রাজশাহীর কৃষকের প্রধান অর্থকরী ফসল মিষ্টি পানের জিআই নিবন্ধন চেয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) বরাবর আবেদন করেছে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। বুধবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে জিআই আবেদনের সকল প্রক্রিয়ার সম্পন্ন করেছেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, রাজশাহীর ঐতিহ্য মিষ্টি পান। জিআই এর গুরুত্ব অনুধাবন করে আবেদনের উদ্যোগ নিয়েছি। যেমনটা নাটোরের কাঁচাগোল্লা করেছি।
তিনি আরও বলেন, রাজশাহীবাসীর কাছে সারাজীবনের একটা বিষয় থাকবে যে, পানের স্বত্ব হলো। যখন জিআই পণ্যের স্বীকৃতি মিলবে তখন মিষ্টি পানের চাহিদাও বাড়বে। আমাদের যারা প্রান্তিক কৃষক আছে তারা পানের দাম পাবে। অন্য পানের চেয়ে আমাদের পানের চাহিদা দেশসহ সারা বিশ্বে বাড়বে। এর ফলে আমাদের প্রন্তিক কৃষকের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে এবং বিশ্ব দরবারে রাজশাহীর পরিচিতি ও সুনাম বাড়বে। রাজশাহীর মিষ্টি পানের ডকুমেন্টেশন তৈরিসহ আবেদন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করায় তিনি ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টারকে (ইডিসি) ধন্যবাদ জানান।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরী, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর শামসুল ইসলাম, ই-কমার্স ডেভেলপমন্টে সেন্টার (ইডিসি) সদস্য প্রতাপ পলাশ, মোঃ দেলোয়ার, সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ ও গণমাধ্যমকর্মীরা।
পান রাজশাহীর প্রধান অর্থকরী ফসল। এ জেলার মাটি ও জলবায়ুর কারণে প্রাচাীন আমল থেকে মিষ্টি পানের উৎপাদন হয়ে আসছে। পান চাষে কৃষকরা জড়িয়ে আছে বংশ পরম্পরায়। মোহনপুর, বাগমারা, দূর্গাপুরে রয়েছে অসংখ্য শতবর্ষী পানের বরজ। পান চাষে ভাগ্য বদলেছে হাজার হাজার কৃষকের। কয়েক লাখ মানুষের জীবীকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন রাজশাহীর মিষ্টি পান। পানের কারণে রাজশাহীতে বেড়েছে সরিষা আবাদ, বাঁশ, নালিয়াসহ নানা রকম সহযোগী পণ্যের চাহিদা। যার ফলে নানাভাবে রাজশাহীর অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে মিষ্টি পান।
চাষযোগ্য জমির উর্বরা শক্তির কারণে এখানে ধান, আলু, ভুট্টার সঙ্গে পাল্টা দিয়ে বহুকাল থেকে পানের চাষ হয়ে আসছে। পানচাষের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। বিগত কয়েক বছর ধরে পানের ভাল দাম পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে পানচাষ করছেন। সম্প্রতি পানচাষে বিপ্লব ঘটেছে। সম্ভাবনাময় পানের অর্থনীতিকে সম্প্রসারণে মোহনপুরে ‘পান গবেষণাকেন্দ্র’ তৈরির জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
জানা গেছে, রাজশাহী জেলার সর্বাধিক পান উৎপাদন হয় মোহনপুরে। এছাড়াও জেলার দুর্গাপুর, বাগমারা, পবা, চারঘাট ও পুঠিয়া উপজেলা পানের চাষ হয়ে থাকে। সম্প্রতি জেলায় মোট পানচাষের পরিমাণ প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমি। এর মধ্যে শুধুমাত্র মোহনপুরেই প্রায় ১৩১৭ হেক্টর জমিতে পানের চাষ করা হয়। পান উৎপাদনের পরিমাণ ২১০৭২ মেট্রিক টণ। যার আনুমানিক মূল্য ৬০৭ কোটি ৪৬ লাখ ৬২ হাজার ৫শ টাকা।
এদেশের অর্থনীতির অংশিদার পানচাষ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় নানাবিধ সমস্যার সম্মুখিন চাষিরা। বিশেষায়িত ধারণা না থাকার কারণে অনেক সময় সঠিক পরামর্শ মিলেনা কৃষি বিভাগে। এধরনের সমস্যা উত্তরণের লক্ষে ‘পান গবেষণাকেন্দ্র’ তৈরির প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
মোহনপুর উপজেলার সর্বত্রই পানের চাষ হলেও মৌগাছি, মতিহার, ধুরইলসহ কেশরহাট পৌর এলাকা উল্যেখযোগ্য। এখানকার উৎপাদিত পান বাজারজাত করতে উপজেলার মৌগাছি হাট, একদিলতলা হাট, পাকুড়িয়া হাট, কেশরহাট, মহব্বতপুর হাট, বাকশিমইল হাট, ধুরইল হাটসহ অন্তত ১০টি স্থানে প্রতিদিনই পানের বেঁচা-কেনা হয়। আর এসকল হাটে পান কিনতে আসেন ঢাকাসহ চট্গ্রাম, নওগাঁ, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, গাইবান্ধা, শেরপুর, জামালপুর, চাঁপাই নবাববগঞ্জ বিভিন্ন জেলার পাইকাড়রা।
উপজেলার কেশরহাট পৌরসভা এলাকার কৃষক আতাউর রহমান পলাশ জানান, পানচাষ আমাদের বংশীয় ঐতিহ্য। বহুকাল হতে আমরা পানচাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমার দাদার পরে বাবা পানচাষ করেছেন। আমিও দীর্ঘ ২০ বছর ধরে পানের চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। খেত ভাল থাকলে এটি একটি লাভজনক এবং জনপ্রিয় চাষাবাদ। ১০ কাঠা জমিতে পান বরজ থাকলে ৩ সদস্যের একটি পরিবার চলবে।
নওগাঁ থেকে একদিলতলা হাটে আসা পান ব্যবসায়ি আবদুল জলিল জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে মোহনপুরের কেশরহাট ও একদিলতলা হাটে পান আসছেন। তিনি নিজেকে একজন ছোট পাইকাড় হিসেবে দাবী করে বলেন আমি শনি ও বুধবারে দুই হাট মিলে প্রায় ১ লাখ টাকার পান কিনে নিজ অঞ্চলে বিক্রি করে থাকি। এতে ধারণা করা যায় প্রতিবছর প্রায় অর্ধকোটি কোটি টাকার পান কেনাবেঁচা করে থাকি।
উল্লেখ্য, জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ নাটোরের কাঁচা গোল্লার জিআই নিবন্ধন চেয়ে আবেদেন করেছিলেন। যা দেশের ১৭ তম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৩
রাজশাহীর কৃষকের প্রধান অর্থকরী ফসল মিষ্টি পানের জিআই নিবন্ধন চেয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) বরাবর আবেদন করেছে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। বুধবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে জিআই আবেদনের সকল প্রক্রিয়ার সম্পন্ন করেছেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, রাজশাহীর ঐতিহ্য মিষ্টি পান। জিআই এর গুরুত্ব অনুধাবন করে আবেদনের উদ্যোগ নিয়েছি। যেমনটা নাটোরের কাঁচাগোল্লা করেছি।
তিনি আরও বলেন, রাজশাহীবাসীর কাছে সারাজীবনের একটা বিষয় থাকবে যে, পানের স্বত্ব হলো। যখন জিআই পণ্যের স্বীকৃতি মিলবে তখন মিষ্টি পানের চাহিদাও বাড়বে। আমাদের যারা প্রান্তিক কৃষক আছে তারা পানের দাম পাবে। অন্য পানের চেয়ে আমাদের পানের চাহিদা দেশসহ সারা বিশ্বে বাড়বে। এর ফলে আমাদের প্রন্তিক কৃষকের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে এবং বিশ্ব দরবারে রাজশাহীর পরিচিতি ও সুনাম বাড়বে। রাজশাহীর মিষ্টি পানের ডকুমেন্টেশন তৈরিসহ আবেদন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করায় তিনি ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টারকে (ইডিসি) ধন্যবাদ জানান।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরী, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর শামসুল ইসলাম, ই-কমার্স ডেভেলপমন্টে সেন্টার (ইডিসি) সদস্য প্রতাপ পলাশ, মোঃ দেলোয়ার, সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ ও গণমাধ্যমকর্মীরা।
পান রাজশাহীর প্রধান অর্থকরী ফসল। এ জেলার মাটি ও জলবায়ুর কারণে প্রাচাীন আমল থেকে মিষ্টি পানের উৎপাদন হয়ে আসছে। পান চাষে কৃষকরা জড়িয়ে আছে বংশ পরম্পরায়। মোহনপুর, বাগমারা, দূর্গাপুরে রয়েছে অসংখ্য শতবর্ষী পানের বরজ। পান চাষে ভাগ্য বদলেছে হাজার হাজার কৃষকের। কয়েক লাখ মানুষের জীবীকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন রাজশাহীর মিষ্টি পান। পানের কারণে রাজশাহীতে বেড়েছে সরিষা আবাদ, বাঁশ, নালিয়াসহ নানা রকম সহযোগী পণ্যের চাহিদা। যার ফলে নানাভাবে রাজশাহীর অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে মিষ্টি পান।
চাষযোগ্য জমির উর্বরা শক্তির কারণে এখানে ধান, আলু, ভুট্টার সঙ্গে পাল্টা দিয়ে বহুকাল থেকে পানের চাষ হয়ে আসছে। পানচাষের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। বিগত কয়েক বছর ধরে পানের ভাল দাম পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে পানচাষ করছেন। সম্প্রতি পানচাষে বিপ্লব ঘটেছে। সম্ভাবনাময় পানের অর্থনীতিকে সম্প্রসারণে মোহনপুরে ‘পান গবেষণাকেন্দ্র’ তৈরির জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
জানা গেছে, রাজশাহী জেলার সর্বাধিক পান উৎপাদন হয় মোহনপুরে। এছাড়াও জেলার দুর্গাপুর, বাগমারা, পবা, চারঘাট ও পুঠিয়া উপজেলা পানের চাষ হয়ে থাকে। সম্প্রতি জেলায় মোট পানচাষের পরিমাণ প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমি। এর মধ্যে শুধুমাত্র মোহনপুরেই প্রায় ১৩১৭ হেক্টর জমিতে পানের চাষ করা হয়। পান উৎপাদনের পরিমাণ ২১০৭২ মেট্রিক টণ। যার আনুমানিক মূল্য ৬০৭ কোটি ৪৬ লাখ ৬২ হাজার ৫শ টাকা।
এদেশের অর্থনীতির অংশিদার পানচাষ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় নানাবিধ সমস্যার সম্মুখিন চাষিরা। বিশেষায়িত ধারণা না থাকার কারণে অনেক সময় সঠিক পরামর্শ মিলেনা কৃষি বিভাগে। এধরনের সমস্যা উত্তরণের লক্ষে ‘পান গবেষণাকেন্দ্র’ তৈরির প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
মোহনপুর উপজেলার সর্বত্রই পানের চাষ হলেও মৌগাছি, মতিহার, ধুরইলসহ কেশরহাট পৌর এলাকা উল্যেখযোগ্য। এখানকার উৎপাদিত পান বাজারজাত করতে উপজেলার মৌগাছি হাট, একদিলতলা হাট, পাকুড়িয়া হাট, কেশরহাট, মহব্বতপুর হাট, বাকশিমইল হাট, ধুরইল হাটসহ অন্তত ১০টি স্থানে প্রতিদিনই পানের বেঁচা-কেনা হয়। আর এসকল হাটে পান কিনতে আসেন ঢাকাসহ চট্গ্রাম, নওগাঁ, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, গাইবান্ধা, শেরপুর, জামালপুর, চাঁপাই নবাববগঞ্জ বিভিন্ন জেলার পাইকাড়রা।
উপজেলার কেশরহাট পৌরসভা এলাকার কৃষক আতাউর রহমান পলাশ জানান, পানচাষ আমাদের বংশীয় ঐতিহ্য। বহুকাল হতে আমরা পানচাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমার দাদার পরে বাবা পানচাষ করেছেন। আমিও দীর্ঘ ২০ বছর ধরে পানের চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। খেত ভাল থাকলে এটি একটি লাভজনক এবং জনপ্রিয় চাষাবাদ। ১০ কাঠা জমিতে পান বরজ থাকলে ৩ সদস্যের একটি পরিবার চলবে।
নওগাঁ থেকে একদিলতলা হাটে আসা পান ব্যবসায়ি আবদুল জলিল জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে মোহনপুরের কেশরহাট ও একদিলতলা হাটে পান আসছেন। তিনি নিজেকে একজন ছোট পাইকাড় হিসেবে দাবী করে বলেন আমি শনি ও বুধবারে দুই হাট মিলে প্রায় ১ লাখ টাকার পান কিনে নিজ অঞ্চলে বিক্রি করে থাকি। এতে ধারণা করা যায় প্রতিবছর প্রায় অর্ধকোটি কোটি টাকার পান কেনাবেঁচা করে থাকি।
উল্লেখ্য, জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ নাটোরের কাঁচা গোল্লার জিআই নিবন্ধন চেয়ে আবেদেন করেছিলেন। যা দেশের ১৭ তম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।