alt

শিক্ষা

১০ কোটি বই এখনও ছাপা হয়নি

রাকিব উদ্দিন : রোববার, ০৩ জানুয়ারী ২০২১

প্রতিবছরের ১ জানুয়ারি দেশের সব শিক্ষার্থী নতুন পাঠ্যবই হাতে পেতো। ২০১০ সাল থেকেই সরকার এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেও এবার এর ব্যতয় ঘটেছে। রোবববার ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট বইয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ ছাপা বাকি রয়েছে। ২০২১ শিক্ষাবর্ষের জন্য মোট ৩৬ কোটি কপি বই বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, তবে রোবববার পর্যন্ত প্রায় ২৬ কোটি বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এ হিসাবে ১০ কোটি কপি বই এখনও ছাপা বাকি রয়েছে।

রাজধানীর মিরপুর সিন্ধান্ত হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম রনি রোবববার সংবাদকে বলেন, ‘আমার স্কুলে সপ্তম ও নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ৩০০ জন। কিন্তু এখন পর্যন্ত বই পেয়েছি মাত্র ১০ সেট... ১০ জনের জন্য। অন্যান্য শ্রেণীতেও সব বিষয়ের বই পাওয়া যায়নি। বারবার জেলা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করছি, তারা দেব, দিচ্ছি বলছে। কিন্তু আমরা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সামলাতে পারছি না।’

নির্ধারিত সময়ে সব বই ছাপা না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা রোবববার সংবাদকে বলেন, ‘কিছু বই ছাপা বাকি আছে, আশা করছি, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। এখন দৈনিক ৮০ থেকে ৮৫ লাখ কপি বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে।’

পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন না হওয়ায় মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে সব বিষয়ের বই দেয়া হচ্ছে না জানিয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাকি বইগুলো শিক্ষার্থীদের পরবর্তীতে স্কুল থেকে দেয়া হবে। সবাই বই পাবে।’

জানতে চাইলে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান রোবববার সংবাদকে বলেন, ‘আমার কাছে যে তথ্য আছে, তাতে প্রাথমিক স্তরের ৮৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিক স্তরের ৫৫ শতাংশ বই উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ হয়েছে। বাকি বই ছাপার কাজ চলমান রয়েছে। এনসিটিবি’র সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, কার্যাদেশ পাওয়ার পর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর বই ৬০ দিনের মধ্যে এবং অন্যান্য বই ৯৬ দিনের মধ্যে সরবরাহ করবে ছাপাখানার মালিকরা। এ হিসাবে সব বই ছাপাতে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় রয়েছে প্রিন্টার্সদের (ছাপাখানা মালিক)। এরপরও শর্তসাপেক্ষে আরও কিছুদিন সময় পাবেন প্রিন্টার্সরা।’

ছাপাখানা মালিকদের দাবি, বই মুদ্রণের কার্যাদেশ দেয়ার পর বাজারে কাগজের মূল্য বৃদ্ধি, করোনা মহামারীতে আন্তর্জাতিক বাজারে কাগজ তৈরির কাঁচামাল ‘পাল্প’র (মন্ড) সংকট এবং কাগজ মিল মালিকরা ছাপাখানার মালিকদের (প্রিন্টার্স) সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী আগের দামে কাগজ সরবরাহ না করার কারণেই বই ছাপার কাজ আটকে রয়েছে।

কাগজের মূল্য বৃদ্ধি ও কাগজ সংকটের কারণে পাঠ্যবই ছাপার কাজে কিছুটা বিলম্ব হলেও এখন সেই সংকট নেই জানিয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘কয়েকটি প্রেস (ছাপাখানা) বই মুদ্রণ করে বসে ছিল, এখন তারা বাইন্ডিং (বাঁধাই) করছেন। আগে বাজারে কাগজের সংকট ছিল, এখন তা নেই। আর কাগজের দামের বিষয়টি ব্যবসায়ীদের ব্যাপার। এ বিষয়ে এনসিটিবির কিছু করার নেই।’

এ বিষয়ে তোফায়েল খান বলেন, ‘এবারের অর্থাৎ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপাতে একই সময় দরপত্র আহ্বান করে এনসিটিবি। বিগত সময়ে প্রাথমিকের বইয়ের কার্যাদেশ কিছুদিন আগে দেয়া হতো। এতে প্রাথমিকের বই ছাপা শেষে মাধ্যমিক কাজ করত ব্যবসায়ীরা। এবার সেই সুযোগ হয়নি। এই সময়ন্বয়হীনতার কারণে অনেকেই বেশি কাজ নিয়েছে, অনেক প্রেস কাজই পায়নি।’

কাগজের মূল্য বৃদ্ধি ও সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এনসিটিবি প্রাথমিকের সাড়ে ১২ হাজার মেট্রিক টন কাগজ কিনেছে ৬২/৬৩ হাজার টাকা (প্রতি টন) দরে। এই সময়ে প্রিন্টার্সরা কাগজ কিনেছে প্রতিটন ৪৫/৫০ হাজার টাকা দরে। একই সময়ে বাজারে দুই রকম মূল্য হওয়ায় কাগজ মিল মালিকরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারেও কাগজ তৈরির কাঁচামাল ‘পাল্প’র মূল্য বেড়েছে।’

কিন্তু চড়া দামে কাগজ ক্রয়ে ব্যবসায়ীদের সক্ষমতা না থাকায় দেশের ৫৫টি কাগজ মিলের মধ্যে বর্তমানে মাত্র চারটি কাগজ উৎপাদন করছে দাবি করে তোফায়েল খান বলেন, ‘এর ফলে ওই চারটি মিলের ওপর বাড়তি চাপ পড়েছে। অগ্রিম টাকা দিয়ে কাগজ পাওয়া যাচ্ছে না। চারটি মিল সবাইকে একসঙ্গে কাগজ সরবরাহ করতে পারছে না, পর্যায়ক্রমে দিচ্ছে।’

এনসিটিবি কাগজের মান ঠিক রাখার জন্য দরপত্রে স্পেসিফিকেশন উল্লেখ করে দেয়। দরপত্রের কারিগরি নির্দেশনা ও নিয়ম মোতাবেক ব্রাইটনেস (উজ্জ্বলতা) থাকে ৮৫ শতাংশ। একইভাবে প্রাথমিকের বই ছাপার কাগজের পুরত্ব (জিএসএম) ৮০ এবং মাধ্যমিকের বই ছাপার কাগজের জিএসএম ৬০ শতাংশ থাকার কথা। আর ব্যবহৃত কাগজ কতখানি মজবুত তার নির্দেশনাকারী ‘বাস্টিং ফ্যাক্টর’ যেখানে ন্যূনতম ১২ শতাংশ থাকার কথা।

কিন্তু এবার দেশের বড় কাগজ মিলগুলো উৎপাদন বন্ধ রাখায় খোলা বাজারে ভালোমানের কাগজের সংকট হচ্ছে কীনা জানতে চাইলে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি বলেন, ‘একই সময়ে কাগজ মিলগুলোকে দুই কোয়ালিটির কাগজ উৎপাদন করতে হচ্ছে। এতে স্বাভাবিক কারণেই মানের এদিক-সেদিক হতে পারে।’

২০২১ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের দরপত্র আহ্বানের সময় গত বছর করোনা মহামারীকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি।

২০২১ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাক-প্রাথমিকসহ প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণী এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা স্তরসহ সবমিলিয়ে প্রায় ৩৬ কোটি পাঠ্যবই ছাপানোর কথা রয়েছে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই সব বই ছাপা ও সরবরাহ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড।

এনসিটিসি সূত্রে জানা গেছে, সরকার ২০২১ শিক্ষাবর্ষে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণীর জন্য ব্রেইল বইসহ (৯ হাজার ৫০৪টি) ২৪ কোটি ৪১ লাখ ২২ হাজার ৩৪৯টি পাঠ্যবই বিতরণ করছে। তবে রোবববার ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মাধ্যমিক স্তরের ১৬ কোটি ১১ লাখ আট হাজার ৭০০ কপি বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছেন ছাপাখানার মালিকরা।

আর রোবববার পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের ৬৬ লাখ ৬০০ কপি বই ছাপার বাকি ছিল। প্রাথমিক স্তরের মোট ১০ কোটি ৮৬ লাখ ১৯ হাজার ২২২ কপি বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। প্রাথমিকের মোট বইয়ের মধ্যে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য ছাপা হচ্ছে ৬০ রাখ ৩৬ হাজার ৬৬৭ কপি এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের জন্য ছাপা হচ্ছে দুই লাখ ১৩ হাজার ২৮৮ কপি বই। এছাড়া প্রাক-প্রাথমিকের শিশুদের জন্য ছাপানো হচ্ছে ৮৭ হাজার ৭৮৬ কপি খাতা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় আসন বেড়েছে ৫০টি, থাকবে ভ্রাম্যমাণ পানির ট্যাংক ও চিকিৎসক

পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র:ডিবি

ছবি

৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু

তীব্র গরমেও বাড়ছে না ছুটি, রবিবার খুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

৫০ শতাংশ লিখিত ও ৫০ শতাংশ কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন

নতুন শিক্ষাক্রমে সপ্তম শ্রেণীতে শরীফার গল্প থাকছে

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন ও দ্রুত সেবা প্রদানে নির্দেশ

তাপদাহের কারণে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস , মিডটার্ম পরীক্ষা স্থগিত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্ব-শরীরেই চলবে ক্লাস-পরীক্ষা

ছবি

গরমের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সকল কলেজের ক্লাস বন্ধ

ছবি

তৃতীয় দফায় তিনদিন শ্রেণি কার্যক্রম বর্জনে ঘোষণা কুবি শিক্ষক সমিতির

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ১ম বর্ষ ভর্তির আবেদনের ২য় মেধা তালিকা প্রকাশ

ছবি

বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে অব্যাহতি

ছবি

এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু মঙ্গলবার, চলবে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত

ছবি

স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী ও ঈদ উপহার বিতরন

ছবি

রাবি-চবির অধিভুক্ত হল ৯ সরকারি কলেজ

ছবি

১১ মের মধ্যেই এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ

নতুন শিক্ষাক্রম : আগের ধাচেই শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি এনটিআরসিএ’র

এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে টেস্ট পরীক্ষার নামে ফি আদায় করলে ব্যবস্থা

ছবি

এইচএসসি পরীক্ষা শুরু ৩০ জুন, রুটিন প্রকাশ

ছবি

বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চলবে : হাইকোর্ট

ছবি

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির দাবিতে দেশব্যাপী মানববন্ধন করবে ছাত্রলীগ

ছবি

তিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে তিন ক্যাম্পাসে চলছে পাল্টাপাল্টি মহড়া

ছবি

৩০টি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব স্থগিত:এনবিআর

ছবি

শিক্ষায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরে পারিবারিক ব্যয় বেড়েছে

শিক্ষায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরে পারিবারিক ব্যয় বেড়েছে

কক্সবাজারে ওয়্যারলেস অডিও ডিভাইসসহ দুইজন আটক

ছবি

মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী কমেছে, বেড়েছে মাদ্রাসায়

ছবি

দুর্নীতির অভিযোগে বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বরখাস্ত

ঢাবির ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৬ দিনের ছুটি শুরু

ছবি

শনিবার স্কুল খোলা রাখার ইঙ্গিত: শিক্ষামন্ত্রী নওফেল

উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সমাপনী পরীক্ষা পাঁচ ঘণ্টা করার প্রস্তাব এনসিটিবির

ছবি

ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক রাশেদা ইরশাদ

ছবি

এইচএসসি পরীক্ষা কার কোন কেন্দ্রে, তালিকা প্রকাশ

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের শতাধিক ‘ট্রেড কোর্সের’ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই সংস্থার দ্বন্দ্ব

tab

শিক্ষা

১০ কোটি বই এখনও ছাপা হয়নি

রাকিব উদ্দিন

রোববার, ০৩ জানুয়ারী ২০২১

প্রতিবছরের ১ জানুয়ারি দেশের সব শিক্ষার্থী নতুন পাঠ্যবই হাতে পেতো। ২০১০ সাল থেকেই সরকার এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেও এবার এর ব্যতয় ঘটেছে। রোবববার ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট বইয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ ছাপা বাকি রয়েছে। ২০২১ শিক্ষাবর্ষের জন্য মোট ৩৬ কোটি কপি বই বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, তবে রোবববার পর্যন্ত প্রায় ২৬ কোটি বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এ হিসাবে ১০ কোটি কপি বই এখনও ছাপা বাকি রয়েছে।

রাজধানীর মিরপুর সিন্ধান্ত হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম রনি রোবববার সংবাদকে বলেন, ‘আমার স্কুলে সপ্তম ও নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ৩০০ জন। কিন্তু এখন পর্যন্ত বই পেয়েছি মাত্র ১০ সেট... ১০ জনের জন্য। অন্যান্য শ্রেণীতেও সব বিষয়ের বই পাওয়া যায়নি। বারবার জেলা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করছি, তারা দেব, দিচ্ছি বলছে। কিন্তু আমরা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সামলাতে পারছি না।’

নির্ধারিত সময়ে সব বই ছাপা না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা রোবববার সংবাদকে বলেন, ‘কিছু বই ছাপা বাকি আছে, আশা করছি, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। এখন দৈনিক ৮০ থেকে ৮৫ লাখ কপি বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে।’

পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন না হওয়ায় মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে সব বিষয়ের বই দেয়া হচ্ছে না জানিয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাকি বইগুলো শিক্ষার্থীদের পরবর্তীতে স্কুল থেকে দেয়া হবে। সবাই বই পাবে।’

জানতে চাইলে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান রোবববার সংবাদকে বলেন, ‘আমার কাছে যে তথ্য আছে, তাতে প্রাথমিক স্তরের ৮৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিক স্তরের ৫৫ শতাংশ বই উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ হয়েছে। বাকি বই ছাপার কাজ চলমান রয়েছে। এনসিটিবি’র সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, কার্যাদেশ পাওয়ার পর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর বই ৬০ দিনের মধ্যে এবং অন্যান্য বই ৯৬ দিনের মধ্যে সরবরাহ করবে ছাপাখানার মালিকরা। এ হিসাবে সব বই ছাপাতে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় রয়েছে প্রিন্টার্সদের (ছাপাখানা মালিক)। এরপরও শর্তসাপেক্ষে আরও কিছুদিন সময় পাবেন প্রিন্টার্সরা।’

ছাপাখানা মালিকদের দাবি, বই মুদ্রণের কার্যাদেশ দেয়ার পর বাজারে কাগজের মূল্য বৃদ্ধি, করোনা মহামারীতে আন্তর্জাতিক বাজারে কাগজ তৈরির কাঁচামাল ‘পাল্প’র (মন্ড) সংকট এবং কাগজ মিল মালিকরা ছাপাখানার মালিকদের (প্রিন্টার্স) সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী আগের দামে কাগজ সরবরাহ না করার কারণেই বই ছাপার কাজ আটকে রয়েছে।

কাগজের মূল্য বৃদ্ধি ও কাগজ সংকটের কারণে পাঠ্যবই ছাপার কাজে কিছুটা বিলম্ব হলেও এখন সেই সংকট নেই জানিয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘কয়েকটি প্রেস (ছাপাখানা) বই মুদ্রণ করে বসে ছিল, এখন তারা বাইন্ডিং (বাঁধাই) করছেন। আগে বাজারে কাগজের সংকট ছিল, এখন তা নেই। আর কাগজের দামের বিষয়টি ব্যবসায়ীদের ব্যাপার। এ বিষয়ে এনসিটিবির কিছু করার নেই।’

এ বিষয়ে তোফায়েল খান বলেন, ‘এবারের অর্থাৎ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপাতে একই সময় দরপত্র আহ্বান করে এনসিটিবি। বিগত সময়ে প্রাথমিকের বইয়ের কার্যাদেশ কিছুদিন আগে দেয়া হতো। এতে প্রাথমিকের বই ছাপা শেষে মাধ্যমিক কাজ করত ব্যবসায়ীরা। এবার সেই সুযোগ হয়নি। এই সময়ন্বয়হীনতার কারণে অনেকেই বেশি কাজ নিয়েছে, অনেক প্রেস কাজই পায়নি।’

কাগজের মূল্য বৃদ্ধি ও সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এনসিটিবি প্রাথমিকের সাড়ে ১২ হাজার মেট্রিক টন কাগজ কিনেছে ৬২/৬৩ হাজার টাকা (প্রতি টন) দরে। এই সময়ে প্রিন্টার্সরা কাগজ কিনেছে প্রতিটন ৪৫/৫০ হাজার টাকা দরে। একই সময়ে বাজারে দুই রকম মূল্য হওয়ায় কাগজ মিল মালিকরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারেও কাগজ তৈরির কাঁচামাল ‘পাল্প’র মূল্য বেড়েছে।’

কিন্তু চড়া দামে কাগজ ক্রয়ে ব্যবসায়ীদের সক্ষমতা না থাকায় দেশের ৫৫টি কাগজ মিলের মধ্যে বর্তমানে মাত্র চারটি কাগজ উৎপাদন করছে দাবি করে তোফায়েল খান বলেন, ‘এর ফলে ওই চারটি মিলের ওপর বাড়তি চাপ পড়েছে। অগ্রিম টাকা দিয়ে কাগজ পাওয়া যাচ্ছে না। চারটি মিল সবাইকে একসঙ্গে কাগজ সরবরাহ করতে পারছে না, পর্যায়ক্রমে দিচ্ছে।’

এনসিটিবি কাগজের মান ঠিক রাখার জন্য দরপত্রে স্পেসিফিকেশন উল্লেখ করে দেয়। দরপত্রের কারিগরি নির্দেশনা ও নিয়ম মোতাবেক ব্রাইটনেস (উজ্জ্বলতা) থাকে ৮৫ শতাংশ। একইভাবে প্রাথমিকের বই ছাপার কাগজের পুরত্ব (জিএসএম) ৮০ এবং মাধ্যমিকের বই ছাপার কাগজের জিএসএম ৬০ শতাংশ থাকার কথা। আর ব্যবহৃত কাগজ কতখানি মজবুত তার নির্দেশনাকারী ‘বাস্টিং ফ্যাক্টর’ যেখানে ন্যূনতম ১২ শতাংশ থাকার কথা।

কিন্তু এবার দেশের বড় কাগজ মিলগুলো উৎপাদন বন্ধ রাখায় খোলা বাজারে ভালোমানের কাগজের সংকট হচ্ছে কীনা জানতে চাইলে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি বলেন, ‘একই সময়ে কাগজ মিলগুলোকে দুই কোয়ালিটির কাগজ উৎপাদন করতে হচ্ছে। এতে স্বাভাবিক কারণেই মানের এদিক-সেদিক হতে পারে।’

২০২১ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের দরপত্র আহ্বানের সময় গত বছর করোনা মহামারীকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি।

২০২১ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাক-প্রাথমিকসহ প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণী এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা স্তরসহ সবমিলিয়ে প্রায় ৩৬ কোটি পাঠ্যবই ছাপানোর কথা রয়েছে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই সব বই ছাপা ও সরবরাহ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড।

এনসিটিসি সূত্রে জানা গেছে, সরকার ২০২১ শিক্ষাবর্ষে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণীর জন্য ব্রেইল বইসহ (৯ হাজার ৫০৪টি) ২৪ কোটি ৪১ লাখ ২২ হাজার ৩৪৯টি পাঠ্যবই বিতরণ করছে। তবে রোবববার ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মাধ্যমিক স্তরের ১৬ কোটি ১১ লাখ আট হাজার ৭০০ কপি বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছেন ছাপাখানার মালিকরা।

আর রোবববার পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের ৬৬ লাখ ৬০০ কপি বই ছাপার বাকি ছিল। প্রাথমিক স্তরের মোট ১০ কোটি ৮৬ লাখ ১৯ হাজার ২২২ কপি বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। প্রাথমিকের মোট বইয়ের মধ্যে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য ছাপা হচ্ছে ৬০ রাখ ৩৬ হাজার ৬৬৭ কপি এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের জন্য ছাপা হচ্ছে দুই লাখ ১৩ হাজার ২৮৮ কপি বই। এছাড়া প্রাক-প্রাথমিকের শিশুদের জন্য ছাপানো হচ্ছে ৮৭ হাজার ৭৮৬ কপি খাতা।

back to top