বিভিন্ন মাধ্যমে চলমান দাবদাহে হিটস্ট্রোকে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও বুধবারই (২৪ এপ্রিল) প্রথমবারের মতো এই অসুস্থতায় সারাদেশে চারজনের মৃত্যুর কথা জানালো মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তারা জানায়, ২৪ ঘণ্টায় হিটস্ট্রোকে রাজবাড়ী, হবিগঞ্জ ও খুলনায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে আরেকজনের মৃত্যু হয় চুয়াডাঙায়।
তা বাদেও হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত অনেককেই হাসপাতালে আনা হয়েছে এই কদিনে। চিকিৎসা শেষে তাদের একটি অংশ বাড়ি ফিরতে পেরেছে, অনেকেই রয়েছেন চিকিৎসাধীন।
হাসপাতালের দায়িত্বশীলরা জানান, গরমের সময় কাজ করতে গিয়ে শ্রমিক ও কৃষকরাই বেশি অসুস্থ হচ্ছেন।
হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর খবর আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এছাড়া ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর আলম সংবাদকে জানান, প্রচন্ড গরমে শিশুরা নিউমোনিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশিতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। শিশু হাসপাতালে ৬শ’র বেশি শিশু ভর্তি আছে। তার মধ্যে ১শ’ শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। এই শিশুদের আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালে সব বেডেই শিশু ভর্তি আছে। আরও অনেককে বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
এই গরমে শিশুদেরকে হালকা কাপড় পরাতে দিতে হবে। ঠান্ডা পানি বেশি না খাওয়াই ভালো। বাচ্চাদের ঘরে রাখাই ভালো। পানি জাতীয় তরল খাবার, ফলের রস খাওয়াতে হবে। নড়াইল সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবদুল গফ্ফার সংবাদকে মুঠোফোনে জানান, হিটস্ট্রোকে কৃষক ও শ্রমিকরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের মধ্যে কিছু কিছু শ্রমিককে হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে হয়েছে। আর এখন গরমের কারণে ডায়রিয়া, পেটের পিড়া, জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে বেশি আসছে মানুষ। নড়াইল সদর হাসপাতালে ১শ’ বেডের জায়গায় রোগী ভর্তি আছে ৩৬৩ জন, যা রোগী আসে সবাইকে চিকিৎসা দেয়া হয়। আর যাদের অবস্থা মারাত্মক নয় তাদেরকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
গ্রাম-গঞ্জ থেকে এখন শহরে রোগীর সংখ্যা বেশি। অনেকেই আক্রান্ত হলে জেলা শহরে হাসপাতালে আসে। যার কারণে রোগীর চাপও বেশি। হাসপাতালের বেডের বাইরে খালি জায়গায় রোগী ভর্তি করা হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোজ্জামেল হক জানান, শিশুরা গরম জনিত রোগ জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এক বছর থেকে দেড় বছর ও ৭ থেকে ৮ বছর বয়সের শিশুরা হাসপাতালে বেশি চিকিৎসার জন্য যাচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৪শ’র বেশি শিশু বঙ্গবন্ধু মেডিকেল ভার্সিটির শিশু বিভাগে চিকিৎসা নেয়। তার মধ্যে ভর্তি আছে ৫০ জনের বেশি।
এ বিশেষজ্ঞ বলেন, গরমজনিত কারণে শিশুদেরকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করাতে হবে। তরল খাবার খাওয়াতে হবে। গরমের সময় বাইরে বের না হওয়াই ভালো। হালকা পানি দিয়ে শরীর মুচে দিতে হবে।
বিশেষজ্ঞ বলেছেন, প্রচন্ড গরমে ঝুঁকিতে’ শিশুরা। মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, বমি বমি ভাব, হালকা জ্বর, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মাংসপেশিতে টান, ডায়াপার পরার জায়গাগুলোতে ফুসকুড়িতে নজর রাখার পরামর্শ।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে শিশুরা ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। অতি গরমে শিশুদের হিটস্ট্রোক, পানি শূন্যতাজনিত ডায়রিয়ার আক্রান্ত হচ্ছে। এখন দুর্বিষহ তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশু বা অন্তঃসত্ত্বার মধ্যে ‘হিটস্ট্রেস’ বা তাপমাত্রাজনিত সমস্যার উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে তাকে একটি ঠান্ডা বা ছায়া এবং পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের সুযোগ আছে, এমন জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে ভেজা তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছিয়ে বা গায়ে ঠান্ডা পানি দিতে হবে। তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি বা খাওয়ার স্যালাইন পান করতে হবে।
হিটস্ট্রেসের (তাপমাত্রাজনিত অসুস্থতার) উপসর্গ তীব্র হলে, যেমন কোনো কিছুতে সাড়া না দিলে, অজ্ঞান হয়ে পড়লে, তীব্র জ্বর, হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেলে, খিঁচুনি দেখা দিলে এবং অচেতন হয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিতে হবে।
বুধবার রাতে মহাখালী ডায়রিয়া হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গরমজনিত কারণে সেখানে দিনে ৫শ’র বেশি রোগী চিকিৎসা করা হচ্ছে। এই সংখ্যা কখনো বাড়ে। আবার কখনো কমে। বুধবার পর্যন্ত শহরে তেমন রোগী বাড়ার তথ্য নেই।
জানা গেছে, সারাদেশে জেলা, সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে গরমজনিত রোগী বাড়ছে। তবে আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগী বেশি। দেশে ৬শ’র বেশি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলে ও ঝামেলা এড়াতে অনেকেই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে বাসাবাড়িতে থেকে ওষুধ সেবন করছেন। এরপরও মারাত্মকদের হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে।
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
বিভিন্ন মাধ্যমে চলমান দাবদাহে হিটস্ট্রোকে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও বুধবারই (২৪ এপ্রিল) প্রথমবারের মতো এই অসুস্থতায় সারাদেশে চারজনের মৃত্যুর কথা জানালো মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তারা জানায়, ২৪ ঘণ্টায় হিটস্ট্রোকে রাজবাড়ী, হবিগঞ্জ ও খুলনায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে আরেকজনের মৃত্যু হয় চুয়াডাঙায়।
তা বাদেও হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত অনেককেই হাসপাতালে আনা হয়েছে এই কদিনে। চিকিৎসা শেষে তাদের একটি অংশ বাড়ি ফিরতে পেরেছে, অনেকেই রয়েছেন চিকিৎসাধীন।
হাসপাতালের দায়িত্বশীলরা জানান, গরমের সময় কাজ করতে গিয়ে শ্রমিক ও কৃষকরাই বেশি অসুস্থ হচ্ছেন।
হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর খবর আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এছাড়া ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর আলম সংবাদকে জানান, প্রচন্ড গরমে শিশুরা নিউমোনিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশিতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। শিশু হাসপাতালে ৬শ’র বেশি শিশু ভর্তি আছে। তার মধ্যে ১শ’ শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। এই শিশুদের আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালে সব বেডেই শিশু ভর্তি আছে। আরও অনেককে বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
এই গরমে শিশুদেরকে হালকা কাপড় পরাতে দিতে হবে। ঠান্ডা পানি বেশি না খাওয়াই ভালো। বাচ্চাদের ঘরে রাখাই ভালো। পানি জাতীয় তরল খাবার, ফলের রস খাওয়াতে হবে। নড়াইল সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবদুল গফ্ফার সংবাদকে মুঠোফোনে জানান, হিটস্ট্রোকে কৃষক ও শ্রমিকরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের মধ্যে কিছু কিছু শ্রমিককে হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে হয়েছে। আর এখন গরমের কারণে ডায়রিয়া, পেটের পিড়া, জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে বেশি আসছে মানুষ। নড়াইল সদর হাসপাতালে ১শ’ বেডের জায়গায় রোগী ভর্তি আছে ৩৬৩ জন, যা রোগী আসে সবাইকে চিকিৎসা দেয়া হয়। আর যাদের অবস্থা মারাত্মক নয় তাদেরকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
গ্রাম-গঞ্জ থেকে এখন শহরে রোগীর সংখ্যা বেশি। অনেকেই আক্রান্ত হলে জেলা শহরে হাসপাতালে আসে। যার কারণে রোগীর চাপও বেশি। হাসপাতালের বেডের বাইরে খালি জায়গায় রোগী ভর্তি করা হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোজ্জামেল হক জানান, শিশুরা গরম জনিত রোগ জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এক বছর থেকে দেড় বছর ও ৭ থেকে ৮ বছর বয়সের শিশুরা হাসপাতালে বেশি চিকিৎসার জন্য যাচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৪শ’র বেশি শিশু বঙ্গবন্ধু মেডিকেল ভার্সিটির শিশু বিভাগে চিকিৎসা নেয়। তার মধ্যে ভর্তি আছে ৫০ জনের বেশি।
এ বিশেষজ্ঞ বলেন, গরমজনিত কারণে শিশুদেরকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করাতে হবে। তরল খাবার খাওয়াতে হবে। গরমের সময় বাইরে বের না হওয়াই ভালো। হালকা পানি দিয়ে শরীর মুচে দিতে হবে।
বিশেষজ্ঞ বলেছেন, প্রচন্ড গরমে ঝুঁকিতে’ শিশুরা। মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, বমি বমি ভাব, হালকা জ্বর, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মাংসপেশিতে টান, ডায়াপার পরার জায়গাগুলোতে ফুসকুড়িতে নজর রাখার পরামর্শ।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে শিশুরা ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। অতি গরমে শিশুদের হিটস্ট্রোক, পানি শূন্যতাজনিত ডায়রিয়ার আক্রান্ত হচ্ছে। এখন দুর্বিষহ তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশু বা অন্তঃসত্ত্বার মধ্যে ‘হিটস্ট্রেস’ বা তাপমাত্রাজনিত সমস্যার উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে তাকে একটি ঠান্ডা বা ছায়া এবং পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের সুযোগ আছে, এমন জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে ভেজা তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছিয়ে বা গায়ে ঠান্ডা পানি দিতে হবে। তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি বা খাওয়ার স্যালাইন পান করতে হবে।
হিটস্ট্রেসের (তাপমাত্রাজনিত অসুস্থতার) উপসর্গ তীব্র হলে, যেমন কোনো কিছুতে সাড়া না দিলে, অজ্ঞান হয়ে পড়লে, তীব্র জ্বর, হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেলে, খিঁচুনি দেখা দিলে এবং অচেতন হয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিতে হবে।
বুধবার রাতে মহাখালী ডায়রিয়া হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গরমজনিত কারণে সেখানে দিনে ৫শ’র বেশি রোগী চিকিৎসা করা হচ্ছে। এই সংখ্যা কখনো বাড়ে। আবার কখনো কমে। বুধবার পর্যন্ত শহরে তেমন রোগী বাড়ার তথ্য নেই।
জানা গেছে, সারাদেশে জেলা, সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে গরমজনিত রোগী বাড়ছে। তবে আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগী বেশি। দেশে ৬শ’র বেশি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলে ও ঝামেলা এড়াতে অনেকেই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে বাসাবাড়িতে থেকে ওষুধ সেবন করছেন। এরপরও মারাত্মকদের হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে।