ভূমিকম্পে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা কেঁপে ওঠে। শনিবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৬ মাত্রার এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, এর উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশের ভেতরই। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থেকে আট কিলোমিটার পূর্ব-উত্তর-পূর্বে। গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার।
ভূমিকম্পের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শাহাব সোহাগ নামে একজন লিখেছেন, ‘এর চেয়ে বেশি স্থায়িত্বের ভূমিকম্পের কথা মনে পড়ছে না।’
ভূমিকম্প আতঙ্কে মাস্টারদা সূর্য সেন হলের ২৩৩ নম্বর কক্ষের দোতলা থেকে লাফ দিলে তার পা ভেঙে যায় মিনহাজুর রহমান নামের একজন শিক্ষার্থীর। তিনি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র। এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন তিনি।
মিনহাজুর বলেন, তার ঘরের সব কিছু এত জোরে দুলতে থাকে যে তিনি প্রচন্ড ভয় পেয়ে দোতলা থেকে লাফ দেন। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য আবাসিক হলেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ছোটাছুটি শুরু করে দেন শিক্ষার্থীরা। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের একটি ভবনের বিভিন্ন স্থানের পলেস্তারা খসে পড়ে। হলের পাঠকক্ষের দরজার কাচ ভেঙে যায়।
এছাড়া ভূমিকম্প আতঙ্কে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ছুপুয়া এলাকায় অবস্থিত আমির শার্ট গার্মেন্টে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে শতাধিক পোশাকশ্রমিক আহত হন। এ সময় অন্তত ২০ জন গুরুতর আঘাত পেয়েছেন যাদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
কুমিল্লা মহিলা কলেজে আহত হয়ে চারজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আজিজুর রহমান সিদ্দিকী।
ঢাকা, কুমিল্লা ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, চুয়াডাঙ্গা, নোয়াখালী, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিকম্পের তীব্রতা অনুভূত হওয়ার পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতি ও আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ভূমিকম্পের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার জানান, ভূমিকম্পে ঢাকা, পার্বত্য চট্টগ্রাম, রংপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা ও দিনাজপুর অঞ্চলই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে রিখটার স্কেলে ৭ এর বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা হবে ভয়াবহ।
তিনি জানান কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ এক গবেষণায় ১২ বছরের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাংলাদেশে সাবডাকশন জোন সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের হাওর হয়ে মেঘনা নদী দিয়ে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে চলে গেছে। প্রায় হাজার বছর ধরে এই জোনে বিপুল পরিমাণ শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে। এর ফলে ৮ দশমিক ২ থেকে ৮ দশমিক ৯ মাত্রা পর্যন্ত ভূমিকম্প হতে পারে।
তিনি জানান, এই জোনের আবার দুটি ভাগ আছে। একটা হলো লক জোন, যেটি বাংলাদেশের মধ্যে পড়েছে। এটিতে ভারত ও মায়ানমারের দুটি প্লেট আটকে আছে।
আরেকটি জোন মায়ানমার ও মিজোরাম অঞ্চলে। এ অঞ্চলটিতে সবসময় এমন ভূমিকম্প হয় না। তবে কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, এখানে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প হচ্ছে। এটা বড় ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার পূর্বলক্ষণ, বলেন অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার।
তিনি বলেন, সাবডাকশন জোনে যে ভূমিকম্প হবেই, তা নিশ্চিত। কারণ, যে পরিমাণ শক্তি জমা হয়ে আছে, তা একদিন না একদিন বের হবেই। সেটি আজ হোক বা কাল হোক। বা ৭০ বছর পরেই হোক। তা যদি হয়, তবে তা হবে মারাত্মক ধরনের ভূমিকম্প। আর ক্ষয়ক্ষতি বেশি হবে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামের মতো জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোয়।
ভূতত্ত্ববিদদরা বলছেন, বাংলাদেশের সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকটি প্লেট থাকার কারণে এসব এলাকা ভূমিকম্পের বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকায় গত কয়েক বছরের মধ্যে যেসব ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশের উৎপত্তিস্থলই ছিল বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে সিলেট বা চট্টগ্রাম অঞ্চলে। অনেকগুলো ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভারতের মিজোরাম বা ত্রিপুরা রাজ্যে। তবে ইদানীং মাঝেমধ্যেই ঢাকার আশেপাশের কেন্দ্র থেকে ভূমিকম্প হতে দেখা গেছে।
ভূতত্ত্ববিদ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘এটা নতুন কিছু নয়। গত কয়েক বছরে আমরা যে হালকা থেকে মাঝারি ভূমিকম্প দেখছি, এটাও সেরকম একটা হয়ে গেল। ৬-৭ মাস আগে নারায়ণগঞ্জে যে হালকা ভূমিকম্প হলো, বা গত বছর সিলেটে যেটা হলো, এগুলো সবই কিন্তু সাবডাকশান জোনে পড়েছে। এটা ভিন্ন কিছু নয়, তবে অবশ্যই শঙ্কার কারণ। সাবডাকশন জোনে ছোট ভূমিকম্প আসলে বড় ভূমিকম্প হওয়ার পূর্বলক্ষণ।’
শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩
ভূমিকম্পে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা কেঁপে ওঠে। শনিবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৬ মাত্রার এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, এর উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশের ভেতরই। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থেকে আট কিলোমিটার পূর্ব-উত্তর-পূর্বে। গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার।
ভূমিকম্পের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শাহাব সোহাগ নামে একজন লিখেছেন, ‘এর চেয়ে বেশি স্থায়িত্বের ভূমিকম্পের কথা মনে পড়ছে না।’
ভূমিকম্প আতঙ্কে মাস্টারদা সূর্য সেন হলের ২৩৩ নম্বর কক্ষের দোতলা থেকে লাফ দিলে তার পা ভেঙে যায় মিনহাজুর রহমান নামের একজন শিক্ষার্থীর। তিনি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র। এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন তিনি।
মিনহাজুর বলেন, তার ঘরের সব কিছু এত জোরে দুলতে থাকে যে তিনি প্রচন্ড ভয় পেয়ে দোতলা থেকে লাফ দেন। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য আবাসিক হলেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ছোটাছুটি শুরু করে দেন শিক্ষার্থীরা। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের একটি ভবনের বিভিন্ন স্থানের পলেস্তারা খসে পড়ে। হলের পাঠকক্ষের দরজার কাচ ভেঙে যায়।
এছাড়া ভূমিকম্প আতঙ্কে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ছুপুয়া এলাকায় অবস্থিত আমির শার্ট গার্মেন্টে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে শতাধিক পোশাকশ্রমিক আহত হন। এ সময় অন্তত ২০ জন গুরুতর আঘাত পেয়েছেন যাদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
কুমিল্লা মহিলা কলেজে আহত হয়ে চারজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আজিজুর রহমান সিদ্দিকী।
ঢাকা, কুমিল্লা ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, চুয়াডাঙ্গা, নোয়াখালী, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিকম্পের তীব্রতা অনুভূত হওয়ার পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতি ও আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ভূমিকম্পের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার জানান, ভূমিকম্পে ঢাকা, পার্বত্য চট্টগ্রাম, রংপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা ও দিনাজপুর অঞ্চলই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে রিখটার স্কেলে ৭ এর বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা হবে ভয়াবহ।
তিনি জানান কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ এক গবেষণায় ১২ বছরের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাংলাদেশে সাবডাকশন জোন সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের হাওর হয়ে মেঘনা নদী দিয়ে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে চলে গেছে। প্রায় হাজার বছর ধরে এই জোনে বিপুল পরিমাণ শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে। এর ফলে ৮ দশমিক ২ থেকে ৮ দশমিক ৯ মাত্রা পর্যন্ত ভূমিকম্প হতে পারে।
তিনি জানান, এই জোনের আবার দুটি ভাগ আছে। একটা হলো লক জোন, যেটি বাংলাদেশের মধ্যে পড়েছে। এটিতে ভারত ও মায়ানমারের দুটি প্লেট আটকে আছে।
আরেকটি জোন মায়ানমার ও মিজোরাম অঞ্চলে। এ অঞ্চলটিতে সবসময় এমন ভূমিকম্প হয় না। তবে কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, এখানে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প হচ্ছে। এটা বড় ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার পূর্বলক্ষণ, বলেন অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার।
তিনি বলেন, সাবডাকশন জোনে যে ভূমিকম্প হবেই, তা নিশ্চিত। কারণ, যে পরিমাণ শক্তি জমা হয়ে আছে, তা একদিন না একদিন বের হবেই। সেটি আজ হোক বা কাল হোক। বা ৭০ বছর পরেই হোক। তা যদি হয়, তবে তা হবে মারাত্মক ধরনের ভূমিকম্প। আর ক্ষয়ক্ষতি বেশি হবে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামের মতো জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোয়।
ভূতত্ত্ববিদদরা বলছেন, বাংলাদেশের সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকটি প্লেট থাকার কারণে এসব এলাকা ভূমিকম্পের বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকায় গত কয়েক বছরের মধ্যে যেসব ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশের উৎপত্তিস্থলই ছিল বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে সিলেট বা চট্টগ্রাম অঞ্চলে। অনেকগুলো ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভারতের মিজোরাম বা ত্রিপুরা রাজ্যে। তবে ইদানীং মাঝেমধ্যেই ঢাকার আশেপাশের কেন্দ্র থেকে ভূমিকম্প হতে দেখা গেছে।
ভূতত্ত্ববিদ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘এটা নতুন কিছু নয়। গত কয়েক বছরে আমরা যে হালকা থেকে মাঝারি ভূমিকম্প দেখছি, এটাও সেরকম একটা হয়ে গেল। ৬-৭ মাস আগে নারায়ণগঞ্জে যে হালকা ভূমিকম্প হলো, বা গত বছর সিলেটে যেটা হলো, এগুলো সবই কিন্তু সাবডাকশান জোনে পড়েছে। এটা ভিন্ন কিছু নয়, তবে অবশ্যই শঙ্কার কারণ। সাবডাকশন জোনে ছোট ভূমিকম্প আসলে বড় ভূমিকম্প হওয়ার পূর্বলক্ষণ।’