মোহাম্মদ বদর উদ্দিন সাবেরী
কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন বা বিপ্লব যে কোনো সময়ই বেহাত হতে পারে। যদি পরিপূর্ণ কমিটমেন্ট ও কর্মতৎপরতা না থাকে তবে আন্দোলনের সুফলকে ধরে রাখা কঠিন। তাই আন্দোলন করাটা যতটা না কঠিন, তারও চেয়ে কঠিন তার যথার্থ বাস্তবায়ন। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে এমন আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। এই অভ্যুত্থান যদি বেহাত হয় তবে তার পরিণতি হবে অনাকাক্সিক্ষত। লেখক ড. আহমদ আরমান সিদ্দিকী তার ‘৩৬ জুলাই’ গ্রন্থে এমন আশঙ্কা করেছেন যে এই বৃহত্তর আন্দোলন আবার বেহাত হয়ে যায় কিনা। স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা, জনগণের ক্ষমতা হরণ করে একের পর এক বিতর্কিত নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখা যে কোনো শুভ ফল বয়ে আনে না; বিগত সরকার উৎক্ষাত তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
‘My son is dead I want justice’ :জুলাই অভ্যুত্থানের বর্বরতম হত্যাকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন লেখক। কারো সন্তান, কারো ভাই-বোন, কারো নিকটাত্মীয় হারানোর মর্মন্তুদ ও রক্তাক্ত চিত্র অঙ্কিত হয়েছে আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে। এসব হত্যাকা-ে সুষ্ঠু বিচার প্রত্যাশা করেন স্বজন হারানো মানুষ। লেখক ব্যক্তিগতভাবে এদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব।গ্রন্থটিতে voice recording-এর মাধ্যমে সেই উত্তাল সময় ধারণ করে রেখেছে; এবং ২০২৫-এর বইমেলায় তা গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে। সন্দেহ নেই, আমরা প্রায়শ মনের ভাব ব্যক্ত করি কথার মাধ্যমে এবং তা কেবল নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখি। আবার অনেক সময় অকপটে অনেক সত্য বলে যাই, যা লেখনিতে সম্ভব নয়। সম্পূর্ণ আবেগ এবং বেদনার কাব্যগাথা এই গ্রন্থে দিনলিপি আকারে লিপিবদ্ধ হয়েছে। সস্তানহারা মা-বাপের বেদনার কথা ব্যক্ত হয়েছে। যেমন ফারহান ফাইয়াজোর মায়ের বেদনাগাথা অশ্রুকাব My son is dead, I want justice ঈশ্বরের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠেছিল কি বেদনায়?
কিছু কথা, নয় সমালোচনা, প্রস্তাবনা: সম্প্রীতি সৌহার্দ্য:খুব বিনয় ও সম্মানের সাথে বলছি, পৃষ্ঠা ৬৭: “বিপ্লব কুমারকে ডিবিতে দেওয়া হয়েছে। আরেক হিন্দু পুলিশ অফিসারকে দেওয়া হয়েছে ডিএমপিতে।”
‘হিন্দু পুলিশ অফিসার’ বাক্যটা হোঁচট খাওয়ার মতো। বোদ্ধা মহলের বক্তব্য হলো বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং স্বৈরাচারী সরকারের পতনে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবারই অংশগ্রহণ ছিল। এবং এই দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। লেখক ‘হিন্দু অফিসার’ না লিখে “স্বৈরাচারী সরকারের দলীয় পুলিশ অফিসার”- এই জাতীয় অসম্মানসূচক অভিধায় ভূষিত করতে পারতেন,তা অনেক বেশি পরিশীলিত হতো।
Judgemental position-এ থেকে একজন লেখক যখন তার বক্তব্য উপস্থাপনের চেষ্টা করেন, নিরপেক্ষতার চাদর টেনে তার বক্তব্য হাজির করাই ঐতিহাসিক কর্তব্য বলে মনে করি। কেননা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ব্যতিক্রমধর্মী এই বইখানি হয়তো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে। আগামী প্রজন্ম যেন কোনো সম্প্রদায়গত পক্ষপাতিত্বের গন্ধ না পায় এটাই কাম্য।
শেষ হইয়াও হইলো না শেষ: ভয়েস রেকর্ডিং থেকে আলোচ্য বইটিকে যারা গ্রন্থে রূপ দিয়েছেন তারা ধন্যবাদ ও সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। যেহেতু ভয়েস রেকর্ডিং হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে, এখানে কোনো সত্য আড়ালের সুযোগ নেই। কথক (লেখক না বলে যদি কথক বলি অন্যায্য হবে কি?) ডঃ সিদ্দিকীর তাৎক্ষণিক ঐতিহাসিক জুলাই অভুত্থানের ঘটনাপঞ্জি তাই হুবহু ও অকৃত্রিমভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এজন্যই আটপৌরে কথ্য লেখনীতে রূপান্তরিত হওয়ার ফলে গ্রন্থটি জুলাই অভ্যুত্থানের তাৎপর্যপূর্ণস্মারক গ্রন্থ হয়ে উঠেছে।
হার্ডকভারে বাঁধাইকৃত এবং ভারি অফসেট কাগজে ঝরঝরে মুদ্রিত বইখানা প্রায় নির্ভুল বানানে সুখপাঠ্য। এটি সব শ্রেণির পাঠকের পাঠযোগ্য সহজ বোধগম্য একটি বই।
ঐতিহ্য প্রকাশন থেকে ১৩৫ পৃষ্ঠার বইটির মুদ্রিত মূল্য মাত্র ৩০০ টাকা। বইটির বহুল প্রচার কাম্য এবং কথক লেখকের এহেন শ্রম প্রশংসার দাবি রাখে।
মোহাম্মদ বদর উদ্দিন সাবেরী
বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫
কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন বা বিপ্লব যে কোনো সময়ই বেহাত হতে পারে। যদি পরিপূর্ণ কমিটমেন্ট ও কর্মতৎপরতা না থাকে তবে আন্দোলনের সুফলকে ধরে রাখা কঠিন। তাই আন্দোলন করাটা যতটা না কঠিন, তারও চেয়ে কঠিন তার যথার্থ বাস্তবায়ন। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে এমন আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। এই অভ্যুত্থান যদি বেহাত হয় তবে তার পরিণতি হবে অনাকাক্সিক্ষত। লেখক ড. আহমদ আরমান সিদ্দিকী তার ‘৩৬ জুলাই’ গ্রন্থে এমন আশঙ্কা করেছেন যে এই বৃহত্তর আন্দোলন আবার বেহাত হয়ে যায় কিনা। স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা, জনগণের ক্ষমতা হরণ করে একের পর এক বিতর্কিত নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখা যে কোনো শুভ ফল বয়ে আনে না; বিগত সরকার উৎক্ষাত তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
‘My son is dead I want justice’ :জুলাই অভ্যুত্থানের বর্বরতম হত্যাকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন লেখক। কারো সন্তান, কারো ভাই-বোন, কারো নিকটাত্মীয় হারানোর মর্মন্তুদ ও রক্তাক্ত চিত্র অঙ্কিত হয়েছে আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে। এসব হত্যাকা-ে সুষ্ঠু বিচার প্রত্যাশা করেন স্বজন হারানো মানুষ। লেখক ব্যক্তিগতভাবে এদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব।গ্রন্থটিতে voice recording-এর মাধ্যমে সেই উত্তাল সময় ধারণ করে রেখেছে; এবং ২০২৫-এর বইমেলায় তা গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে। সন্দেহ নেই, আমরা প্রায়শ মনের ভাব ব্যক্ত করি কথার মাধ্যমে এবং তা কেবল নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখি। আবার অনেক সময় অকপটে অনেক সত্য বলে যাই, যা লেখনিতে সম্ভব নয়। সম্পূর্ণ আবেগ এবং বেদনার কাব্যগাথা এই গ্রন্থে দিনলিপি আকারে লিপিবদ্ধ হয়েছে। সস্তানহারা মা-বাপের বেদনার কথা ব্যক্ত হয়েছে। যেমন ফারহান ফাইয়াজোর মায়ের বেদনাগাথা অশ্রুকাব My son is dead, I want justice ঈশ্বরের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠেছিল কি বেদনায়?
কিছু কথা, নয় সমালোচনা, প্রস্তাবনা: সম্প্রীতি সৌহার্দ্য:খুব বিনয় ও সম্মানের সাথে বলছি, পৃষ্ঠা ৬৭: “বিপ্লব কুমারকে ডিবিতে দেওয়া হয়েছে। আরেক হিন্দু পুলিশ অফিসারকে দেওয়া হয়েছে ডিএমপিতে।”
‘হিন্দু পুলিশ অফিসার’ বাক্যটা হোঁচট খাওয়ার মতো। বোদ্ধা মহলের বক্তব্য হলো বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং স্বৈরাচারী সরকারের পতনে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবারই অংশগ্রহণ ছিল। এবং এই দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। লেখক ‘হিন্দু অফিসার’ না লিখে “স্বৈরাচারী সরকারের দলীয় পুলিশ অফিসার”- এই জাতীয় অসম্মানসূচক অভিধায় ভূষিত করতে পারতেন,তা অনেক বেশি পরিশীলিত হতো।
Judgemental position-এ থেকে একজন লেখক যখন তার বক্তব্য উপস্থাপনের চেষ্টা করেন, নিরপেক্ষতার চাদর টেনে তার বক্তব্য হাজির করাই ঐতিহাসিক কর্তব্য বলে মনে করি। কেননা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ব্যতিক্রমধর্মী এই বইখানি হয়তো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে। আগামী প্রজন্ম যেন কোনো সম্প্রদায়গত পক্ষপাতিত্বের গন্ধ না পায় এটাই কাম্য।
শেষ হইয়াও হইলো না শেষ: ভয়েস রেকর্ডিং থেকে আলোচ্য বইটিকে যারা গ্রন্থে রূপ দিয়েছেন তারা ধন্যবাদ ও সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। যেহেতু ভয়েস রেকর্ডিং হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে, এখানে কোনো সত্য আড়ালের সুযোগ নেই। কথক (লেখক না বলে যদি কথক বলি অন্যায্য হবে কি?) ডঃ সিদ্দিকীর তাৎক্ষণিক ঐতিহাসিক জুলাই অভুত্থানের ঘটনাপঞ্জি তাই হুবহু ও অকৃত্রিমভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এজন্যই আটপৌরে কথ্য লেখনীতে রূপান্তরিত হওয়ার ফলে গ্রন্থটি জুলাই অভ্যুত্থানের তাৎপর্যপূর্ণস্মারক গ্রন্থ হয়ে উঠেছে।
হার্ডকভারে বাঁধাইকৃত এবং ভারি অফসেট কাগজে ঝরঝরে মুদ্রিত বইখানা প্রায় নির্ভুল বানানে সুখপাঠ্য। এটি সব শ্রেণির পাঠকের পাঠযোগ্য সহজ বোধগম্য একটি বই।
ঐতিহ্য প্রকাশন থেকে ১৩৫ পৃষ্ঠার বইটির মুদ্রিত মূল্য মাত্র ৩০০ টাকা। বইটির বহুল প্রচার কাম্য এবং কথক লেখকের এহেন শ্রম প্রশংসার দাবি রাখে।