রাজধানীর গাবতলীর গরুর হাটের বুধবারের ছবি-সংবাদ
ঈদুল-আজহা উপলক্ষে রাজধানীতে যে কয়টি কোরবানির পশুর হাট বসে তারমধ্যে অন্যতম বৃহৎ একটি গাবতলী হাট। প্রতিবছর কুরবানির পাশাপাশি এই হাটে বারোমাসেই পশু বেচা-কেনা হয়। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও দেশি গরুর পাশাপাশি বিদেশি বিভিন্ন জাতের গরু, মহিষ, খাসি-ছাগল-ভেড়াসহ হাজার হাজার পশুতে হাট কানায় কানায় পূর্ণ। হাটের নির্ধারিত এলাকা ছাড়িয়েও ছাউনি ও প্যান্ডেল খাটিয়ে গরু রাখা হয়েছে। হাটে পর্যাপ্ত পশু সরবরাহ হওয়ায় খামারি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘বেচা বিক্রি একদম কম, দামও কম। ক্রেতার বলছেন, এবার দাম ঠিক আছে।
বুধবার (৪ জুন) রাজধানীর গাবতলী পশুর হাট বেলা ১২টা বিকেল ৩টা পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, সারা দেশ থেকে আসা পশু গুলো ছাউনির নিচে বাঁশের খুটিতে বেঁধে রেখেছেন ব্যবসায়ী ও খামারিরা। কোনো খামারি ও ব্যবসায়ীরা কেউ দুটি-পাঁচটি থেকে বারটি, আবার তারও অধিক পশু নিয়ে এই হাঁটে এসেছেন। সঙ্গে আসা লোকজন কেউ পশু গুলোকে খাবার দিচ্ছেন, কেউ বা পরিচর্যা করছেন। কেউবা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন দরও হাঁকছেন। আবার কেউ পালাবদল ঘুমুতে গেছেন।
অনেকে দুই-তিন দিন আগে এই হাটে পশু নিয়ে আসলেও কেউ বিক্রি করেছেন একটি আবার কেউ এখনো বিক্রি করতে পারেননি। হাটে বিদেশি ও বড় আকারের গরু বিক্রি হতে দেখা না গেলেও ছোট ও মাঝারি আকারের দেশি গরু বেশি বিক্রি হতে দেখা গেছে। এসব গরু ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকার মধ্যে বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর বিদেশি জাতের বড় আকারে ৮০০ থেকে ১৪০০ কেজি ওজনের গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ৭ থেকে ১৫ লাখ পর্যন্ত। সরবরাহের বিপরীতে বিক্রি কম হওয়া ও ক্রেতারা দাম কম বলার খামারী এবং ব্যবসায়ীদের মাঝে এক প্রকার হতাশার ছাপ দেখা গেল । হাট থেকে পছন্দের কোরবানির পশু কিনে কেউ ফিরছেন, আবার কেউ প্রবেশ করছেন। তবে, ওই সময়ের মধ্যে ক্রেতাসাধারণের উপস্থিতি কম দেখা গেছে।
এই হাটে রাজবাড়ি থেকে বিদেশি ফ্রিজিয়ান জাতের ৭টি বড় আকারের গরু নিয়ে এসেছেন ফরিদ উদ্দিন, মজিবর ও বিনয় দাসসহ ৭ জন। এই ৬টা গরু গুলোর গায়ের ওজন ২০ থেকে ৩২ মণ। ওই সময় পর্যন্ত তাদের একটি গরুও বিক্রি হয়নি। জানতে চাইলে তাদের একজন ফরিদ উদ্দিন সংবাদকে বলেন, ‘এবারের বাজারটা ভালো হবে না। যে দেশে সরকার নাই, সে দেশ ভালো থাকে না। আপনার সংসারে যদি অভিভাবক না থাকে ঐ সংসারে কোনো আয় উন্নতি হয় না। যেই থাক, দেশে থাকতে হবে নির্বাচিত সরকার। যারা ১০ লাখ টাকা দিয়ে গরু কিনতো তার আর দেশে নাই।’
দাম কতো চাচ্ছেন? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘৩২ মণেরটার দাম ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।’ ফাইনালি কতো হলে বিক্রি করবেন এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘১০ লাখের নিচে বিক্রি করবো না।’
‘গরুর খাবারের জন্য ১০ বস্তা ভুষি, ১০ বস্তা ধানের কুরিসহ ৪ ড্রপ খর নিয়ে এসেছি আর আমাদের ৭ জনের প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে,’ বলেও জানান ফরিদ।
পাশের গলিতে গত রোববার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা থেকে শাহিওয়াল জাতের ৮টি গরু নিয়ে সুজনসহ ৫ জন। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত একটাও বিক্রি হয় নাই। ১২-১৩শ’ কেজি ওজনের গরুটার দাম চাচ্ছি সাড়ে ১৩ লাখ। দাম করেছে ১০ লাখ, আরেকটু বাড়ালে ছাড়ি (বিক্রি) দেবো। আর ঐ যে ছোটটা দেখছেন ঐ টা ৫ লাখ হলেই দিবো।’
তবে এই হাটে বোনের জন্য একটি দেশি গরু কিনতে দেখা গেছে কল্যানপুরের শরিফ হোসেনকে। তার কাছে দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘দাম ঠিক আছে। ১ লাখ ৩৫ হাজার চাইছিল। ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে নিয়েছি।’
কোরবানির পশু ক্রেতা-বিক্রেতারা কেউ কেউ বলছেন, গত কয়েক বছরে গরুর দাম বাড়ার কারণে অনেকে কোরবানি দিতে পারছেন না। আগে যে ব্যাক্তি একটি গরু কোরবানি দিতেন, এখন দেন ৩-৫-৭ ভাগে। কেউ আবার গরুর বদলে খাসি-ছাগল-ভেরা কোরবানি দিচ্ছেন।
ওই হাটে ১ নাম্বার কাউন্টারের হাসিল নিচ্ছেন জলিল। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘এবার বেচা-বিক্রি ভালো না। এই সময় ভির হতো, কথা বলার সুযোগ ছিল না। হাসিল নিচ্ছি হাজারে ৫০ টাকা।’
গত ৪ মে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, এবার ঈদুল আজহায় প্রায় ২১ লাখ কোরবানিযোগ্য প্রাণী উদ্বৃত্ত থাকবে। তারা ২০২৪ সালে প্রায় ২৩ লাখ এবং ২০২৩ সালে ২১ লাখের বেশি কোরবানিযোগ্য প্রাণী উদ্বৃত্ত থাকার তথ্য দিয়েছিল।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, বাজারে এখন গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর গাবতলীর গরুর হাটের বুধবারের ছবি-সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫
ঈদুল-আজহা উপলক্ষে রাজধানীতে যে কয়টি কোরবানির পশুর হাট বসে তারমধ্যে অন্যতম বৃহৎ একটি গাবতলী হাট। প্রতিবছর কুরবানির পাশাপাশি এই হাটে বারোমাসেই পশু বেচা-কেনা হয়। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও দেশি গরুর পাশাপাশি বিদেশি বিভিন্ন জাতের গরু, মহিষ, খাসি-ছাগল-ভেড়াসহ হাজার হাজার পশুতে হাট কানায় কানায় পূর্ণ। হাটের নির্ধারিত এলাকা ছাড়িয়েও ছাউনি ও প্যান্ডেল খাটিয়ে গরু রাখা হয়েছে। হাটে পর্যাপ্ত পশু সরবরাহ হওয়ায় খামারি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘বেচা বিক্রি একদম কম, দামও কম। ক্রেতার বলছেন, এবার দাম ঠিক আছে।
বুধবার (৪ জুন) রাজধানীর গাবতলী পশুর হাট বেলা ১২টা বিকেল ৩টা পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, সারা দেশ থেকে আসা পশু গুলো ছাউনির নিচে বাঁশের খুটিতে বেঁধে রেখেছেন ব্যবসায়ী ও খামারিরা। কোনো খামারি ও ব্যবসায়ীরা কেউ দুটি-পাঁচটি থেকে বারটি, আবার তারও অধিক পশু নিয়ে এই হাঁটে এসেছেন। সঙ্গে আসা লোকজন কেউ পশু গুলোকে খাবার দিচ্ছেন, কেউ বা পরিচর্যা করছেন। কেউবা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন দরও হাঁকছেন। আবার কেউ পালাবদল ঘুমুতে গেছেন।
অনেকে দুই-তিন দিন আগে এই হাটে পশু নিয়ে আসলেও কেউ বিক্রি করেছেন একটি আবার কেউ এখনো বিক্রি করতে পারেননি। হাটে বিদেশি ও বড় আকারের গরু বিক্রি হতে দেখা না গেলেও ছোট ও মাঝারি আকারের দেশি গরু বেশি বিক্রি হতে দেখা গেছে। এসব গরু ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকার মধ্যে বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর বিদেশি জাতের বড় আকারে ৮০০ থেকে ১৪০০ কেজি ওজনের গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ৭ থেকে ১৫ লাখ পর্যন্ত। সরবরাহের বিপরীতে বিক্রি কম হওয়া ও ক্রেতারা দাম কম বলার খামারী এবং ব্যবসায়ীদের মাঝে এক প্রকার হতাশার ছাপ দেখা গেল । হাট থেকে পছন্দের কোরবানির পশু কিনে কেউ ফিরছেন, আবার কেউ প্রবেশ করছেন। তবে, ওই সময়ের মধ্যে ক্রেতাসাধারণের উপস্থিতি কম দেখা গেছে।
এই হাটে রাজবাড়ি থেকে বিদেশি ফ্রিজিয়ান জাতের ৭টি বড় আকারের গরু নিয়ে এসেছেন ফরিদ উদ্দিন, মজিবর ও বিনয় দাসসহ ৭ জন। এই ৬টা গরু গুলোর গায়ের ওজন ২০ থেকে ৩২ মণ। ওই সময় পর্যন্ত তাদের একটি গরুও বিক্রি হয়নি। জানতে চাইলে তাদের একজন ফরিদ উদ্দিন সংবাদকে বলেন, ‘এবারের বাজারটা ভালো হবে না। যে দেশে সরকার নাই, সে দেশ ভালো থাকে না। আপনার সংসারে যদি অভিভাবক না থাকে ঐ সংসারে কোনো আয় উন্নতি হয় না। যেই থাক, দেশে থাকতে হবে নির্বাচিত সরকার। যারা ১০ লাখ টাকা দিয়ে গরু কিনতো তার আর দেশে নাই।’
দাম কতো চাচ্ছেন? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘৩২ মণেরটার দাম ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।’ ফাইনালি কতো হলে বিক্রি করবেন এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘১০ লাখের নিচে বিক্রি করবো না।’
‘গরুর খাবারের জন্য ১০ বস্তা ভুষি, ১০ বস্তা ধানের কুরিসহ ৪ ড্রপ খর নিয়ে এসেছি আর আমাদের ৭ জনের প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে,’ বলেও জানান ফরিদ।
পাশের গলিতে গত রোববার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা থেকে শাহিওয়াল জাতের ৮টি গরু নিয়ে সুজনসহ ৫ জন। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত একটাও বিক্রি হয় নাই। ১২-১৩শ’ কেজি ওজনের গরুটার দাম চাচ্ছি সাড়ে ১৩ লাখ। দাম করেছে ১০ লাখ, আরেকটু বাড়ালে ছাড়ি (বিক্রি) দেবো। আর ঐ যে ছোটটা দেখছেন ঐ টা ৫ লাখ হলেই দিবো।’
তবে এই হাটে বোনের জন্য একটি দেশি গরু কিনতে দেখা গেছে কল্যানপুরের শরিফ হোসেনকে। তার কাছে দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘দাম ঠিক আছে। ১ লাখ ৩৫ হাজার চাইছিল। ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে নিয়েছি।’
কোরবানির পশু ক্রেতা-বিক্রেতারা কেউ কেউ বলছেন, গত কয়েক বছরে গরুর দাম বাড়ার কারণে অনেকে কোরবানি দিতে পারছেন না। আগে যে ব্যাক্তি একটি গরু কোরবানি দিতেন, এখন দেন ৩-৫-৭ ভাগে। কেউ আবার গরুর বদলে খাসি-ছাগল-ভেরা কোরবানি দিচ্ছেন।
ওই হাটে ১ নাম্বার কাউন্টারের হাসিল নিচ্ছেন জলিল। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘এবার বেচা-বিক্রি ভালো না। এই সময় ভির হতো, কথা বলার সুযোগ ছিল না। হাসিল নিচ্ছি হাজারে ৫০ টাকা।’
গত ৪ মে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, এবার ঈদুল আজহায় প্রায় ২১ লাখ কোরবানিযোগ্য প্রাণী উদ্বৃত্ত থাকবে। তারা ২০২৪ সালে প্রায় ২৩ লাখ এবং ২০২৩ সালে ২১ লাখের বেশি কোরবানিযোগ্য প্রাণী উদ্বৃত্ত থাকার তথ্য দিয়েছিল।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, বাজারে এখন গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।