হরতাল অবরোধে আরও একজনের ঋণের টাকায় কেনা বাস পুড়লো। এবার পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার সিরাজুল ইসলাম নামে এক বৃদ্ধের ঋণের টাকায় কেনা দুটি বাস। উপার্জনের একমাত্র উপায় হারিয়ে নিঃস্ব তিনি। ঋণের টাকা শোধ করে কিভাবে সংসারের খরচ চালাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিশাহারা তিনি।
সোমবার (২০ নভেম্বর) চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে পুড়ে যাওয়া তিনটি বাসের পাশে দাঁড়িয়ে বিলাপ করছিলেন তিনি। সেখানে পুড়ে যাওয়া শ্যামলী পরিবহন নামের দুটি বাসের মালিক ছিলেন সিরাজুল। তিনি বিলাপ করতে করতে গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমি ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ৬০ লাখ টাকা দিয়ে দুই থেকে আড়াই বছর আগে এ দুটি বাস কিনছিলাম। আজ (সোমবার) ভোরে সড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা আমার বাসগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এখন আমি সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। ব্যাংকের লোন কীভাবে শোধ করব, জানি না।’
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে সাতকানিয়ার মাদারবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম। ঋণের টাকায় কেনা দুই বাস হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন -ছবি সংগৃহীত
তিনি আরও বলেন, গাড়ি দুটির আয় দিয়েই তার সংসার চলে, চিকিৎসার খরচ চলে। গতকাল রোববার রাতে বাস দুটি হালকা মেরামত করার পর চট্টগ্রাম নগরের শাহ আমানত সেতু থেকে যাত্রী নিয়ে কেরানীহাট আসে। পরে রাত ১২টার দিকে মাদারবাড়ির মডেল মসজিদ এলাকায় বাস দুটি রেখে চালকেরা বাড়িতে চলে যান। সোমবার ভোর পৌনে চারটার দিকে এক ব্যক্তি ফোন করে তাকে জানান, তার বাসে আগুন দিয়েছে কেউ। পরে সেখানে গিয়ে দেখেন, তিনটি বাস দাউ দাউ করে জ্বলছে। আর ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। এ দেখে তার আর হুঁশ ছিল না।
থানা-পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, পুড়ে যাওয়া আরেকটি বাস হানিফ পরিবহনের। বাসটির মালিক চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার রশিদের পাড়া এলাকার মোহাম্মদ রিদোয়ান। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়ার মাদারবাড়ি মডেল মসজিদ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে রাতেরবেলা যাত্রীবাহী বাস ও অন্য গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। সোমবার রাতেও ওই এলাকায় পাশাপাশি শ্যামলী পরিবহনের দুটি ও হানিফ পরিবহনের একটি বাস দাঁড় করিয়ে রেখে চালকেরা বাড়িতে চলে যান।
মহাসড়কের মাদারবাড়ি এলাকার পাহারাদার ছালেহ আহমদ বলেন, ভোর চারটার আগে আগে মহাসড়কের উত্তর দিক থেকে দুটি মোটরসাইকেলে করে পাঁচ যুবক দক্ষিণ দিকে যাচ্ছিলেন। তারা সড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা বাসগুলো পেরিয়ে যাওয়ার পরপরই তিনটি বাসে আগুন জ্বলে ওঠে। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নিভিয়ে ফেলেন।
হরতালকারীরা সোমবার মিরপুরে বিআরটিসির বাসে আগুন দেয় -সংবাদ
সাতকানিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা এস এম হুমায়ুন কার্ণায়েন ভোর চারটার পরে বাসে আগুন লাগার খবর পান। তিনি বলেন, ‘পরে দ্রুত বের হয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তদন্ত ছাড়া আগুন লাগার কারণ বলা সম্ভব নয়।’
সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শিবলী নোমান বলেন, ‘সাতকানিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা ঘটনস্থল পরিদর্শন করেছেন। এখন বাস তিনটির মালিক, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। কারা এবং কীভাবে বাসে আগুন দিয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
এর আগে রোববার গাজিপুরের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেনের পার্কিং করা একটি বাসে আগুন দেয় অজ্ঞাত দৃবৃত্তরা। ঋণের টাকায় কেনা বাসটিতে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুড়ে যায় দেলোয়ারের সপ্ন।
সারাদেশে ১৬ বাস-ট্রাকে আগুন
বিএনপির হরতাল কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে সোমবার বিকেলে রাজধানীর মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের কর্মী পরিবহনের একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ বলছে, দাঁড়িয়ে থাকা বাসে হঠাৎ আগুন দেখে স্থানীয় লোকজন ফায়ার সার্ভিসে ফোন করেন। ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা ঘটনাস্থলে আসার আগেই স্থানীয় লোকজন আগুন নিভিয়ে ফেলেন।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, মতিঝিলের মধুমিতা সিনেমা হলের পেছনের গলিতে দাঁড়িয়ে থাকা বাসটিতে আগুন দেয়া হয়েছে। আগুনে বাসের পেছনের দিকে সামান্য ক্ষতি হয়েছে। কেউ হতাহত হয়নি।
এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) একটি দোতলা বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়, বাসে আগুনের খবর পেয়ে মিরপুর ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। মিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন জানিয়েছেন, বিআরটিসির বাসে আগুনে কেউ হতাহত হয়নি।
পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার জসিম উদ্দিন মোল্লা দাবি করেছেন মিরপুর ১০ নং গোল চত্বরের পাশে ফায়ার সার্ভিস এর সামনে রাস্তার ওপর বিআরটিসি বাসটিতে যাত্রী বেশে এসে আগুন দেয়া হয়। আগুনে গাড়ির ওপরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যায়। অভিযান পরিচালনা করে ঘটনাস্থলের পাশ থেকে মো. সাজেদুল আলম টুটুল (৪৫) নামে একজনকে আটক করা হয়। সে সেচ্ছাসেবক দলের রূপনগর থানার যুগ্ম আহ্বায়ক। বিআরটিসি গাড়ির চালক ওই ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছেন। ধৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে রোববার ভোর থেকে সারাদেশে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকে হরতাল চলছে। আজ ভোর ৬টায় হরতার কর্মসূচি শেষ হবে। এই হরতাল ঘিরে রোববার ভোর থেকে থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১৮টি যানবাহনে আগুন লাগানো হয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিস তথ্য দিয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, ঢাকা মহানগরে তিনটি, ঢাকা বিভাগে একটি, রাজশাহী বিভাগে (নাটোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ) সাতটি, চট্টগ্রাম বিভাগে (ফেনী, মিরসরাই, সাতকানিয়া) চারটি, ময়মনসিংহ বিভাগে (জামালপুর) একটি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৯টি বাস, ১টি কাভার্ড ভ্যান, ৬টি ট্রাক, ১টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ১টি ট্রেন (৩টি বগি) পুড়ে যায়।
পুলিশ সদর দপ্তরে এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত শনিবার রাত ১২টার পর থেকে (গত শনিবার দিনগত রাত ১২টার পর থেকে রোববার গণনা করা হয়) রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত সারাদেশে ৮টি যানবাহন ও স্থাপনায় আগুন এবং ৮টি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে। এর মধ্যে পাবনায় একটি বাস ও একটি ট্রাক, ১টি মোটরসাইকেল, রাজশাহী মেট্রোপটিলনে ১টি ট্রাক, ঠাকুরগাঁওয়ে একটি সিএনজি রয়েছে। একইভাবে রাজশাহী ও নাটোরে ২টি বাস, বগুড়ায় ২টি ট্রাক, ফেনীতে ১টি কাভার্ড ভ্যান, ডিএমপিতে ১টি লেগুনা, জামালপুরে ট্রেন এবং গাজীপুরে একটি স্কুলে আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। তবে এসব ঘটনায় কোনো হতাহাত ছিল না বলেও পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে। রোববার ৮টার পর থেকে সোমবার সন্ধ্যা পযন্ত সারাদেশে যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি সোমবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।
সোমবার, ২০ নভেম্বর ২০২৩
হরতাল অবরোধে আরও একজনের ঋণের টাকায় কেনা বাস পুড়লো। এবার পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার সিরাজুল ইসলাম নামে এক বৃদ্ধের ঋণের টাকায় কেনা দুটি বাস। উপার্জনের একমাত্র উপায় হারিয়ে নিঃস্ব তিনি। ঋণের টাকা শোধ করে কিভাবে সংসারের খরচ চালাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিশাহারা তিনি।
সোমবার (২০ নভেম্বর) চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে পুড়ে যাওয়া তিনটি বাসের পাশে দাঁড়িয়ে বিলাপ করছিলেন তিনি। সেখানে পুড়ে যাওয়া শ্যামলী পরিবহন নামের দুটি বাসের মালিক ছিলেন সিরাজুল। তিনি বিলাপ করতে করতে গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমি ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ৬০ লাখ টাকা দিয়ে দুই থেকে আড়াই বছর আগে এ দুটি বাস কিনছিলাম। আজ (সোমবার) ভোরে সড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা আমার বাসগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এখন আমি সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। ব্যাংকের লোন কীভাবে শোধ করব, জানি না।’
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে সাতকানিয়ার মাদারবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম। ঋণের টাকায় কেনা দুই বাস হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন -ছবি সংগৃহীত
তিনি আরও বলেন, গাড়ি দুটির আয় দিয়েই তার সংসার চলে, চিকিৎসার খরচ চলে। গতকাল রোববার রাতে বাস দুটি হালকা মেরামত করার পর চট্টগ্রাম নগরের শাহ আমানত সেতু থেকে যাত্রী নিয়ে কেরানীহাট আসে। পরে রাত ১২টার দিকে মাদারবাড়ির মডেল মসজিদ এলাকায় বাস দুটি রেখে চালকেরা বাড়িতে চলে যান। সোমবার ভোর পৌনে চারটার দিকে এক ব্যক্তি ফোন করে তাকে জানান, তার বাসে আগুন দিয়েছে কেউ। পরে সেখানে গিয়ে দেখেন, তিনটি বাস দাউ দাউ করে জ্বলছে। আর ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। এ দেখে তার আর হুঁশ ছিল না।
থানা-পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, পুড়ে যাওয়া আরেকটি বাস হানিফ পরিবহনের। বাসটির মালিক চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার রশিদের পাড়া এলাকার মোহাম্মদ রিদোয়ান। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়ার মাদারবাড়ি মডেল মসজিদ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে রাতেরবেলা যাত্রীবাহী বাস ও অন্য গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। সোমবার রাতেও ওই এলাকায় পাশাপাশি শ্যামলী পরিবহনের দুটি ও হানিফ পরিবহনের একটি বাস দাঁড় করিয়ে রেখে চালকেরা বাড়িতে চলে যান।
মহাসড়কের মাদারবাড়ি এলাকার পাহারাদার ছালেহ আহমদ বলেন, ভোর চারটার আগে আগে মহাসড়কের উত্তর দিক থেকে দুটি মোটরসাইকেলে করে পাঁচ যুবক দক্ষিণ দিকে যাচ্ছিলেন। তারা সড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা বাসগুলো পেরিয়ে যাওয়ার পরপরই তিনটি বাসে আগুন জ্বলে ওঠে। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নিভিয়ে ফেলেন।
হরতালকারীরা সোমবার মিরপুরে বিআরটিসির বাসে আগুন দেয় -সংবাদ
সাতকানিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা এস এম হুমায়ুন কার্ণায়েন ভোর চারটার পরে বাসে আগুন লাগার খবর পান। তিনি বলেন, ‘পরে দ্রুত বের হয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তদন্ত ছাড়া আগুন লাগার কারণ বলা সম্ভব নয়।’
সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শিবলী নোমান বলেন, ‘সাতকানিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা ঘটনস্থল পরিদর্শন করেছেন। এখন বাস তিনটির মালিক, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। কারা এবং কীভাবে বাসে আগুন দিয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
এর আগে রোববার গাজিপুরের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেনের পার্কিং করা একটি বাসে আগুন দেয় অজ্ঞাত দৃবৃত্তরা। ঋণের টাকায় কেনা বাসটিতে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুড়ে যায় দেলোয়ারের সপ্ন।
সারাদেশে ১৬ বাস-ট্রাকে আগুন
বিএনপির হরতাল কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে সোমবার বিকেলে রাজধানীর মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের কর্মী পরিবহনের একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ বলছে, দাঁড়িয়ে থাকা বাসে হঠাৎ আগুন দেখে স্থানীয় লোকজন ফায়ার সার্ভিসে ফোন করেন। ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা ঘটনাস্থলে আসার আগেই স্থানীয় লোকজন আগুন নিভিয়ে ফেলেন।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, মতিঝিলের মধুমিতা সিনেমা হলের পেছনের গলিতে দাঁড়িয়ে থাকা বাসটিতে আগুন দেয়া হয়েছে। আগুনে বাসের পেছনের দিকে সামান্য ক্ষতি হয়েছে। কেউ হতাহত হয়নি।
এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) একটি দোতলা বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়, বাসে আগুনের খবর পেয়ে মিরপুর ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। মিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন জানিয়েছেন, বিআরটিসির বাসে আগুনে কেউ হতাহত হয়নি।
পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার জসিম উদ্দিন মোল্লা দাবি করেছেন মিরপুর ১০ নং গোল চত্বরের পাশে ফায়ার সার্ভিস এর সামনে রাস্তার ওপর বিআরটিসি বাসটিতে যাত্রী বেশে এসে আগুন দেয়া হয়। আগুনে গাড়ির ওপরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যায়। অভিযান পরিচালনা করে ঘটনাস্থলের পাশ থেকে মো. সাজেদুল আলম টুটুল (৪৫) নামে একজনকে আটক করা হয়। সে সেচ্ছাসেবক দলের রূপনগর থানার যুগ্ম আহ্বায়ক। বিআরটিসি গাড়ির চালক ওই ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছেন। ধৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে রোববার ভোর থেকে সারাদেশে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকে হরতাল চলছে। আজ ভোর ৬টায় হরতার কর্মসূচি শেষ হবে। এই হরতাল ঘিরে রোববার ভোর থেকে থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১৮টি যানবাহনে আগুন লাগানো হয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিস তথ্য দিয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, ঢাকা মহানগরে তিনটি, ঢাকা বিভাগে একটি, রাজশাহী বিভাগে (নাটোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ) সাতটি, চট্টগ্রাম বিভাগে (ফেনী, মিরসরাই, সাতকানিয়া) চারটি, ময়মনসিংহ বিভাগে (জামালপুর) একটি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৯টি বাস, ১টি কাভার্ড ভ্যান, ৬টি ট্রাক, ১টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ১টি ট্রেন (৩টি বগি) পুড়ে যায়।
পুলিশ সদর দপ্তরে এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত শনিবার রাত ১২টার পর থেকে (গত শনিবার দিনগত রাত ১২টার পর থেকে রোববার গণনা করা হয়) রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত সারাদেশে ৮টি যানবাহন ও স্থাপনায় আগুন এবং ৮টি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে। এর মধ্যে পাবনায় একটি বাস ও একটি ট্রাক, ১টি মোটরসাইকেল, রাজশাহী মেট্রোপটিলনে ১টি ট্রাক, ঠাকুরগাঁওয়ে একটি সিএনজি রয়েছে। একইভাবে রাজশাহী ও নাটোরে ২টি বাস, বগুড়ায় ২টি ট্রাক, ফেনীতে ১টি কাভার্ড ভ্যান, ডিএমপিতে ১টি লেগুনা, জামালপুরে ট্রেন এবং গাজীপুরে একটি স্কুলে আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। তবে এসব ঘটনায় কোনো হতাহাত ছিল না বলেও পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে। রোববার ৮টার পর থেকে সোমবার সন্ধ্যা পযন্ত সারাদেশে যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি সোমবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।