ফার্নেস তেলভিত্তিক আরও ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ আবারও বাড়ানো হচ্ছে। প্রায় এক যুগ আগে উৎপাদনে আসা এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ ইতোমধ্যে কয়েকবার বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, জরুরি সংকট মোকাবিলায় কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পাশপাশি ফার্নেস তেলভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু রাখার প্রয়োজন রয়েছে। তবে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ চুক্তিতে মেয়াদ নবায়ন করা হবে।
মেয়াদ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে- সামিট নারায়ণগঞ্জ পাওয়ার লিমিটেডের মদনগঞ্জ ১০২ মেগাওয়াট, ওরিয়ন পাওয়ার মেঘনাঘাট লিমিটেডের মেঘনাঘাট ১০০ মেগাওয়াট, ডাচ-বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের সিদ্ধিরগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের নোয়াপাড়া ৪০ মেগাওয়াট ও খুলনা ১১৫ মেগাওয়াট এবং একর্ন ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল সার্ভিসেস লিমিটেডের জুলদা চট্টগ্রাম ১০০ মেগাওয়াট।
৩-৫ বছর মেয়াদী চুক্তিতে ২০১১-১২ সালে উৎপাদনে আসা ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল) বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ ইতোমধ্যে একাধিকবার বাড়ানো হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গত বুধবার সংবাদকে বলেন, ‘জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহের স্বার্থে তেলভিত্তিক বিশেষ করে ফার্নেস তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু রেখে জরুরি সংকট সমাধান করা হয়।’
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ২৪০ মেগাওয়াট। জ্বালানির সীমাবদ্ধতার কারণে তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ক্ষমতায় চালানোর ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। গ্যাসের অপ্রতুলতার এ বাস্তবতা বিবেচনায় ফার্নেস অয়েলের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বাড়ানো হলে বিদ্যুৎকেন্দ্রসমূহ জরুরিভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বজায় রাখতে সহায়ক হবে।’
তিনি বলেন, এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ চুক্তিতে মেয়াদ নবায়ন করা হবে। অর্থাৎ, আগের চুক্তিতে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ না কিনলে তাদের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিতে হতো, এখন সেটি আর দিতে হবে না। পিডিবি প্রয়োজন হলে এদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনবে, না হলে কিনবে না।
বন্ধ ২৪টি, মেয়াদ বৃদ্ধি ১৪টির
মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ার কারণে বর্তমানে ফার্নেস তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইউনিটপ্রতি গড়ে ১৬ থেকে ১৮ টাকা খরচ হয়। ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর খরচ আরও বেশি। তবে সরকার অধিকাংশ ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে।
গত এক যুগে মেয়াদোত্তীর্ণ ফার্নেস তেলভিত্তিক ৭৫৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৯টি এবং গ্যাসভিত্তিক ৫৫৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
এই সময়ের মধ্যে ডিজেলভিত্তিক মোট ১৪০৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১২টি, ফার্নেস অয়েলভিত্তিক মোট ৩৮০ মেগাওয়াট ক্ষমতার চারটি এবং গ্যাসভিত্তিক মোট ৬১৩ দশমিক ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আটটিসহ সর্বমোট ২৩৯৮ দশমিক ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২৪টি আইপিপি রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে অবসর দেয়া (বন্ধ করা) হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো সারসংক্ষেপ
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রেগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে অনুমোদন পেয়েছে। এখন ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
সূত্র জানায়, গত মাসে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে এই ছয়টি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবের একটি সারসংক্ষেপ অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়। কারণ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর অধীনে। সারসংক্ষেপে বলা হয়, বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনার আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বর্তমানে ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩০ হাজার ২২৭ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।
বৃহৎ আকারের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পর দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ক্রমান্বয়ে অবসর দেয়া হচ্ছে।
সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি রক্ষা, রিলায়াবিলিটি বৃদ্ধি এবং ট্যারিফ তুলনামূলক কম হওয়ায় কিছু কিছু রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ ভিত্তিতে বাড়ানো হচ্ছে।
সারসংক্ষেপে আরও বলা হয়, ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট, মেঘনাঘাট ১০০ মেগাওয়াট ও মদনগঞ্জ ১০২ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ঢাকা অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে এরই মধ্যে অবসর দেয়া হয়েছে, বিধায় ঢাকা অঞ্চলের বিদ্যুতের চাহিদা মোকাবিলা ও সিস্টেম রিলায়াবিলিটি রক্ষার স্বার্থে এই তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখার প্রয়োজন আছে।
এছাড়া ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত না থাকায় গ্রিড সচল রাখা, তাৎক্ষণিক বিদ্যুতের চাহিদা মোকাবিলা ও লোডশেডিং এড়ানোর লক্ষ্যে নোয়াপাড়া ৪০ মেগাওয়াট, খুলনা ১১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখা প্রয়োজন।
অন্যদিকে জুলদা ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে চট্টগ্রামের হালিশহর ও শিকলবাহায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। সে বিবেচনায় গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা মোকাবিলায় এ ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখা প্রয়োজন।
বর্তমান পরিস্থিতি
দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না জ্বালানি সংকটে। সরকারি হিসাবে স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ হলেও গড়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যেই বিদ্যুৎ উৎপাদন সীমাবদ্ধ রয়েছে। সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে গত ৩০ এপ্রিল রাত ৯টায়। চাহিদা আরও বেশি থাকায় ওইদিনও দেশের বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং ছিল।
বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকরা বিদ্যুৎ বিক্রি বাবাদ রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা পাওনা আছেন। ডলার সংকট এবং আর্থিক সংকটে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের বিল যথা সময়ে পরিশোধ করতে পারছে না পিডিবি। নগদ টাকায় বিল পরিশোধ করতে না পেরে ঋণের পরিবর্ততে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক মালিককে বন্ড ইস্যু করেছে। যদিও বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকরা বন্ড ইস্যুতের খুশি নন। তারা বলছেন, বন্ড ইস্যুর ফলে নগদ টাকার সংকট তৈরি হয়েছে। চাইলেই জ্বালানি তেল আমদানি করতে তারা ব্যাংক থেকে এলসি খুলতে পারছে না।
এবার গ্রীষ্মে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা যখন সর্বোচ্চ ছিল তখনও ফার্নেস তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পুরোদমে উৎপাদনে রাখা যায়নি। বেসরকারি মালিকরা তখন জ্বালানি সংকটের কথা বলেছেন।
পরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে ফার্নেস তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে পুরোদমে চালানোর জন্য ‘আলটিমেটাম’ দিলে তারা পুরোদমে উৎপাদন চালু করে।
শনিবার, ১৫ জুন ২০২৪
ফার্নেস তেলভিত্তিক আরও ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ আবারও বাড়ানো হচ্ছে। প্রায় এক যুগ আগে উৎপাদনে আসা এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ ইতোমধ্যে কয়েকবার বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, জরুরি সংকট মোকাবিলায় কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পাশপাশি ফার্নেস তেলভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু রাখার প্রয়োজন রয়েছে। তবে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ চুক্তিতে মেয়াদ নবায়ন করা হবে।
মেয়াদ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে- সামিট নারায়ণগঞ্জ পাওয়ার লিমিটেডের মদনগঞ্জ ১০২ মেগাওয়াট, ওরিয়ন পাওয়ার মেঘনাঘাট লিমিটেডের মেঘনাঘাট ১০০ মেগাওয়াট, ডাচ-বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের সিদ্ধিরগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের নোয়াপাড়া ৪০ মেগাওয়াট ও খুলনা ১১৫ মেগাওয়াট এবং একর্ন ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল সার্ভিসেস লিমিটেডের জুলদা চট্টগ্রাম ১০০ মেগাওয়াট।
৩-৫ বছর মেয়াদী চুক্তিতে ২০১১-১২ সালে উৎপাদনে আসা ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল) বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ ইতোমধ্যে একাধিকবার বাড়ানো হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গত বুধবার সংবাদকে বলেন, ‘জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহের স্বার্থে তেলভিত্তিক বিশেষ করে ফার্নেস তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু রেখে জরুরি সংকট সমাধান করা হয়।’
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ২৪০ মেগাওয়াট। জ্বালানির সীমাবদ্ধতার কারণে তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ক্ষমতায় চালানোর ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। গ্যাসের অপ্রতুলতার এ বাস্তবতা বিবেচনায় ফার্নেস অয়েলের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বাড়ানো হলে বিদ্যুৎকেন্দ্রসমূহ জরুরিভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বজায় রাখতে সহায়ক হবে।’
তিনি বলেন, এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ চুক্তিতে মেয়াদ নবায়ন করা হবে। অর্থাৎ, আগের চুক্তিতে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ না কিনলে তাদের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিতে হতো, এখন সেটি আর দিতে হবে না। পিডিবি প্রয়োজন হলে এদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনবে, না হলে কিনবে না।
বন্ধ ২৪টি, মেয়াদ বৃদ্ধি ১৪টির
মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ার কারণে বর্তমানে ফার্নেস তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইউনিটপ্রতি গড়ে ১৬ থেকে ১৮ টাকা খরচ হয়। ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর খরচ আরও বেশি। তবে সরকার অধিকাংশ ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে।
গত এক যুগে মেয়াদোত্তীর্ণ ফার্নেস তেলভিত্তিক ৭৫৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৯টি এবং গ্যাসভিত্তিক ৫৫৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
এই সময়ের মধ্যে ডিজেলভিত্তিক মোট ১৪০৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১২টি, ফার্নেস অয়েলভিত্তিক মোট ৩৮০ মেগাওয়াট ক্ষমতার চারটি এবং গ্যাসভিত্তিক মোট ৬১৩ দশমিক ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আটটিসহ সর্বমোট ২৩৯৮ দশমিক ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২৪টি আইপিপি রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে অবসর দেয়া (বন্ধ করা) হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো সারসংক্ষেপ
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রেগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে অনুমোদন পেয়েছে। এখন ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
সূত্র জানায়, গত মাসে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে এই ছয়টি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবের একটি সারসংক্ষেপ অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়। কারণ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর অধীনে। সারসংক্ষেপে বলা হয়, বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনার আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বর্তমানে ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩০ হাজার ২২৭ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।
বৃহৎ আকারের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পর দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ক্রমান্বয়ে অবসর দেয়া হচ্ছে।
সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি রক্ষা, রিলায়াবিলিটি বৃদ্ধি এবং ট্যারিফ তুলনামূলক কম হওয়ায় কিছু কিছু রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ ভিত্তিতে বাড়ানো হচ্ছে।
সারসংক্ষেপে আরও বলা হয়, ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট, মেঘনাঘাট ১০০ মেগাওয়াট ও মদনগঞ্জ ১০২ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ঢাকা অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে এরই মধ্যে অবসর দেয়া হয়েছে, বিধায় ঢাকা অঞ্চলের বিদ্যুতের চাহিদা মোকাবিলা ও সিস্টেম রিলায়াবিলিটি রক্ষার স্বার্থে এই তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখার প্রয়োজন আছে।
এছাড়া ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত না থাকায় গ্রিড সচল রাখা, তাৎক্ষণিক বিদ্যুতের চাহিদা মোকাবিলা ও লোডশেডিং এড়ানোর লক্ষ্যে নোয়াপাড়া ৪০ মেগাওয়াট, খুলনা ১১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখা প্রয়োজন।
অন্যদিকে জুলদা ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে চট্টগ্রামের হালিশহর ও শিকলবাহায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। সে বিবেচনায় গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা মোকাবিলায় এ ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখা প্রয়োজন।
বর্তমান পরিস্থিতি
দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না জ্বালানি সংকটে। সরকারি হিসাবে স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ হলেও গড়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যেই বিদ্যুৎ উৎপাদন সীমাবদ্ধ রয়েছে। সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে গত ৩০ এপ্রিল রাত ৯টায়। চাহিদা আরও বেশি থাকায় ওইদিনও দেশের বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং ছিল।
বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকরা বিদ্যুৎ বিক্রি বাবাদ রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা পাওনা আছেন। ডলার সংকট এবং আর্থিক সংকটে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের বিল যথা সময়ে পরিশোধ করতে পারছে না পিডিবি। নগদ টাকায় বিল পরিশোধ করতে না পেরে ঋণের পরিবর্ততে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক মালিককে বন্ড ইস্যু করেছে। যদিও বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকরা বন্ড ইস্যুতের খুশি নন। তারা বলছেন, বন্ড ইস্যুর ফলে নগদ টাকার সংকট তৈরি হয়েছে। চাইলেই জ্বালানি তেল আমদানি করতে তারা ব্যাংক থেকে এলসি খুলতে পারছে না।
এবার গ্রীষ্মে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা যখন সর্বোচ্চ ছিল তখনও ফার্নেস তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পুরোদমে উৎপাদনে রাখা যায়নি। বেসরকারি মালিকরা তখন জ্বালানি সংকটের কথা বলেছেন।
পরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে ফার্নেস তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে পুরোদমে চালানোর জন্য ‘আলটিমেটাম’ দিলে তারা পুরোদমে উৎপাদন চালু করে।