alt

জাতীয়

‘কুইক রেন্টাল’ এর বিশেষ দায়মুক্তির দুটি ধারা অবৈধ ও বেআইনি : হাইকোর্ট

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

জরুরি সংকট মোকাবিলায় ১৪ বছর আগে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিশেষ আইন প্রণয়ন করেছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। দুই বছরের জন্য আইনটি করা হলেও পরে দফায় দফায় এর কার্যকারিতা বাড়ানো হয়। ‘কুইক রেন্টাল’ নামে পরিচিত আইনটির বিশেষ দুটি ধারা ছিল এর আওতায় করা কোনো কাজ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না এবং চুক্তি করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী একক এখতিয়ার থাকবে।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বিশেষ ‘দায়মুক্তি’ সংক্রান্ত ওই দুটি ধারা অবৈধ ও বেআইনি বলে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট।

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরী সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সংক্রান্ত এক রিটে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে এই রায় দেয়। রায়ে একই সঙ্গে জাতীয় ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে এবং জনগণের বৃহত্তর সুবিধা নিশ্চিতে সরকারি মালিকানাধীন পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর পুরোপুরি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতেও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

২০১০ সালে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন’ প্রণয়ন করে তৎকালীন সরকার। এই আইনের ৬ (২) ধারার বলা হয়েছে, উপধারা (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রীর সম্মতি গ্রহণক্রমে যেকোনো ক্রয়, বিনিয়োগ পরিকল্পনা বা প্রস্তাব ধারা ৫ এ বর্ণিত প্রক্রিয়াকরণ কমিটি সীমিত সংখ্যক অথবা একক কোনো প্রতিষ্ঠানের সহিত যোগাযোগ ও দরকষাকষির মাধ্যমে উক্ত কাজের জন্য মনোনীত করিয়া ধারা-৭ এ বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণে অর্থনৈতিক বিষয় বা সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রেরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে। এছাড়া ‘আদালত, ইত্যাদির এখতিয়ার রহিতকরণ’ সংক্রান্ত ৯ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন কৃত, বা কৃত বলিয়া বিবেচিত কোন কার্য, গৃহীত কোন ব্যবস্থা, প্রদত্ত কোন আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা সম্পর্কে কোন আদালতের নিকট প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর গত ২ সেপ্টেম্বর জনস্বার্থে আইনের দুটি ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক ও আইনজীবী মো. তায়্যিব-উল-ইসলাম। রিটে আইনের উল্লেখিত দুটি ধারা সংবিধানের ৭, ২১, ২৬, ২৭, ৩১, ৪২, ৪৪, ৪৬, ১৪৩ ও ১৪৫ এর লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করা হয়। পরে ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একইদিন রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলে কুইক রেন্টাল সংক্রান্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ এর ৯ ধারায় দায়মুক্তি কেন অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এরপর ৭ নভেম্বর ওই রুলের শুনানি নিয়ে রায়ের দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।

রায়ে আদালত বলেন, ‘বলতে দ্বিধা নেই যে আইনের ৬(২) ধারা সংবিধানের ম্যান্ডেটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় বাতিল ঘোষণা করা হলো। দেশের মানুষ প্রকৃতভাবে সার্বভৌম। সংবিধান আইনের শাসনের ঘোষণা দিয়েছে। আইনের ৯ ধারা অনুসারে চুক্তির বিষয়ে কেউ দায়ী হলে বিচারিক জবাবদিহির ঊর্ধ্বে রাখা হয়েছে। অথচ সংবিধানের ১৪৫(২) অনুচ্ছেদে চুক্তি বাস্তবায়নে ক্ষেত্রে সরকারের নির্বাহী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কার্যধারা গ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। ৯ ধারাটি সংবিধানের ১৪৫ অনুচ্ছেদের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ হওয়ায় সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কাজেই ৯ ধারাটি বাতিলযোগ্য। ফলে সারবত্তা থাকায় রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করা হলো। সংবিধানের ম্যান্ডেটের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় আইনের ৬(২) ও ৯ ধারা বাতিল ঘোষণা করা হলো।’

রায়ে পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আইনের ৬(২) অধীনে ১৭ কুইক রেন্টাল প্রতিষ্ঠা হয়েছে। যেগুলো এখন পর্যন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আইনি জটিলতা এড়াতে এ ক্ষেত্রে ৬(২) ধারায় সংশ্লিষ্ট চুক্তির সব কার্যক্রম সাময়িকভাবে মার্জনা করা হলো। তবে চুক্তির ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট পক্ষের কার্যক্রম কিছু শর্তসাপেক্ষে পুনরায় দেখার সরকারের অধিকার থাকবে। এ ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটিত হলে সাময়িক এই মার্জনা প্রযোজ্য হবে না।

দেশে ১৩৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে উল্লেখ করে রায়ে আদালত বলেন, এর মধ্যে ৪০টি পিডিবির মালিকানাধীন। জাতীয় স্বার্থে, জনগণের বৃহত্তর সুবিধা নিশ্চিতে ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে সরকারি মালিকানাধীন পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর পুরোপুরি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হলো।

আদালতে রিটকারী আইনজীবী শাহদীন মালিক নিজেই শুনানি করেন, তার সঙ্গে ছিলেন মো. তায়্যিব-উল-ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনজুর আলম।

দায়মুক্তি আইনের প্রভাব

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ২০১০ সালে দুই বছরের বিশেষ বিধান’ নামে দায়মুক্তির এ আইন পাস করে আওয়ামীলীগ সরকার। শুরুতে কেবল দুই বছরের জন্য করা হলেও ২০১২, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২১ এ চার দফায় সংশোধনের মাধ্যমে এই আইনের মেয়াদকাল বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ী এই আইনের মেয়াদকাল ২০২৬ সাল পর্যন্ত। এই আইনে টেন্ডার ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ দেয়া হয়। এরপর দেশের ভবিষ্যৎ বিদ্যুৎ চাহিদার অবাস্তব প্রাক্কলন করে একের পর এক ব্যয়বহুল প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রয়োজন না থাকলেও অনেক প্রকল্প দেয়া হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ ?উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাকসহ প্রায় দুই ডজন সংসদ সদস্য সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ নানা প্রকল্পের কাজ পান।

সামিট, ইউনাইটেড পাওয়ার, বাংলাক্যাট, মোহাম্মদী গ্রুপ, ডরিন, বারাক, সিনহাসহ বেশ কিছু কোম্পানি একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে। যদিও এত বেশি কেন্দ্রের প্রয়োজন ছিল না বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন। ফলে অনেক কেন্দ্রই নামমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন করে শত শত কোটি টাকা আয় করে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী আদানি ও রিলায়েন্সকে দেয়া হয় বিদ্যুৎ ব্যবসা। রাশিয়া ও চীনের কোম্পানিকে গ্যাসকূপ খননের কাজ দেয়া হয় বেশি দামে। জনগণের প্রবল প্রতিবাদ উপেক্ষা করে সুন্দরবনঘেঁষে ভারতের সঙ্গে যৌথ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। দেশীয় উৎপাদন ও অনুসন্ধানের দিকে নজর না দিয়ে গ্যাস সংকটকে পুঁজি করে অসৎ উদ্দেশ্যে এলএনজি আমদানির সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। পছন্দের কোম্পানিকে এলএনজি ব্যবসায় যুক্ত করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়। নসরুল হামিদের ঘনিষ্ঠ তিনচারটি এলএনিজ কোম্পানি বেশি কাজ পেত। ডিপিডিসি, পিজিসিবি, ডেসকো, নেসকোসহ বিভিন্ন কোম্পানিতে এই আইনের আওতায় হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ দেয়া হয় টেন্ডার ছাড়া।

বিশেষ আইনে গড় ১৫ বছরে ৯০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এ সময়ে বিদ্যুৎ কিনতে ব্যয় হয় ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। ভর্তুকি দেয়া হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বড় অংশই (প্রায় সোয় লাখ কোটি টাকা) গেছে বিশেষ আইনে স্থাপিত বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে।

ভারতে বসে হাসিনার বক্তব্য-বিবৃতিতে অসন্তুষ্ট ঢাকা

কপ২৯ : জলবায়ু অর্থায়ন ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর প্রত্যাশা

ছবি

বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী আজারবাইজান, স্থাপন করতে চায় দূতাবাস

ছবি

আরিচাঘাটে ড্রেজার পাইপে রহস্যজনক আগুন, কোটি টাকার ক্ষতি

ছবি

হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর একটা দিনও একজন সমন্বয়ককে দেখি নাই: আন্দোলনে আহত সাইফুল

ছবি

শিবালয়ে বিআইডব্লিউটিএ,র ড্রেজারের ভাসমান পাইপে রহশ্যজনক আগুন, ৫ কোটি টাকা ক্ষতি

ছবি

উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে হেনস্তার ঘটনায় জেনেভা দূতাবাসের কাউন্সেলর কামরুল ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’

ছবি

আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহর মৃত্যু

ছবি

সংস্কারের গতিই ঠিক করে দেবে, নির্বাচন কত দ্রুত হবে: এএফপিকে প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক

ছবি

কার্বন নিঃসরণ কমাতে নতুন জোট ‘জি জিরো’ গঠন

ছবি

কুইক রেন্টাল : দায়মুক্তির বিধান অবৈধ ঘোষণা করল উচ্চ আদালত

ছবি

সংবিধান থেকে ‘জাতির পিতা’ ও ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেওয়ার প্রস্তাব অ্যাটর্নি জেনারেলের

ছবি

নভেম্বরে ‘১০ দিনে ১৩শ’ আইন কর্মকর্তা নিয়োগ

ছবি

নতুন উপদেষ্টাদের বিষয়ে জনগণের মনোভাব খতিয়ে দেখার আশ্বাস মাহফুজ আলমের

ছবি

বাংলাদেশের সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান

নেপালের জলবিদ্যুতের জন্য ‘দক্ষিণ এশীয় গ্রিড’ চান ইউনূস

ছবি

কপ২৯ এর তৃতীয় দিনেও নেই কোনো দৃশ্যমান অর্জন

ছবি

গাজীপুরে দফায় দফায় শ্রমিক বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ

ছবি

সব আহতকে ‘না দেখেই’ ফিরছিলেন, তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, গাড়ি আটকে বিক্ষোভ

ছবি

জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় ‘নতুন সভ্যতার’ ডাক প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

৫ বছর ধরে ছয় রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল বন্ধ, ৯টি চলছে জোড়াতালি দিয়ে

ছবি

জুলাই গণহত্যার ১০০তম দিনে শহীদি স্মৃতিকথাঃ কান্দে আমার মায়

বিপ্লবের ১০০ তম দিন উপলক্ষ্যে শহীদ ও আহতদের নিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর কর্মসূচি

ছবি

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হবে বইমেলা: সংস্কৃতি উপদেষ্টা

ছবি

শিল্পকলার সামনে পথনাটক করে প্রতিবাদ ও নিরাপত্তা চাইবে নাট্যকর্মীরা

ছবি

নেপাল ও ভুটানের উৎপাদিত জলবিদ্যুতের জন্য ‘দক্ষিণ এশীয় গ্রিড’ চান ইউনূস

ছবি

সেনাবাহিনী কত দিন মাঠে থাকবে সে সিদ্ধান্ত সরকারের

ছবি

টেকসই পৃথিবীর জন্য ভিন্নধারার সভ্যতা গড়ে তুলতে হবে : ড. ইউনূস

ছবি

স্বাস্থ্য উপদেষ্টার গাড়ির ওপর উঠে গেল আহতরা

ঢালাও ভাবে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার অন্তরায় : সম্পাদক পরিষদ

ছবি

জিয়াউল আহসানকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিল ট্রাইব্যুনাল

কপ২৯ : দীর্ঘ সময় পেরিয়ে কার্বন ক্রেডিট বাণিজ্য অনুমোদিত

ছবি

মহাসড়কে অবরোধ প্রত্যাহার, গাজীপুরে ১৪ কারখানা বন্ধ

ছবি

ট্রাইব্যুনালে ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ র‌্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমনের

ছবি

জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা প্রয়োজন : প্রধান উপদেষ্টা

tab

জাতীয়

‘কুইক রেন্টাল’ এর বিশেষ দায়মুক্তির দুটি ধারা অবৈধ ও বেআইনি : হাইকোর্ট

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

জরুরি সংকট মোকাবিলায় ১৪ বছর আগে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিশেষ আইন প্রণয়ন করেছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। দুই বছরের জন্য আইনটি করা হলেও পরে দফায় দফায় এর কার্যকারিতা বাড়ানো হয়। ‘কুইক রেন্টাল’ নামে পরিচিত আইনটির বিশেষ দুটি ধারা ছিল এর আওতায় করা কোনো কাজ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না এবং চুক্তি করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী একক এখতিয়ার থাকবে।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বিশেষ ‘দায়মুক্তি’ সংক্রান্ত ওই দুটি ধারা অবৈধ ও বেআইনি বলে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট।

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরী সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সংক্রান্ত এক রিটে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে এই রায় দেয়। রায়ে একই সঙ্গে জাতীয় ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে এবং জনগণের বৃহত্তর সুবিধা নিশ্চিতে সরকারি মালিকানাধীন পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর পুরোপুরি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতেও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

২০১০ সালে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন’ প্রণয়ন করে তৎকালীন সরকার। এই আইনের ৬ (২) ধারার বলা হয়েছে, উপধারা (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রীর সম্মতি গ্রহণক্রমে যেকোনো ক্রয়, বিনিয়োগ পরিকল্পনা বা প্রস্তাব ধারা ৫ এ বর্ণিত প্রক্রিয়াকরণ কমিটি সীমিত সংখ্যক অথবা একক কোনো প্রতিষ্ঠানের সহিত যোগাযোগ ও দরকষাকষির মাধ্যমে উক্ত কাজের জন্য মনোনীত করিয়া ধারা-৭ এ বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণে অর্থনৈতিক বিষয় বা সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রেরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে। এছাড়া ‘আদালত, ইত্যাদির এখতিয়ার রহিতকরণ’ সংক্রান্ত ৯ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন কৃত, বা কৃত বলিয়া বিবেচিত কোন কার্য, গৃহীত কোন ব্যবস্থা, প্রদত্ত কোন আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা সম্পর্কে কোন আদালতের নিকট প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর গত ২ সেপ্টেম্বর জনস্বার্থে আইনের দুটি ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক ও আইনজীবী মো. তায়্যিব-উল-ইসলাম। রিটে আইনের উল্লেখিত দুটি ধারা সংবিধানের ৭, ২১, ২৬, ২৭, ৩১, ৪২, ৪৪, ৪৬, ১৪৩ ও ১৪৫ এর লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করা হয়। পরে ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একইদিন রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলে কুইক রেন্টাল সংক্রান্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ এর ৯ ধারায় দায়মুক্তি কেন অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এরপর ৭ নভেম্বর ওই রুলের শুনানি নিয়ে রায়ের দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।

রায়ে আদালত বলেন, ‘বলতে দ্বিধা নেই যে আইনের ৬(২) ধারা সংবিধানের ম্যান্ডেটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় বাতিল ঘোষণা করা হলো। দেশের মানুষ প্রকৃতভাবে সার্বভৌম। সংবিধান আইনের শাসনের ঘোষণা দিয়েছে। আইনের ৯ ধারা অনুসারে চুক্তির বিষয়ে কেউ দায়ী হলে বিচারিক জবাবদিহির ঊর্ধ্বে রাখা হয়েছে। অথচ সংবিধানের ১৪৫(২) অনুচ্ছেদে চুক্তি বাস্তবায়নে ক্ষেত্রে সরকারের নির্বাহী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কার্যধারা গ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। ৯ ধারাটি সংবিধানের ১৪৫ অনুচ্ছেদের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ হওয়ায় সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কাজেই ৯ ধারাটি বাতিলযোগ্য। ফলে সারবত্তা থাকায় রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করা হলো। সংবিধানের ম্যান্ডেটের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় আইনের ৬(২) ও ৯ ধারা বাতিল ঘোষণা করা হলো।’

রায়ে পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আইনের ৬(২) অধীনে ১৭ কুইক রেন্টাল প্রতিষ্ঠা হয়েছে। যেগুলো এখন পর্যন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আইনি জটিলতা এড়াতে এ ক্ষেত্রে ৬(২) ধারায় সংশ্লিষ্ট চুক্তির সব কার্যক্রম সাময়িকভাবে মার্জনা করা হলো। তবে চুক্তির ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট পক্ষের কার্যক্রম কিছু শর্তসাপেক্ষে পুনরায় দেখার সরকারের অধিকার থাকবে। এ ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটিত হলে সাময়িক এই মার্জনা প্রযোজ্য হবে না।

দেশে ১৩৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে উল্লেখ করে রায়ে আদালত বলেন, এর মধ্যে ৪০টি পিডিবির মালিকানাধীন। জাতীয় স্বার্থে, জনগণের বৃহত্তর সুবিধা নিশ্চিতে ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে সরকারি মালিকানাধীন পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর পুরোপুরি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হলো।

আদালতে রিটকারী আইনজীবী শাহদীন মালিক নিজেই শুনানি করেন, তার সঙ্গে ছিলেন মো. তায়্যিব-উল-ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনজুর আলম।

দায়মুক্তি আইনের প্রভাব

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ২০১০ সালে দুই বছরের বিশেষ বিধান’ নামে দায়মুক্তির এ আইন পাস করে আওয়ামীলীগ সরকার। শুরুতে কেবল দুই বছরের জন্য করা হলেও ২০১২, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২১ এ চার দফায় সংশোধনের মাধ্যমে এই আইনের মেয়াদকাল বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ী এই আইনের মেয়াদকাল ২০২৬ সাল পর্যন্ত। এই আইনে টেন্ডার ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ দেয়া হয়। এরপর দেশের ভবিষ্যৎ বিদ্যুৎ চাহিদার অবাস্তব প্রাক্কলন করে একের পর এক ব্যয়বহুল প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রয়োজন না থাকলেও অনেক প্রকল্প দেয়া হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ ?উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাকসহ প্রায় দুই ডজন সংসদ সদস্য সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ নানা প্রকল্পের কাজ পান।

সামিট, ইউনাইটেড পাওয়ার, বাংলাক্যাট, মোহাম্মদী গ্রুপ, ডরিন, বারাক, সিনহাসহ বেশ কিছু কোম্পানি একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে। যদিও এত বেশি কেন্দ্রের প্রয়োজন ছিল না বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন। ফলে অনেক কেন্দ্রই নামমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন করে শত শত কোটি টাকা আয় করে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী আদানি ও রিলায়েন্সকে দেয়া হয় বিদ্যুৎ ব্যবসা। রাশিয়া ও চীনের কোম্পানিকে গ্যাসকূপ খননের কাজ দেয়া হয় বেশি দামে। জনগণের প্রবল প্রতিবাদ উপেক্ষা করে সুন্দরবনঘেঁষে ভারতের সঙ্গে যৌথ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। দেশীয় উৎপাদন ও অনুসন্ধানের দিকে নজর না দিয়ে গ্যাস সংকটকে পুঁজি করে অসৎ উদ্দেশ্যে এলএনজি আমদানির সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। পছন্দের কোম্পানিকে এলএনজি ব্যবসায় যুক্ত করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়। নসরুল হামিদের ঘনিষ্ঠ তিনচারটি এলএনিজ কোম্পানি বেশি কাজ পেত। ডিপিডিসি, পিজিসিবি, ডেসকো, নেসকোসহ বিভিন্ন কোম্পানিতে এই আইনের আওতায় হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ দেয়া হয় টেন্ডার ছাড়া।

বিশেষ আইনে গড় ১৫ বছরে ৯০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এ সময়ে বিদ্যুৎ কিনতে ব্যয় হয় ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। ভর্তুকি দেয়া হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বড় অংশই (প্রায় সোয় লাখ কোটি টাকা) গেছে বিশেষ আইনে স্থাপিত বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে।

back to top