লাঙ্গলবন্দে অষ্টমী স্নানে পূন্যার্থীদের ভীড় । ছবি : প্রণব রায়
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলাধীন লাঙ্গলবন্দে শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বী পূণ্যার্থীদের দুই দিনব্যাপী মহাষ্টমী ¯œানোৎসব। অষ্টমী তিথি অনুযায়ী সোমবার (১৫ এপ্রিল) বিকেল ৪টা ২১ মিনিট থেকে শুরু হয় এই উৎসব। অষ্টমী তিথির লগ্ন ও পূণ্য ¯œান শেষ হবে মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৫৬ মিনিটে। স্নানোৎসব সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পাদন করতে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা পুলিশ। ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা ও ভুটানসহ দেশ বিদেশ থেকে পুণ্যার্থীরা স্নানোৎসবে আসতে শুরু করেছেন।
ব্রহ্মপুত্র নদের লাঙ্গলবন্দ এলাকার বিভিন্ন ¯œান ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, স্নানের লগ্ন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সী পুণ্যার্থীরা ডাব, দুর্বা, বেলপাতা, ফুল ও ফলমূলসহ পূজার বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে পুণ্যস্নানে নামছেন। এসময় প্রতি ঘাটে বসে থাকা পুরোহিতদের কাছে ‘হে মহাভাগ ব্রহ্মপুত্র, হে লৌহিত্য আমার পাপ হরণ কর’- এই মন্ত্র উচ্চারণ করে পাপ মোচনের আশায় ব্রহ্মপুত্র নদে ¯œান করছেন পূণ্যার্থীরা। ¯œান করতে আসা পূণ্যার্থী সুরেশ, দিলীপ, মনা বাবু, কাকলী, কাজলী, মায়া রানী, অঞ্জনা, গীততা রানীসহ অনেকে জানান, ত্রেতা যুগে বিষ্ণুর অবতার পরশুরাম মুনি তার পিতার আদেশ পালনে হাতে থাকা কুঠার দিয়ে মাকে হত্যা করলে তার হাতে আটকে যায় কুঠারটি। পরবর্তিতে ভগবান শিবের তপস্যা করে হাতে লেগে থাকা কুুঠার নিয়ে কৈলাস থেকে উৎপত্তি হওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ধরে তীর্থ যাত্রা করে লাঙ্গলবন্দ আসেন। এখানে বিশ্রাম নেয়ার এক পর্যায় কুঠারটি হাত থেকে মুক্ত হয়। পরে এই ব্রহ্মপুত্র নদে ¯œান করেন তিনি। সেই থেকে এই ¯œানের নাম হয় পুণ্য¯œান। তারই ধারাবাহিকতায় পাপ মোচনের লক্ষ্য নিয়ে লাঙ্গলবন্দে পূণ্য¯œানে আসেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। লাঙ্গলবন্দ মহাষ্টমী স্নান উদযাপন কমিটির সদস্য সুরেষ কুমার সাহা জানান, এবার ২০টি স্নান ঘাট পুণ্যার্থীদের জন্য সংস্কার করা হয়েছে। পুণ্যার্থীদের স্নান ঘাট গুলোর মধ্যে রয়েছে, ললিত সাধুর ঘাট, নাসিম ওসমান কেন্দ্রীয় স্নানঘাট, গৌর বিষ্ণুপ্রিয়া স্নানঘাট, জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতি স্নানঘাট, অন্নপূর্ণা স্নানঘাট, লাঙ্গলবন্দ রাজঘাট, মাকরী সাধুর শান্তি আশ্রম স্নানঘাট, গান্ধী ঘাট বা মহাশ্মশান স্নানঘাট, বরদেশ্বরী কালী ও শিব মন্দির স্নানঘাট, জয়কালী মন্দির স্নানঘাট, রক্ষা কালীমন্দির স্নানঘাট, পাষান কালীমন্দির স্নানঘাট, স্বামী দ্বিগিজয় ব্রক্ষচারী আশ্রম প্রেমতলা, শ্রী রামপুর জগদ্বন্ধু স্নান ঘাট (ব্রক্ষা মন্দির), দক্ষিণেশ্বরী কালী মন্দির স্নানঘাট,পরেশ মাহাত্মা আশ্রম স্নানঘাট, সাব্দী রক্ষা কালীমন্দির স্নানঘাট, সাব্দী লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম স্নান ঘাট, পঞ্চপান্ডব স্নানঘাট (কালীগঞ্জ ঘাট) ও শ্রী প্রভুপাদ স্নানঘাট। বিশুদ্ধ খাবারের জল সরবরাহের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ১৬টি নলকূপ। কাপড় পরিবর্তন কক্ষ করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক। ১৫০টি অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া ব্রহ্মপূত্র নদের কচুরিপানা পরিস্কার করা হয়েছে। চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, ৫টি মেডিকেল টিম ও নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস ১০ শয্যাবিশিষ্ট অস্থায়ী হাসপাতালের ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়াও দর্শনার্থীদের সেবা নিশ্চিতে বেসরকারিভাবে ৬০টি সেবাক্যাম্প ও ৪০০ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থকে পুরো ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১০০ টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। তবে স্নানোৎসব উপলক্ষে লোকজ মেলা বন্ধ রাখার নির্দেশনা আরোপ করলেও রাস্তার দুপাশেই বসেছে লোকজ মেলা। ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটানসহ দেশ বিদেশের পুণ্যার্থীরা অংশগ্রহণ করছেন। বন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এম. এ মুহাইমিন আল জিহান জানান, স্নান উৎসব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়েছে। স্নান ঘাটগুলো বাধাই কাজসহ কাপড় বদলানোর কক্ষ ও পর্যাপ্ত অস্থায়ী টয়লেটেরও ব্যবস্থা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদা পোশাকে তৎপর রয়েছে। কন্ট্রোল রুম থেকে সকল কিছু মনিটরিং করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, হিন্দু ধর্মালম্বীদের স্নান উৎসবকে কেন্দ্র করে পুলিশ, র্যাব ও সাদা পোশাকসহ দেড় হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পুরো এলাকাজুড়ে ১শ’র অধিক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মনিটরিং সেল বসানো হয়েছে। পুণ্যার্থীদের যাতায়াত নির্বিঘ্নে করতে মহাসড়ক ও সড়কে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব সময় তৎপর রয়েছে।
লাঙ্গলবন্দে অষ্টমী স্নানে পূন্যার্থীদের ভীড় । ছবি : প্রণব রায়
সোমবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৪
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলাধীন লাঙ্গলবন্দে শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বী পূণ্যার্থীদের দুই দিনব্যাপী মহাষ্টমী ¯œানোৎসব। অষ্টমী তিথি অনুযায়ী সোমবার (১৫ এপ্রিল) বিকেল ৪টা ২১ মিনিট থেকে শুরু হয় এই উৎসব। অষ্টমী তিথির লগ্ন ও পূণ্য ¯œান শেষ হবে মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৫৬ মিনিটে। স্নানোৎসব সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পাদন করতে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা পুলিশ। ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা ও ভুটানসহ দেশ বিদেশ থেকে পুণ্যার্থীরা স্নানোৎসবে আসতে শুরু করেছেন।
ব্রহ্মপুত্র নদের লাঙ্গলবন্দ এলাকার বিভিন্ন ¯œান ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, স্নানের লগ্ন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সী পুণ্যার্থীরা ডাব, দুর্বা, বেলপাতা, ফুল ও ফলমূলসহ পূজার বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে পুণ্যস্নানে নামছেন। এসময় প্রতি ঘাটে বসে থাকা পুরোহিতদের কাছে ‘হে মহাভাগ ব্রহ্মপুত্র, হে লৌহিত্য আমার পাপ হরণ কর’- এই মন্ত্র উচ্চারণ করে পাপ মোচনের আশায় ব্রহ্মপুত্র নদে ¯œান করছেন পূণ্যার্থীরা। ¯œান করতে আসা পূণ্যার্থী সুরেশ, দিলীপ, মনা বাবু, কাকলী, কাজলী, মায়া রানী, অঞ্জনা, গীততা রানীসহ অনেকে জানান, ত্রেতা যুগে বিষ্ণুর অবতার পরশুরাম মুনি তার পিতার আদেশ পালনে হাতে থাকা কুঠার দিয়ে মাকে হত্যা করলে তার হাতে আটকে যায় কুঠারটি। পরবর্তিতে ভগবান শিবের তপস্যা করে হাতে লেগে থাকা কুুঠার নিয়ে কৈলাস থেকে উৎপত্তি হওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ধরে তীর্থ যাত্রা করে লাঙ্গলবন্দ আসেন। এখানে বিশ্রাম নেয়ার এক পর্যায় কুঠারটি হাত থেকে মুক্ত হয়। পরে এই ব্রহ্মপুত্র নদে ¯œান করেন তিনি। সেই থেকে এই ¯œানের নাম হয় পুণ্য¯œান। তারই ধারাবাহিকতায় পাপ মোচনের লক্ষ্য নিয়ে লাঙ্গলবন্দে পূণ্য¯œানে আসেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। লাঙ্গলবন্দ মহাষ্টমী স্নান উদযাপন কমিটির সদস্য সুরেষ কুমার সাহা জানান, এবার ২০টি স্নান ঘাট পুণ্যার্থীদের জন্য সংস্কার করা হয়েছে। পুণ্যার্থীদের স্নান ঘাট গুলোর মধ্যে রয়েছে, ললিত সাধুর ঘাট, নাসিম ওসমান কেন্দ্রীয় স্নানঘাট, গৌর বিষ্ণুপ্রিয়া স্নানঘাট, জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতি স্নানঘাট, অন্নপূর্ণা স্নানঘাট, লাঙ্গলবন্দ রাজঘাট, মাকরী সাধুর শান্তি আশ্রম স্নানঘাট, গান্ধী ঘাট বা মহাশ্মশান স্নানঘাট, বরদেশ্বরী কালী ও শিব মন্দির স্নানঘাট, জয়কালী মন্দির স্নানঘাট, রক্ষা কালীমন্দির স্নানঘাট, পাষান কালীমন্দির স্নানঘাট, স্বামী দ্বিগিজয় ব্রক্ষচারী আশ্রম প্রেমতলা, শ্রী রামপুর জগদ্বন্ধু স্নান ঘাট (ব্রক্ষা মন্দির), দক্ষিণেশ্বরী কালী মন্দির স্নানঘাট,পরেশ মাহাত্মা আশ্রম স্নানঘাট, সাব্দী রক্ষা কালীমন্দির স্নানঘাট, সাব্দী লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম স্নান ঘাট, পঞ্চপান্ডব স্নানঘাট (কালীগঞ্জ ঘাট) ও শ্রী প্রভুপাদ স্নানঘাট। বিশুদ্ধ খাবারের জল সরবরাহের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ১৬টি নলকূপ। কাপড় পরিবর্তন কক্ষ করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক। ১৫০টি অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া ব্রহ্মপূত্র নদের কচুরিপানা পরিস্কার করা হয়েছে। চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, ৫টি মেডিকেল টিম ও নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস ১০ শয্যাবিশিষ্ট অস্থায়ী হাসপাতালের ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়াও দর্শনার্থীদের সেবা নিশ্চিতে বেসরকারিভাবে ৬০টি সেবাক্যাম্প ও ৪০০ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থকে পুরো ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১০০ টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। তবে স্নানোৎসব উপলক্ষে লোকজ মেলা বন্ধ রাখার নির্দেশনা আরোপ করলেও রাস্তার দুপাশেই বসেছে লোকজ মেলা। ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটানসহ দেশ বিদেশের পুণ্যার্থীরা অংশগ্রহণ করছেন। বন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এম. এ মুহাইমিন আল জিহান জানান, স্নান উৎসব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়েছে। স্নান ঘাটগুলো বাধাই কাজসহ কাপড় বদলানোর কক্ষ ও পর্যাপ্ত অস্থায়ী টয়লেটেরও ব্যবস্থা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদা পোশাকে তৎপর রয়েছে। কন্ট্রোল রুম থেকে সকল কিছু মনিটরিং করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, হিন্দু ধর্মালম্বীদের স্নান উৎসবকে কেন্দ্র করে পুলিশ, র্যাব ও সাদা পোশাকসহ দেড় হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পুরো এলাকাজুড়ে ১শ’র অধিক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মনিটরিং সেল বসানো হয়েছে। পুণ্যার্থীদের যাতায়াত নির্বিঘ্নে করতে মহাসড়ক ও সড়কে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব সময় তৎপর রয়েছে।