লালমনিরহাট : তিস্তার চরে আবাদ হচ্ছে লালশাকসহ শীতের সবজি -সংবাদ
লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় তিস্তা নদীতে জেগে ওঠা চরের আয়তন বাড়ছে ক্রমাগত। এতে নদীর পানি ধারণক্ষমতা কমলেও জেলার ২১টি ইউনিয়নের শতাধিক চরে চাষ বেড়েছে ফসলের। চলতি মৌসুমেই আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ২ হাজার হেক্টর বেড়েছে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
কৃষক ও কৃষি বিভাগ জানায়, চরের জমিতে যে ভুট্টা উৎপাদন হচ্ছে, তা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া চরে আলু, পেঁয়াজসহ প্রায় সব ধরনের সবজি ও মসলাজাতীয় ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। এবার চরগুলোতে ৯০ কোটি টাকার ফসল উৎপাদন হতে পারে বলে ধারণা কৃষি বিভাগের।
তবে যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় ভালো ফসল উৎপাদন হলেও ভালো দাম পান না বলে অভিযোগ চরের কৃষকদের। সে ক্ষেত্রে গুদাম নির্মাণ ও পরিকল্পিত নদী শাসনের দাবি জানিয়েছেন কৃষকেরা।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, তিস্তা নদীবেষ্টিত এ জেলার ২১টি ইউনিয়ন দহগ্রাম,সানিয়াজান, গড্ডিমারি, সির্ন্দুনা, ডাউয়াবাড়ি,পাটিকাপাড়া, ভোটমারি, তুষভান্ডার, কাকিনা, মহিষখোচা, খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডাসহ ২১টি ইউনিয়নের শতাধিক চরের সবই আবাদযোগ্য। চলতি মৌসুমে এসব চরে প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল উৎপাদন হচ্ছে, গত মৌসুমের চেয়ে যা ২ হাজার হেক্টর বেশি।
সম্প্রতি চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, নদীর বুকে চাষ করা হয়েছে ভুট্টা, আলু, ধান, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, মিষ্টিকুমড়া, লালশাকসহ নানা ধরনের রবিশস্য। পাশাপাশি প্রস্তুতি চলছে গম, ছোলা, মসুর, সরিষা ও বাদাম চাষের।
চরের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা বছরই চরের জমিতে ২০ থেকে ২৫ ধরনের ফসল চাষ করা হয়।
বন্যার পর চরের মাটিতে পলি জমে। এ কারণে সার খুব একটা লাগে না। পোকামাকড়েরও আক্রমণ কম। কীটনাশকের ব্যয় তেমন নেই। তাই ফসল উৎপাদনে খরচও কম।
গড্ডিমারি ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল লতিফ (৬০) পাঁচ একর জমিতে ভুট্টা, পেঁয়াজ, আলু, মরিচ ও শাকসবজি চাষ করেছেন।
তিনি বলেন, বালুচরে যে এত প্রকার আবাদ হচ্ছে, তা তাদের ভাগ্য। বন্যায় চরাঞ্চলের মানুষের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, তার কিছতা পুষিয়ে নিতে পারছেন এমন আবাদে।
ভোটমারি ইউনিয়নের বৈরাতি চরের আলিমা বেগম বলেন, ‘নিজের ঘর, আবাদি জমিও সোউগ আছিল। নদীর বান আইসা জমির সঙ্গে ঘরটাও নিয়া গ্যাছে (নদীগর্ভে বিলীন)। তহন থাইকাই বান্দের ওপর থাহি। সারা দিন চরে কাম করি। চরোত যদি ফসল না অইতো হয়, আমগো যে কী দশা, কী খাইতাম তা আল্লায় জানে।’
তবে ফসল ঘরে তোলা আর বিক্রি নিয়ে আছে চরের কৃষকদের নানা অভিযোগ। মহিষখোচা ইউনিয়নের চর বালাপাড়ার কৃষক আরিফ হোসেন বলেন, যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় কৃষকেরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশাল চর আর নদী পাড়ি দিয়ে ফসল নিয়ে যেতে হয় হাটে। ফলে উৎপাদন বেশি হলেও ব্যয়ও বৃদ্ধি পায় বহনে।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত বীজের ছোঁয়ায় বদলে গেছে তিস্তা চরের কৃষি চিত্র।
প্রতিবছর উজানের ঢলে ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাই এলাকার চাষিদের সরকারি প্রণোদনার আওতায় আনা হচ্ছে। পানি-সহনীয় জাতের ধান চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, বর্তমানে চরে আবাদযোগ্য জমি বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিকল্পিত নদীশাসন করে চরের জমি আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব।
লালমনিরহাট : তিস্তার চরে আবাদ হচ্ছে লালশাকসহ শীতের সবজি -সংবাদ
শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩
লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় তিস্তা নদীতে জেগে ওঠা চরের আয়তন বাড়ছে ক্রমাগত। এতে নদীর পানি ধারণক্ষমতা কমলেও জেলার ২১টি ইউনিয়নের শতাধিক চরে চাষ বেড়েছে ফসলের। চলতি মৌসুমেই আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ২ হাজার হেক্টর বেড়েছে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
কৃষক ও কৃষি বিভাগ জানায়, চরের জমিতে যে ভুট্টা উৎপাদন হচ্ছে, তা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া চরে আলু, পেঁয়াজসহ প্রায় সব ধরনের সবজি ও মসলাজাতীয় ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। এবার চরগুলোতে ৯০ কোটি টাকার ফসল উৎপাদন হতে পারে বলে ধারণা কৃষি বিভাগের।
তবে যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় ভালো ফসল উৎপাদন হলেও ভালো দাম পান না বলে অভিযোগ চরের কৃষকদের। সে ক্ষেত্রে গুদাম নির্মাণ ও পরিকল্পিত নদী শাসনের দাবি জানিয়েছেন কৃষকেরা।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, তিস্তা নদীবেষ্টিত এ জেলার ২১টি ইউনিয়ন দহগ্রাম,সানিয়াজান, গড্ডিমারি, সির্ন্দুনা, ডাউয়াবাড়ি,পাটিকাপাড়া, ভোটমারি, তুষভান্ডার, কাকিনা, মহিষখোচা, খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডাসহ ২১টি ইউনিয়নের শতাধিক চরের সবই আবাদযোগ্য। চলতি মৌসুমে এসব চরে প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল উৎপাদন হচ্ছে, গত মৌসুমের চেয়ে যা ২ হাজার হেক্টর বেশি।
সম্প্রতি চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, নদীর বুকে চাষ করা হয়েছে ভুট্টা, আলু, ধান, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, মিষ্টিকুমড়া, লালশাকসহ নানা ধরনের রবিশস্য। পাশাপাশি প্রস্তুতি চলছে গম, ছোলা, মসুর, সরিষা ও বাদাম চাষের।
চরের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা বছরই চরের জমিতে ২০ থেকে ২৫ ধরনের ফসল চাষ করা হয়।
বন্যার পর চরের মাটিতে পলি জমে। এ কারণে সার খুব একটা লাগে না। পোকামাকড়েরও আক্রমণ কম। কীটনাশকের ব্যয় তেমন নেই। তাই ফসল উৎপাদনে খরচও কম।
গড্ডিমারি ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল লতিফ (৬০) পাঁচ একর জমিতে ভুট্টা, পেঁয়াজ, আলু, মরিচ ও শাকসবজি চাষ করেছেন।
তিনি বলেন, বালুচরে যে এত প্রকার আবাদ হচ্ছে, তা তাদের ভাগ্য। বন্যায় চরাঞ্চলের মানুষের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, তার কিছতা পুষিয়ে নিতে পারছেন এমন আবাদে।
ভোটমারি ইউনিয়নের বৈরাতি চরের আলিমা বেগম বলেন, ‘নিজের ঘর, আবাদি জমিও সোউগ আছিল। নদীর বান আইসা জমির সঙ্গে ঘরটাও নিয়া গ্যাছে (নদীগর্ভে বিলীন)। তহন থাইকাই বান্দের ওপর থাহি। সারা দিন চরে কাম করি। চরোত যদি ফসল না অইতো হয়, আমগো যে কী দশা, কী খাইতাম তা আল্লায় জানে।’
তবে ফসল ঘরে তোলা আর বিক্রি নিয়ে আছে চরের কৃষকদের নানা অভিযোগ। মহিষখোচা ইউনিয়নের চর বালাপাড়ার কৃষক আরিফ হোসেন বলেন, যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় কৃষকেরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশাল চর আর নদী পাড়ি দিয়ে ফসল নিয়ে যেতে হয় হাটে। ফলে উৎপাদন বেশি হলেও ব্যয়ও বৃদ্ধি পায় বহনে।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত বীজের ছোঁয়ায় বদলে গেছে তিস্তা চরের কৃষি চিত্র।
প্রতিবছর উজানের ঢলে ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাই এলাকার চাষিদের সরকারি প্রণোদনার আওতায় আনা হচ্ছে। পানি-সহনীয় জাতের ধান চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, বর্তমানে চরে আবাদযোগ্য জমি বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিকল্পিত নদীশাসন করে চরের জমি আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব।