alt

জাতীয়

বিআইজিডির ‘স্টেট অব গভর্ন্যান্স ইন বাংলাদেশ ২০২০-২০২১” শীর্ষক রিপোর্ট প্রকাশ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শনিবার, ৩১ জুলাই ২০২১

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শাসনব্যবস্থা (governance) ঠিক কতখানি চাপ নিতে পারে করোনা মহামারী এসে সেই পরীক্ষাটিই নিচ্ছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সুরক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর অবস্থা আগে থেকেই নড়বড়ে। ফলে এসব দেশে করোনাউদ্ভূত ‘জীবন বনাম জীবিকা’র টানাপোড়েন গোড়া থেকেই কঠিন হয়ে উঠেছে। ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান ইউনিভার্সিটির অ্যাকাউন্টিং রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশের করোনাকালীন শাসনব্যবস্থা নিয়ে একটি গবেষণা করেছে, যার ফলাফল গত ২৯ জুলাই একটি ওয়েবিনারে তুলে ধরা হয়। এই গবেষণা ও গবেষণার ফলাফল বিআইজিডির ফ্ল্যাগশিপ রিপোর্ট ‘স্টেট অব গভর্ন্যান্স ইন বাংলাদেশ ২০২০-২০২১’ এ স্থান পেয়েছে।

বাংলাদেশে করোনা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত শাসন ব্যবস্থা, এর দুর্বলতা এবং এ ধরণের দুর্যোগ কিংবা মহামারী পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে কিভাবে আরো কার্যকর হওয়া যায়, এসব বিষয়ে গবেষকরা তাঁদের বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন। গবেষকরা একটি “প্রতি-ভঙ্গুর” (antifragile) শাসনব্যবস্থার ধারণার কথা বলেছেন। এটি হল এমন একটি ব্যবস্থা যা দুর্যোগ মোকাবিলা করতে করতে ক্রমশ আরো শক্তিশালী হয়ে উঠে। দুর্যোগ পরিস্থিতিতে সব ধরণের সম্ভাব্য সমাধান বিবেচনায় এনে, এর সাথে সহযোগিতা এবং উদ্ভাবনের সমন্বয় ঘটিয়ে, দুর্যোগ মোকাবিলার পথ বের করে, এবং এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শাসনব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তোলা যায়।

বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের ক্ষমতা (resilience) আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুপরিচিত। তবে একবিংশ শতাব্দীতে বিশ^ায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ ঘন ঘন করোনার মতো ভয়াবহ জাতীয় দুর্যোগে পড়তে পারে। তখন শুধু দুর্যোগ সামলানোর ক্ষমতাই যথেষ্ট হবে না। তাতে উন্নয়নের ধারা ব্যহত হবে। বাংলাদেশে উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে গেলে এমন একটি শাসনব্যবস্থা প্রয়োজন, যা দুঃসময়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আরও কার্যকর হয়ে উঠতে পারে।

বিআইজিডির প্রতিবেদনে মহামারীকালীন নীতিনির্ধারণ এবং এর প্রয়োগ, স্বাস্থ্য ও সাধারণ মানুষের রুটি রুজির ওপর এই নীতির প্রভাব নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। একইসাথে সরকারের করোনা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জনগণের ধারনা বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে একটি জরিপ চালানো হয়েছে। সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তুষ্টি থাকলেও সরকারের লকডাউন ব্যবস্থাপনা, করোনা পরীক্ষা এবং ত্রাণ কার্যক্রমের কার্যকারিতা নিয়ে জনগণের অসন্তুষ্টি প্রকাশ পেয়েছে এই জরিপে।

রিপোর্টে বলা হয়, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এই মুহুর্তে তেমন বড় কোনো বিরোধিতা আশংকা করছে না। ফলে দেশকে সবদিকে থেকে উন্নত করতে, বিশেষত অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে সরকার বদ্ধপরিকর। লকডাউন অর্থনীতি ও মানুষের জীবনে কি ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, তা অনুধাবণ করেই ২০২০ সালে লকডাউন প্রয়োগে সরকারের দ্বিধাগ্রস্থ ছিল। ধারণার চেয়ে আক্রান্তের হার কম হওয়ায় গতবছর এই ঢিলেঢালা লকডাউনের কৌশল উৎরে গিয়েছিলো। কিন্তু তারপরও আর্থিকভাবে দুর্বল, স্বল্প-সঞ্চয়ী মানুষ এবং অসময়ে সাহায্য করার মতো যাদের কেউ নেই, তাদের জীবন ও জীবিকা লকডাউন আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে হুমকির মুখে পড়েছে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা সরকারের একটি সুস্পষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নকৌশল। এই প্রবৃদ্ধি সুরক্ষিত রাখার প্রচেষ্টা ঘোষিত প্রণোদনায় স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। বৃহৎ, মাঝারি এবং রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য জিডিপির তিন শতাংশ পর্যন্ত বরাদ্দ ছিলো। সেই তুলনায় আর্থিকভাবে দুর্বল জনগোষ্ঠী, তাঁদের খাদ্য ও কর্ম নিরাপত্তার জন্য বরাদ্দ ছিলো এক শতাংশেরও কম। তৈরি পোশাকশিল্পের মালিক ও তাদের সংগঠনগুলো তাদের প্রভাব খাটিয়ে প্রণোদনার মাধ্যমে নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরব ছিলো। অন্যদিকে তুলনামূলকভাবে দূর্বল শ্রমিক ইউনিয়ন, তৃণমূল জনগণ ও তাদের সংগঠনগুলো সেভাবে সরব হতে পারে নি। এই ব্যাপারটিও প্রণোদনা নীতি তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। এর ফলে ত্রাণ বা সামাজিক সুরক্ষা সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় কম ছিলো। তার ওপওে প্রশাসনিক দুর্বলতা ও স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার অভাবে ত্রাণ কার্যক্রম ব্যহত হয়েছে। ত্রাণ যাদের সবচেয়ে প্রয়োজন ছিলো, তাদের কাছে তথ্য ঠিকমত পৌঁছেনি। জরিপে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশই বিশ^াস করেন যে ত্রাণ ব্যবস্থাপনায় কিছু না কিছু দুর্নীতি অবশ্যই হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ উপযুক্ত সহযোগিতা না পেয়ে বাধ্য হয়েছে সামাজিক দূরত্ব না মেনে কর্মক্ষেত্রে ফিরতে, যা তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে৷

এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ ব্যবস্থার দুর্বলতা হয়েছে মড়ার উপর খাড়ার ঘা। জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা মহামারীকালীন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে মোটামুটি ব্যর্থ হয়েছে। মহামারীর দুইমাস পার হয়ে যাওয়ার পরও প্রতিটি উপজেলায় গড়ে মাত্র পাঁচটি করে অক্সিজেন সিলিন্ডার ছিলো। সাড়ে ষোলো কোটি মানুষের জন্য ভেন্টিলেটরের সংখ্যা ছিল মাত্র ২,২৬৭টি। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার উপকরণ (পিপিই) এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপরকণের সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় ছিলো খুবই কম এবং এসব উপকরণ ক্রয়েও ছিল ঢিলেমি। করোনা মোকাবিলার কোনো নীতি, কৌশল বা প্রাক-প্রস্তুতি বাংলাদেশের ছিল না। ২০১১ সালের পর থেকে “জাতীয় বায়ুবাহিত এবং ইনফ্লয়েঞ্জা মহামারী প্রস্তুতি ও সাড়াদান পরিকল্পনা” হালনাগাদ করা হয়নি। ২০২০ সালের মার্চ থেকে জুলাইয়ের মধ্যে আক্রান্তের হার যখন খুব বেশি ছিলো, সেসময়ে করোনা মোকাবেলার সর্বোচ্চ কমিটি মাত্র তিনবার সভা আয়োজন করেছে। করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশের স্বাস্থব্যবস্থার দুর্বলতা ফুটে উঠেছে পরীক্ষাসংক্রান্ত উপাত্তে; বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষার হার দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশের চেয়ে অনেক কম।

চলমান ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট মোকাবেলায় বিগত বছরের অভিজ্ঞতা কতটা কাজে লেগেছে? আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে বলে মনে হচ্ছে। যেমন, লকডাউন কঠোরভাবে পালিত হয়েছে এবং এই সংক্রান্ত নির্দেশনা এবার আগের চেয়ে স্পষ্ট। স্বাস্থ্যখাতেও সমন্বয় আগের চেয়ে বেড়েছে। যেমন, প্রস্তুতির অংশ হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা মহাপরিচালকের কার্যালয়ের সাথে সমন্বিতভাবে সরকারি হাসপাতালগুলো এখন কাজ করছে।

তবে আর কতদিন এমন কঠোর লকডাউন বহাল থাকবে কিংবা কত দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত যাওয়া যাবে তা স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক সুরক্ষা এই দুইটি খাতের উপর নির্ভর করবে। সরকারের উচিৎ দ্রুত স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং এখাতে ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা। একইসাথে জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরিবর্তে জনসুরক্ষা কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক নীতিমালা তৈরি করতে হবে।

এজন্য সরকারের উচিৎ আমাদের শক্তিশালী দিকগুলোকে কাজে লাগানো। বাংলাদেশের সামাজিক সুরক্ষা খাত গত এক দশকে ব্যপক বিস্তার লাভ করেছে। একে আরো শক্তিশালী করে তোলা দরকার, যাতে এ ধরণের বিপর্যয়ে জনসুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। এই খাতে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা বাড়াতে প্রয়োজন নিরপেক্ষ ও স্বাধীন পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা, নীতিনির্ধারণে এসব পর্যবেক্ষণের প্রতিফলন নিশ্চিত করা এবং জনগণের দাবী ও অভিযোগ জানা ও সেগুলো মেটানোর কার্যকর ব্যবস্থা করা। এখানে রাষ্ট্র ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (যেমন এনজিও) মধ্যে সফল অংশীদারীত্বের প্রচুর উদাহরণ রয়েছে। এ ধরণের অংশিদারিত্বগুলোকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে হবে।

সরকারের উচিৎ একবিংশ শতাব্দীর রাষ্ট্র পরিচালনা-নীতি অনুশীলন করা, যার মূলনীতি হল উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থা। নীতিনির্ধারণ, পর্যবেক্ষণ এবং মতামত প্রদানে নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া উচিত। বিশেষজ্ঞ ও জনগণের সমালোচনা যে কার্যকর জনমুখী শাসনব্যবস্থার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা সরকারের অনুধাবণ করা উচিত।

স্থানীয় সরকার, সংগঠন এবং মন্ত্রণালয়সমূহকে শক্তিশালী হতে হবে। স্থানীয় প্রয়োজন এবং অবস্থার ভিত্তিতে নিজেদের স্বাধীনভাবে পরিচালনার সক্ষমতা থাকতে হবে এসব প্রতিষ্ঠানের। সকল ক্ষেত্রে এক নীতি- এমন মনোভাব থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে। সক্ষম প্রশাসন এবং বিকেন্দ্রীভূত কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রয়োজন মেটাতে বেশি কার্যকর হতে পারে। করোনার মত বিপর্যয় মোকাবেলায় প্রয়োজন শক্তিশালী জনপ্রশাসন, দায়িত্বশীল ও বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ, মতামত গ্রহণের একটি কার্যকর প্রক্রিয়া, অভিজ্ঞতা থেকে শেখা ও সেই জ্ঞানকে সত্যিকারে কাজে লাগানোর ক্ষমতা।

পুলিশ সংস্কার বাস্তবায়নে দুটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন

শার্শায় গৃহবধূকে গণধর্ষণের অভিযোগ

তিন জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ৩২ জনকে ‘পুশইন’ ভারতের

নিখোঁজ খিলক্ষেতের ব্যাংক কর্মকর্তার অবস্থান শনাক্তের দাবি পুলিশের

ছবি

গ্যাব পদ্ধতিতে আম চাষে সফল চাষি হিলির নিরঞ্জন

তিন বিভাগে ভারী বৃষ্টির আভাস, ভূমিধসের সতর্কবার্তা

মোবাইল চুরির ঘটনায় মাসহ দুই সন্তানকে কুপিয়ে হত্যা: র‌্যাব

মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়ছে তরুণদের, বিশেষ ঝুঁকিতে ছেলেরা

রবিবার পবিত্র আশুরা

ছবি

সঞ্চয়পত্রে সুদহার বাড়ালে কেউ ব্যাংকে টাকা রাখবে না: উপদেষ্টা

পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষে তিন প্রতিপক্ষ ছিল ভারতের, দাবি উপ-সেনাপ্রধানের

ছবি

টেক্সাসে আকস্মিক বন্যায় নিহত ২৪

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আসেনি: নজরুল ইসলাম খান

ছবি

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার শামসুল হুদা মারা গেছেন

গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় ‘ন্যূনতম হস্তক্ষেপ’ করেনি অন্তর্বর্তী সরকার: প্রেস সচিব

জঙ্গি সম্পৃক্ততায় মালয়েশিয়া থেকে ফেরত পাঠানো তিনজন কারাগারে

সন্ত্রাসবাদ তদন্তে মালয়েশিয়াকে সহায়তার আশ্বাস বাংলাদেশের

সৌরবিদ্যুতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ‘আশানুরূপ নয়’

শুল্ক নিয়ে আলোচনায় ‘প্রত্যাশার চেয়েও বেশি’ প্রাপ্তির সম্ভাবনা

ছবি

‘মব’ তৈরি করে নগদ টাকা-স্বর্ণালঙ্কার লুট, থানায় অভিযোগ হাবিবার

ছবি

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা হয়েছে: প্রেস সচিব

ছবি

‘ব্যাংকগুলোর টাকা ফেরত দিতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ’ — সালেহউদ্দিন আহমেদ

ছবি

সন্ত্রাসবাদ তদন্তে মালয়েশিয়াকে সহায়তার আশ্বাস বাংলাদেশের

ছবি

জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মালয়েশিয়া থেকে ফেরত পাঠানো ৩ জন কারাগারে

ছবি

তিন বিভাগে অতি ভারি বৃষ্টির আশঙ্কা, পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের সতর্কতা

ছবি

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার শামসুল হুদা আর নেই

ছবি

বিএনপি পুরনো খসড়া দেখে মন্তব্য করেছে: তৈয়্যব

ছবি

মালয়েশিয়ায় জঙ্গি সন্দেহে আটক তিনজন দেশে ফিরেছে, চলছে জিজ্ঞাসাবাদ: আসিফ নজরুল

সিলেটে পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার আন্দোলন

সম্পত্তির জন্য মাকে মারধর করলেন স্কুল শিক্ষক ছেলে

রাজধানীতে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার তিন

কোভিড পরীক্ষার খরচ কমলো

ছবি

রাবিতে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে গাছ কর্তন, শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে আপাতত বন্ধ

ছবি

পানিতে ডুবে ঠাকুরগাঁও ও বরুড়ায় চার শিশুর মৃত্যু

ছবি

যে কোনো মূল্যে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করবো: নাহিদ

ছবি

তেঁতুলিয়ায় সরকারি ধান সংগ্রহে অনিয়ম

tab

জাতীয়

বিআইজিডির ‘স্টেট অব গভর্ন্যান্স ইন বাংলাদেশ ২০২০-২০২১” শীর্ষক রিপোর্ট প্রকাশ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শনিবার, ৩১ জুলাই ২০২১

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শাসনব্যবস্থা (governance) ঠিক কতখানি চাপ নিতে পারে করোনা মহামারী এসে সেই পরীক্ষাটিই নিচ্ছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সুরক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর অবস্থা আগে থেকেই নড়বড়ে। ফলে এসব দেশে করোনাউদ্ভূত ‘জীবন বনাম জীবিকা’র টানাপোড়েন গোড়া থেকেই কঠিন হয়ে উঠেছে। ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান ইউনিভার্সিটির অ্যাকাউন্টিং রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশের করোনাকালীন শাসনব্যবস্থা নিয়ে একটি গবেষণা করেছে, যার ফলাফল গত ২৯ জুলাই একটি ওয়েবিনারে তুলে ধরা হয়। এই গবেষণা ও গবেষণার ফলাফল বিআইজিডির ফ্ল্যাগশিপ রিপোর্ট ‘স্টেট অব গভর্ন্যান্স ইন বাংলাদেশ ২০২০-২০২১’ এ স্থান পেয়েছে।

বাংলাদেশে করোনা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত শাসন ব্যবস্থা, এর দুর্বলতা এবং এ ধরণের দুর্যোগ কিংবা মহামারী পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে কিভাবে আরো কার্যকর হওয়া যায়, এসব বিষয়ে গবেষকরা তাঁদের বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন। গবেষকরা একটি “প্রতি-ভঙ্গুর” (antifragile) শাসনব্যবস্থার ধারণার কথা বলেছেন। এটি হল এমন একটি ব্যবস্থা যা দুর্যোগ মোকাবিলা করতে করতে ক্রমশ আরো শক্তিশালী হয়ে উঠে। দুর্যোগ পরিস্থিতিতে সব ধরণের সম্ভাব্য সমাধান বিবেচনায় এনে, এর সাথে সহযোগিতা এবং উদ্ভাবনের সমন্বয় ঘটিয়ে, দুর্যোগ মোকাবিলার পথ বের করে, এবং এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শাসনব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তোলা যায়।

বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের ক্ষমতা (resilience) আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুপরিচিত। তবে একবিংশ শতাব্দীতে বিশ^ায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ ঘন ঘন করোনার মতো ভয়াবহ জাতীয় দুর্যোগে পড়তে পারে। তখন শুধু দুর্যোগ সামলানোর ক্ষমতাই যথেষ্ট হবে না। তাতে উন্নয়নের ধারা ব্যহত হবে। বাংলাদেশে উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে গেলে এমন একটি শাসনব্যবস্থা প্রয়োজন, যা দুঃসময়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আরও কার্যকর হয়ে উঠতে পারে।

বিআইজিডির প্রতিবেদনে মহামারীকালীন নীতিনির্ধারণ এবং এর প্রয়োগ, স্বাস্থ্য ও সাধারণ মানুষের রুটি রুজির ওপর এই নীতির প্রভাব নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। একইসাথে সরকারের করোনা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জনগণের ধারনা বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে একটি জরিপ চালানো হয়েছে। সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তুষ্টি থাকলেও সরকারের লকডাউন ব্যবস্থাপনা, করোনা পরীক্ষা এবং ত্রাণ কার্যক্রমের কার্যকারিতা নিয়ে জনগণের অসন্তুষ্টি প্রকাশ পেয়েছে এই জরিপে।

রিপোর্টে বলা হয়, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এই মুহুর্তে তেমন বড় কোনো বিরোধিতা আশংকা করছে না। ফলে দেশকে সবদিকে থেকে উন্নত করতে, বিশেষত অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে সরকার বদ্ধপরিকর। লকডাউন অর্থনীতি ও মানুষের জীবনে কি ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, তা অনুধাবণ করেই ২০২০ সালে লকডাউন প্রয়োগে সরকারের দ্বিধাগ্রস্থ ছিল। ধারণার চেয়ে আক্রান্তের হার কম হওয়ায় গতবছর এই ঢিলেঢালা লকডাউনের কৌশল উৎরে গিয়েছিলো। কিন্তু তারপরও আর্থিকভাবে দুর্বল, স্বল্প-সঞ্চয়ী মানুষ এবং অসময়ে সাহায্য করার মতো যাদের কেউ নেই, তাদের জীবন ও জীবিকা লকডাউন আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে হুমকির মুখে পড়েছে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা সরকারের একটি সুস্পষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নকৌশল। এই প্রবৃদ্ধি সুরক্ষিত রাখার প্রচেষ্টা ঘোষিত প্রণোদনায় স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। বৃহৎ, মাঝারি এবং রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য জিডিপির তিন শতাংশ পর্যন্ত বরাদ্দ ছিলো। সেই তুলনায় আর্থিকভাবে দুর্বল জনগোষ্ঠী, তাঁদের খাদ্য ও কর্ম নিরাপত্তার জন্য বরাদ্দ ছিলো এক শতাংশেরও কম। তৈরি পোশাকশিল্পের মালিক ও তাদের সংগঠনগুলো তাদের প্রভাব খাটিয়ে প্রণোদনার মাধ্যমে নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরব ছিলো। অন্যদিকে তুলনামূলকভাবে দূর্বল শ্রমিক ইউনিয়ন, তৃণমূল জনগণ ও তাদের সংগঠনগুলো সেভাবে সরব হতে পারে নি। এই ব্যাপারটিও প্রণোদনা নীতি তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। এর ফলে ত্রাণ বা সামাজিক সুরক্ষা সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় কম ছিলো। তার ওপওে প্রশাসনিক দুর্বলতা ও স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার অভাবে ত্রাণ কার্যক্রম ব্যহত হয়েছে। ত্রাণ যাদের সবচেয়ে প্রয়োজন ছিলো, তাদের কাছে তথ্য ঠিকমত পৌঁছেনি। জরিপে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশই বিশ^াস করেন যে ত্রাণ ব্যবস্থাপনায় কিছু না কিছু দুর্নীতি অবশ্যই হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ উপযুক্ত সহযোগিতা না পেয়ে বাধ্য হয়েছে সামাজিক দূরত্ব না মেনে কর্মক্ষেত্রে ফিরতে, যা তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে৷

এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ ব্যবস্থার দুর্বলতা হয়েছে মড়ার উপর খাড়ার ঘা। জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা মহামারীকালীন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে মোটামুটি ব্যর্থ হয়েছে। মহামারীর দুইমাস পার হয়ে যাওয়ার পরও প্রতিটি উপজেলায় গড়ে মাত্র পাঁচটি করে অক্সিজেন সিলিন্ডার ছিলো। সাড়ে ষোলো কোটি মানুষের জন্য ভেন্টিলেটরের সংখ্যা ছিল মাত্র ২,২৬৭টি। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার উপকরণ (পিপিই) এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপরকণের সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় ছিলো খুবই কম এবং এসব উপকরণ ক্রয়েও ছিল ঢিলেমি। করোনা মোকাবিলার কোনো নীতি, কৌশল বা প্রাক-প্রস্তুতি বাংলাদেশের ছিল না। ২০১১ সালের পর থেকে “জাতীয় বায়ুবাহিত এবং ইনফ্লয়েঞ্জা মহামারী প্রস্তুতি ও সাড়াদান পরিকল্পনা” হালনাগাদ করা হয়নি। ২০২০ সালের মার্চ থেকে জুলাইয়ের মধ্যে আক্রান্তের হার যখন খুব বেশি ছিলো, সেসময়ে করোনা মোকাবেলার সর্বোচ্চ কমিটি মাত্র তিনবার সভা আয়োজন করেছে। করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশের স্বাস্থব্যবস্থার দুর্বলতা ফুটে উঠেছে পরীক্ষাসংক্রান্ত উপাত্তে; বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষার হার দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশের চেয়ে অনেক কম।

চলমান ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট মোকাবেলায় বিগত বছরের অভিজ্ঞতা কতটা কাজে লেগেছে? আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে বলে মনে হচ্ছে। যেমন, লকডাউন কঠোরভাবে পালিত হয়েছে এবং এই সংক্রান্ত নির্দেশনা এবার আগের চেয়ে স্পষ্ট। স্বাস্থ্যখাতেও সমন্বয় আগের চেয়ে বেড়েছে। যেমন, প্রস্তুতির অংশ হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা মহাপরিচালকের কার্যালয়ের সাথে সমন্বিতভাবে সরকারি হাসপাতালগুলো এখন কাজ করছে।

তবে আর কতদিন এমন কঠোর লকডাউন বহাল থাকবে কিংবা কত দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত যাওয়া যাবে তা স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক সুরক্ষা এই দুইটি খাতের উপর নির্ভর করবে। সরকারের উচিৎ দ্রুত স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং এখাতে ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা। একইসাথে জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরিবর্তে জনসুরক্ষা কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক নীতিমালা তৈরি করতে হবে।

এজন্য সরকারের উচিৎ আমাদের শক্তিশালী দিকগুলোকে কাজে লাগানো। বাংলাদেশের সামাজিক সুরক্ষা খাত গত এক দশকে ব্যপক বিস্তার লাভ করেছে। একে আরো শক্তিশালী করে তোলা দরকার, যাতে এ ধরণের বিপর্যয়ে জনসুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। এই খাতে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা বাড়াতে প্রয়োজন নিরপেক্ষ ও স্বাধীন পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা, নীতিনির্ধারণে এসব পর্যবেক্ষণের প্রতিফলন নিশ্চিত করা এবং জনগণের দাবী ও অভিযোগ জানা ও সেগুলো মেটানোর কার্যকর ব্যবস্থা করা। এখানে রাষ্ট্র ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (যেমন এনজিও) মধ্যে সফল অংশীদারীত্বের প্রচুর উদাহরণ রয়েছে। এ ধরণের অংশিদারিত্বগুলোকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে হবে।

সরকারের উচিৎ একবিংশ শতাব্দীর রাষ্ট্র পরিচালনা-নীতি অনুশীলন করা, যার মূলনীতি হল উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থা। নীতিনির্ধারণ, পর্যবেক্ষণ এবং মতামত প্রদানে নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া উচিত। বিশেষজ্ঞ ও জনগণের সমালোচনা যে কার্যকর জনমুখী শাসনব্যবস্থার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা সরকারের অনুধাবণ করা উচিত।

স্থানীয় সরকার, সংগঠন এবং মন্ত্রণালয়সমূহকে শক্তিশালী হতে হবে। স্থানীয় প্রয়োজন এবং অবস্থার ভিত্তিতে নিজেদের স্বাধীনভাবে পরিচালনার সক্ষমতা থাকতে হবে এসব প্রতিষ্ঠানের। সকল ক্ষেত্রে এক নীতি- এমন মনোভাব থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে। সক্ষম প্রশাসন এবং বিকেন্দ্রীভূত কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রয়োজন মেটাতে বেশি কার্যকর হতে পারে। করোনার মত বিপর্যয় মোকাবেলায় প্রয়োজন শক্তিশালী জনপ্রশাসন, দায়িত্বশীল ও বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ, মতামত গ্রহণের একটি কার্যকর প্রক্রিয়া, অভিজ্ঞতা থেকে শেখা ও সেই জ্ঞানকে সত্যিকারে কাজে লাগানোর ক্ষমতা।

back to top