* নূন্যতম শিক্ষার্থী না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো কলেজ
* পুন:নিরীক্ষণের আবেদনকারীদেরও এখন ভর্তির আবেদন
* ৯৩ শতাংশ আসন উন্মুক্ত
৩০ জুলাই অনলাইনে ভর্তির আবেদন শুরুর কথা জানিয়ে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ করা হয়েছে। গত বছরের মতো এবারও সর্বোচ্চ ভর্তি সাড়ে আট হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, ১১ আগস্ট পর্যন্ত ভর্তির আবেদন করা যাবে। অনলাইনে নির্বাচনের পর মূল ভর্তি কার্যক্রম আগামী ৭ থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। আর একাদশ শ্রেণীতে ক্লাশ শুরু হবে ১৫ সেপ্টেম্বর। অনলাইন ব্যতীত ম্যানুয়ালি কোনো ভর্তি কার্যক্রম করা হবে না।
নূন্যতম শিক্ষাথী না পাওয়ায় শঙ্কায় হাজারো কলেজ:
গত বছরের চেয়ে এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় পৌনে চার লাখ কম হওয়ায় এবার সারা দেশের কলেজগুলোর একটি বড় অংশই আসন অনুযায়ী শিক্ষার্থী পাবে না বলে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গত বছর (২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ) এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সারা দেশে মোট ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন শিক্ষার্থী পাস করেছিল। এর মধ্যে এক লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এরপর ফল পুননিরীক্ষণে আরো এক হাজারের মতো শিক্ষার্থী পাস করে।
গত শিক্ষাবর্ষে সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কলেজ, মাদরাসা, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণীতে প্রায় ২৫ লাখ আসন ছিল। এবার শুধু কলেজ ও মাদ্রাসায় আসন সংখ্যা পৌনে ২৭ লাখের মতো।
আবার উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সবায় ভর্তিও হয় না। গত বছর সারা দেশে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে ১৩ লাখ ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির আবেদন করেছিল। তাদের মধ্যে মোট তিন ধাপে মোট ১৩ লাখ ২২ হাজারের মতো শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছিল।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এসএম কামাল উদ্দিন হায়দার সংবাদকে জানিয়েছেন, সারা দেশে একাদশ শ্রেণীতেই ২৫ লাখের মতো আসন রয়েছে।
আন্ত:শিক্ষা বোর্ড থেকে জানা গেছে, গত বছর সারা দেশের ২২০টির মতো কলেজ ও সমমানের প্রতিষ্ঠান একজন শিক্ষার্থীও পায়নি। আরো অন্তত ৫শ’র মতো কলেজ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ১০ জন থেকে সর্বোচ্চ ২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল। এবার সেই ধরণের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হাজার ছাড়াতে পারে বলে শিক্ষা বোর্ডের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
ভর্তি ফি সাড়ে ৮ হাজার টাকা:
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ গতকাল ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি নীতিমালা প্রকাশ করেছে। এতে এবারও ভর্তিতে সর্বোচ্চ ফি আট হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি এলাকা ভেদেও ভর্তির ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার ইংরেজি ভার্সনের নন-এমপিও কলেজগুলো সর্বোচ্চ হারে ভর্তি ফি নিতে পারবে। তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার বাংলা ভার্সনের নন-এমপিও কলেজগুলো একাদশে ভর্তিতে সর্বোচ্চ সাত হাজার ৫০০ টাকা ভর্তি ফি নিতে পারবে।
অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকার বাংলা ভার্সনের নন-এমপিও কলেজগুলো সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা ও ইংরেজি ভার্সনের নন-এমপিও কলেজগুলো সর্বোচ্চ ছয় হাজার টাকা ভর্তি ফি নিতে পারবে।
জেলা পর্যায়ের বাংলা ভার্সনের নন-এমপিও কলেজগুলো তিন হাজার টাকা ও ইংরেজি ভার্সনের নন-এমপিও কলেজগুলো চার হাজার টাকা ফি নিতে পারবে।
উপজেলা পর্যায়ের বাংলা ভার্সন নন-এমপিও কলেজ দুই হাজার ৫০০ টাকা ও ইংরেজি ভার্সন নন-এমপিও কলেজ তিন হাজার টাকা ফি নিতে পারবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটনের এমপিওভুক্ত কলেজে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে ভর্তির ফি নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকার এমপিওভুক্ত কলেজে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা ভর্তি ফি নিতে পারবে।
আর জেলা পর্যায়ের বাংলা ভার্সনের এমপিওভুক্ত কলেজ ও ইংরেজি ভার্সনে এমপিওভুক্ত কলেজ দুই হাজার টাকা ফি নিতে পারবে। উপজেলা পর্যায়ের বাংলা ভার্সনে এমপিওভুক্ত কলেজ এক হাজার ৫০০ টাকা ও ইংরেজি ভার্সন এমপিওভুক্ত কলেজ সর্বোচ্চ এক হাজার ৫০০ টাকা ফি নিতে পারবে।
পুন:নিরীক্ষণের আবেদনকারীদেরও ভর্তির আবেদন:
নীতিমালায় বলা হয়েছে, যারা পুন:নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করবে, আবেদনের যোগ্য হলে তাদেরও এই সময়ের মধ্যে ভর্তির আবেদন করতে হবে। অনলাইনে আবেদনগুলো শিক্ষার্থীর পছন্দক্রম অনুযায়ী ‘অটো মাইগ্রেশন’ প্রযোজ্য।
আবেদন যাচাই-বাছাই ও আপত্তি নিষ্পত্তি হবে ১২ আগস্ট। শুধুমাত্র পুন:নিরীক্ষণে ফল পরিবর্তিত শিক্ষার্থীদের আবেদন ১৩-১৪ আগস্ট। পছন্দক্রম পরিবর্তনের সময় ১৫ আগস্ট। ১ম পর্যায়ে ভর্তির জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ ২০ আগস্ট রাত ৮ টায়।
শিক্ষার্থীর নির্বাচন নিশ্চায়ন ফল প্রকাশের পর থেকে ২২ আগস্ট রাত ৮টা পর্যন্ত (শিক্ষার্থী নিশ্চায়ন না করলে ১ম পর্যায়ের নির্বাচন এবং আবেদন বাতিল হবে এবং তাকে পুনরায় ফিসহ আবেদন করতে হবে)।
২য় পর্যায়ে আবেদন ২৩-২৫ আগস্ট রাত ৮টা পর্যন্ত। পছন্দক্রম অনুযায়ী ১ম মাইগ্রেশনের ফল প্রকাশ ২৮ আগস্ট রাত ৮টায়। ২য় পর্যায়ের আবেদনের ফল প্রকাশ ২৮ আগস্ট রাত ৮টায়। ২য় পর্যায়ের শিক্ষার্থীর নির্বাচন নিশ্চায়ন ২৯-৩০ আগস্ট রাত ৮ টা পর্যন্ত (শিক্ষার্থী নিশ্চায়ন না করলে ২য় পর্যায়ের নির্বাচন ও আবেদন বাতিল হবে; সেক্ষেত্রে তাকে পুনরায় ফিসহ আবেদন করতে হবে)।
৩য় পর্যায়ে আবেদন গ্রহণ ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা পর্যন্ত। পছন্দক্রম অনুযায়ী ২য় মাইগ্রেশনের ফল প্রকাশ ৩ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায়। ৩য় পর্যায়ের আবেদনের ফল প্রকাশ ৩ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায় এবং নির্বাচন নিশ্চায়ন ৪ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা (শিক্ষার্থী নিশ্চায়ন না করলে ৩য় পর্যায়ের নির্বাচন ও আবেদন বাতিল হবে)।
সর্বশেষ মাইগ্রেশনের ফল প্রকাশ ৫ সেপ্টেম্বর রাত ৮ টায় এবং ভর্তি ৭-১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। একাদশ শ্রেণীতে ক্লাস শুরু ১৫ সেপ্টেম্বর।
যোগ্যতা ও বিভাগ নির্বাচন:
যে কোনো শিক্ষাবর্ষে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের সাল ও ধারাবাহিকভাবে পূর্ববর্তী দুই সালের যেকোনো শিক্ষা বোর্ড এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা নীতিমালার অন্যান্য বিধানাবলি সাপেক্ষে কোনো কলেজ ও সমমানের প্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণীতে অনলাইনে ভর্তির যোগ্য বিবেচিত হবে।
বিদেশি কোনো বোর্ড বা অনুরূপ কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক তার সনদের মান নির্ধারণের পর উল্লিখিত শর্তের অধীনে ভর্তির যোগ্য বিবেচিত হবে।
মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ এর যে কোনটি এবং সাধারণ ও মুজাব্বিদ মাহির বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগ ব্যতীত যে কোনটি পছন্দক্রম দিতে পারবে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের যে কোন বিভাগে ভর্তির আবেদন করতে পারবে।
বিভাগ নির্বাচন প্রক্রিয়া:
ভর্তি নীতিমালায় অনুযায়ী, বিজ্ঞান বিভাগ হতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের যে কোনটি নির্বাচন করতে পারবে। একই ভাবে মানবিক বিভাগ হতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের যে কোনটি এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ হতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগ এর যেকোনটি পছন্দক্রম দিতে পারবে। যেকোনো বিভাগ (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা) থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ইসলামী শিক্ষা, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ও সংগীত বিভাগ এর যে কোনটি নির্বাচন করতে পারবে।
৯৩ শতাংশ আসন উন্মুক্ত:
এবারের ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কলেজ ও সমমানের প্রতিষ্ঠানের ৯৩ শতাংশ আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে, যা মেধার ভিত্তিতে নির্বাচন করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ এবং অধীনস্থ দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের ক্ষেত্রে ১ শতাংশসহ মোট ২ শতাংশ আসন মহানগর, বিভাগীয় ও জেলা সদরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য নূন্যতম যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে সংরক্ষিত থাকবে। আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি হলে সেক্ষেত্রে তাদের নিজেদের মধ্যে মেধার ভিত্তিতে ভর্তির সুযোগ পাবে।
কোটার সুবিধা পেতে আবেদনের সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক দপ্তর প্রধানের প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নিজস্ব দপ্তরের প্রধান হলে সেক্ষেত্রে তার একধাপ ওপরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা-শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যার ভর্তির জন্য ৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা-শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যাদের আসন নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্র-গেজেটের সত্যায়িত কপি আবেদপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে এবং ভর্তির সময় মূল কপি প্রদর্শন করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যুকৃত মুক্তিযোদ্ধা সনদ যথাযথভাবে যাচাই করে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা-শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে এই আসনে ভর্তি করতে হবে। কোনো অবস্থায় আসন শূন্য রাখা যাবে না।
বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫
* নূন্যতম শিক্ষার্থী না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো কলেজ
* পুন:নিরীক্ষণের আবেদনকারীদেরও এখন ভর্তির আবেদন
* ৯৩ শতাংশ আসন উন্মুক্ত
৩০ জুলাই অনলাইনে ভর্তির আবেদন শুরুর কথা জানিয়ে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ করা হয়েছে। গত বছরের মতো এবারও সর্বোচ্চ ভর্তি সাড়ে আট হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, ১১ আগস্ট পর্যন্ত ভর্তির আবেদন করা যাবে। অনলাইনে নির্বাচনের পর মূল ভর্তি কার্যক্রম আগামী ৭ থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। আর একাদশ শ্রেণীতে ক্লাশ শুরু হবে ১৫ সেপ্টেম্বর। অনলাইন ব্যতীত ম্যানুয়ালি কোনো ভর্তি কার্যক্রম করা হবে না।
নূন্যতম শিক্ষাথী না পাওয়ায় শঙ্কায় হাজারো কলেজ:
গত বছরের চেয়ে এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় পৌনে চার লাখ কম হওয়ায় এবার সারা দেশের কলেজগুলোর একটি বড় অংশই আসন অনুযায়ী শিক্ষার্থী পাবে না বলে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গত বছর (২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ) এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সারা দেশে মোট ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন শিক্ষার্থী পাস করেছিল। এর মধ্যে এক লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এরপর ফল পুননিরীক্ষণে আরো এক হাজারের মতো শিক্ষার্থী পাস করে।
গত শিক্ষাবর্ষে সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কলেজ, মাদরাসা, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণীতে প্রায় ২৫ লাখ আসন ছিল। এবার শুধু কলেজ ও মাদ্রাসায় আসন সংখ্যা পৌনে ২৭ লাখের মতো।
আবার উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সবায় ভর্তিও হয় না। গত বছর সারা দেশে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে ১৩ লাখ ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির আবেদন করেছিল। তাদের মধ্যে মোট তিন ধাপে মোট ১৩ লাখ ২২ হাজারের মতো শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছিল।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এসএম কামাল উদ্দিন হায়দার সংবাদকে জানিয়েছেন, সারা দেশে একাদশ শ্রেণীতেই ২৫ লাখের মতো আসন রয়েছে।
আন্ত:শিক্ষা বোর্ড থেকে জানা গেছে, গত বছর সারা দেশের ২২০টির মতো কলেজ ও সমমানের প্রতিষ্ঠান একজন শিক্ষার্থীও পায়নি। আরো অন্তত ৫শ’র মতো কলেজ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ১০ জন থেকে সর্বোচ্চ ২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল। এবার সেই ধরণের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হাজার ছাড়াতে পারে বলে শিক্ষা বোর্ডের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
ভর্তি ফি সাড়ে ৮ হাজার টাকা:
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ গতকাল ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি নীতিমালা প্রকাশ করেছে। এতে এবারও ভর্তিতে সর্বোচ্চ ফি আট হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি এলাকা ভেদেও ভর্তির ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার ইংরেজি ভার্সনের নন-এমপিও কলেজগুলো সর্বোচ্চ হারে ভর্তি ফি নিতে পারবে। তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার বাংলা ভার্সনের নন-এমপিও কলেজগুলো একাদশে ভর্তিতে সর্বোচ্চ সাত হাজার ৫০০ টাকা ভর্তি ফি নিতে পারবে।
অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকার বাংলা ভার্সনের নন-এমপিও কলেজগুলো সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা ও ইংরেজি ভার্সনের নন-এমপিও কলেজগুলো সর্বোচ্চ ছয় হাজার টাকা ভর্তি ফি নিতে পারবে।
জেলা পর্যায়ের বাংলা ভার্সনের নন-এমপিও কলেজগুলো তিন হাজার টাকা ও ইংরেজি ভার্সনের নন-এমপিও কলেজগুলো চার হাজার টাকা ফি নিতে পারবে।
উপজেলা পর্যায়ের বাংলা ভার্সন নন-এমপিও কলেজ দুই হাজার ৫০০ টাকা ও ইংরেজি ভার্সন নন-এমপিও কলেজ তিন হাজার টাকা ফি নিতে পারবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটনের এমপিওভুক্ত কলেজে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে ভর্তির ফি নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকার এমপিওভুক্ত কলেজে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা ভর্তি ফি নিতে পারবে।
আর জেলা পর্যায়ের বাংলা ভার্সনের এমপিওভুক্ত কলেজ ও ইংরেজি ভার্সনে এমপিওভুক্ত কলেজ দুই হাজার টাকা ফি নিতে পারবে। উপজেলা পর্যায়ের বাংলা ভার্সনে এমপিওভুক্ত কলেজ এক হাজার ৫০০ টাকা ও ইংরেজি ভার্সন এমপিওভুক্ত কলেজ সর্বোচ্চ এক হাজার ৫০০ টাকা ফি নিতে পারবে।
পুন:নিরীক্ষণের আবেদনকারীদেরও ভর্তির আবেদন:
নীতিমালায় বলা হয়েছে, যারা পুন:নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করবে, আবেদনের যোগ্য হলে তাদেরও এই সময়ের মধ্যে ভর্তির আবেদন করতে হবে। অনলাইনে আবেদনগুলো শিক্ষার্থীর পছন্দক্রম অনুযায়ী ‘অটো মাইগ্রেশন’ প্রযোজ্য।
আবেদন যাচাই-বাছাই ও আপত্তি নিষ্পত্তি হবে ১২ আগস্ট। শুধুমাত্র পুন:নিরীক্ষণে ফল পরিবর্তিত শিক্ষার্থীদের আবেদন ১৩-১৪ আগস্ট। পছন্দক্রম পরিবর্তনের সময় ১৫ আগস্ট। ১ম পর্যায়ে ভর্তির জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ ২০ আগস্ট রাত ৮ টায়।
শিক্ষার্থীর নির্বাচন নিশ্চায়ন ফল প্রকাশের পর থেকে ২২ আগস্ট রাত ৮টা পর্যন্ত (শিক্ষার্থী নিশ্চায়ন না করলে ১ম পর্যায়ের নির্বাচন এবং আবেদন বাতিল হবে এবং তাকে পুনরায় ফিসহ আবেদন করতে হবে)।
২য় পর্যায়ে আবেদন ২৩-২৫ আগস্ট রাত ৮টা পর্যন্ত। পছন্দক্রম অনুযায়ী ১ম মাইগ্রেশনের ফল প্রকাশ ২৮ আগস্ট রাত ৮টায়। ২য় পর্যায়ের আবেদনের ফল প্রকাশ ২৮ আগস্ট রাত ৮টায়। ২য় পর্যায়ের শিক্ষার্থীর নির্বাচন নিশ্চায়ন ২৯-৩০ আগস্ট রাত ৮ টা পর্যন্ত (শিক্ষার্থী নিশ্চায়ন না করলে ২য় পর্যায়ের নির্বাচন ও আবেদন বাতিল হবে; সেক্ষেত্রে তাকে পুনরায় ফিসহ আবেদন করতে হবে)।
৩য় পর্যায়ে আবেদন গ্রহণ ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা পর্যন্ত। পছন্দক্রম অনুযায়ী ২য় মাইগ্রেশনের ফল প্রকাশ ৩ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায়। ৩য় পর্যায়ের আবেদনের ফল প্রকাশ ৩ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায় এবং নির্বাচন নিশ্চায়ন ৪ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা (শিক্ষার্থী নিশ্চায়ন না করলে ৩য় পর্যায়ের নির্বাচন ও আবেদন বাতিল হবে)।
সর্বশেষ মাইগ্রেশনের ফল প্রকাশ ৫ সেপ্টেম্বর রাত ৮ টায় এবং ভর্তি ৭-১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। একাদশ শ্রেণীতে ক্লাস শুরু ১৫ সেপ্টেম্বর।
যোগ্যতা ও বিভাগ নির্বাচন:
যে কোনো শিক্ষাবর্ষে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের সাল ও ধারাবাহিকভাবে পূর্ববর্তী দুই সালের যেকোনো শিক্ষা বোর্ড এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা নীতিমালার অন্যান্য বিধানাবলি সাপেক্ষে কোনো কলেজ ও সমমানের প্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণীতে অনলাইনে ভর্তির যোগ্য বিবেচিত হবে।
বিদেশি কোনো বোর্ড বা অনুরূপ কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক তার সনদের মান নির্ধারণের পর উল্লিখিত শর্তের অধীনে ভর্তির যোগ্য বিবেচিত হবে।
মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ এর যে কোনটি এবং সাধারণ ও মুজাব্বিদ মাহির বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগ ব্যতীত যে কোনটি পছন্দক্রম দিতে পারবে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের যে কোন বিভাগে ভর্তির আবেদন করতে পারবে।
বিভাগ নির্বাচন প্রক্রিয়া:
ভর্তি নীতিমালায় অনুযায়ী, বিজ্ঞান বিভাগ হতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের যে কোনটি নির্বাচন করতে পারবে। একই ভাবে মানবিক বিভাগ হতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের যে কোনটি এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ হতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগ এর যেকোনটি পছন্দক্রম দিতে পারবে। যেকোনো বিভাগ (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা) থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ইসলামী শিক্ষা, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ও সংগীত বিভাগ এর যে কোনটি নির্বাচন করতে পারবে।
৯৩ শতাংশ আসন উন্মুক্ত:
এবারের ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কলেজ ও সমমানের প্রতিষ্ঠানের ৯৩ শতাংশ আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে, যা মেধার ভিত্তিতে নির্বাচন করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ এবং অধীনস্থ দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের ক্ষেত্রে ১ শতাংশসহ মোট ২ শতাংশ আসন মহানগর, বিভাগীয় ও জেলা সদরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য নূন্যতম যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে সংরক্ষিত থাকবে। আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি হলে সেক্ষেত্রে তাদের নিজেদের মধ্যে মেধার ভিত্তিতে ভর্তির সুযোগ পাবে।
কোটার সুবিধা পেতে আবেদনের সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক দপ্তর প্রধানের প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নিজস্ব দপ্তরের প্রধান হলে সেক্ষেত্রে তার একধাপ ওপরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা-শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যার ভর্তির জন্য ৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা-শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যাদের আসন নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্র-গেজেটের সত্যায়িত কপি আবেদপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে এবং ভর্তির সময় মূল কপি প্রদর্শন করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যুকৃত মুক্তিযোদ্ধা সনদ যথাযথভাবে যাচাই করে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা-শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে এই আসনে ভর্তি করতে হবে। কোনো অবস্থায় আসন শূন্য রাখা যাবে না।