alt

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

: বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

আমি যেন দেখে যেতে পারি
ফারুক মাহমুদ
ক্ষমতার পাশে থাকে অধিকাংশ মানুষের স্বভাবের গতি

কে কাকে ডিঙিয়ে যাবে। যোগ্যত্যা দক্ষতা নয়, দাপটের আঁচে

পুড়িয়ে উড়িয়ে দেবে বিনীত অর্জনগুলো। বেড়ে যাবে ক্ষতি

গানের বাগানপথে। তাতে কিছু এসে যায়! কে মরে কে বাঁচে

ও-সব তো লেখা হয় কাগজের উল্টোপিঠে- ধুলোপড়া ভাঁজে

চালাকি তাদের খেলা। ছলনার শতপ্রস্ত ঠোঁটে ঠোঁটে হাসে

ক্ষীণ কণ্ঠে বলে যায়- ‘সততার কোন নিষ্ঠা লাগে কোন কাজে!’

শিকড় ছড়িয়ে থাকে কাঁটার বিকট দৃশ্য সুবিধার পাশে

যখন প্রস্থানে যাব, একবার, আমি যেন দেখে যেতে পারি

সকল দুয়ার খোলা, ঘরে ঘরে শুভচিন্তা হয়ে আছে দারী

কবিতা-কোলাজ : ৩
জাহিদ হায়দার
সঙ্গ দাও, কেন তুমি অনুজ্জ্বল উর্দ্ধকমার বন্ধন।

তথ্যউপোসে পারমিতার নির্জন অস্থিরতা।

মধ্যদিনে কাকাতুয়ার সঙ্গে তোমার কথা বলা।

না ঘুমানো চোখ শূন্যতার ক্যানভাস।

শালিক, বৃষ্টিতে কার্নিশে ঝাপটায় পাখা।

অরণ্যের ছায়ায় সিংহের রাজকীয় আলস্য।

মধ্যরাতে বেড়ালের নিঃশব্দ চলাফেরা।

তপ্ত বালিতে মরুউটের খুরের আঘাত।

কৃষিমাঠে আগাছা পরিষ্কার করা কিষানির হাত।

প্রবল ঢেউয়ে নৌকার হাল ধরে থাকা মাঝির ঘাট।

স্টেশনে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করা কিশোরের টাকা গোনা।

টাচফোনকে জীবন্ত করা আঙুলগুলির হতাশা।

কারো মাথার উপর পোপ বা হুজুরের হাত।

ক্যাকটাসে পানি দিয়ে সবুজের ¯িœগ্ধতা দেখা গৃহিণীর।

এবং শরীরের উঁচুনিচু কাঠামোর মাপ নিতে যাওয়া গম্ভীর চোখের দর্জির।

দৌড়াচ্ছে সঙ্গে ছোটবড়ো চাকার বেঁচে থাকা।

ভাঙনের উচ্চারণ আর কবরভূমির পাশে বৃক্ষরোপণ।

সৈকতে স্বল্পতম কাপড় পরা। তুষার পাতের কোলাহল।

ভেড়ার পশমি উষ্ণতায় স্থবিরতা উপভোগ।

অতঃপর হিংসা জ্যামিতির প্রতি। যুদ্ধদিনে প্রেম হঠাৎ আত্মবাচক।

প্রগতিশীলতার আরশিতে চটা পারদ প্রশ্নবোধক।

নৈঃশব্দ্য আর চিৎকারে বার বার বালিঘড়ি দেখছে বয়স।

আধুনিকতার যৌন অধিকার নীলকান্তমণির দ্যুতিবিস্তার।

নন্দনতৃষ্ণা
বিনয় বর্মন
আকাশে ধাতব অন্ধকার

চাঁদ বন্ধ করে দিয়েছে আলো ছড়ানো

নান্দনিক তৃষ্ণায় কাতর আমি

চ্যাট জিপিটিকে বলি

একটা কবিতা লিখে দাও

সঙ্গে সঙ্গে স্ক্রিন ভরে যায় ফুলের সৌরভে

ওসব চ্যাট জিপিটির জন্য ডালভাত

আমাদের নন্দনভূমি সরে যাচ্ছে

লোহালক্কড়ে ভরে যাচ্ছে চন্দনবন

বাঁশি প্রতিজ্ঞা করেছে অবিনাশী হবে

পাঁজরের নিচে যান্ত্রিক ধুকপুক

চোখের কোটরে ক্যামেরা

মাথায় চিপ... হিপ হিপ

সাইবর্গ সাইবর্গ... কতো কী ছাইভস্ম

আমি একটি রোবটের অর্ডার দিয়েছি

সে আমার ঘর গোছাবে

রান্নাবান্না করে দেবে

আমার সঙ্গে গল্প করবে

আমাকে গানও শোনাবে

রোবটের সঙ্গে থাকতে থাকতে

আমার সুপ্তগাথা ধীরে ধীরে লুপ্ত হয়ে যাবে।

দুপুর
ফারহানা রহমান
এ এমন উদ্ভসিত বিষণœ দুপুর

তোমার চোখের ছায়া প্রেমের বিভোরে

প্রতিবিম্ব হয়ে আমার উপর এসে

পড়েছে, যেভাবে অবারিত নিদ্রাঘোরে

অলসদিনের শেষে অশোধিত স্পর্শে

বিষাদ বাসনা মাখে তৃষাতুর চোখ,

পতিত হয়েও ভেসে থাকে কল্পদৃশ্য!

স্নায়ুর ভেতর মায়াভাবে, অবিরত

অস্থির রাতের দাহ্য মাধুকরী শোক;

পেঁচাদের কৌতূহলী দৃষ্টি ভেদ করে

দীর্ঘতম আদর মেখেও নিঃসঙ্কোচে

ডাকছে সুতীব্র আবেশিত দেহমন;

শূন্যকোণে, পলাতক মেঘের আড়ালে

শান্ত সৌম্য মৈনাকের সুদৃশ্য দুপুর!

সেই আদিম পাথর থেকে মুছে দিয়েছি তোমার নামের গন্ধ
মিরাজুল আলম
তোমাকে নিয়ে ভাববার সময় কই?

সময় ভাঙিয়ে খাই।

পাথরের মুখ থেকে পিপাসার জল আহরণ করি ।

তোমার জন্য একটা ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো

এমন পাগল আমি নই।

রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা গাছটা তারও একটা ধর্ম আছে

তোমার তো কোনো ধর্মই নেই।

তোমাকে ভুলে গেছে আমাদের বাগান বাড়িটা,

তোমাকে ভুলে গেছে আমার পোষা বিড়ালটা।

তোমার শেষ ¯œানের দৃশ্য ভুলে গেছে আমাদের নদীটা।

ভাবছো তোমার জন্য

মজনু-ফরহাদ-চণ্ডীদাস সেজে বিরহের গান গাইতে গাইতে

বেদনার বিষবৃক্ষ হবো!

তোমার নাম ভুলে পালকে শ্রাবণ নিয়ে উড়ে গেছে

আমাদের পোষা পাখিটা।

এখন বোকারাই প্রেমে পড়ে।

হেঁটে যাওয়া শব্দের কথা মনে রেখে

কাটিয়ে দেয় যোজন যোজন বছর।

এই শতাব্দীর প্রেম মানুষকে ভিক্ষার থালা ছাড়া

কিছুই উপহার দিতে জানে না।

পা চিকন হওয়ার গল্প
মাসুদ অর্ণব
যেদিকে তাকাই সেদিকেই রঙবেরঙের মঞ্চ।

যে যার মতো অভিনয় করে যাচ্ছে

খুচরা ও পাইকারি ; না-পারলে, দর্শক সারিতে বসে

দেখে যাওয়া। দেখতে দেখতে খুব বেশি ক্লান্ত হলে

কেউ কেউ চলে যায় অন্তিমশয্যায়।

পুঁজির দৌরাত্ম্যে এগিয়ে যায়

শয়তান। আমাদের কান অনবরত শোনে

শয়তানের সফলতার গান।

কেউ কেউ বৃদ্ধাঙ্গুলি মুখে দিয়ে ভাবছি

আঙ্গুর। বটতলা ভেবে বসে আছি

বনসাই এলাকায়– যেখানে জুতার ধনাঢ্য শব্দে

হারিয়ে যায় বাউলের একতারার সুর।

পাশাপাশি উকিল বন্ধু মনিরের

পা চিকুন হওয়ার গল্পও থেমে থাকে না।

একতা আছে অন্ধকারে, একতা নেই

আলোতে। সবই চলছে অন্ধকারের গতিতে।

ভোরের কোরাস
মাহমুদ নজির
স্বপ্নের ভিতর কতগুলো স্বপ্ন ঝুলে আছে।

কতগুলো কথা-উপকথা,

অলিখিত বোবা আখ্যান।

প্রতিদিন স্বপ্ন দেখতে দেখতে

যখন ঝিমিয়ে পড়ি খুব ভোরে

তখনই রিনিঝিনি বেজে ওঠে

অগণিত স্বপ্নের ক্রন্দন,

বেদনার্ত ভোরের কোরাস।

যে গান শোনাতে চেয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম

তোমাকে আপনজন ভেবে

ঠিক তখনই ভেঙে দিলে ঘুম।

ভিতর-বাহির জুড়ে তাই এখন

তোলপাড় করছে সাতসমুদ্রের ঢেউ,

স্বপ্নঘুম দেখতে দেখতে

ক্রমাগত হারিয়ে যাচ্ছি স্বপ্নের ভিতর।

কূলকিনারবিহীন

তাপিত দুঃখ ও বেদনার গীতি,

ভুল সুরের নেই শেষ।

তবুও নতুনরূপে খুঁজে চলছি

নিজেকেই আবার

নৈমিত্তিক চেনা-অচেনার ভিড়ে।

গন্ধহীন ফুলের ভালোবাসা
মিয়া ইব্রাহিম
কিছু ফুল গন্ধ বিলায় না জেনেও

যে কিশোরী মালা গাঁথে রোজ

পথে পথে ফেরি করে

নিতান্ত জীবিকার টানে-

সশ্রদ্ধ প্রণতি তাকে।

কিছু ফুলের সুগন্ধ কিছু নেই

অবিরল ফোটে তবু-

প্রিয়ার খোঁপায় অঞ্জলি অপরূপ

চুলের ভাঁজে ভাঁজে মৃদু ঢেউ

গভীর মমতায়।

না হয় আমি এমনই

গন্ধহীন কোনো ফুল

নিতান্ত সন্তর্পণে মিশে যাবো

তোমার নিটোল অবয়বে

ডোম
উদ্ভিদ উদ্দিন
সন্ধে সাতটায় ডোম লাশকাটা ঘরে প্রবেশ করলেন। মদের বোতলে থাকা সবটুকু মদ সাবাড় করলেন। মাতাল ডোম ছুরি-চাকুর ব্যাগ নিয়ে লাশকাটাঘরের বারান্দায় এলেন। তাতে দুইঘণ্টা শান দিয়ে লাশের কাছে গেলেন; কিন্তুফিরে এলেন অন্য মদের বোতল নিয়ে। সবটুকু মদ শেষ করলেন। আবার...

অতঃপর ডাক্তার এসে দেখলেন ডোম বসে আছেন বারান্দায়। অশ্রুভেজা সমস্ত বুক।

লাশ কেন কাটোনি- জিজ্ঞেস করলে ডোম কেঁদে কেঁদে বললেন, ‘স্যার, লাশ কাটতে পারি বটে, কন্যাকে যে কাটতে পারি না!’

ছবি

চব্বিশের অভ্যুত্থান নিয়ে গ্রন্থ

ছবি

ভিন্নচোখ: নুতন কবিতা সংখ্যা

ছবি

লোরকা: মৃত্যুর রূপক এবং আন্দালুসিয়ার লোকজ বিশ্বাস

ছবি

কবিতার শিল্পনিষ্ঠ রূপকার ফারুক মাহমুদ

ছবি

কাফকাকে পড়া কাফকাকে পড়ানো

ছবি

কবি নওশাদ নূরী

ছবি

আঁধার পেরিয়ে আলোর উদ্ভাষণ

ছবি

সন্জীদা খাতুন : কৃতি ও কৃতিত্ব

ছবি

ব্রেশায় উড়োজাহাজ

ছবি

মননশস্যের অমৃত মন্থন

ছবি

অনুবাদ ও ভূমিকা : আলী সিদ্দিকী

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

বড়শি

ছবি

কাফকাকে পড়া, কাফকাকে পড়ানো

এ মুখর বরষায়

ছবি

রক্তে লেখা প্রেম: রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর বিপ্লব

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

শঙ্খজীবন: যাপিত জীবনের অন্তর্গূঢ় প্রতিকথা

ছবি

ওসামা অ্যালোমার এক ঝুড়ি খুদে গল্প

ছবি

প্রযুক্তির আলোয় বিশ্বব্যাপী বইবাণিজ্য

সাময়িকী কবিতা

ছবি

ব্রেশায় উড়োজাহাজ

ছবি

কাফকার কাছে আমাদের ঋণ স্বীকার

ছবি

কাফকাকে পড়া, কাফকাকে পড়ানো

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি: একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

সূর্যের দেশ

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

লড়াই

সাময়িকী কবিতা

ছবি

প্রচলিত সাহিত্যধারার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন মধুসূদন

ছবি

মেধাসম্পদের ছন্দে মাতুন

ছবি

উত্তর-মানবতাবাদ ও শিল্প-সাহিত্যে তার প্রভাব

ছবি

আমজাদ হোসেনের ‘ভিন্ন ভাষার কবিতা’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি: একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

দুই ঋতপার কিসসা এবং এক ন্যাকা চৈতন্য

tab

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

আমি যেন দেখে যেতে পারি
ফারুক মাহমুদ
ক্ষমতার পাশে থাকে অধিকাংশ মানুষের স্বভাবের গতি

কে কাকে ডিঙিয়ে যাবে। যোগ্যত্যা দক্ষতা নয়, দাপটের আঁচে

পুড়িয়ে উড়িয়ে দেবে বিনীত অর্জনগুলো। বেড়ে যাবে ক্ষতি

গানের বাগানপথে। তাতে কিছু এসে যায়! কে মরে কে বাঁচে

ও-সব তো লেখা হয় কাগজের উল্টোপিঠে- ধুলোপড়া ভাঁজে

চালাকি তাদের খেলা। ছলনার শতপ্রস্ত ঠোঁটে ঠোঁটে হাসে

ক্ষীণ কণ্ঠে বলে যায়- ‘সততার কোন নিষ্ঠা লাগে কোন কাজে!’

শিকড় ছড়িয়ে থাকে কাঁটার বিকট দৃশ্য সুবিধার পাশে

যখন প্রস্থানে যাব, একবার, আমি যেন দেখে যেতে পারি

সকল দুয়ার খোলা, ঘরে ঘরে শুভচিন্তা হয়ে আছে দারী

কবিতা-কোলাজ : ৩
জাহিদ হায়দার
সঙ্গ দাও, কেন তুমি অনুজ্জ্বল উর্দ্ধকমার বন্ধন।

তথ্যউপোসে পারমিতার নির্জন অস্থিরতা।

মধ্যদিনে কাকাতুয়ার সঙ্গে তোমার কথা বলা।

না ঘুমানো চোখ শূন্যতার ক্যানভাস।

শালিক, বৃষ্টিতে কার্নিশে ঝাপটায় পাখা।

অরণ্যের ছায়ায় সিংহের রাজকীয় আলস্য।

মধ্যরাতে বেড়ালের নিঃশব্দ চলাফেরা।

তপ্ত বালিতে মরুউটের খুরের আঘাত।

কৃষিমাঠে আগাছা পরিষ্কার করা কিষানির হাত।

প্রবল ঢেউয়ে নৌকার হাল ধরে থাকা মাঝির ঘাট।

স্টেশনে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করা কিশোরের টাকা গোনা।

টাচফোনকে জীবন্ত করা আঙুলগুলির হতাশা।

কারো মাথার উপর পোপ বা হুজুরের হাত।

ক্যাকটাসে পানি দিয়ে সবুজের ¯িœগ্ধতা দেখা গৃহিণীর।

এবং শরীরের উঁচুনিচু কাঠামোর মাপ নিতে যাওয়া গম্ভীর চোখের দর্জির।

দৌড়াচ্ছে সঙ্গে ছোটবড়ো চাকার বেঁচে থাকা।

ভাঙনের উচ্চারণ আর কবরভূমির পাশে বৃক্ষরোপণ।

সৈকতে স্বল্পতম কাপড় পরা। তুষার পাতের কোলাহল।

ভেড়ার পশমি উষ্ণতায় স্থবিরতা উপভোগ।

অতঃপর হিংসা জ্যামিতির প্রতি। যুদ্ধদিনে প্রেম হঠাৎ আত্মবাচক।

প্রগতিশীলতার আরশিতে চটা পারদ প্রশ্নবোধক।

নৈঃশব্দ্য আর চিৎকারে বার বার বালিঘড়ি দেখছে বয়স।

আধুনিকতার যৌন অধিকার নীলকান্তমণির দ্যুতিবিস্তার।

নন্দনতৃষ্ণা
বিনয় বর্মন
আকাশে ধাতব অন্ধকার

চাঁদ বন্ধ করে দিয়েছে আলো ছড়ানো

নান্দনিক তৃষ্ণায় কাতর আমি

চ্যাট জিপিটিকে বলি

একটা কবিতা লিখে দাও

সঙ্গে সঙ্গে স্ক্রিন ভরে যায় ফুলের সৌরভে

ওসব চ্যাট জিপিটির জন্য ডালভাত

আমাদের নন্দনভূমি সরে যাচ্ছে

লোহালক্কড়ে ভরে যাচ্ছে চন্দনবন

বাঁশি প্রতিজ্ঞা করেছে অবিনাশী হবে

পাঁজরের নিচে যান্ত্রিক ধুকপুক

চোখের কোটরে ক্যামেরা

মাথায় চিপ... হিপ হিপ

সাইবর্গ সাইবর্গ... কতো কী ছাইভস্ম

আমি একটি রোবটের অর্ডার দিয়েছি

সে আমার ঘর গোছাবে

রান্নাবান্না করে দেবে

আমার সঙ্গে গল্প করবে

আমাকে গানও শোনাবে

রোবটের সঙ্গে থাকতে থাকতে

আমার সুপ্তগাথা ধীরে ধীরে লুপ্ত হয়ে যাবে।

দুপুর
ফারহানা রহমান
এ এমন উদ্ভসিত বিষণœ দুপুর

তোমার চোখের ছায়া প্রেমের বিভোরে

প্রতিবিম্ব হয়ে আমার উপর এসে

পড়েছে, যেভাবে অবারিত নিদ্রাঘোরে

অলসদিনের শেষে অশোধিত স্পর্শে

বিষাদ বাসনা মাখে তৃষাতুর চোখ,

পতিত হয়েও ভেসে থাকে কল্পদৃশ্য!

স্নায়ুর ভেতর মায়াভাবে, অবিরত

অস্থির রাতের দাহ্য মাধুকরী শোক;

পেঁচাদের কৌতূহলী দৃষ্টি ভেদ করে

দীর্ঘতম আদর মেখেও নিঃসঙ্কোচে

ডাকছে সুতীব্র আবেশিত দেহমন;

শূন্যকোণে, পলাতক মেঘের আড়ালে

শান্ত সৌম্য মৈনাকের সুদৃশ্য দুপুর!

সেই আদিম পাথর থেকে মুছে দিয়েছি তোমার নামের গন্ধ
মিরাজুল আলম
তোমাকে নিয়ে ভাববার সময় কই?

সময় ভাঙিয়ে খাই।

পাথরের মুখ থেকে পিপাসার জল আহরণ করি ।

তোমার জন্য একটা ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো

এমন পাগল আমি নই।

রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা গাছটা তারও একটা ধর্ম আছে

তোমার তো কোনো ধর্মই নেই।

তোমাকে ভুলে গেছে আমাদের বাগান বাড়িটা,

তোমাকে ভুলে গেছে আমার পোষা বিড়ালটা।

তোমার শেষ ¯œানের দৃশ্য ভুলে গেছে আমাদের নদীটা।

ভাবছো তোমার জন্য

মজনু-ফরহাদ-চণ্ডীদাস সেজে বিরহের গান গাইতে গাইতে

বেদনার বিষবৃক্ষ হবো!

তোমার নাম ভুলে পালকে শ্রাবণ নিয়ে উড়ে গেছে

আমাদের পোষা পাখিটা।

এখন বোকারাই প্রেমে পড়ে।

হেঁটে যাওয়া শব্দের কথা মনে রেখে

কাটিয়ে দেয় যোজন যোজন বছর।

এই শতাব্দীর প্রেম মানুষকে ভিক্ষার থালা ছাড়া

কিছুই উপহার দিতে জানে না।

পা চিকন হওয়ার গল্প
মাসুদ অর্ণব
যেদিকে তাকাই সেদিকেই রঙবেরঙের মঞ্চ।

যে যার মতো অভিনয় করে যাচ্ছে

খুচরা ও পাইকারি ; না-পারলে, দর্শক সারিতে বসে

দেখে যাওয়া। দেখতে দেখতে খুব বেশি ক্লান্ত হলে

কেউ কেউ চলে যায় অন্তিমশয্যায়।

পুঁজির দৌরাত্ম্যে এগিয়ে যায়

শয়তান। আমাদের কান অনবরত শোনে

শয়তানের সফলতার গান।

কেউ কেউ বৃদ্ধাঙ্গুলি মুখে দিয়ে ভাবছি

আঙ্গুর। বটতলা ভেবে বসে আছি

বনসাই এলাকায়– যেখানে জুতার ধনাঢ্য শব্দে

হারিয়ে যায় বাউলের একতারার সুর।

পাশাপাশি উকিল বন্ধু মনিরের

পা চিকুন হওয়ার গল্পও থেমে থাকে না।

একতা আছে অন্ধকারে, একতা নেই

আলোতে। সবই চলছে অন্ধকারের গতিতে।

ভোরের কোরাস
মাহমুদ নজির
স্বপ্নের ভিতর কতগুলো স্বপ্ন ঝুলে আছে।

কতগুলো কথা-উপকথা,

অলিখিত বোবা আখ্যান।

প্রতিদিন স্বপ্ন দেখতে দেখতে

যখন ঝিমিয়ে পড়ি খুব ভোরে

তখনই রিনিঝিনি বেজে ওঠে

অগণিত স্বপ্নের ক্রন্দন,

বেদনার্ত ভোরের কোরাস।

যে গান শোনাতে চেয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম

তোমাকে আপনজন ভেবে

ঠিক তখনই ভেঙে দিলে ঘুম।

ভিতর-বাহির জুড়ে তাই এখন

তোলপাড় করছে সাতসমুদ্রের ঢেউ,

স্বপ্নঘুম দেখতে দেখতে

ক্রমাগত হারিয়ে যাচ্ছি স্বপ্নের ভিতর।

কূলকিনারবিহীন

তাপিত দুঃখ ও বেদনার গীতি,

ভুল সুরের নেই শেষ।

তবুও নতুনরূপে খুঁজে চলছি

নিজেকেই আবার

নৈমিত্তিক চেনা-অচেনার ভিড়ে।

গন্ধহীন ফুলের ভালোবাসা
মিয়া ইব্রাহিম
কিছু ফুল গন্ধ বিলায় না জেনেও

যে কিশোরী মালা গাঁথে রোজ

পথে পথে ফেরি করে

নিতান্ত জীবিকার টানে-

সশ্রদ্ধ প্রণতি তাকে।

কিছু ফুলের সুগন্ধ কিছু নেই

অবিরল ফোটে তবু-

প্রিয়ার খোঁপায় অঞ্জলি অপরূপ

চুলের ভাঁজে ভাঁজে মৃদু ঢেউ

গভীর মমতায়।

না হয় আমি এমনই

গন্ধহীন কোনো ফুল

নিতান্ত সন্তর্পণে মিশে যাবো

তোমার নিটোল অবয়বে

ডোম
উদ্ভিদ উদ্দিন
সন্ধে সাতটায় ডোম লাশকাটা ঘরে প্রবেশ করলেন। মদের বোতলে থাকা সবটুকু মদ সাবাড় করলেন। মাতাল ডোম ছুরি-চাকুর ব্যাগ নিয়ে লাশকাটাঘরের বারান্দায় এলেন। তাতে দুইঘণ্টা শান দিয়ে লাশের কাছে গেলেন; কিন্তুফিরে এলেন অন্য মদের বোতল নিয়ে। সবটুকু মদ শেষ করলেন। আবার...

অতঃপর ডাক্তার এসে দেখলেন ডোম বসে আছেন বারান্দায়। অশ্রুভেজা সমস্ত বুক।

লাশ কেন কাটোনি- জিজ্ঞেস করলে ডোম কেঁদে কেঁদে বললেন, ‘স্যার, লাশ কাটতে পারি বটে, কন্যাকে যে কাটতে পারি না!’

back to top