alt

সারাদেশ

বান্দরবানে গুলি, পাল্টা গুলিতে পাহাড়ে বসবাসরতরা নিরাপত্তা হুমকিতে

বাকী বিল্লাহ : শনিবার, ২৫ মে ২০২৪

বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যদেরকে ধরতে পুলিশ দুর্গম অঞ্চলে ক্যাম্প স্থাপন করে অভিযান চালাচ্ছে। অভিযানের সময় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো পুলিশের ক্যাম্পে অতর্কিত গুলি করছে। হামলা ঠেকাতে পুলিশও পাল্টা গুলি করছে। রাত আড়াইটা থেকে ভোর পর্যন্ত এসব তা-ব চলে। গুলি, পাল্টা গুলির কারণে পাহাড়ে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা হুমকিতে আছে। এই অবস্থায় নিরাপরাধ মানুষকে বাঁচাতে তাবু খাটিয়ে অস্ত্র তাক করে সশস্ত্র পাহারা দিচ্ছেন। সেই পাহারার ওপর পাহাড়ের গুহা থেকে অতর্কিত গুলি চালানোর ঘটনা ঘটছে।

https://sangbad.net.bd/images/2024/May/25May24/news/bandarban-1.jpg

পুলিশ ও স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত তথ্য মতে, স্থানীয় সন্ত্রাসীদের অপরাধ ঠেকাতে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও ২-আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন-২) টিমের প্রায় ৬শ সদস্য দুর্গম অঞ্চলে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে অবস্থান নিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। তারা এলাকার ছোটখাট অপরাধী থেকে শুরু করে কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের তা-ব ঠেকাতে কাজ করছেন।

ইতোমধ্যে নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ১শর বেশি অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে নানা আলামত জব্দ করা হয়েছে। এপিবিএন-২ অভিযান অব্যাহত আছে।

২-এপিবিএনের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) আলী আহমদ খান জানান, এপিবিএন-২ টিম বান্দরবানের মেঘলার দায়িত্বরত সাইবার ক্রাইম সেলের সদস্যরা ফেসবুক পেজসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জিডির সূত্র ধরে সম্প্রতি ২৩৫টি মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার করছে। এসব মোবাইল ফোন সেট বিভিন্ন সময় অপরাধীরা ছিনতাই, ছুরি ও থাবা পার্টির আদলে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। উদ্ধারকৃত মোবাইল ফোন সেটগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সূত্র মতে, বান্দরবানের সাইবার ক্রাইম সেল, সাইবার ক্রাইম টিম ইতোমধ্যে ৭টি অভিযান পরিচালনা করে ৯ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ৭টি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে জুয়া খেলায় ব্যবহৃত ১২টি জুয়া আইডি জব্দ করেছে।

বান্দরবানের মেঘলা এলাকায় সম্প্রতি এপিবিএন ৬০টি সফল অভিযানে ২ কেজি আফিম, ইয়াবার চালানসহ অন্যান্য আলামত নিয়ে মোট ৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ৬০টি মামলাও দায়ের করা হয়েছে।

এপিবিএনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পার্বত্য অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এবং কেএনএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতি, অপহরণসহ অপরাধমূলক কর্মকা-ের ফলে পার্বত্য অঞ্চলের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে।

শুধু তাই না তারা পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়েছে এ অবস্থায় পার্বত্য জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ২ এপিবিএনের টিম, মেঘলা, চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পর্যায়ক্রমে রুমা, বেথেলপাড়া, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যৌথ ক্যাম্প করে নিরাপত্তা দিচ্ছেন। ক্যাম্পগুলোতে মোট ৪শ সদস্যসহ ৬শ সদস্য ক্যাম্প স্থাপন করে ওইসব অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করছে।

https://sangbad.net.bd/images/2024/May/25May24/news/bandarban-2.jpg

কেএনএফের হামলার জবাবে পাল্টা হামলা গুলি বর্ষণ ঃ বান্দরবানের বোয়াংছড়ি থেকে ২৫ কিলোমিটার গহীন দুর্গম এলাকায় সদর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডস্থ পাইক্ষ্যাংপাড়া ও দেবতাপাড়ার মাঝামাঝি স্থানে কেএনএফের সদস্যরা যৌথবাহিনীর টহলের ওপর সম্প্রতি অতর্কিত গুলি বর্ষণ করে। তখন এপিবিএন ও সেনাবাহিনীর টিম পাল্টা গুলি বর্ষণ করেছে। গত ২ মে দুপুর সোয়া ২টার দিকে এই ঘটনা ঘটেছে। উক্ত ঘটনায় পুলিশের ৪ সদস্য মিলে ২৪ রউন্ড গুলি করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩ মে রাত আড়াইটার দিকে বান্দরবানের বোয়াংছড়ি উপজেলার পাইক্ষ্যংপাড়া এপিবিএন পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্পের তাবুতে পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ কেএনএফ কাঁটা পাহাড়ের ওপর থেকে অতর্কিত গুলি বর্ষণ করলে, পুলিশ সদস্যরা সরকারি সম্পদ রক্ষায় কেএনএফ সদস্যদেরকে লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি বর্ষণ করে। প্রথমে কেএনএফ পিছু হটলেও ভোর ৪টা ১০ মিনিটের সময় কেএনএফের সদস্যরা আবার আক্রমণ করে। তখন পুলিশ পাল্টা আক্রমণ করলে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। ওই দিন এপিবিএনের ৩ সদস্য মিলে ৩৬ রাউন্ড গুলি করছে। দুই দফায় আক্রমণে ও পাল্টা প্রতিরোধে ৬০ রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছে।

আমাদের বান্দরবান প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর টানা অভিযানে কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) মোট সাত সদস্য নিহত হয়েছে। অভিযান চলাকালে কেএনএফের ২৫ নারীসহ মোট ৮৭ জনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

সর্বশেষ গত রোববার রুমায় যৌথবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্বে কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) তিনজন সদস্য নিহত হয়েছে। ওই সময় তাদের আস্তানা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জেলার রুমা ও বোয়াংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী ডেবাছড়া এলাকায় পাহাড়ে সশস্ত্র সংগঠন কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রণ্ট (কেএনএফ) আস্তানায় যৌথ বাহিনী অভিযান চালায়। তখন কেএনএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যৌথবাহিনীর গোলাগুলি হয়। থেমে থেমে কয়েক দফা গোলাগুলির ঘটনায় কেএনএফের ৩ সশস্ত্র সদস্য নিহত হয়। তাদের মধ্যে দুইজন ঘটনাস্থলে এবং একজন আহত অবস্থায় মারা যান।

https://sangbad.net.bd/images/2024/May/25May24/news/bandarban-3.jpg

ঘটনাস্থল থেকে নিহতদের লাশ যৌথ বাহিনীর সদস্যরা রুমা সদরে নিয়ে যান। আর গোলাগুলির পর কেএনএফের অন্য সদস্যরা আস্তানা ছেড়ে পাহাড়ের দিতে পালিয়ে যান।

যৌথবাহিনীর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর একের পর এক অভিযানে কেএনএফ সদস্যরা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি রুমার কেএনএফের ৩ সদস্য নিহত হওয়ার পর সেখানে এখনো যৌথবাহিনীর তৎপরতা চলছে। এলাকাজুড়ে পরিস্থিতি থম থমে অবস্থা বিরাজ করছে।

উল্লেখ্য গত ৭ই মে রুমা উপজেলার দুর্গম দার্জিলিং পাড়ায় যৌথবাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে কেএনএফের ১ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসীর মৃত্যু হয়। এর আগে গত ২৮ এপ্রিল রুমা উপজেলার রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের জঙ্গলে যৌথবাহিনীর সঙ্গে কেএনএফের গোলাগুলিতে ২ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসীর মৃত্যু হয়েছে।

গত ২২ এপ্রিল রুমার দুর্গম মুনলাই পাড়ায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে কেএনএফের ১ জন সশস্ত্র সদস্য মারা যায়। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে কেএনএফের বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-বারুদ ও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

উল্লেখ্য রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি, হামলা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৪টি অস্ত্র লুট, ব্যাংকের অর্থ ও ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণের ঘটনায় ৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার মধ্যে থানচিতে ৪টি ও রুমায় ৫টি। এসব মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৮৭ জনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে ২৫ জন নারী। এখনো বান্দরবানে গভীর জঙ্গল ও পাহাড় এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা অব্যাহত আছে।

ছবি

বরিশালে র‌্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে হামলা, গুলিতে তরুণ নিহত

ছবি

মোটরসাইকেল না পেয়ে বাবার বাড়িতে আগুন, পুড়ল খামার ও রান্নাঘর

ছবি

ঘুমধুম সীমান্তে ২০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার

ছবি

রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি অভিযোগ, কুশপুত্তলিকায় দাহ

সিলেট থেকে কাজের সন্ধানে কক্সবাজার গিয়ে একই গ্রামের ৬জন নিখোঁজ

মুন্সীগঞ্জে খালে কাপড় ধুতে গিয়ে গৃহবধূর মৃত্যু

পশ্চিম শিকলবাহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা আসেন ইচ্ছামতো

ছবি

চুনারুঘাটে মডেল মসজিদে আরেক দফা ফাটল, কেনা হয়নি আসবাব

গাইবান্ধায় দ্রুত রাস্তা সংস্কারের দাবি

জয়পুরহাট পৌরসভার দোকানের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে মানববন্ধন

নাশকতা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

ছবি

কুড়িয়ে পাওয়া নবজাতক পেল মায়ের কোল

খোকসায় দুই পদে চাকরি করছেন এক ব্যক্তি

সিরাজগঞ্জে মামা-মামি হত্যায় ভাগ্নের মৃত্যুদণ্ড

ছবি

ভেড়ামারার গোড়েশাহ মাজারে মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে হামলার শিকার ম্যাজিস্ট্রেট

মুন্সীগঞ্জে বাল্কহেড থেকে নদীতে পড়ে শ্রমিক নিখোঁজ

নোয়াখালীতে ভারি বৃষ্টিপাতে বোরো জমি জলাবদ্ধ, বিপাকে কৃষক

ছবি

উত্তর জনপদের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নে অন্যতম অন্তরায় নদীভাঙন

জিয়া মঞ্চের সভাপতির পদ বাগিয়ে নিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক

দুই জেলায় স্বামী-স্ত্রীসহ ৩ ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

জগন্নাথপুরে পৃথক সংঘর্ষে আহত ৭

রাঙ্গুনিয়ায় ছাগলে খেত খাওয়া নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৪

বদরখালীতে রাতের আঁধারে পুকুরে বিষ ঢেলে ৩০ লাখ টাকার মাছ নিধন

মাছ ধরতে গিয়ে ভারতে ৭ জেলে আটক

ছবি

লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় চট্টগ্রাম ওয়াসায় পানি সরবরাহ কমেছে দৈনিক ৫ কোটি লিটার

সরকারি জায়গায় নির্মিত মার্কেট ভেঙে দিল প্রশাসন

দুই জেলায় সড়কে ও রেলে স্কুলছাত্রীসহ ২ জনের মৃত্যু

মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ছাড়া আইসক্রিম-দই তৈরি, জরিমানা

সদরপুরে সরকারি জায়গা দখলমুক্ত

পরিত্যক্ত অবস্থায় ওয়ান শুটার গান উদ্ধার

ছবি

নেতাই নদীতে নেই স্থায়ী বেড়িবাঁধ জমি-ঘরবাড়ি ভাঙার শঙ্কায় কৃষক

পৌরসভার টোল আদায় বন্ধের দাবিতে সিএনজিচালকদের বিক্ষোভ

‘দুর্নীতির’ মামলায় রাজউকের সাবেক কর্মচারীর ৭ বছরের সাজা

ফকিরাপুলে ‘গ্যাসের আগুনে’ একই পরিবারের তিনজন দগ্ধ

ছবি

বেতাগীর উন্নয়নকাজে প্রশংসায় পঞ্চমুখ পৌর প্রশাসক

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন ও গ্রাম আদালত বিলুপ্তির সুপারিশ

tab

সারাদেশ

বান্দরবানে গুলি, পাল্টা গুলিতে পাহাড়ে বসবাসরতরা নিরাপত্তা হুমকিতে

বাকী বিল্লাহ

শনিবার, ২৫ মে ২০২৪

বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যদেরকে ধরতে পুলিশ দুর্গম অঞ্চলে ক্যাম্প স্থাপন করে অভিযান চালাচ্ছে। অভিযানের সময় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো পুলিশের ক্যাম্পে অতর্কিত গুলি করছে। হামলা ঠেকাতে পুলিশও পাল্টা গুলি করছে। রাত আড়াইটা থেকে ভোর পর্যন্ত এসব তা-ব চলে। গুলি, পাল্টা গুলির কারণে পাহাড়ে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা হুমকিতে আছে। এই অবস্থায় নিরাপরাধ মানুষকে বাঁচাতে তাবু খাটিয়ে অস্ত্র তাক করে সশস্ত্র পাহারা দিচ্ছেন। সেই পাহারার ওপর পাহাড়ের গুহা থেকে অতর্কিত গুলি চালানোর ঘটনা ঘটছে।

https://sangbad.net.bd/images/2024/May/25May24/news/bandarban-1.jpg

পুলিশ ও স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত তথ্য মতে, স্থানীয় সন্ত্রাসীদের অপরাধ ঠেকাতে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও ২-আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন-২) টিমের প্রায় ৬শ সদস্য দুর্গম অঞ্চলে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে অবস্থান নিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। তারা এলাকার ছোটখাট অপরাধী থেকে শুরু করে কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের তা-ব ঠেকাতে কাজ করছেন।

ইতোমধ্যে নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ১শর বেশি অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে নানা আলামত জব্দ করা হয়েছে। এপিবিএন-২ অভিযান অব্যাহত আছে।

২-এপিবিএনের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) আলী আহমদ খান জানান, এপিবিএন-২ টিম বান্দরবানের মেঘলার দায়িত্বরত সাইবার ক্রাইম সেলের সদস্যরা ফেসবুক পেজসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জিডির সূত্র ধরে সম্প্রতি ২৩৫টি মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার করছে। এসব মোবাইল ফোন সেট বিভিন্ন সময় অপরাধীরা ছিনতাই, ছুরি ও থাবা পার্টির আদলে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। উদ্ধারকৃত মোবাইল ফোন সেটগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সূত্র মতে, বান্দরবানের সাইবার ক্রাইম সেল, সাইবার ক্রাইম টিম ইতোমধ্যে ৭টি অভিযান পরিচালনা করে ৯ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ৭টি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে জুয়া খেলায় ব্যবহৃত ১২টি জুয়া আইডি জব্দ করেছে।

বান্দরবানের মেঘলা এলাকায় সম্প্রতি এপিবিএন ৬০টি সফল অভিযানে ২ কেজি আফিম, ইয়াবার চালানসহ অন্যান্য আলামত নিয়ে মোট ৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ৬০টি মামলাও দায়ের করা হয়েছে।

এপিবিএনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পার্বত্য অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এবং কেএনএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতি, অপহরণসহ অপরাধমূলক কর্মকা-ের ফলে পার্বত্য অঞ্চলের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে।

শুধু তাই না তারা পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়েছে এ অবস্থায় পার্বত্য জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ২ এপিবিএনের টিম, মেঘলা, চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পর্যায়ক্রমে রুমা, বেথেলপাড়া, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যৌথ ক্যাম্প করে নিরাপত্তা দিচ্ছেন। ক্যাম্পগুলোতে মোট ৪শ সদস্যসহ ৬শ সদস্য ক্যাম্প স্থাপন করে ওইসব অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করছে।

https://sangbad.net.bd/images/2024/May/25May24/news/bandarban-2.jpg

কেএনএফের হামলার জবাবে পাল্টা হামলা গুলি বর্ষণ ঃ বান্দরবানের বোয়াংছড়ি থেকে ২৫ কিলোমিটার গহীন দুর্গম এলাকায় সদর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডস্থ পাইক্ষ্যাংপাড়া ও দেবতাপাড়ার মাঝামাঝি স্থানে কেএনএফের সদস্যরা যৌথবাহিনীর টহলের ওপর সম্প্রতি অতর্কিত গুলি বর্ষণ করে। তখন এপিবিএন ও সেনাবাহিনীর টিম পাল্টা গুলি বর্ষণ করেছে। গত ২ মে দুপুর সোয়া ২টার দিকে এই ঘটনা ঘটেছে। উক্ত ঘটনায় পুলিশের ৪ সদস্য মিলে ২৪ রউন্ড গুলি করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩ মে রাত আড়াইটার দিকে বান্দরবানের বোয়াংছড়ি উপজেলার পাইক্ষ্যংপাড়া এপিবিএন পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্পের তাবুতে পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ কেএনএফ কাঁটা পাহাড়ের ওপর থেকে অতর্কিত গুলি বর্ষণ করলে, পুলিশ সদস্যরা সরকারি সম্পদ রক্ষায় কেএনএফ সদস্যদেরকে লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি বর্ষণ করে। প্রথমে কেএনএফ পিছু হটলেও ভোর ৪টা ১০ মিনিটের সময় কেএনএফের সদস্যরা আবার আক্রমণ করে। তখন পুলিশ পাল্টা আক্রমণ করলে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। ওই দিন এপিবিএনের ৩ সদস্য মিলে ৩৬ রাউন্ড গুলি করছে। দুই দফায় আক্রমণে ও পাল্টা প্রতিরোধে ৬০ রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছে।

আমাদের বান্দরবান প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর টানা অভিযানে কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) মোট সাত সদস্য নিহত হয়েছে। অভিযান চলাকালে কেএনএফের ২৫ নারীসহ মোট ৮৭ জনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

সর্বশেষ গত রোববার রুমায় যৌথবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্বে কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) তিনজন সদস্য নিহত হয়েছে। ওই সময় তাদের আস্তানা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জেলার রুমা ও বোয়াংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী ডেবাছড়া এলাকায় পাহাড়ে সশস্ত্র সংগঠন কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রণ্ট (কেএনএফ) আস্তানায় যৌথ বাহিনী অভিযান চালায়। তখন কেএনএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যৌথবাহিনীর গোলাগুলি হয়। থেমে থেমে কয়েক দফা গোলাগুলির ঘটনায় কেএনএফের ৩ সশস্ত্র সদস্য নিহত হয়। তাদের মধ্যে দুইজন ঘটনাস্থলে এবং একজন আহত অবস্থায় মারা যান।

https://sangbad.net.bd/images/2024/May/25May24/news/bandarban-3.jpg

ঘটনাস্থল থেকে নিহতদের লাশ যৌথ বাহিনীর সদস্যরা রুমা সদরে নিয়ে যান। আর গোলাগুলির পর কেএনএফের অন্য সদস্যরা আস্তানা ছেড়ে পাহাড়ের দিতে পালিয়ে যান।

যৌথবাহিনীর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর একের পর এক অভিযানে কেএনএফ সদস্যরা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি রুমার কেএনএফের ৩ সদস্য নিহত হওয়ার পর সেখানে এখনো যৌথবাহিনীর তৎপরতা চলছে। এলাকাজুড়ে পরিস্থিতি থম থমে অবস্থা বিরাজ করছে।

উল্লেখ্য গত ৭ই মে রুমা উপজেলার দুর্গম দার্জিলিং পাড়ায় যৌথবাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে কেএনএফের ১ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসীর মৃত্যু হয়। এর আগে গত ২৮ এপ্রিল রুমা উপজেলার রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের জঙ্গলে যৌথবাহিনীর সঙ্গে কেএনএফের গোলাগুলিতে ২ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসীর মৃত্যু হয়েছে।

গত ২২ এপ্রিল রুমার দুর্গম মুনলাই পাড়ায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে কেএনএফের ১ জন সশস্ত্র সদস্য মারা যায়। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে কেএনএফের বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-বারুদ ও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

উল্লেখ্য রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি, হামলা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৪টি অস্ত্র লুট, ব্যাংকের অর্থ ও ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণের ঘটনায় ৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার মধ্যে থানচিতে ৪টি ও রুমায় ৫টি। এসব মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৮৭ জনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে ২৫ জন নারী। এখনো বান্দরবানে গভীর জঙ্গল ও পাহাড় এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা অব্যাহত আছে।

back to top