alt

literature » samoeky

সাময়িকী কবিতা

: বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫

জলের স্বাদ
খালেদ হোসাইন
তুমুল বৃষ্টিতে আমি

তোমার মুখের দিকে

তাকিয়ে ছিলাম।

অথচ আমার পাশে

কেউ নেই, আচ্ছাদিত

পাথরও তো নয়।

সকালের পদক্ষেপ

পর্বতের চূড়া থেকে

গড়িয়ে পড়েছে।

অনুভূতি, তোমার কি

সময়-প্রসার আছে,

অবনতি, মৃত্যু আছে

অন্ধ চোখে বেড়ে-ওঠা

সন্দেহের ভ্রম?

ঘাস বা পাথর-জন্ম?

ঝোপের আড়ালে মেঘ,

ধুলো-চিত্রকলা?

তবুও তোমাকে ছুঁই

জলের স্বাদের মতো

অভ্যস্ত ছায়ায়।

স্মৃতির বর্ষা
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
বর্ষার সাথে বিরহ নিবিড় গভীর

দেহের সাথে ছায়ার অপরিহার্যের

মতোন। আলোর সাথে আঁধার কখনো

আলাদা হতে পারে না, বিরহও তাই

হারানো সুরের ব্যথা বর্ষার মাদলে

মুখরিত হয়ে ওঠে। আকাশে মেঘের

ঘনঘটা শুরু হলে মনের কোনায়

জেগে ওঠে বিদ্যুতের স্বতঃদীপ্ত মুখ।

বুকের গভীরে বর্ষা লুকায় নিজেকে

যেমন শীতে নিদ্রায় যায় হিম রক্ত

স্মৃতিতে মেঘেরা জমলে বর্ষা জেগে ওঠে

মনের দু’কূল বেয়ে উপচাতে উপচাতে

ঘুমে থাকা বর্ষা রুদ্র উন্মাদিনী হয়

স্মৃতির বর্ষা কখনো প্রয়াত হয় না।

অশৈল্পিক ব্রহ্মা-
সবিতা শর্মা
(তিতুনকে)
নধর ঘাসের বুক মাড়িয়ে

টলোমলো পা প্রসারিত দু’হাত

দৌড়ে চলে অবোধ শিশু

অস্তরাগে রক্তিম রবি

করতলে রাখে মাখে চটকায়

ছিঁড়ে খানখান যেন শিমুল তুলা

পাতা ঝরার দিনে

এক ফুঁতে উড়াবে বলে।

উঠুক বেড়ে অবোধ সন্তান

বুঝুক, এ নয় তো অস্তফাগ!

বিদ্রোহী রবি ফুঁসে জ্বলন্ত সীসা

অশৈল্পিক ব্রহ্মান্ড পোড়াবে বলে।

স্বপ্নের আহাজারি
আহমদ সলীম
প্রচ- ঝড় তুলে যখন আচমকা তুমি সামনে এলে

মনে হলো স্বর্গ থেকে নেমে আসা কোনো অপ্সরী,

তোমার লাবণ্যের বাতি আঁধারে প্রজ¦লিত

আমি শুধু ধেয়ে আসি মুগ্ধতায়।

মায়া হরিণীর মতো তোমার টানা টানা চোখ

সেই চোখের দৃষ্টির উত্তাপে আমি বিগলিত

রক্তকরবীর রাঙা ঠোঁটে মোনালিসার স্মিত হাসি

সেই হাসির নীরব ছন্দে ফুটে ওঠে আমার প্রত্যাশার ফুল

তোমার শাড়ির পরিপাটি কুঁচির একরাশ নীল,

আর আজানুলম্বিত অবিন্যস্ত চুল

আমার স্বপ্নগুলো উদসী হাওয়ায় আকাশে ওড়ায়।

গোধূলির রক্তিম টিপ ঊষর মন রাঙিয়ে দেয়

পূর্ণিমা রাতে তোমার পাহাড়ি ঝর্নার উচ্ছলতা

আমার চলার গতি শ্লথ করে, বিমুগ্ধ করে চিত্ত।

তোমার মোহন সৌন্দর্যের অধীন আমি

আমার পৌরুষ আজ পরাজিত, পদানত তোমার কাছে

সুখের সারথি ইশারায় কাছে ডাকে তোমার প্রেমকুঞ্জে।

সময়ের ¯্রােতে আমি বিভ্রান্ত

অমিল তোমার ভেতর-বাহিরে,

তোমার এক একটি কর্ম উন্মোচন করে

ধার করা সৌন্দর্যের এক একটি কপট মুখোশ।

দুরন্ত ছদ্মবেশ কত কুহকী নাম-

বৈষম্যরোধ, সংস্কার, মানবাধিকার।

বশীকরণ মন্ত্রগুলো স্পষ্টত পানসে আদিম।

তোমার লালসার ভ্রƒণ দিনে দিনে বেড়ে ওঠে

আমারই রক্ত মাংসে তার পুষ্টি

যন্ত্রণার প্রতিটি মুহূর্ত আমার উপলব্ধিতে সক্রিয়

আর কতকাল নীরবে কোঁকাবে বঞ্চনার স্বপ্নগুলো

তুমি বাজিকর নয়তো ভিন গ্রহের এলিয়েন

কেউ বিশ^াস করুক আর নাই করুক

সত্যি হলো এই যে, সত্যি বলতে কিছুই নেই

কারো কারোজন্য যেমন মিথ্যে বলতে কিছুই নেই

এর সাবধানী নাম কৌশল মাত্র

আর কৌশলটা অতিশয় গোপনীয় একান্ত নিজের।

কুর্চিকাব্য
হাবীবা রোজী
মেঘম্লান শহরে মেহগনি কাঠের বন্ধ কপাট খুলে,

গুটিগুটি পায়ে আকাশ থেকে সূর্য হেঁটে আসে যেদিন,

সেদিন এক শালিক দুঃখ ভুলে একে একে সাজায়,

মায়া রঙে ছায়ার ব্যঞ্জনবর্ণ স্বপ্ন, এ ভরা বাদরে।

হলুদ রোদে স্নান সেরে গোলাপ রঙের টিপ কপালে-

কুর্চিফুলেরা এলোচুলে কাশ উড়ে যাওয়া বাতাস দেখে,

আর রোদ জ্যোৎস্নায় ভিজে, মেখে নেয় সূর্যসৌরভ।

কুর্চি আলতো পাপড়ি মেলে চেয়ে দেখে শারদীয় মেঘ।

সুরপিয়াসী সাকি মোৎসার্ট বিথোভেনের সিম্ফোনিতে-

আকণ্ঠ নিমগ্ন, বিভোর, পশ্চিমমুখী সূর্য হাটে উত্তরে।

আনত কুর্চিফুল চন্দ্রাবতীর মতো পূর্ণদৈর্ঘ্য মহাকাব্য লেখে।

খর¯্রােতা স্বপ্নে, সূর্যস্নানে হেসে উঠে সুখী কুর্চিফুলদল।

সংসার
শারদুল সজল
মুচকি হাসির মতো ঝুলে আছে

রুপালি চাঁদ-

পৃথিবীতে

ডেবে যাওয়া আয়ুরেখার ক্ষরিত জোছনায়

জীবন- যিশুবিদ্ধ পেরেকের হাসি

মৃত্যুদ-ের ভুলবানানে

ভুল থাকে না রশির ব্যবহার

কয়েককোটি নিঃশ^াস

দজলাভর্তি রক্তের তুমুল প্রবাহে

ক্রয় করে

বেঁচে থাকার অভিনয়

এই সুযোগে- সময় ফেরি করে

একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সংসার

অরণ্যের দিকে
সাঈদ বারী
অরণ্য পেরিয়ে হেঁটে যায় একটি হরিণ

তার চোখে বিষণœতা, দূর গন্ধবিহীন ফুলের স্মৃতি।

আলো পড়ে নিঃশব্দ পাতায়-

আর আমি দেখি, এই বিকেল ক্রমে পুরনো হয়ে আসে।

মৌন পাখিদের ওড়াউড়ি নেই আজ,

তবু ডালপালার ফাঁকে হাওয়ার একান্ত নুড়ি বাজে;

এ যেন কোনো এক সুনসান পৃথিবীর প্রাচীন পাঠ-

অরণ্য পড়ে, আমি পড়ি না আর।

একটি ধূসর গাছ আমাকে চেনে-

তার গায়ে আঁচড় কেটে গেছে যে পুরুষ- সে আজ নেই,

তবু চাঁদের আলোয়, গন্ধে, শ্যাওলার ভাঁজে

তার নিঃশ্বাসের চিহ্ন রয়ে গেছে, খুব গোপনে।

আমি শুধু হেঁটে যাই-

আমার ভেতরেও যেন এক নিঃশেষ অরণ্য জন্ম নিচ্ছে,

যেখানে শব্দ নেই, দুঃখ নেই-

আছে শুধু হারিয়ে যাওয়া কিছু অলৌকিক পাতা!

ক্ষমা কর প্রিয়!
মৌলি আজাদ
ভেবেছিলাম পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, অসংকোচে তোমাকে সব গোপন কথা বলব

ভেবেছিলাম চারপাশের ঘন আঁধার কেটে গেলে, পায়ের কনিষ্ঠ আঙ্গুল থেকে মাথার চুল পর্যন্ত শুধু সত্য কথা বলবে

ভেবেছিলাম এইসব ভয়ংকর দিনের সমাপ্তিতে, চারপাশের কাউকেই আর তোয়াক্কা করে চলব না।

মেরুদ- সোজা করে যা যথার্থ তা করব

অফিসের ফাইলের লালফিতে খুলে ফেলব রাতারাতি

পাওনাদারকে কড়ায় গন্ডায় বুঝিয়ে দিব তার পাওনা

মিথ্যে লেবাস পুড়িয়ে ফেলব মুহূর্তে ।

নষ্ট সিস্টেম অকেজো করব তুড়ি মেড়ে

চারপাশের কুৎসিত কাকগুলোকে আর দেব না প্রশ্রয়

আমার চারপাশ ছেয়ে থাকবে কেবলই সাধু সন্ন্যাসীতে

সবার ন্যায্য দাবীগুলো পাঠাব পাঠাও ডেলিভারিতে

যৌন নির্যাতনকারীর অ-কোষে ভয় না পেয়ে মারব এক লাথি

বৈষম্য আর সহিংসতা শব্দ দুটি থাকবে না আর আমাদের ডিকশনারিতে ।

ওমা! সময় বয়ে গেল কেবল

যা ভেবেছিলাম তার এক বিন্দু ও করতে পারলাম না

বোধকরি, কথা রাখা এতো সহজ নয়।

সম্ভবও নয়। ক্ষমা কর প্রিয়!

জীবনপাঠ
জয়নাল আবেদীন শিবু
মানুষ লুকিয়ে রাখে অন্য জীবন, নিজের মাঝে- একটা কৌটার ভিতর কতো কথা, কতো কথকতা- সব বলা হয় না; নিবিড় অন্য জীবন- স্বপ্নেরা জন্মান্ধ, রহস্যে আবৃত- গুমরিত গোপনীয়তা আর হতাশারা মাড়িয়ে চলে অন্ধকারে- রাতের আঁধারে ব্রীজ পেরিয়ে হেঁটে যায় নির্জন পথে- নির্ণয়হীন...

অব্যক্ত জীবনের মাছগুলো থাকে এ্যাকুরিয়ামে বন্দি, ঘুমহীন ক্রীতদাস; বৃষ্টিশূন্য সে জীবন- সঙ্গীহীন ট্রেনযাত্রী, না আছে ঘর, না সংসার- শুধু শুধু জাগরণে জিগির জপে দিনরাত...

আমরা চোখে দেখি আরেক জীবন- ব্যস্ত ভ্রমণ, রঙিন মোড়কে ভরা মুখরতা।

চতুর ও চঞ্চল যারা রুপার পালঙ্কে দেয় কানামাছি ঘুম...

এ জার্নি বাই টেম্পু
আলমগীর কবীর আলম
তোমার তৃষ্ণা উপভোগের কালে পৃথিবী ঘুমায়

চাঁদ পরিত্যক্ত ঘরে, আর তুমি মরো ছটফটিয়ে!

জানি আমি, তোমার জীবন এক জার্নি বাই টেম্পু!

রাস্তা-নদী-সাঁকো আর বটবৃক্ষদের হাওয়া খেয়ে,

এখন বসেছো এই ভেবে, কিছু একটা যদি মিলে!

যে অমৃত ভা- গতরাতে ফেলে এসে মহুয়ায়,

দিব্যি ভুলে আছো আজ, তার কথা মনে পড়ে কিছু?

শোনো সে এক তক্ষক আছে ভবে, খুঁজো, পেয়ে যাবে!

দেখবে, শিবের গলায় ঝুলে আছে হারের মতোন!

কোথাও ঝুলে আছে আঙ্গুর লতা হয়ে ঝোপঝাড়ের।

পাহাড়ের ফাঁকে কিংবা পথ সমতলে সেঁটে আছে

পৃথিবীর সেই সত্যগুলো। বরং এরচেয়ে ভালো-

একপাল কবুতর ও কিছু শস্যবীজ সঙ্গে নিয়ে

মৌবনে বসে মুখস্থ করো বিরহের ধারাপাত...

গাণিতিক সংখ্যা
নিজাম বিশ্বাস
ঘুঘু পাখি খুব ধীরে গুটি গুটি পায়ে হাঁটে

না হাঁটলেও চলতো, যখন সে উড়তেই পারে,

আমায় সে ডাকল, অবিকল পাখির ডাকে

নাম ধরে ডাকলেই পারত, সে নাম জানে-

সংকেত মাঝে সাঝে ভারি দোনোমোনো-

গাণিতিক সংখ্যা, তোমাকে ডাকি না কতদিন

আকাশে সিঁদুর মেঘ জমে, চোখের পলকে

ডাকাতপ্রবণ জংশনে ঘুটঘুটে রাত নামে,

আমার হৃদয় থেকে তোমাকে ডাকাতি করে

নিয়ে যায় কারা, রাতভর তারা হল্লা করে,

পোড়া কাঠ থেকে ধোঁয়া ওঠে, ঝলসানো

মাংসের পাশে গোল হয়ে বসে শিয়ালেরা

পোয়েমস দ্যাট কেম টু মি

ছবি

লালন ও রবীন্দ্রনাথ অন্তর্জগতের আলাপন

ছবি

বংশধারা

ছবি

অনন্ত নক্ষত্র বিথিতে এক নির্বাসিত কবির যাত্রা

ছবি

তিন প্রহরের শকুন

ছবি

ইলিয়াসের আশ্চর্য নিরীক্ষা

ছবি

যতীন সরকার : সাম্যবাদের চেতনায় একজীবন

ছবি

‘প্রান্তিক মানুষের হারানোর কিছু নেই’

ছবি

ভাঙা ছাদ

ছবি

চন্দ্রাবতী : মধ্যযুগের প্রথম মহিলা কবি

ছবি

আধুনিক-উত্তর সময়ের নির্মিতি

ছবি

বংশধারা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

আবুবকর সিদ্দিকের ছোট গল্পে রাজনীতি

ছবি

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর উপন্যাসের তুলনামূলক বিচার

ছবি

সমকালীন কাব্যভাষায় কবি শহীদ কাদরী

ছবি

চরফুলের কন্যা

ছবি

নজরুলের গল্প ও উপন্যাস

সাময়িকী কবিতা

ছবি

প্রলোভন এবং ধৈর্যের গল্প

ছবি

প্রসঙ্গ মনোবৈজ্ঞানিক উপন্যাস

ছবি

প্রেম, অস্তিত্ববাদ ও বেদনার দোলাচল

ছবি

‘কবিতার যুবরাজ’ কবি আবুল হাসান

ছবি

মানুষ, প্রকৃতি ও সুলতানের স্বকীয় অভিযাত্রা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

শালুক-এর শঙ্খ ঘোষ সংখ্যা বাংলাদেশের সশ্রদ্ধ মূল্যায়ন

ছবি

‘প্রিজন ডিলাক্স ট্যুর’: কুহক ও বিভ্রমের গল্প

ছবি

কল্পগল্প

ছবি

আবদুল মান্নান সৈয়দের ‘জ্যোৎস্না-রৌদ্রের চিকিৎসা’

ছবি

প্রসঙ্গ মনোবৈজ্ঞানিক উপন্যাস

ছবি

আনন্দদায়ক ও অপ্রত্যাশিত নোবেল পুরস্কার

ছবি

জীবনবোধ ও শিল্পকর্ম

ছবি

নজরুলের গল্প ও উপন্যাস

ছবি

কৃষ্ণাঙ্গ দাস থেকে হয়ে উঠেছিলেন খ্যাতিমান কবি

শ্রাবণ বর্ষণে

ছবি

শতবর্ষ পরে ‘মিসেস ডালোওয়ে’

tab

literature » samoeky

সাময়িকী কবিতা

বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫

জলের স্বাদ
খালেদ হোসাইন
তুমুল বৃষ্টিতে আমি

তোমার মুখের দিকে

তাকিয়ে ছিলাম।

অথচ আমার পাশে

কেউ নেই, আচ্ছাদিত

পাথরও তো নয়।

সকালের পদক্ষেপ

পর্বতের চূড়া থেকে

গড়িয়ে পড়েছে।

অনুভূতি, তোমার কি

সময়-প্রসার আছে,

অবনতি, মৃত্যু আছে

অন্ধ চোখে বেড়ে-ওঠা

সন্দেহের ভ্রম?

ঘাস বা পাথর-জন্ম?

ঝোপের আড়ালে মেঘ,

ধুলো-চিত্রকলা?

তবুও তোমাকে ছুঁই

জলের স্বাদের মতো

অভ্যস্ত ছায়ায়।

স্মৃতির বর্ষা
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
বর্ষার সাথে বিরহ নিবিড় গভীর

দেহের সাথে ছায়ার অপরিহার্যের

মতোন। আলোর সাথে আঁধার কখনো

আলাদা হতে পারে না, বিরহও তাই

হারানো সুরের ব্যথা বর্ষার মাদলে

মুখরিত হয়ে ওঠে। আকাশে মেঘের

ঘনঘটা শুরু হলে মনের কোনায়

জেগে ওঠে বিদ্যুতের স্বতঃদীপ্ত মুখ।

বুকের গভীরে বর্ষা লুকায় নিজেকে

যেমন শীতে নিদ্রায় যায় হিম রক্ত

স্মৃতিতে মেঘেরা জমলে বর্ষা জেগে ওঠে

মনের দু’কূল বেয়ে উপচাতে উপচাতে

ঘুমে থাকা বর্ষা রুদ্র উন্মাদিনী হয়

স্মৃতির বর্ষা কখনো প্রয়াত হয় না।

অশৈল্পিক ব্রহ্মা-
সবিতা শর্মা
(তিতুনকে)
নধর ঘাসের বুক মাড়িয়ে

টলোমলো পা প্রসারিত দু’হাত

দৌড়ে চলে অবোধ শিশু

অস্তরাগে রক্তিম রবি

করতলে রাখে মাখে চটকায়

ছিঁড়ে খানখান যেন শিমুল তুলা

পাতা ঝরার দিনে

এক ফুঁতে উড়াবে বলে।

উঠুক বেড়ে অবোধ সন্তান

বুঝুক, এ নয় তো অস্তফাগ!

বিদ্রোহী রবি ফুঁসে জ্বলন্ত সীসা

অশৈল্পিক ব্রহ্মান্ড পোড়াবে বলে।

স্বপ্নের আহাজারি
আহমদ সলীম
প্রচ- ঝড় তুলে যখন আচমকা তুমি সামনে এলে

মনে হলো স্বর্গ থেকে নেমে আসা কোনো অপ্সরী,

তোমার লাবণ্যের বাতি আঁধারে প্রজ¦লিত

আমি শুধু ধেয়ে আসি মুগ্ধতায়।

মায়া হরিণীর মতো তোমার টানা টানা চোখ

সেই চোখের দৃষ্টির উত্তাপে আমি বিগলিত

রক্তকরবীর রাঙা ঠোঁটে মোনালিসার স্মিত হাসি

সেই হাসির নীরব ছন্দে ফুটে ওঠে আমার প্রত্যাশার ফুল

তোমার শাড়ির পরিপাটি কুঁচির একরাশ নীল,

আর আজানুলম্বিত অবিন্যস্ত চুল

আমার স্বপ্নগুলো উদসী হাওয়ায় আকাশে ওড়ায়।

গোধূলির রক্তিম টিপ ঊষর মন রাঙিয়ে দেয়

পূর্ণিমা রাতে তোমার পাহাড়ি ঝর্নার উচ্ছলতা

আমার চলার গতি শ্লথ করে, বিমুগ্ধ করে চিত্ত।

তোমার মোহন সৌন্দর্যের অধীন আমি

আমার পৌরুষ আজ পরাজিত, পদানত তোমার কাছে

সুখের সারথি ইশারায় কাছে ডাকে তোমার প্রেমকুঞ্জে।

সময়ের ¯্রােতে আমি বিভ্রান্ত

অমিল তোমার ভেতর-বাহিরে,

তোমার এক একটি কর্ম উন্মোচন করে

ধার করা সৌন্দর্যের এক একটি কপট মুখোশ।

দুরন্ত ছদ্মবেশ কত কুহকী নাম-

বৈষম্যরোধ, সংস্কার, মানবাধিকার।

বশীকরণ মন্ত্রগুলো স্পষ্টত পানসে আদিম।

তোমার লালসার ভ্রƒণ দিনে দিনে বেড়ে ওঠে

আমারই রক্ত মাংসে তার পুষ্টি

যন্ত্রণার প্রতিটি মুহূর্ত আমার উপলব্ধিতে সক্রিয়

আর কতকাল নীরবে কোঁকাবে বঞ্চনার স্বপ্নগুলো

তুমি বাজিকর নয়তো ভিন গ্রহের এলিয়েন

কেউ বিশ^াস করুক আর নাই করুক

সত্যি হলো এই যে, সত্যি বলতে কিছুই নেই

কারো কারোজন্য যেমন মিথ্যে বলতে কিছুই নেই

এর সাবধানী নাম কৌশল মাত্র

আর কৌশলটা অতিশয় গোপনীয় একান্ত নিজের।

কুর্চিকাব্য
হাবীবা রোজী
মেঘম্লান শহরে মেহগনি কাঠের বন্ধ কপাট খুলে,

গুটিগুটি পায়ে আকাশ থেকে সূর্য হেঁটে আসে যেদিন,

সেদিন এক শালিক দুঃখ ভুলে একে একে সাজায়,

মায়া রঙে ছায়ার ব্যঞ্জনবর্ণ স্বপ্ন, এ ভরা বাদরে।

হলুদ রোদে স্নান সেরে গোলাপ রঙের টিপ কপালে-

কুর্চিফুলেরা এলোচুলে কাশ উড়ে যাওয়া বাতাস দেখে,

আর রোদ জ্যোৎস্নায় ভিজে, মেখে নেয় সূর্যসৌরভ।

কুর্চি আলতো পাপড়ি মেলে চেয়ে দেখে শারদীয় মেঘ।

সুরপিয়াসী সাকি মোৎসার্ট বিথোভেনের সিম্ফোনিতে-

আকণ্ঠ নিমগ্ন, বিভোর, পশ্চিমমুখী সূর্য হাটে উত্তরে।

আনত কুর্চিফুল চন্দ্রাবতীর মতো পূর্ণদৈর্ঘ্য মহাকাব্য লেখে।

খর¯্রােতা স্বপ্নে, সূর্যস্নানে হেসে উঠে সুখী কুর্চিফুলদল।

সংসার
শারদুল সজল
মুচকি হাসির মতো ঝুলে আছে

রুপালি চাঁদ-

পৃথিবীতে

ডেবে যাওয়া আয়ুরেখার ক্ষরিত জোছনায়

জীবন- যিশুবিদ্ধ পেরেকের হাসি

মৃত্যুদ-ের ভুলবানানে

ভুল থাকে না রশির ব্যবহার

কয়েককোটি নিঃশ^াস

দজলাভর্তি রক্তের তুমুল প্রবাহে

ক্রয় করে

বেঁচে থাকার অভিনয়

এই সুযোগে- সময় ফেরি করে

একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সংসার

অরণ্যের দিকে
সাঈদ বারী
অরণ্য পেরিয়ে হেঁটে যায় একটি হরিণ

তার চোখে বিষণœতা, দূর গন্ধবিহীন ফুলের স্মৃতি।

আলো পড়ে নিঃশব্দ পাতায়-

আর আমি দেখি, এই বিকেল ক্রমে পুরনো হয়ে আসে।

মৌন পাখিদের ওড়াউড়ি নেই আজ,

তবু ডালপালার ফাঁকে হাওয়ার একান্ত নুড়ি বাজে;

এ যেন কোনো এক সুনসান পৃথিবীর প্রাচীন পাঠ-

অরণ্য পড়ে, আমি পড়ি না আর।

একটি ধূসর গাছ আমাকে চেনে-

তার গায়ে আঁচড় কেটে গেছে যে পুরুষ- সে আজ নেই,

তবু চাঁদের আলোয়, গন্ধে, শ্যাওলার ভাঁজে

তার নিঃশ্বাসের চিহ্ন রয়ে গেছে, খুব গোপনে।

আমি শুধু হেঁটে যাই-

আমার ভেতরেও যেন এক নিঃশেষ অরণ্য জন্ম নিচ্ছে,

যেখানে শব্দ নেই, দুঃখ নেই-

আছে শুধু হারিয়ে যাওয়া কিছু অলৌকিক পাতা!

ক্ষমা কর প্রিয়!
মৌলি আজাদ
ভেবেছিলাম পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, অসংকোচে তোমাকে সব গোপন কথা বলব

ভেবেছিলাম চারপাশের ঘন আঁধার কেটে গেলে, পায়ের কনিষ্ঠ আঙ্গুল থেকে মাথার চুল পর্যন্ত শুধু সত্য কথা বলবে

ভেবেছিলাম এইসব ভয়ংকর দিনের সমাপ্তিতে, চারপাশের কাউকেই আর তোয়াক্কা করে চলব না।

মেরুদ- সোজা করে যা যথার্থ তা করব

অফিসের ফাইলের লালফিতে খুলে ফেলব রাতারাতি

পাওনাদারকে কড়ায় গন্ডায় বুঝিয়ে দিব তার পাওনা

মিথ্যে লেবাস পুড়িয়ে ফেলব মুহূর্তে ।

নষ্ট সিস্টেম অকেজো করব তুড়ি মেড়ে

চারপাশের কুৎসিত কাকগুলোকে আর দেব না প্রশ্রয়

আমার চারপাশ ছেয়ে থাকবে কেবলই সাধু সন্ন্যাসীতে

সবার ন্যায্য দাবীগুলো পাঠাব পাঠাও ডেলিভারিতে

যৌন নির্যাতনকারীর অ-কোষে ভয় না পেয়ে মারব এক লাথি

বৈষম্য আর সহিংসতা শব্দ দুটি থাকবে না আর আমাদের ডিকশনারিতে ।

ওমা! সময় বয়ে গেল কেবল

যা ভেবেছিলাম তার এক বিন্দু ও করতে পারলাম না

বোধকরি, কথা রাখা এতো সহজ নয়।

সম্ভবও নয়। ক্ষমা কর প্রিয়!

জীবনপাঠ
জয়নাল আবেদীন শিবু
মানুষ লুকিয়ে রাখে অন্য জীবন, নিজের মাঝে- একটা কৌটার ভিতর কতো কথা, কতো কথকতা- সব বলা হয় না; নিবিড় অন্য জীবন- স্বপ্নেরা জন্মান্ধ, রহস্যে আবৃত- গুমরিত গোপনীয়তা আর হতাশারা মাড়িয়ে চলে অন্ধকারে- রাতের আঁধারে ব্রীজ পেরিয়ে হেঁটে যায় নির্জন পথে- নির্ণয়হীন...

অব্যক্ত জীবনের মাছগুলো থাকে এ্যাকুরিয়ামে বন্দি, ঘুমহীন ক্রীতদাস; বৃষ্টিশূন্য সে জীবন- সঙ্গীহীন ট্রেনযাত্রী, না আছে ঘর, না সংসার- শুধু শুধু জাগরণে জিগির জপে দিনরাত...

আমরা চোখে দেখি আরেক জীবন- ব্যস্ত ভ্রমণ, রঙিন মোড়কে ভরা মুখরতা।

চতুর ও চঞ্চল যারা রুপার পালঙ্কে দেয় কানামাছি ঘুম...

এ জার্নি বাই টেম্পু
আলমগীর কবীর আলম
তোমার তৃষ্ণা উপভোগের কালে পৃথিবী ঘুমায়

চাঁদ পরিত্যক্ত ঘরে, আর তুমি মরো ছটফটিয়ে!

জানি আমি, তোমার জীবন এক জার্নি বাই টেম্পু!

রাস্তা-নদী-সাঁকো আর বটবৃক্ষদের হাওয়া খেয়ে,

এখন বসেছো এই ভেবে, কিছু একটা যদি মিলে!

যে অমৃত ভা- গতরাতে ফেলে এসে মহুয়ায়,

দিব্যি ভুলে আছো আজ, তার কথা মনে পড়ে কিছু?

শোনো সে এক তক্ষক আছে ভবে, খুঁজো, পেয়ে যাবে!

দেখবে, শিবের গলায় ঝুলে আছে হারের মতোন!

কোথাও ঝুলে আছে আঙ্গুর লতা হয়ে ঝোপঝাড়ের।

পাহাড়ের ফাঁকে কিংবা পথ সমতলে সেঁটে আছে

পৃথিবীর সেই সত্যগুলো। বরং এরচেয়ে ভালো-

একপাল কবুতর ও কিছু শস্যবীজ সঙ্গে নিয়ে

মৌবনে বসে মুখস্থ করো বিরহের ধারাপাত...

গাণিতিক সংখ্যা
নিজাম বিশ্বাস
ঘুঘু পাখি খুব ধীরে গুটি গুটি পায়ে হাঁটে

না হাঁটলেও চলতো, যখন সে উড়তেই পারে,

আমায় সে ডাকল, অবিকল পাখির ডাকে

নাম ধরে ডাকলেই পারত, সে নাম জানে-

সংকেত মাঝে সাঝে ভারি দোনোমোনো-

গাণিতিক সংখ্যা, তোমাকে ডাকি না কতদিন

আকাশে সিঁদুর মেঘ জমে, চোখের পলকে

ডাকাতপ্রবণ জংশনে ঘুটঘুটে রাত নামে,

আমার হৃদয় থেকে তোমাকে ডাকাতি করে

নিয়ে যায় কারা, রাতভর তারা হল্লা করে,

পোড়া কাঠ থেকে ধোঁয়া ওঠে, ঝলসানো

মাংসের পাশে গোল হয়ে বসে শিয়ালেরা

back to top