সমগ্র পৃথিবীর সুখ দুঃখ, হাসি কান্না, স্বাভাবিক জীবন যাপন সব কিছুকে গ্রাস করে আছে বৈশ্বয়িক মহামারি করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ রোগ। প্রতিদিনকার গতিময় জীবনকে থামিয়ে তার জায়গা দখল করেছে আতংক আর দীর্ঘ থেকে আরও দীর্ঘতর হওয়া মৃত্যুর মিছিল। ভারাক্রান্ত মন আরও ভারাক্রান্ত হয় আসে যখন ভাবি আমাদের প্রিয় শিক্ষার্থীদের কথা যারা কদিন আগেও শ্রেণিকক্ষগুলোকে অম্লান হাসি আর নানান স্বপ্নের কথায় মাতিয়ে রাখতেন, একটু আধটু খুনসুটি আর স্যারদের দরদী শাসন সব ছেড়ে ওরা আজ গৃহবন্দী। করোনার হানায় সব কিছুই তো তচনছ তারপরও একটু দেরিতে হলেও ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা মোবাইল ম্যাসেজ ও অনলাইনে এসএসসি ফল প্রদান করা হয়েছে। লাখ লাখ শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের জন্য এটা আনন্দের ও স্বস্তিদায়ক নিশ্চয়। আসলে ঘাত প্রতিঘাত মানুষের জীবনের চলাকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে কিন্তু একেবারে থামিয়ে দিতে পারে না-এটাই নতুন কৌশলে প্রকাশিত এসএসসির ফলাফলের একটা সুন্দর বার্তা। সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষাবোর্ড এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক অভিবাদন তো জানাতেই হবে কারণ বৈশ্বয়িক মহামারি কোভিড-১৯’র চোখরাঙ্গানি উপেক্ষা করে তারা ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের হাতে তাদের কাঙ্খিত ফলাফলটি দিতে পেরেছে। লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীদের জন্য, আমাদের জন্য এবং সমগ্র জাতির জন্য এটা স্বস্তির ও আনন্দের কারণ শত বাধার মাঝেও আমরা আমাদের কাজটি ঠিক সময়ে করতে পেরেছি।
আমি ঝিনাইদহ ও ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলাম। এছাড়াও রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ ও মাইলস্টোন কলেজের মতো দেশসেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের সাথে কাজ করা প্রতিটি দিনই ভালোলাগা আর ভালোবাসায় ভরপুর। তথাপি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিন অন্য যে কোন দিনগুলোর তুলনায় আলাদা থাকে। আলাদাভাবে সাজে, আলাদাভাবে হাসে যার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা হয়তো কঠিন। গত বছর এসএসসির ফলাফল প্রকাশের দিনকার সাথে আজকের দিনের তুলনা করলে মনে হয় প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বন্ধ দরজার দু’পাশে কেমন এক পারস্পরিক জমাট বাধা অভিমান নীরবে তাকিয়ে আছে। আমি আপনি হয়তো সেই ভাষা বুঝি কিন্তু কিছু বলতে বা স্পর্শ করতে পারি না। আমাদের ফুলের মতো ছাত্রছাত্রীদের জন্য এটা আরও বেদনার হলেও আমি বলবো শেষ পর্যন্ত ফলাফল হাতে পেয়ে চোখে থাকা চোখে লেগে থাকা অবাধ স্বপ্নেরই আরেকবার জয় হলো।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর কোমলমতি ছাত্র/ছাত্রীদের সাথে ছিলাম, আজও আছি। শত অনিশ্চয়তা আর করোনার সাথে লড়াই করে এসএসসির ফলাফল প্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণার দিন থেকেই প্রতিমুহুর্ত বিশেষ করে ফলাফল প্রাপ্তির সকাল থেকেই মনে হয় বাতাসে প্রিয়মুখগুলোর উল্লাস, একসাথে অনেকে মিলে বিজয় চিহ্ন প্রদর্শন করে জীবনে সামনে চলার ঘোষণা প্রকাশ, কখনও সখনও প্রিয়জনদের জড়িয়ে ধরে হাসি কান্নায় সুখানুভবের সবটুকু প্রকাশ। চোখে সামনে ঘটে যাওয়া এমন সব কিছুই আজ অচেনা।
এসএসসি ও সমমান পাস করা সকল শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন এবং অবারিত শুভেচ্ছা। কেউ কেউ হয়তো সফল হতে পারোনি তাদের বলবো-চলো আরেকবার সামনে চলি। আজকাল চোখ বুজলেই আমি লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর উচ্ছ্বাসের শব্দ শুনি। তোমাদের ফুলের মতো সুন্দর হাসির শব্দ, কথার ঝলকানি আর সুন্দর ভবিষ্যতের কমাণ্ডিং আমাকের আলোড়িত করে। শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমরা সবাই ভালো থেকো, ঘরে থেকো এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদে থাকবে।
লেখক : অধ্যক্ষ কর্নেল নুরন্ নবী (অব.)
প্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা, মাইলস্টোন কলেজ,
প্রাক্তন অধ্যক্ষ, ঝিনাইদহ ও ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ, প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ।
শুক্রবার, ০৫ জুন ২০২০
সমগ্র পৃথিবীর সুখ দুঃখ, হাসি কান্না, স্বাভাবিক জীবন যাপন সব কিছুকে গ্রাস করে আছে বৈশ্বয়িক মহামারি করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ রোগ। প্রতিদিনকার গতিময় জীবনকে থামিয়ে তার জায়গা দখল করেছে আতংক আর দীর্ঘ থেকে আরও দীর্ঘতর হওয়া মৃত্যুর মিছিল। ভারাক্রান্ত মন আরও ভারাক্রান্ত হয় আসে যখন ভাবি আমাদের প্রিয় শিক্ষার্থীদের কথা যারা কদিন আগেও শ্রেণিকক্ষগুলোকে অম্লান হাসি আর নানান স্বপ্নের কথায় মাতিয়ে রাখতেন, একটু আধটু খুনসুটি আর স্যারদের দরদী শাসন সব ছেড়ে ওরা আজ গৃহবন্দী। করোনার হানায় সব কিছুই তো তচনছ তারপরও একটু দেরিতে হলেও ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা মোবাইল ম্যাসেজ ও অনলাইনে এসএসসি ফল প্রদান করা হয়েছে। লাখ লাখ শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের জন্য এটা আনন্দের ও স্বস্তিদায়ক নিশ্চয়। আসলে ঘাত প্রতিঘাত মানুষের জীবনের চলাকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে কিন্তু একেবারে থামিয়ে দিতে পারে না-এটাই নতুন কৌশলে প্রকাশিত এসএসসির ফলাফলের একটা সুন্দর বার্তা। সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষাবোর্ড এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক অভিবাদন তো জানাতেই হবে কারণ বৈশ্বয়িক মহামারি কোভিড-১৯’র চোখরাঙ্গানি উপেক্ষা করে তারা ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের হাতে তাদের কাঙ্খিত ফলাফলটি দিতে পেরেছে। লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীদের জন্য, আমাদের জন্য এবং সমগ্র জাতির জন্য এটা স্বস্তির ও আনন্দের কারণ শত বাধার মাঝেও আমরা আমাদের কাজটি ঠিক সময়ে করতে পেরেছি।
আমি ঝিনাইদহ ও ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলাম। এছাড়াও রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ ও মাইলস্টোন কলেজের মতো দেশসেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের সাথে কাজ করা প্রতিটি দিনই ভালোলাগা আর ভালোবাসায় ভরপুর। তথাপি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিন অন্য যে কোন দিনগুলোর তুলনায় আলাদা থাকে। আলাদাভাবে সাজে, আলাদাভাবে হাসে যার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা হয়তো কঠিন। গত বছর এসএসসির ফলাফল প্রকাশের দিনকার সাথে আজকের দিনের তুলনা করলে মনে হয় প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বন্ধ দরজার দু’পাশে কেমন এক পারস্পরিক জমাট বাধা অভিমান নীরবে তাকিয়ে আছে। আমি আপনি হয়তো সেই ভাষা বুঝি কিন্তু কিছু বলতে বা স্পর্শ করতে পারি না। আমাদের ফুলের মতো ছাত্রছাত্রীদের জন্য এটা আরও বেদনার হলেও আমি বলবো শেষ পর্যন্ত ফলাফল হাতে পেয়ে চোখে থাকা চোখে লেগে থাকা অবাধ স্বপ্নেরই আরেকবার জয় হলো।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর কোমলমতি ছাত্র/ছাত্রীদের সাথে ছিলাম, আজও আছি। শত অনিশ্চয়তা আর করোনার সাথে লড়াই করে এসএসসির ফলাফল প্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণার দিন থেকেই প্রতিমুহুর্ত বিশেষ করে ফলাফল প্রাপ্তির সকাল থেকেই মনে হয় বাতাসে প্রিয়মুখগুলোর উল্লাস, একসাথে অনেকে মিলে বিজয় চিহ্ন প্রদর্শন করে জীবনে সামনে চলার ঘোষণা প্রকাশ, কখনও সখনও প্রিয়জনদের জড়িয়ে ধরে হাসি কান্নায় সুখানুভবের সবটুকু প্রকাশ। চোখে সামনে ঘটে যাওয়া এমন সব কিছুই আজ অচেনা।
এসএসসি ও সমমান পাস করা সকল শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন এবং অবারিত শুভেচ্ছা। কেউ কেউ হয়তো সফল হতে পারোনি তাদের বলবো-চলো আরেকবার সামনে চলি। আজকাল চোখ বুজলেই আমি লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর উচ্ছ্বাসের শব্দ শুনি। তোমাদের ফুলের মতো সুন্দর হাসির শব্দ, কথার ঝলকানি আর সুন্দর ভবিষ্যতের কমাণ্ডিং আমাকের আলোড়িত করে। শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমরা সবাই ভালো থেকো, ঘরে থেকো এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদে থাকবে।
লেখক : অধ্যক্ষ কর্নেল নুরন্ নবী (অব.)
প্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা, মাইলস্টোন কলেজ,
প্রাক্তন অধ্যক্ষ, ঝিনাইদহ ও ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ, প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ।