ক্যাস্পিয়ান সাগরের তীরের প্রাচীন বন্দর নগরীর বিখ?্যাত বাকুর অলিম্পিক স্টেডিয়ামের আয়োজিত ২৯তম কপ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) ব্যস্ত সময় পার করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনদিনের সফরের শেষ দিন সকালে প্রধান উপদেষ্টা আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাকুর তেল কোম্পানিতে বাংলাদেশিদের চাকরির সুযোগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান প্রধান উপেদষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর আরবাইজানের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো গভীর করতে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে আশা প্রকাশ করেন যে, তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে। তিনি অধ্যাপক ইউনূসকে বলেন, ‘আপনার কাজটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। তবে আমি জানি আপনি এই চ্যালেঞ্জ সফলভাবে অতিক্রম করতে পারবেন।’
তিনি জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করার ক্ষেত্রগুলো খুঁজে বের করতে আজারবাইজান সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল আগামী বছরের প্রথম দিকে বাংলাদেশ সফর করবে।
ইলহাম আলিয়েভের উল্লেখ করেন, তার সরকার বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে উভয় দেশের জন্য বাড়তি সম্ভাবনা দেখতে পাওয়ায় ঢাকায় একটি আবাসিক দূতাবাস খোলার সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছে।
প্রেসিডেন্ট আলিয়েভ জুলাই-আগস্ট মাসের ছাত্রনেতৃত্বাধীন বিপ্লবের প্রশংসা করে বলেন, তিনি কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের ঘটনাবলি পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি জানান, অধ্যাপক ইউনূসের চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে আজারবাইজানে একটি যুব স্বনির্ভর কর্মসূচি চালু করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা দুই দেশের মধ্যে আরো দৃঢ় সম্পর্কের আহ্বান জানিয়ে বলেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক এবং প্রধান আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে সহযোগিতা বৃদ্ধি পেলে উভয় দেশ সমৃদ্ধ হবে। ইউনূস আরও বলেন, তেলসমৃদ্ধ মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে আরও বেশি বাংলাদেশির কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকা উচিত।
প্রেসিডেন্ট আলিয়েভ বলেন, আজারবাইজান ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের ডিজিটালাইজেশনের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং তুরস্ক ও আজারবাইজানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আমানুল হক উপস্থিত ছিলেন।
দু’দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের বৈঠকের পর মুহাম্মদ ইউনূস সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র সঙ্গে জলবায়ু সম্মেলনে সাইডলাইনে বৈঠক করেন। তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ব্রাজিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরালদো আলকমিনের স্ত্রী লু আলকমিন।
জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিয়ে ইউনূস বলেন, প্রতি বছর কপ জলবায়ু সম্মেলন করা উচিত নয় বলে তিনি মনে করেন। তার মতে, বিশ্বের কী প্রয়োজন তা আমরা জানি এবং এর জন্য আমাদের একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা উচিত। এটি দেশ অনুযায়ী হওয়া উচিত। আমাদের দীর্ঘমেয়াদী (বর্জ্য) নিরসনের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। আমাদের প্রতি বছর এখানে দেখা করার দরকার নেই। প্রতি বছর আলোচনার জন্য মিটিং করা সময়সাপেক্ষ, অপচয় এবং অপমানজনক।
এদিকে, বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের চতুর্থ দিনও সম্মেলনের প্রবেশমুখে নায্য অর্থায়নের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন পরিবেশবাদীরা।
অন্যদিকে, কপ-২৯ এর সিইও এলনুর সোলতানভ বিশ্বের বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকগুলো জলবায়রু ক্ষতি মোকাবিলায় যে অর্থায়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তাকে স্বাগত জানালেও আরও অর্থের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
কপ-২৯ এর সিইও আরও বলেন, চীন বাদে অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য জলবায়ু অর্থায়নে আনুমানিক ২.৪ ট্রিলিয়ন প্রয়োজন, যার ১ ট্রিলিয়ন বাহ্যিক উৎস থেকে আসে। কিন্তু যদি আমরা এটাকে এক মুহুর্তের জন্য একপাশে রাখি, তাহলে আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ রাখা। বিশ্বকে এটার দিকে ধাবিত করতে চাইলে অর্থায়নকে আরও কার্যকর করতে হবে।
এছাড়া বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের সাইড লাইন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তার সরকার দেশের তৈরি খাতে আরও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার প্রয়াসে শ্রম খাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করবে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করার সময় ইউনূস বলেন, শ্রম ইস্যুটি আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের অন্যতম এবং আমরা সব শ্রম সমস্যার সমাধান করতে চাই।
থেরেসা মে বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রম ইস্যুতে কাজ করার ইচ্ছাও ব্যক্ত করেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মানব পাচার ও অভিবাসন ইস্যু নিয়েও আলোচনা করেন। ইউনূস আইনি মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে অভিবাসন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটি ঝুঁকি ও অনিয়মিত অভিবাসন কমিয়ে দেবে এবং মানব পাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে। অধ্যাপক ইউনূস থেরেসা মেকে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সময় বাংলাদেশী তরুণদের আঁকা গ্রাফিতি ও ম্যুরাল বিষয়ক বই আর্ট অফ ট্রায়াম্ফের একটি অনুলিপি উপহার দেন।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব ও মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, তুরস্ক এবং আজারবাইজানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আনামুল হক উপস্থিত ছিলেন।
দুপুরে ব্রাজিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরালদো আলকমিনের স্ত্রী লু আলকমিন কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ব্রাজিলের সেকেন্ড লেডি ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ইউনূসকে নিয়ে রচিত তার লেখা একটি বই প্রধান উপদেষ্টাকে উপহার দেন। তিনি জানান, ইউনূসের কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি তার বইগুলো অনুবাদ করেছেন এবং সামাজিক ব্যবসার উদ্যোগ চালু করেছেন। অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ব্রাজিলের মধ্যে বাণিজ্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে কপ-২৯ এর এক সাইড ইভেন্টে বক্তারা বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে জাস্ট ট্রানজিশনে অর্থায়নের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে আয়োজিত ‘অ্যাকসিলারেটিং ফাইন্যান্স ফর জাস্ট ট্রানজিশন ইন বাংলাদেশ: ইনসাইট ফ্রম কপ২৯’ শীর্ষক অনুষ্ঠান থেকে এ আহ্বান জানানো হয়। অনুষ্ঠান থেকে আরও জানানো হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান’র (এনএপি) সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০২৩-২০৫০ সালের মধ্যে পরিবর্তনের কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ১১.৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলো ৪.১ মিলিয়ন মানুষের জন্য জলবায়ু সহিষ্ণু কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান রাখবে। ওশি ফাউন্ডেশন, ইয়ুথনেট গ্লোবাল এবং ফ্রেডরিখ-ইবার্ট স্টিফটুং (এফইএস), বাংলাদেশ নামে একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওশি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আমিনুর রশিদ চৌধুরী রিপনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ। ওশি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারপার্সন ড. এস এম মোর্শেদ উক্ত বিষয়ে তার উপস্থাপনা তুলে ধরেন।
এবারের আয়োজনে প্রতিনিধি পাঠালেও অংশ নেননি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, কানাডা ও ভারতের মতো পরিবেশ ধ্বংসের জন?্য দায়ী দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানরা।
শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪
ক্যাস্পিয়ান সাগরের তীরের প্রাচীন বন্দর নগরীর বিখ?্যাত বাকুর অলিম্পিক স্টেডিয়ামের আয়োজিত ২৯তম কপ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) ব্যস্ত সময় পার করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনদিনের সফরের শেষ দিন সকালে প্রধান উপদেষ্টা আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাকুর তেল কোম্পানিতে বাংলাদেশিদের চাকরির সুযোগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান প্রধান উপেদষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর আরবাইজানের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো গভীর করতে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে আশা প্রকাশ করেন যে, তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে। তিনি অধ্যাপক ইউনূসকে বলেন, ‘আপনার কাজটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। তবে আমি জানি আপনি এই চ্যালেঞ্জ সফলভাবে অতিক্রম করতে পারবেন।’
তিনি জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করার ক্ষেত্রগুলো খুঁজে বের করতে আজারবাইজান সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল আগামী বছরের প্রথম দিকে বাংলাদেশ সফর করবে।
ইলহাম আলিয়েভের উল্লেখ করেন, তার সরকার বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে উভয় দেশের জন্য বাড়তি সম্ভাবনা দেখতে পাওয়ায় ঢাকায় একটি আবাসিক দূতাবাস খোলার সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছে।
প্রেসিডেন্ট আলিয়েভ জুলাই-আগস্ট মাসের ছাত্রনেতৃত্বাধীন বিপ্লবের প্রশংসা করে বলেন, তিনি কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের ঘটনাবলি পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি জানান, অধ্যাপক ইউনূসের চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে আজারবাইজানে একটি যুব স্বনির্ভর কর্মসূচি চালু করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা দুই দেশের মধ্যে আরো দৃঢ় সম্পর্কের আহ্বান জানিয়ে বলেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক এবং প্রধান আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে সহযোগিতা বৃদ্ধি পেলে উভয় দেশ সমৃদ্ধ হবে। ইউনূস আরও বলেন, তেলসমৃদ্ধ মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে আরও বেশি বাংলাদেশির কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকা উচিত।
প্রেসিডেন্ট আলিয়েভ বলেন, আজারবাইজান ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের ডিজিটালাইজেশনের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং তুরস্ক ও আজারবাইজানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আমানুল হক উপস্থিত ছিলেন।
দু’দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের বৈঠকের পর মুহাম্মদ ইউনূস সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র সঙ্গে জলবায়ু সম্মেলনে সাইডলাইনে বৈঠক করেন। তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ব্রাজিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরালদো আলকমিনের স্ত্রী লু আলকমিন।
জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিয়ে ইউনূস বলেন, প্রতি বছর কপ জলবায়ু সম্মেলন করা উচিত নয় বলে তিনি মনে করেন। তার মতে, বিশ্বের কী প্রয়োজন তা আমরা জানি এবং এর জন্য আমাদের একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা উচিত। এটি দেশ অনুযায়ী হওয়া উচিত। আমাদের দীর্ঘমেয়াদী (বর্জ্য) নিরসনের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। আমাদের প্রতি বছর এখানে দেখা করার দরকার নেই। প্রতি বছর আলোচনার জন্য মিটিং করা সময়সাপেক্ষ, অপচয় এবং অপমানজনক।
এদিকে, বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের চতুর্থ দিনও সম্মেলনের প্রবেশমুখে নায্য অর্থায়নের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন পরিবেশবাদীরা।
অন্যদিকে, কপ-২৯ এর সিইও এলনুর সোলতানভ বিশ্বের বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকগুলো জলবায়রু ক্ষতি মোকাবিলায় যে অর্থায়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তাকে স্বাগত জানালেও আরও অর্থের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
কপ-২৯ এর সিইও আরও বলেন, চীন বাদে অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য জলবায়ু অর্থায়নে আনুমানিক ২.৪ ট্রিলিয়ন প্রয়োজন, যার ১ ট্রিলিয়ন বাহ্যিক উৎস থেকে আসে। কিন্তু যদি আমরা এটাকে এক মুহুর্তের জন্য একপাশে রাখি, তাহলে আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ রাখা। বিশ্বকে এটার দিকে ধাবিত করতে চাইলে অর্থায়নকে আরও কার্যকর করতে হবে।
এছাড়া বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের সাইড লাইন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তার সরকার দেশের তৈরি খাতে আরও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার প্রয়াসে শ্রম খাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করবে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করার সময় ইউনূস বলেন, শ্রম ইস্যুটি আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের অন্যতম এবং আমরা সব শ্রম সমস্যার সমাধান করতে চাই।
থেরেসা মে বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রম ইস্যুতে কাজ করার ইচ্ছাও ব্যক্ত করেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মানব পাচার ও অভিবাসন ইস্যু নিয়েও আলোচনা করেন। ইউনূস আইনি মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে অভিবাসন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটি ঝুঁকি ও অনিয়মিত অভিবাসন কমিয়ে দেবে এবং মানব পাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে। অধ্যাপক ইউনূস থেরেসা মেকে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সময় বাংলাদেশী তরুণদের আঁকা গ্রাফিতি ও ম্যুরাল বিষয়ক বই আর্ট অফ ট্রায়াম্ফের একটি অনুলিপি উপহার দেন।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব ও মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, তুরস্ক এবং আজারবাইজানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আনামুল হক উপস্থিত ছিলেন।
দুপুরে ব্রাজিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরালদো আলকমিনের স্ত্রী লু আলকমিন কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ব্রাজিলের সেকেন্ড লেডি ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ইউনূসকে নিয়ে রচিত তার লেখা একটি বই প্রধান উপদেষ্টাকে উপহার দেন। তিনি জানান, ইউনূসের কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি তার বইগুলো অনুবাদ করেছেন এবং সামাজিক ব্যবসার উদ্যোগ চালু করেছেন। অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ব্রাজিলের মধ্যে বাণিজ্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে কপ-২৯ এর এক সাইড ইভেন্টে বক্তারা বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে জাস্ট ট্রানজিশনে অর্থায়নের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে আয়োজিত ‘অ্যাকসিলারেটিং ফাইন্যান্স ফর জাস্ট ট্রানজিশন ইন বাংলাদেশ: ইনসাইট ফ্রম কপ২৯’ শীর্ষক অনুষ্ঠান থেকে এ আহ্বান জানানো হয়। অনুষ্ঠান থেকে আরও জানানো হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান’র (এনএপি) সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০২৩-২০৫০ সালের মধ্যে পরিবর্তনের কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ১১.৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলো ৪.১ মিলিয়ন মানুষের জন্য জলবায়ু সহিষ্ণু কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান রাখবে। ওশি ফাউন্ডেশন, ইয়ুথনেট গ্লোবাল এবং ফ্রেডরিখ-ইবার্ট স্টিফটুং (এফইএস), বাংলাদেশ নামে একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওশি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আমিনুর রশিদ চৌধুরী রিপনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ। ওশি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারপার্সন ড. এস এম মোর্শেদ উক্ত বিষয়ে তার উপস্থাপনা তুলে ধরেন।
এবারের আয়োজনে প্রতিনিধি পাঠালেও অংশ নেননি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, কানাডা ও ভারতের মতো পরিবেশ ধ্বংসের জন?্য দায়ী দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানরা।