alt

জাতীয়

আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান হতে হবে : পিটিআইকে প্রধান উপদেষ্টা

সংবাদ নিউজ ডেস্ক : শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে ভারতের সঙ্গে যে মতপার্থক্য রয়েছে, তা সমাধানে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করবে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেছেন, এ চুক্তির বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে রয়েছে, যা কোনো দেশের জন্যই ভালো হচ্ছে না।

ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা তিস্তা চুক্তি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। ড. ইউনূস ঢাকায় তার সরকারি বাসভবনে বসে তিনি পিটিআইকে এই সাক্ষাৎকার দেন। পরে ওই সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।

তিনি দুই দেশের অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন সমস্যার সমাধান আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে করার তাগিদ দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশগুলো কতটা পানি পাবে, তার সুনির্দিষ্ট অধিকার তাদের আন্তর্জাতিক আইনে দেয়া আছে, যা সমুন্নত রাখা প্রয়োজন।

‘পানিবণ্টনের বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখার ফলে কোনো লাভ হচ্ছে না। আমি যদি জানি আমি কতটুকু পানি পাব, তাহলে সেটি আমার জন্য ভালো হবে। এমনকি পানির পরিমাণ নিয়ে আমি যদি সন্তুষ্ট নাও হই, তারপরও সেটা জানা আমার দরকার। এই সমস্যার সমাধান হতে হবে।’

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত তিস্তা চুক্তি করার জন্য ভারতকে চাপ দেবে কিনা, সেই প্রশ্নের জবাবে ইউনূস বলেন, ‘চাপ’ একটি বড় শব্দ। আমি এটা বলছি না। তবে আমরা চাইব। আমাদের একসঙ্গে বসে সমাধান করতে হবে।

কয়েকদিন আগে পিটিআইকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের পানি সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে দিল্লির সঙ্গে আলোচনা ফের শুরু করার জন্য ‘চাপ দেবে ঢাকা’।

উজান ও ভাটির দেশগুলোর মধ্যে অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন নিয়ে (অভিন্ন নদীর) দুই দেশকেই আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি অনুসরণ করার ওপর জোর দেন রিজওয়ানা। তিনি জানিয়েছেন, তিস্তা নদীর পানিবণ্টন ইস্যুতে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করার লক্ষ্যে ভারতের সঙ্গে আলোচনা পুনরায় শুরু করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার। তিনি জানিয়েছেন, তবে এই ইস্যুতে চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব না হলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও আইনের দ্বারস্থ হতে পারে।

উপদেষ্টার তিস্তা বিষয়ে মন্তব্যের কয়েকদিন পরপরই মুহাম্মদ ইউনূস তিস্তা নিয়ে তার সরকারের মনোভাব তুলে ধরলেন।

২০১১ সালেও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় এই বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য নির্ধারিত হয়েছিল, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার রাজ্যে পানির অভাবের কারণ তুলে ধরে এটিকে সমর্থন করতে অস্বীকার করেন। সেই থেকেই তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে চুক্তির বিষয়টি ঝুলে আছে।

নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার ভারতের ক্ষমতায় আসার পর তিস্তা চুক্তি নিয়ে ‘আশার কথা’ শোনা গেলেও মমতা মত বদলায়নি। ফলে দুই দেশের মধ্যে গত এক যুগে অধিকাংশ বৈঠকেই তিস্তার প্রসঙ্গ আলোচনায় এসেছে।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে পানিবণ্টন নিয়ে সর্বশেষ আলোচনা হয়েছিল। তখন কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি না হলেও শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে আলোচনা বিরোধ সমাধানের জন্য একটি নতুন প্রতিশ্রুতির ইঙ্গিত দিয়েছিল। সেই বৈঠকের পর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তিস্তা নদীর সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনার জন্য একটি কারিগরি দল পাঠানোর সিদ্ধান্তও নেয় ভারত।

চলতি বছরে দিল্লি সফরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, তার সরকার ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের বিষয়ে কারিগরি পর্যায়ের আলোচনা শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আলোচনার জন্য ভারতের একটি কারিগরি দল শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবে। সাক্ষাৎকারে ইউনূস বলেন, ‘তিস্তার পানিবণ্টন নতুন কোনো বিষয় নয়, খুবই পুরনো বিষয়। আমরা বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। এই আলোচনা শুরু হয়েছিল পাকিস্তান আমল থেকে। আমরা সবাই চেয়েছিলাম চুক্তিটি চূড়ান্ত রূপ পাক। এমনকি ভারত সরকারও প্রস্তুত ছিল। তখন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার এর জন্য তৈরি ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশগুলোর নির্দিষ্ট অধিকার সমুন্নত রাখতে হবে।’

আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি মেনে তিস্তা চুক্তির সমাধান করার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান। বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের বন্যার জন্য ভারতকে দায়ী করে ঢাকার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর নিয়ে পিটিআইকে ইউনূস বলেন, ‘চুক্তি সইয়ের আগে এ ধরনের একটি সংকট মোকাবিলায় একটা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা যেতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতীয় হাই কমিশনার যখন আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন, আমি বলেছি, বন্যার সময় পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেই লক্ষ্যে আমরা আরেকটু ভালো ব্যবস্থাপনার ওপর কাজ করতে পারি এবং এই ধরনের দুর্যোগ সংশ্লিষ্ট সমস্যারও সমাধান পারি। দুই দেশের মধ্যে এমন সমন্বয়ের ক্ষেত্রে কোনো চুক্তির প্রয়োজন নেই।’

‘মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই সমস্যা সমাধানে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি। কারণ তাতে করে গণমানুষের দুর্দশা লাঘব হবে। এ ধরনের মানবিক পদক্ষেপ সত্যিকার অর্থেই সহায়তা করবে’, বলে মত প্রধান উপদেষ্টার।

সীমান্ত হত্যার নিন্দা জানিয়ে ইউনূস বলেন, ‘কাউকে হত্যা করা কোনো সমাধান বয়ে আনে না। কারণ এই সমস্যা মোকাবিলার আইনি উপায় হাতে রয়েছে। এটা (সীমান্ত হত্যা) একতরফা ব্যাপার। আপনার দেশ দখলের জন্য কেউ সীমান্ত অতিক্রম করছে না। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে।’

তিস্তা একসময় করতোয়া নদীর মাধ্যমে গঙ্গার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল এবং এর অংশবিশেষ এখনও বুড়ি তিস্তা নদী নামে পরিচিত। তিস্তার মাসিক গড় পানি অপসারণের পরিমাণ ২,৪৩০ কিউসেক (এক কিউসেক পানি= প্রতি সেকেন্ডে পানির প্রবাহ ২৮. ৩২ লিটার)। ২০১৪ সালে তিস্তার ভারতীয় অংশে গজলডোবায় স্থাপিত বাঁধের সবগুলি গেটবন্ধ বন্ধ করে দেয়া হলে তিস্তা নদীর বাংলাদেশ অংশে জলপ্রবাহ শূন্যে নেমে আসে। এর ফলে বাংলাদেশের তিস্তা অববাহিকায় মানুষের জীবন যাত্রা স্থবির হয়ে পড়ে।

৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা নদী ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তিস্তার বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য ১১৫ কিলোমিটার। এই নদীর ওপর ভারত গজলডোবায় একটি বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করছে, এই বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের কোনো চুক্তি নেই। ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তির আলোকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি করার চেষ্টা করা হলেও তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।

ছবি

গরম ও সেচে বিদ্যুৎ সঙ্কটের শঙ্কা, দ্রুত বকেয়া পরিশোধের তাগিদ

জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠক: উপদেষ্টা মাহফুজ আলম

ছবি

নির্বাচনের সময়সীমা ঠিক করবে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো: জাতিসংঘের দূত

ছবি

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্তে সর্বদলীয় বৈঠক বৃহস্পতিবার

ছবি

অবৈধ বিদেশিদের বৈধ হওয়ার সময় মনে করিয়ে দিল সরকার

ছবি

টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ: পদত্যাগের আহ্বান এবং তদন্তের দাবি

ছবি

১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় বাবর খালাস, মুক্তিতে আর কোনো বাধা নেই

হাসিনাসহ জড়িতদের কল রেকর্ডের ফরেনসিক পরীক্ষার নির্দেশ

ছবি

মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে জগন্নাথ শিক্ষার্থীদের অনশন প্রত্যাহার, চলবে শাটডাউন

পাঠ্যপুস্তকের প্রচ্ছদ থেকে “আদিবাসী” শব্দযুক্ত গ্রাফিতি বাদ দেওয়ায় প্রতিবাদ

ছবি

বাংলাদেশ-মেক্সিকো পণ্যবাহী কার্গো সেবা চালু করতে চাই: রাষ্ট্রদূত ফজল আনসারী

ছবি

জাকসু নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জাবি উপাচার্যের মতবিনিময়, ১ ফেব্রুয়ারি তফসিল

এইচএমপি ভাইরাস সংক্রমক রোগী শনাক্ত এই মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় ঃ আতংক ও উদ্দেগের কারন নেই-ডাঃ মোস্তাক

ছবি

শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের কল রেকর্ডের ফরেনসিক পরীক্ষার নির্দেশ

ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জাকসু নির্বাচনের পরামর্শ চেয়েছেন উপাচার্য

ছবি

সেনাবাহিনীকে কাজ হস্তান্তরের আশ্বাসে অনশন প্রত্যাহার, বুধবার পর্যন্ত শাটডাউন

ছবি

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভ্যাট বৃদ্ধি ও আমদানির উদ্যোগ: খাদ্য উপদেষ্টা

ছবি

সীমান্তে বেড়া নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনা, দিল্লিতে তলব বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনারকে

ছবি

তিন দফা: পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সচিবালয়ের সামনে জবি শিক্ষার্থীদের অবস্থান

ছবি

পিএসসির ছয় নতুন সদস্যের নিয়োগ বাতিল

ছবি

সচিবালয়ের উদ্দেশ্যে জবি শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা

ছবি

পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম: শেখ হাসিনা ও পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

তাপমাত্রা আরও বাড়ল, কমতে পারে বুধবার থেকে

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে না: হাইকোর্ট

ছবি

১ ঘণ্টার আল্টিমেটাম, দেড়টায় সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রার ঘোষণা

ছবি

বায়ুদূষণের শীর্ষে মঙ্গোলিয়ার উলানবাটার, ঢাকা দ্বিতীয়

কমিশনের সামগ্রিক মনোযোগ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে : ইসি

ভ্যাট বাড়লেও সাধারণ মানুষের ওপর খুব প্রভাব পড়বে না : প্রেস সচিব

টিউলিপের দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অনুসন্ধান প্রয়োজন: সানডে টাইমসকে ড. ইউনূস

গণঅভ্যুত্থানের পর ২ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় তিন হাজার শিক্ষক ‘অবাঞ্ছিত’

ছবি

অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় শুল্ক ও কর বৃদ্ধি

ছবি

দুর্নীতি ও অর্থপাচার অভিযোগে সমালোচনার মুখে ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্টের চেয়ারম্যান

ছাদ বাগান বৈশ্বিক উষ্ণতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি কার্যকর সমাধান : পরিবেশ উপদেষ্টা

গুলি চালানোর ঘটনায় কনস্টেবল কারাগারে

ছবি

সীমান্তে অপরাধ দমনে বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতা: প্রণয় ভার্মা

ছবি

শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান দীর্ঘায়িত হওয়া উচিত: মণি শঙ্কর আইয়ার

tab

জাতীয়

আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান হতে হবে : পিটিআইকে প্রধান উপদেষ্টা

সংবাদ নিউজ ডেস্ক

শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে ভারতের সঙ্গে যে মতপার্থক্য রয়েছে, তা সমাধানে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করবে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেছেন, এ চুক্তির বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে রয়েছে, যা কোনো দেশের জন্যই ভালো হচ্ছে না।

ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা তিস্তা চুক্তি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। ড. ইউনূস ঢাকায় তার সরকারি বাসভবনে বসে তিনি পিটিআইকে এই সাক্ষাৎকার দেন। পরে ওই সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।

তিনি দুই দেশের অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন সমস্যার সমাধান আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে করার তাগিদ দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশগুলো কতটা পানি পাবে, তার সুনির্দিষ্ট অধিকার তাদের আন্তর্জাতিক আইনে দেয়া আছে, যা সমুন্নত রাখা প্রয়োজন।

‘পানিবণ্টনের বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখার ফলে কোনো লাভ হচ্ছে না। আমি যদি জানি আমি কতটুকু পানি পাব, তাহলে সেটি আমার জন্য ভালো হবে। এমনকি পানির পরিমাণ নিয়ে আমি যদি সন্তুষ্ট নাও হই, তারপরও সেটা জানা আমার দরকার। এই সমস্যার সমাধান হতে হবে।’

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত তিস্তা চুক্তি করার জন্য ভারতকে চাপ দেবে কিনা, সেই প্রশ্নের জবাবে ইউনূস বলেন, ‘চাপ’ একটি বড় শব্দ। আমি এটা বলছি না। তবে আমরা চাইব। আমাদের একসঙ্গে বসে সমাধান করতে হবে।

কয়েকদিন আগে পিটিআইকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের পানি সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে দিল্লির সঙ্গে আলোচনা ফের শুরু করার জন্য ‘চাপ দেবে ঢাকা’।

উজান ও ভাটির দেশগুলোর মধ্যে অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন নিয়ে (অভিন্ন নদীর) দুই দেশকেই আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি অনুসরণ করার ওপর জোর দেন রিজওয়ানা। তিনি জানিয়েছেন, তিস্তা নদীর পানিবণ্টন ইস্যুতে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করার লক্ষ্যে ভারতের সঙ্গে আলোচনা পুনরায় শুরু করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার। তিনি জানিয়েছেন, তবে এই ইস্যুতে চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব না হলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও আইনের দ্বারস্থ হতে পারে।

উপদেষ্টার তিস্তা বিষয়ে মন্তব্যের কয়েকদিন পরপরই মুহাম্মদ ইউনূস তিস্তা নিয়ে তার সরকারের মনোভাব তুলে ধরলেন।

২০১১ সালেও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় এই বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য নির্ধারিত হয়েছিল, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার রাজ্যে পানির অভাবের কারণ তুলে ধরে এটিকে সমর্থন করতে অস্বীকার করেন। সেই থেকেই তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে চুক্তির বিষয়টি ঝুলে আছে।

নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার ভারতের ক্ষমতায় আসার পর তিস্তা চুক্তি নিয়ে ‘আশার কথা’ শোনা গেলেও মমতা মত বদলায়নি। ফলে দুই দেশের মধ্যে গত এক যুগে অধিকাংশ বৈঠকেই তিস্তার প্রসঙ্গ আলোচনায় এসেছে।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে পানিবণ্টন নিয়ে সর্বশেষ আলোচনা হয়েছিল। তখন কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি না হলেও শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে আলোচনা বিরোধ সমাধানের জন্য একটি নতুন প্রতিশ্রুতির ইঙ্গিত দিয়েছিল। সেই বৈঠকের পর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তিস্তা নদীর সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনার জন্য একটি কারিগরি দল পাঠানোর সিদ্ধান্তও নেয় ভারত।

চলতি বছরে দিল্লি সফরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, তার সরকার ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের বিষয়ে কারিগরি পর্যায়ের আলোচনা শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আলোচনার জন্য ভারতের একটি কারিগরি দল শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবে। সাক্ষাৎকারে ইউনূস বলেন, ‘তিস্তার পানিবণ্টন নতুন কোনো বিষয় নয়, খুবই পুরনো বিষয়। আমরা বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। এই আলোচনা শুরু হয়েছিল পাকিস্তান আমল থেকে। আমরা সবাই চেয়েছিলাম চুক্তিটি চূড়ান্ত রূপ পাক। এমনকি ভারত সরকারও প্রস্তুত ছিল। তখন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার এর জন্য তৈরি ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশগুলোর নির্দিষ্ট অধিকার সমুন্নত রাখতে হবে।’

আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি মেনে তিস্তা চুক্তির সমাধান করার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান। বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের বন্যার জন্য ভারতকে দায়ী করে ঢাকার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর নিয়ে পিটিআইকে ইউনূস বলেন, ‘চুক্তি সইয়ের আগে এ ধরনের একটি সংকট মোকাবিলায় একটা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা যেতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতীয় হাই কমিশনার যখন আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন, আমি বলেছি, বন্যার সময় পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেই লক্ষ্যে আমরা আরেকটু ভালো ব্যবস্থাপনার ওপর কাজ করতে পারি এবং এই ধরনের দুর্যোগ সংশ্লিষ্ট সমস্যারও সমাধান পারি। দুই দেশের মধ্যে এমন সমন্বয়ের ক্ষেত্রে কোনো চুক্তির প্রয়োজন নেই।’

‘মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই সমস্যা সমাধানে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি। কারণ তাতে করে গণমানুষের দুর্দশা লাঘব হবে। এ ধরনের মানবিক পদক্ষেপ সত্যিকার অর্থেই সহায়তা করবে’, বলে মত প্রধান উপদেষ্টার।

সীমান্ত হত্যার নিন্দা জানিয়ে ইউনূস বলেন, ‘কাউকে হত্যা করা কোনো সমাধান বয়ে আনে না। কারণ এই সমস্যা মোকাবিলার আইনি উপায় হাতে রয়েছে। এটা (সীমান্ত হত্যা) একতরফা ব্যাপার। আপনার দেশ দখলের জন্য কেউ সীমান্ত অতিক্রম করছে না। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে।’

তিস্তা একসময় করতোয়া নদীর মাধ্যমে গঙ্গার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল এবং এর অংশবিশেষ এখনও বুড়ি তিস্তা নদী নামে পরিচিত। তিস্তার মাসিক গড় পানি অপসারণের পরিমাণ ২,৪৩০ কিউসেক (এক কিউসেক পানি= প্রতি সেকেন্ডে পানির প্রবাহ ২৮. ৩২ লিটার)। ২০১৪ সালে তিস্তার ভারতীয় অংশে গজলডোবায় স্থাপিত বাঁধের সবগুলি গেটবন্ধ বন্ধ করে দেয়া হলে তিস্তা নদীর বাংলাদেশ অংশে জলপ্রবাহ শূন্যে নেমে আসে। এর ফলে বাংলাদেশের তিস্তা অববাহিকায় মানুষের জীবন যাত্রা স্থবির হয়ে পড়ে।

৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা নদী ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তিস্তার বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য ১১৫ কিলোমিটার। এই নদীর ওপর ভারত গজলডোবায় একটি বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করছে, এই বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের কোনো চুক্তি নেই। ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তির আলোকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি করার চেষ্টা করা হলেও তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।

back to top