শনিবার শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে শুরু হয় মায়ের ডাকের সমাবেশ। পুলিশের বাধার মুখে পরে এসে দাঁড়ায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে -সংবাদ
‘এ জীবনের শেষ কোথায়? আমরা কি ন্যায়বিচার পাব না?’- এমন অনেক প্রশ্ন রেখে সরকারের কাছে নিখোঁজ স্বজনদের উদ্ধারের আকুতি জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের প্রাক্কালে শনিবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীতে ‘মায়ের ডাক’ নামে সংগঠনের উদ্যোগে এক আয়োজনে জড়ো হন তারা।
সকাল ১০টায় প্রথমে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে দাঁড়ান তারা। কিন্তু পুলিশের বাধায় সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়ে এক কিলোমিটারের মতো হেঁটে জাতীয় প্রেসক্লাবের কাছে সমবেত হন তারা।
এই আয়োজনকে ঘিরে সেখানে পুলিশের জোরাল অবস্থান দেখা গেছে। আর বক্তব্য চলাকালে একজন হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নিখোঁজ কাউসার হোসেনের মেয়ে লামিয়া আখতার মীম বলেন, ‘১৩ বছর হয়ে গেছে বাবাকে দেখি না। আমি বাবাকে একটু দেখতে চাই। প্লিজ আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন।’
নিখোঁজ পারভেজ হোসেনের মেয়ে হৃদি হোসেন বলেন, ‘১০ বছর হয়ে গেল আমি আমার পাপ্পাকে দেখি না। আমার পাপ্পকে ফিরিয়ে দেন। পরীক্ষা শেষে সবাই যখন পাপ্পার সঙ্গে বেড়াতে যায়, আমি যেন আমার পাপ্পার সঙ্গে ঘুরতে যেতে চাই।’
‘আমরা যখন এসব কথা বলতে রাস্তায় দাঁড়াই, পুলিশ আমাদের তাড়িয়ে দেয়। পুলিশ এত নির্দয় কেন?’
মো. সোহেল ২০১৩ সালে ২ ডিসেম্বর যখন নিখোঁজ হন, তখন তার মেয়ে সাফার বয়স কেবল দুই মাস। এখন তার বয়স ১০ হয়েছে।
মেয়েটি বলে, ‘আমি এখনও রাস্তার মধ্যে বাবাকে খুঁজি, তাকে পাই না। সরকারের কাছে আমার একটাই দাবি। প্লিজ, প্লিজ আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন।’
বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলামের সমুনের স্বজনরা এই সংগঠনটি গড়ে তুলেছেন। ২০১৩ সালে বিএনপি যখন আন্দোলনে যায়, তখন তিনি নিখোঁজ জন।
এই কর্মসূচিতে সুমনের ছবি বুকে দিয়ে তার ছোট মেয়ে আরওয়া ইসলাম বলে, ‘আমার বাবা আসে না, আমার কষ্ট হয়। আমার বাবাকে ফিরিয়ে দাও।’
কর্মসূচিতে অংশ নেন নিহত ছাত্রদল নেতা মাহবুবুর রহমান বাপ্পীর বোন ঝুমুর রহমানও।
২০১৫ সালে পুলিশের নির্যাতনে তার ভাই মারা গেছেন। অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আজকে সেই হত্যার কথা বলতে এসেছি আমি। কিন্তু শাহবাগে পুলিশ আমাদের দাঁড়াতে দেয়নি। বলে, যদি দাঁড়ান লাঠিপেটা করব, চলে যান এখান থেইকা।’
‘এ কেমন স্বাধীন দেশ, যেখানে ভাইয়ের হত্যার বিচার চাইতে পারব না, বিচারের কথা বলতে পারব না?’
২০১৩ সাল থেকে নিখোঁজ সূত্রাপুর ছাত্রদল নেতা সেলিম রেজা পিন্টুর বড় বোন রেহানা বানু মুন্নী বলেন, ‘প্রশাসনের অস্ত্রধারী লোকজন বাসা থেকে আমার ভাইকে তুলে নিয়েছিল। আজ অবধি আমি ভাইয়ের জন্য রাস্তায় রাস্তায় কান্না করি। আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছি বুকের আগুন আর কষ্টগুলো জানানোর জন্য।’
বংশাল থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ হোসেনের স্ত্রী ফারজানা আখতার বলেন, ‘আমার শরীর অর্ধেক পুড়ে গেছে। তারপরও এই কষ্টের মধ্যে আমার কথাটা বলতে এখানে এসেছি। আমার স্বামীর কী দোষ আমরা জানতে চাই।’
মায়ের ডাকে এই জমায়েতের আয়োজন করতে চেয়েছিল শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে। কিন্তু পুলিশের বাধায় সেখান থেকে সরে আসতে হয় তাদের।
‘মায়ের ডাকের’ সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘অন্যায়-অত্যাচার গত ১৫ বছর যাবৎ দেখে আসছি। প্রতিটা নির্বাচনের আগে বিরোধী মত ও দলের মানুষজনকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, গুম করা হচ্ছে, খুন করা হচ্ছে- এর শেষ কোথায়?’
যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস এই সরকারের যখন পতন দেখতে পাব, তখন আমরা ন্যায়বিচার পাব।’
গুম হওয়া সাজেদুল ইসলামের সুমনের ভাইয়ের মেয়ে সাবিহা, শামসুল ইসলাম সুলায়মানের স্ত্রীসহ আরও কয়েকজন সেখানে বক্তব্য রাখেন।
মায়ের ডাকের আফরোজা ইসলাম আঁখির সভাপতিত্বে এই আয়োজনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাসও বক্তব্য রাখেন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জেএসডির সহ-সভাপতি তানিয়া রব, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল ওহাবও সেখানে সংহতি প্রকাশ করেন।
শনিবার শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে শুরু হয় মায়ের ডাকের সমাবেশ। পুলিশের বাধার মুখে পরে এসে দাঁড়ায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে -সংবাদ
শনিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩
‘এ জীবনের শেষ কোথায়? আমরা কি ন্যায়বিচার পাব না?’- এমন অনেক প্রশ্ন রেখে সরকারের কাছে নিখোঁজ স্বজনদের উদ্ধারের আকুতি জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের প্রাক্কালে শনিবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীতে ‘মায়ের ডাক’ নামে সংগঠনের উদ্যোগে এক আয়োজনে জড়ো হন তারা।
সকাল ১০টায় প্রথমে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে দাঁড়ান তারা। কিন্তু পুলিশের বাধায় সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়ে এক কিলোমিটারের মতো হেঁটে জাতীয় প্রেসক্লাবের কাছে সমবেত হন তারা।
এই আয়োজনকে ঘিরে সেখানে পুলিশের জোরাল অবস্থান দেখা গেছে। আর বক্তব্য চলাকালে একজন হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নিখোঁজ কাউসার হোসেনের মেয়ে লামিয়া আখতার মীম বলেন, ‘১৩ বছর হয়ে গেছে বাবাকে দেখি না। আমি বাবাকে একটু দেখতে চাই। প্লিজ আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন।’
নিখোঁজ পারভেজ হোসেনের মেয়ে হৃদি হোসেন বলেন, ‘১০ বছর হয়ে গেল আমি আমার পাপ্পাকে দেখি না। আমার পাপ্পকে ফিরিয়ে দেন। পরীক্ষা শেষে সবাই যখন পাপ্পার সঙ্গে বেড়াতে যায়, আমি যেন আমার পাপ্পার সঙ্গে ঘুরতে যেতে চাই।’
‘আমরা যখন এসব কথা বলতে রাস্তায় দাঁড়াই, পুলিশ আমাদের তাড়িয়ে দেয়। পুলিশ এত নির্দয় কেন?’
মো. সোহেল ২০১৩ সালে ২ ডিসেম্বর যখন নিখোঁজ হন, তখন তার মেয়ে সাফার বয়স কেবল দুই মাস। এখন তার বয়স ১০ হয়েছে।
মেয়েটি বলে, ‘আমি এখনও রাস্তার মধ্যে বাবাকে খুঁজি, তাকে পাই না। সরকারের কাছে আমার একটাই দাবি। প্লিজ, প্লিজ আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন।’
বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলামের সমুনের স্বজনরা এই সংগঠনটি গড়ে তুলেছেন। ২০১৩ সালে বিএনপি যখন আন্দোলনে যায়, তখন তিনি নিখোঁজ জন।
এই কর্মসূচিতে সুমনের ছবি বুকে দিয়ে তার ছোট মেয়ে আরওয়া ইসলাম বলে, ‘আমার বাবা আসে না, আমার কষ্ট হয়। আমার বাবাকে ফিরিয়ে দাও।’
কর্মসূচিতে অংশ নেন নিহত ছাত্রদল নেতা মাহবুবুর রহমান বাপ্পীর বোন ঝুমুর রহমানও।
২০১৫ সালে পুলিশের নির্যাতনে তার ভাই মারা গেছেন। অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আজকে সেই হত্যার কথা বলতে এসেছি আমি। কিন্তু শাহবাগে পুলিশ আমাদের দাঁড়াতে দেয়নি। বলে, যদি দাঁড়ান লাঠিপেটা করব, চলে যান এখান থেইকা।’
‘এ কেমন স্বাধীন দেশ, যেখানে ভাইয়ের হত্যার বিচার চাইতে পারব না, বিচারের কথা বলতে পারব না?’
২০১৩ সাল থেকে নিখোঁজ সূত্রাপুর ছাত্রদল নেতা সেলিম রেজা পিন্টুর বড় বোন রেহানা বানু মুন্নী বলেন, ‘প্রশাসনের অস্ত্রধারী লোকজন বাসা থেকে আমার ভাইকে তুলে নিয়েছিল। আজ অবধি আমি ভাইয়ের জন্য রাস্তায় রাস্তায় কান্না করি। আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছি বুকের আগুন আর কষ্টগুলো জানানোর জন্য।’
বংশাল থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ হোসেনের স্ত্রী ফারজানা আখতার বলেন, ‘আমার শরীর অর্ধেক পুড়ে গেছে। তারপরও এই কষ্টের মধ্যে আমার কথাটা বলতে এখানে এসেছি। আমার স্বামীর কী দোষ আমরা জানতে চাই।’
মায়ের ডাকে এই জমায়েতের আয়োজন করতে চেয়েছিল শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে। কিন্তু পুলিশের বাধায় সেখান থেকে সরে আসতে হয় তাদের।
‘মায়ের ডাকের’ সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘অন্যায়-অত্যাচার গত ১৫ বছর যাবৎ দেখে আসছি। প্রতিটা নির্বাচনের আগে বিরোধী মত ও দলের মানুষজনকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, গুম করা হচ্ছে, খুন করা হচ্ছে- এর শেষ কোথায়?’
যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস এই সরকারের যখন পতন দেখতে পাব, তখন আমরা ন্যায়বিচার পাব।’
গুম হওয়া সাজেদুল ইসলামের সুমনের ভাইয়ের মেয়ে সাবিহা, শামসুল ইসলাম সুলায়মানের স্ত্রীসহ আরও কয়েকজন সেখানে বক্তব্য রাখেন।
মায়ের ডাকের আফরোজা ইসলাম আঁখির সভাপতিত্বে এই আয়োজনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাসও বক্তব্য রাখেন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জেএসডির সহ-সভাপতি তানিয়া রব, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল ওহাবও সেখানে সংহতি প্রকাশ করেন।