিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি: গুচ্ছে থাকতে ‘তৃতীয় অনুরোধ’ মন্ত্রণালয়ের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেরিয়ে যাওয়া এবং আরও কয়েকটির এমন উদ্যোগের মধ্যে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের আবার ‘অনুরোধ’ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সোমবার মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, “সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব উদ্যোগে পৃথকভাবে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা করছে।

“এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য বাড়তি আর্থিক ও মানসিক চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি জনমনে শিক্ষা প্রশাসনের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করবে।”

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় বেরিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মত ‘অনুরোধ’ জানাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের ‘সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়’ শাখার উপসচিব মো. শাহীনুর ইসলাম বলেন, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয়কে গুচ্ছ পদ্ধতির সুফল বিবেচনা করে এ পদ্ধতি বজায় রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আহ্বায়ক ছিলেন টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজীম আকন্দ।

তিনি বলেন, “নানা সংকটে গুচ্ছভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করা যাচ্ছে না। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এ প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে যেতে চাচ্ছে। তবে আশা করছি, সংকটগুলো কাটিয়ে দ্রুত গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।”

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি কমাতে ২০২০ সাল থেকে দেশের সরকারি সাধারণ, কৃষি, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়।

গত শিক্ষাবর্ষে ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় এই পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম চালায়। তবে নতুন (২০২৪-২৫) শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছের প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি।

এর মধ্যে গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, তারা এবার গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।

এমন প্রেক্ষাপটে গত ১ ডিসেম্বর গুচ্ছ পদ্ধতিতে থাকার অনুরোধ জানিয়ে উপাচার্যদের চিঠি দেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

চিঠিতে তিনি বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে থাকলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে।”

শিক্ষা উপদেষ্টার পর গত ১০ ডিসেম্বর গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের একই অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সেখানে বলা হয়, “বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।”

সোমবারের সবশেষ চিঠিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, “উচ্চশিক্ষার উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রম হিসেবে গুচ্ছ পদ্ধতি ইতোমধ্যে জনমনে আস্থা অর্জন করেছে। এই পদ্ধতিতে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথকভাবে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের যাতায়াত, আবাসন, এবং অন্যান্য খরচ বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে।

“গুচ্ছ পদ্ধতির মাধ্যমে একটি মানসম্মত প্রশ্নপত্রের ভিত্তিতে মেধাভিত্তিক ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি অভিভাবকগণ একাধিক ভর্তি পরীক্ষার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেয়েছেন।”

চিঠিতে বলা হয়, “এমন অবস্থায় উপাচার্যদের নেতৃত্বে তার বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।”

শিক্ষা উপদেষ্টা যেদিন (১ ডিসেম্বর) চিঠি পাঠান, সেদিনই ভর্তি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের প্রাথমিক আবেদন চলে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

গত ১৮ ডিসেম্বর ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। তারা আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অনলাইনে ভর্তিচ্ছুদের আবেদন করতে বলেছে।

গত ১৯ ডিসেম্বর ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তারা আবেদন নেবে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত।

আগের বারের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কমিটির প্রধান অধ্যাপক আনোয়ারুল আজীম বলেন, “তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে পত্রিকা মারফত জানতে পেরেছি। যেটি তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত, এটি গুচ্ছের সিদ্ধান্ত নয়।

“গত শনিবার আমরা একটি সভা করেছি। সেখানে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা বলছে। তবে এও বলেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় জোরালোভাবে বললে তারা এই প্রক্রিয়ায় থাকতে পারে।”

তবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, “গুচ্ছ পদ্ধতিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থাকছে না। নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তির সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে হয়ে গেছে।”

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, “গুচ্ছ পদ্ধতিতে থাকা না থাকা নিয়ে এখনও আমাদের একাডেমিক কাউন্সিল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় কিছু ভোগান্তি আছে।”

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান বলেন, আমাদের একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভার অধিকাংশ শিক্ষক গুচ্ছ থেকে বেরিয়া যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।

“এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জরুরি একাডেমিক কাউন্সিলের সভা আহ্বান করা হয়েছিল। তবে বিষয়টি পর্যালোচনা করতে সভাটি আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।”

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল বলেন, বেশিরভাগ শিক্ষক গুচ্ছ ভর্তি থেকে বেরিয়ে যেতে চান। তবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেয়নি।

back to top