হাসপাতালগুলোতে নতুন রোগী ভর্তি নিতে পারছে না
ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে করোনা সংক্রমণ। সারাদেশের স্বাস্থ্য কেন্দ্রেগুলোতেই নমুনা দিতে মানুষের ভিড় বাড়ছে। শনাক্ত রোগীদের চিকিৎসায় হিমশিম খাচ্ছে ‘কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড’ হাসপাতালগুলো। রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলো নতুন রোগী ভর্তি নিতে পারছে না। আইসিইউর পাশাপাশি সাধারণ শয্যা সঙ্কটও চরমে।
এক সপ্তাহ ধরে জ্বর, ঠাণ্ডাসহ করোনার উপসর্গে ভুগছিলেন ইকবাল হোসেন (৪৩)। তিনি পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে বুধবার (২৮ জুলাই) যান ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের বিএমএ ভবনে। নমুনা দিতে লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় মারা যান ইকবাল। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও নমুনা দিতে পারছেন না। সারাদেশেই একই চিত্র বিরাজ করছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আবার করোনা শনাক্ত হওয়া অনেকেই হাসপাতালে যাওয়ার পথেই মারা যাচ্ছেন। ২৭ জুলাই করোনায় দেশে ২৫৮ জনের মৃত্যুর তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যু হয় বাসায় এবং দুইজনকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় বাসায় ১৩ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে অধিদপ্তরটি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর ১৬টি সরকারি হাসপাতালে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ১০টিতেই বুধবার পর্যন্ত কোন আইসিইউ খালি ছিল না। আবার অনেক হাসপাতালে সাধারণ শয্যা খালি দেখানো হলেও প্রকৃতপক্ষে কোন শয্যা খালি ছিল না। আগের দিন মুগদা জেনারেল হাসপাতালের ৩৫০টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ৫৬টি খালি দেখানো হয়। কিন্তু বুধবার করোনা ইউনিটে নোটিশ ঝুলিয়ে বলা হয়, এখানে কোন শয্যা খালি নেই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত ‘জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি’র সদস্য ও বিএসএমএমইউ’র সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না বলেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়া সত্ত্বেও অনেকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার অক্সিজেন ও আইসিইউর অভাবেও হাসপাতালে রোগী মারা যাচ্ছেন। অনেকে ন্যূনতম চিকিৎসাও পাচ্ছে না।
২৮ দিনেই সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি মৃত্যু
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, করোনায় বুধবার পর্যন্ত চলতি জুলাই মাসের ২৮ দিনেই দেশে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
করোনায় গত ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে মোট মৃত্যু ছিল ১৪ হাজার ৫০৩ জন। বুধবার সকাল আটটা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২৩৭ জনসহ মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ১৬ জনে। এ হিসাবে গত ২৮ দিনে পাঁচ হাজার ৫১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের রেকর্ড
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা রোগী শনাক্তের রেকর্ড হয়েছে। এই একদিনে দেশে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। তাদের নিয়ে দেশে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়েছে। বুধবার পর্যন্ত দেশে সরকারি হিসাবে, করোনা শনাক্ত হয়েছে ১২ লাখ দশ হাজার ৯৮২ জনের দেহে।
এর আগে গত ২৬ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ১৯২ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বুধবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় করোনার দেশে সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে; এদিন ৬৩৯টি ল্যাবরেটরিতে ৫৩ হাজার ৮৭৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। আগের দিন ৫২ হাজার ৪৭৮টি নমুনা পরীক্ষা করার তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৭৬ লাখ ১২ হাজার ৫৮৮টি। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ১৫৭টি এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা করা হয়েছে ২০ লাখ ১৫ হাজার ৪৩১টি নমুনা।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ১২ শতাংশ। আর এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের মোট শনাক্তের ১৫ দশমিক ৯১ শতাংশ।
দশ দিনেই এক লাখ মানুষের সংক্রমণ শনাক্ত
গত ১৮ জুলাই মোট করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়ে যায়। ওইদিন পর্যন্ত মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা ছিল ১১ লাখ তিন হাজার ৯৮৯ জন। আর বুধবার এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ দশ হাজার ৯৮২ জনে। এ হিসেবে দশ দিনেই এক লাখ ছয় হাজার ৯৯৩ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২৩৭ জনের মধ্যে পুরুষ ১৪৯ ও নারী ৮৮। এদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ১৬৭ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৫৭ জন এবং বাড়িতে ১৩ জনের মৃত্যু হয়।
মোট শনাক্ত অনুপাতে মৃত্যুহার ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১৩ হাজার ৪৭০ জন। এ নিয়ে দেশে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন দশ লাখ ৩৫ হাজার ৮৮৪ জন। মোট সুস্থতার হার ৮৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, একদিনে মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে একজনের বয়স ছিল ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে। অন্যদের মধ্যে ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১৫ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৪৫ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৭৮ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৪৪ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩৪ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১১ জন এবং নয়জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল।
বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, একদিনে ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম বিভাগে ৬২ জন, রাজশাহীতে ২১ জন, খুলনায় ৩৪ জন, বরিশালে ৯ জন, সিলেটে ১৮ জন, রংপুরে ১৬ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে সাতজনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে অধিদপ্তর।
২৪ ঘণ্টায় ৩২ জেলায় ‘উচ্চ’ সংক্রমণ
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৩২টি জেলায় একশ’ জনের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। আরও ৮/১০টি জেলায় একশ’ জনের কাছাকাছি রোগী শনাক্ত হয়েছে।
২৪ ঘণ্টায় মহানগরসহ ঢাকা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ ছয় হাজার ২৬৯ জনের দেহে করোনাভাইরাসের জীবাণু পাওয়া গেছে।
ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে ফরিদপুরে ১৬১ জন, গাজীপুরে ৩০৩ জন, শরীয়তপুরে ২০২ জন, নারায়ণগঞ্জে ২০০ জন, কিশোরগঞ্জে ১২২ জন, মানিকগঞ্জে ১৯২ জন, মুন্সিগঞ্জে ১৩২ জন, নরসিংদীতে ১৮১ জন, রাজবাড়ীতে ১২৪ জন এবং টাঙ্গাইলে ১৯৫ জনের শরীরে করোনার জীবাণু পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় সর্বোচ্চ ৯১৫ জনের শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া কুমিল্লায় ৮৫৩ জন, কক্সবাজারে ৩২৬ জন, ফেনীতে ১৯৪ জন, নোয়াখালীতে ২৫১ জন, চাঁদপুরে ২২৯ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩০২ জনের দেহে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়েছে।
রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ২১৮ জন, পাবনায় ২০৯ জন, সিরাজগঞ্জে ১৯৮ জন এবং বগুড়ায় ১০৬ জনের দেহে সংক্রমণ পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
খুলনা বিভাগের মধ্যে খুলনা জেলায় ১৭৬ জন এবং কুষ্টিয়ায় ২২৭ জন ‘কোভিড-১৯’ রোগী শনাক্ত হয়েছে।
অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় ৪৪০ জন, রংপুরে ১৮৬ জন, বরিশালে ২৮৮ জন, পটুয়াখালীতে ১৬৮ জন, ভোলায় ১৭৬ জন, সিলেটে ৩৪১ জন, সুনামগঞ্জে ১১৬ জন, মৌলভীবাজারে ২২৫ জন শনাক্ত হয়েছে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায়।
সংক্রমণের শীর্ষে ঢাকা জেলা- স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত করোনা বুলেটিনে বুধবার দুপুরে অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শীর্ষে অবস্থান করছে ঢাকা জেলা। আর সবচেয়ে কম সংক্রমিত হয়েছে রাজশাহী জেলায়। গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসের নমুনা পরীক্ষা ও রোগী শনাক্তকরণের হার বিবেচনায় এ তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা জেলায় এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে চার লাখ ১৯ হাজার ১২৮ জন। ঢাকার পরে অবস্থান বন্দরনগরী চট্টগ্রামের। সেখানে এখন পর্যন্ত ৭৪ হাজার ১৯৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর সবচেয়ে কম রোগী শনাক্ত হয়েছে রাজশাহীতে। সেখানে মোট ১৮ হাজার ৮০৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা যদি রোগী সংখ্যা এবং মৃত্যুর সংখ্যা পাশাপাশি রাখি তাহলে বরিশাল বিভাগের শনাক্ত রোগীর বিপরীতে মৃত্যুহার ২ শতাংশ। ঢাকায় সেটি ১.৩ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ২.৪ শতাংশ।’
গত ২৩ জুলাই থেকে দেশে কঠোর বিধিনিষেধ চলছে উল্লেখ করে ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘সেক্ষেত্রে সংক্রমণ প্রতিরোধে সবাইকে দায়িত্ববান হতে হবে। আমাদের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। তাহলেই আমাদের কর্মসূচিগুলো সফলতার মুখ দেখবে।’
হাসপাতালগুলোতে নতুন রোগী ভর্তি নিতে পারছে না
বুধবার, ২৮ জুলাই ২০২১
ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে করোনা সংক্রমণ। সারাদেশের স্বাস্থ্য কেন্দ্রেগুলোতেই নমুনা দিতে মানুষের ভিড় বাড়ছে। শনাক্ত রোগীদের চিকিৎসায় হিমশিম খাচ্ছে ‘কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড’ হাসপাতালগুলো। রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলো নতুন রোগী ভর্তি নিতে পারছে না। আইসিইউর পাশাপাশি সাধারণ শয্যা সঙ্কটও চরমে।
এক সপ্তাহ ধরে জ্বর, ঠাণ্ডাসহ করোনার উপসর্গে ভুগছিলেন ইকবাল হোসেন (৪৩)। তিনি পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে বুধবার (২৮ জুলাই) যান ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের বিএমএ ভবনে। নমুনা দিতে লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় মারা যান ইকবাল। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও নমুনা দিতে পারছেন না। সারাদেশেই একই চিত্র বিরাজ করছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আবার করোনা শনাক্ত হওয়া অনেকেই হাসপাতালে যাওয়ার পথেই মারা যাচ্ছেন। ২৭ জুলাই করোনায় দেশে ২৫৮ জনের মৃত্যুর তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যু হয় বাসায় এবং দুইজনকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় বাসায় ১৩ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে অধিদপ্তরটি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর ১৬টি সরকারি হাসপাতালে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ১০টিতেই বুধবার পর্যন্ত কোন আইসিইউ খালি ছিল না। আবার অনেক হাসপাতালে সাধারণ শয্যা খালি দেখানো হলেও প্রকৃতপক্ষে কোন শয্যা খালি ছিল না। আগের দিন মুগদা জেনারেল হাসপাতালের ৩৫০টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ৫৬টি খালি দেখানো হয়। কিন্তু বুধবার করোনা ইউনিটে নোটিশ ঝুলিয়ে বলা হয়, এখানে কোন শয্যা খালি নেই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত ‘জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি’র সদস্য ও বিএসএমএমইউ’র সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না বলেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়া সত্ত্বেও অনেকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার অক্সিজেন ও আইসিইউর অভাবেও হাসপাতালে রোগী মারা যাচ্ছেন। অনেকে ন্যূনতম চিকিৎসাও পাচ্ছে না।
২৮ দিনেই সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি মৃত্যু
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, করোনায় বুধবার পর্যন্ত চলতি জুলাই মাসের ২৮ দিনেই দেশে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
করোনায় গত ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে মোট মৃত্যু ছিল ১৪ হাজার ৫০৩ জন। বুধবার সকাল আটটা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২৩৭ জনসহ মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ১৬ জনে। এ হিসাবে গত ২৮ দিনে পাঁচ হাজার ৫১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের রেকর্ড
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা রোগী শনাক্তের রেকর্ড হয়েছে। এই একদিনে দেশে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। তাদের নিয়ে দেশে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়েছে। বুধবার পর্যন্ত দেশে সরকারি হিসাবে, করোনা শনাক্ত হয়েছে ১২ লাখ দশ হাজার ৯৮২ জনের দেহে।
এর আগে গত ২৬ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ১৯২ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বুধবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় করোনার দেশে সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে; এদিন ৬৩৯টি ল্যাবরেটরিতে ৫৩ হাজার ৮৭৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। আগের দিন ৫২ হাজার ৪৭৮টি নমুনা পরীক্ষা করার তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৭৬ লাখ ১২ হাজার ৫৮৮টি। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ১৫৭টি এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা করা হয়েছে ২০ লাখ ১৫ হাজার ৪৩১টি নমুনা।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ১২ শতাংশ। আর এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের মোট শনাক্তের ১৫ দশমিক ৯১ শতাংশ।
দশ দিনেই এক লাখ মানুষের সংক্রমণ শনাক্ত
গত ১৮ জুলাই মোট করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়ে যায়। ওইদিন পর্যন্ত মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা ছিল ১১ লাখ তিন হাজার ৯৮৯ জন। আর বুধবার এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ দশ হাজার ৯৮২ জনে। এ হিসেবে দশ দিনেই এক লাখ ছয় হাজার ৯৯৩ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২৩৭ জনের মধ্যে পুরুষ ১৪৯ ও নারী ৮৮। এদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ১৬৭ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৫৭ জন এবং বাড়িতে ১৩ জনের মৃত্যু হয়।
মোট শনাক্ত অনুপাতে মৃত্যুহার ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১৩ হাজার ৪৭০ জন। এ নিয়ে দেশে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন দশ লাখ ৩৫ হাজার ৮৮৪ জন। মোট সুস্থতার হার ৮৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, একদিনে মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে একজনের বয়স ছিল ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে। অন্যদের মধ্যে ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১৫ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৪৫ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৭৮ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৪৪ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩৪ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১১ জন এবং নয়জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল।
বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, একদিনে ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম বিভাগে ৬২ জন, রাজশাহীতে ২১ জন, খুলনায় ৩৪ জন, বরিশালে ৯ জন, সিলেটে ১৮ জন, রংপুরে ১৬ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে সাতজনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে অধিদপ্তর।
২৪ ঘণ্টায় ৩২ জেলায় ‘উচ্চ’ সংক্রমণ
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৩২টি জেলায় একশ’ জনের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। আরও ৮/১০টি জেলায় একশ’ জনের কাছাকাছি রোগী শনাক্ত হয়েছে।
২৪ ঘণ্টায় মহানগরসহ ঢাকা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ ছয় হাজার ২৬৯ জনের দেহে করোনাভাইরাসের জীবাণু পাওয়া গেছে।
ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে ফরিদপুরে ১৬১ জন, গাজীপুরে ৩০৩ জন, শরীয়তপুরে ২০২ জন, নারায়ণগঞ্জে ২০০ জন, কিশোরগঞ্জে ১২২ জন, মানিকগঞ্জে ১৯২ জন, মুন্সিগঞ্জে ১৩২ জন, নরসিংদীতে ১৮১ জন, রাজবাড়ীতে ১২৪ জন এবং টাঙ্গাইলে ১৯৫ জনের শরীরে করোনার জীবাণু পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় সর্বোচ্চ ৯১৫ জনের শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া কুমিল্লায় ৮৫৩ জন, কক্সবাজারে ৩২৬ জন, ফেনীতে ১৯৪ জন, নোয়াখালীতে ২৫১ জন, চাঁদপুরে ২২৯ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩০২ জনের দেহে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়েছে।
রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ২১৮ জন, পাবনায় ২০৯ জন, সিরাজগঞ্জে ১৯৮ জন এবং বগুড়ায় ১০৬ জনের দেহে সংক্রমণ পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
খুলনা বিভাগের মধ্যে খুলনা জেলায় ১৭৬ জন এবং কুষ্টিয়ায় ২২৭ জন ‘কোভিড-১৯’ রোগী শনাক্ত হয়েছে।
অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় ৪৪০ জন, রংপুরে ১৮৬ জন, বরিশালে ২৮৮ জন, পটুয়াখালীতে ১৬৮ জন, ভোলায় ১৭৬ জন, সিলেটে ৩৪১ জন, সুনামগঞ্জে ১১৬ জন, মৌলভীবাজারে ২২৫ জন শনাক্ত হয়েছে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায়।
সংক্রমণের শীর্ষে ঢাকা জেলা- স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত করোনা বুলেটিনে বুধবার দুপুরে অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শীর্ষে অবস্থান করছে ঢাকা জেলা। আর সবচেয়ে কম সংক্রমিত হয়েছে রাজশাহী জেলায়। গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসের নমুনা পরীক্ষা ও রোগী শনাক্তকরণের হার বিবেচনায় এ তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা জেলায় এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে চার লাখ ১৯ হাজার ১২৮ জন। ঢাকার পরে অবস্থান বন্দরনগরী চট্টগ্রামের। সেখানে এখন পর্যন্ত ৭৪ হাজার ১৯৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর সবচেয়ে কম রোগী শনাক্ত হয়েছে রাজশাহীতে। সেখানে মোট ১৮ হাজার ৮০৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা যদি রোগী সংখ্যা এবং মৃত্যুর সংখ্যা পাশাপাশি রাখি তাহলে বরিশাল বিভাগের শনাক্ত রোগীর বিপরীতে মৃত্যুহার ২ শতাংশ। ঢাকায় সেটি ১.৩ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ২.৪ শতাংশ।’
গত ২৩ জুলাই থেকে দেশে কঠোর বিধিনিষেধ চলছে উল্লেখ করে ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘সেক্ষেত্রে সংক্রমণ প্রতিরোধে সবাইকে দায়িত্ববান হতে হবে। আমাদের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। তাহলেই আমাদের কর্মসূচিগুলো সফলতার মুখ দেখবে।’