রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম ‘সম্পন্ন’ করার পরামর্শ দিয়েছেন এ সংক্রান্ত বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ শাসনের অবসানের পর জনগণের মনে রাষ্ট্র সংস্কারের যে গভীর আকাঙ্খা সৃষ্টি হয়েছে, সেই সংস্কারকাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই সংস্কার কাজ সুসম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন।
তারা বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) ‘ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা কার্যক্রম: রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এ পরামর্শ দেন।
দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সহায়তায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সুজনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাবেক বিচারপতি এমএ মতিন।
সংস্কার কার্যক্রমের পর জাতীয় নির্বাচনের পরামর্শ দিয়ে আলোচকরা বলেন, সেই রাষ্ট্র সংস্কার যেন পরবর্তী সময়ে কার্যকর করা হয়, সে জন্য সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে একটি সমঝোতা থাকতে হবে। এরপরই জাতীয় নির্বাচন হতে পারে বলে নাগরিক সমাজের নেতারা মনে করেন।
বৈঠকে সুজনের পক্ষ থেকে সুজনের সমন্বয়কারী দিলীপ সরকার একটি সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। সেখানে বলা হয়, নির্বাচনব্যবস্থা, সংবিধান, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন ও পুলিশ প্রশাসন সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়। পরে আরও চারটি কমিশন গঠন করা হলেও সেগুলোর প্রজ্ঞাপন হয়নি।
আগের ছয়টি কমিশনকে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্য তাদের সুপারিশের প্রতিবেদন দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এরপর সরকার সেই সুপারিশের ওপরে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কারের উদ্যোগ নেবে।
বৈঠকে আলোচকরা বলেছেন, রাষ্ট্র সংস্কারে বেশ কটি বিষয় সামনে উঠে এসেছে। তার মধ্যে অনেক বিষয় রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সম্পন্ন করা সম্ভব। আবার কিছু বিষয়ের সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ারভুক্ত কিনা, তা নিয়ে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এরপরও সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া; নির্বাচনের আগে যেমন সংস্কার প্রয়োজন, নির্বাচনের পরেও তা চলমান রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বক্তারা। বৈঠকে সাবেক সচিব একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেছেন, ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনেই নয়ছয় করার কোনো সুযোগ থাকা চলবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে, নাগরিকের নিজেদের ভোটদানের অধিকার নিশ্চিত হলে, রাজনীতিকরাও অনেক দায়িত্বশীল হবেন।
আদর্শিক বা কর্মপন্থা নিয়ে দলগুলোর মতভিন্নতা থাকতে পারে-মন্তব্য করে তিনি বলেন, তবে মৌলিক বিষয়গুলোতে সব রাজনৈতিক দলের সমঝোতা থাকতে হবে। তা না হলে সংস্কারচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
বিচারপতি এমএ মতিন বলেন, ‘দেশে একটি পরিবর্তন আনার জন্য আবু সাঈদ, মুগ্ধর মতো সূর্যসন্তানরা প্রাণ দিয়েছেন। বহু মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। ফলে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতেই হবে।’
দেশে একটা সত্যিকারের পরিবর্তন বা সংস্কার আনতে হবে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘এজন্য যে সংস্কার প্রস্তাব গৃহীত হবে, তা কার্যকর করার জন্য যারা নির্বাচনে বিজয়ী হবেন, তাদের দায়বদ্ধ থাকতে হবে, যারা বিরোধী দলে যাবেন, তাদেরও পূর্ণ সমর্থন থাকতে হবে। এজন্য একটি ‘জাতীয় সনদ’ করা যেতে পারে, যেখানে প্রতিটি রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর করে সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবেন।’
বৈঠকে সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, সংস্কার প্রস্তাব আসার অপেক্ষায় না থেকে নির্বাহী আদেশে যেসব পরিবর্তন করা যায়, সরকার সেই পরিবর্তনগুলো করতে পারে। বলা হয়ে থাকে, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে চারটি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো সুষ্ঠু ছিল কিন্তু নির্বাচন যাই হোক, সুষ্ঠু গণতন্ত্র ছিল না।
এ বিষয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো পুরোপুরি সচেতন নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের ভেতরেও সংস্কার করতে হবে।
সাংবাদিক মাহাবুব কামাল বলেন, দেশের যে সমস্যা, তার স্বল্প ও মধ্য মেয়াদের কোনো সমাধান নেই। এ জন্য দীর্ঘ প্রক্রিয়া প্রয়োজন। জনসাধারণের মনোজগতের পরিবর্তন আনতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি জনসংস্কৃতির পরিবর্তনের জন্যও কাজ করতে হবে।
জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ কয়েকটি প্রস্তাব করেছেন। তিনি এক ব্যক্তিকে দুই মেয়াদের বেশি সরকার প্রধান না করা, একই ব্যক্তিকে সরকার ও দলীয় প্রধান না করা এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সীমিত করার প্রস্তাব করেছেন।
আলোচনায় অন্যদের মধ্যে সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য এসএম শফিকুল ইসলাম, একরাম হোসেনসহ সুজনের বিভিন্ন অঞ্চলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪
রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম ‘সম্পন্ন’ করার পরামর্শ দিয়েছেন এ সংক্রান্ত বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ শাসনের অবসানের পর জনগণের মনে রাষ্ট্র সংস্কারের যে গভীর আকাঙ্খা সৃষ্টি হয়েছে, সেই সংস্কারকাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই সংস্কার কাজ সুসম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন।
তারা বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) ‘ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা কার্যক্রম: রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এ পরামর্শ দেন।
দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সহায়তায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সুজনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাবেক বিচারপতি এমএ মতিন।
সংস্কার কার্যক্রমের পর জাতীয় নির্বাচনের পরামর্শ দিয়ে আলোচকরা বলেন, সেই রাষ্ট্র সংস্কার যেন পরবর্তী সময়ে কার্যকর করা হয়, সে জন্য সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে একটি সমঝোতা থাকতে হবে। এরপরই জাতীয় নির্বাচন হতে পারে বলে নাগরিক সমাজের নেতারা মনে করেন।
বৈঠকে সুজনের পক্ষ থেকে সুজনের সমন্বয়কারী দিলীপ সরকার একটি সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। সেখানে বলা হয়, নির্বাচনব্যবস্থা, সংবিধান, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন ও পুলিশ প্রশাসন সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়। পরে আরও চারটি কমিশন গঠন করা হলেও সেগুলোর প্রজ্ঞাপন হয়নি।
আগের ছয়টি কমিশনকে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্য তাদের সুপারিশের প্রতিবেদন দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এরপর সরকার সেই সুপারিশের ওপরে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কারের উদ্যোগ নেবে।
বৈঠকে আলোচকরা বলেছেন, রাষ্ট্র সংস্কারে বেশ কটি বিষয় সামনে উঠে এসেছে। তার মধ্যে অনেক বিষয় রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সম্পন্ন করা সম্ভব। আবার কিছু বিষয়ের সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ারভুক্ত কিনা, তা নিয়ে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এরপরও সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া; নির্বাচনের আগে যেমন সংস্কার প্রয়োজন, নির্বাচনের পরেও তা চলমান রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বক্তারা। বৈঠকে সাবেক সচিব একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেছেন, ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনেই নয়ছয় করার কোনো সুযোগ থাকা চলবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে, নাগরিকের নিজেদের ভোটদানের অধিকার নিশ্চিত হলে, রাজনীতিকরাও অনেক দায়িত্বশীল হবেন।
আদর্শিক বা কর্মপন্থা নিয়ে দলগুলোর মতভিন্নতা থাকতে পারে-মন্তব্য করে তিনি বলেন, তবে মৌলিক বিষয়গুলোতে সব রাজনৈতিক দলের সমঝোতা থাকতে হবে। তা না হলে সংস্কারচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
বিচারপতি এমএ মতিন বলেন, ‘দেশে একটি পরিবর্তন আনার জন্য আবু সাঈদ, মুগ্ধর মতো সূর্যসন্তানরা প্রাণ দিয়েছেন। বহু মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। ফলে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতেই হবে।’
দেশে একটা সত্যিকারের পরিবর্তন বা সংস্কার আনতে হবে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘এজন্য যে সংস্কার প্রস্তাব গৃহীত হবে, তা কার্যকর করার জন্য যারা নির্বাচনে বিজয়ী হবেন, তাদের দায়বদ্ধ থাকতে হবে, যারা বিরোধী দলে যাবেন, তাদেরও পূর্ণ সমর্থন থাকতে হবে। এজন্য একটি ‘জাতীয় সনদ’ করা যেতে পারে, যেখানে প্রতিটি রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর করে সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবেন।’
বৈঠকে সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, সংস্কার প্রস্তাব আসার অপেক্ষায় না থেকে নির্বাহী আদেশে যেসব পরিবর্তন করা যায়, সরকার সেই পরিবর্তনগুলো করতে পারে। বলা হয়ে থাকে, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে চারটি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো সুষ্ঠু ছিল কিন্তু নির্বাচন যাই হোক, সুষ্ঠু গণতন্ত্র ছিল না।
এ বিষয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো পুরোপুরি সচেতন নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের ভেতরেও সংস্কার করতে হবে।
সাংবাদিক মাহাবুব কামাল বলেন, দেশের যে সমস্যা, তার স্বল্প ও মধ্য মেয়াদের কোনো সমাধান নেই। এ জন্য দীর্ঘ প্রক্রিয়া প্রয়োজন। জনসাধারণের মনোজগতের পরিবর্তন আনতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি জনসংস্কৃতির পরিবর্তনের জন্যও কাজ করতে হবে।
জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ কয়েকটি প্রস্তাব করেছেন। তিনি এক ব্যক্তিকে দুই মেয়াদের বেশি সরকার প্রধান না করা, একই ব্যক্তিকে সরকার ও দলীয় প্রধান না করা এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সীমিত করার প্রস্তাব করেছেন।
আলোচনায় অন্যদের মধ্যে সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য এসএম শফিকুল ইসলাম, একরাম হোসেনসহ সুজনের বিভিন্ন অঞ্চলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।