বরেন্দ্র অঞ্চলে দির্ঘদিন ধরেই বিশেষ করে পদ্মা নিকটবর্তী চরঅঞ্চলে যেখোনে বিদ্যুতের কোন ব্যাবস্থা নেই , সেখানে সৌর বিদ্যুতের ব্যাবহার দিনের পর দিন বিদ্ধি পাচ্ছে । ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা চরআষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন। গোদাগাড়ী উপজেলার একটি ইউনিয়ন। গোদাগাড়ীর বিদিরপুর থেকে আধা ঘণ্টায় উত্তাল পদ্মা নদী পার হয়ে সেখানে পৌঁছাতে হয়। সেইগ্রামে খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসার সংকট থাকলেও সৌর বিদ্যৎ থেকে উৎপন্ন আলোয় আলোকিত হচ্ছে তাদের গ্রাম। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতের ছোঁয়ায় পরিবর্তন এসেছে তাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনেও।
কিন্তু রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পদ্মা নদীর ওপারে চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে থাকা একমাত্র সৌরবিদ্যুতের প্লান্টটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া এই চরের ১ হাজার ৩০০ পরিবারে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেনে।
প্রায় ৯ বছর আগে সরকারের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিলিমিটেডের (ইডকল)কারিগরি সহযোগিতায় চর আষাড়িয়াদহে সৌর বিদ্যুতের প্লান্ট স্থাপন করেছিল বেসরকারী সংস্থা আভা। প্লান্টটির নাম দেওয়া হয়েছিল আভা মিনি-গ্রীডপ্রজেক্ট। কোন ঘোষণা ছাড়াই বৃহস্পতিবার এই গ্রীডটি বন্ধকরে দেওয়া হয়েছে। এতে বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
চর কানাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রমজান আলী বলেন, ‘প্রথমদিকে প্লান্ট থেকে ২৪ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। বছর দুয়েক থেকে শুধু দুপুরে জোহরের নামাজের সময় ১ ঘণ্টা, আসরের নামাজের সময় ৩০ মিনিট, মাগরিবের নামাজের সময় থেকে রাত ১০টা, রাত ১২টা থেকে ২টা পর্যš Íবিদ্যুৎ দেওয়া হতো। এতে কোন রকমে ফ্রিজটা চলত। কাল থেকে একেবারেই বন্ধ। ফ্রিজের ভেতরপ্রায় ৬০ কেজি মাংস ছিল। এগুলো বের করে রান্না করাহচ্ছে। খাওয়া যাবে কিনা জানিনা।’
আভার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুর্গম চরাঞ্চলের ঘরেঘরে সৌরবিদ্যুৎদিতে ২০১৫ সালের ৬ নভেম্বর এ প্লান্ট স্থাপন করা হয়। এরপর চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের আষাড়িয়াদহ, পানিপার, ভুবনপাড়া, কানপাড়া, হনুমন্তনগর ও নওশেরা গ্রামের প্রায় ১ হাজার ৩০০ পরিবারকে সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। প্রি-পেইড মিটারে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য গ্রাহককে দিতে হতো ৩০ টাকা। এরপরও লোকসান হচ্ছিল বলে আভার দাবি।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারের টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ¦ালানিউন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (¯্রডে এই প্লান্ট স্থাপনে প্রণোদনাও দেয়। আর কারিগারি সহায়তা করে সরকারের আরেক সংস্থা ইডকল। এই সংস্থাটি একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সমীক্ষাও করেছিল। প্রতিষ্ঠানটি বলেছিল,প্লান্টটি চালালে প্রতিমাসে ১৫ লাখ টাকাকরে লাভ করতে পারবে আভা।কিন্তু এখনও পর্যন্ত লাভের মুখ দেখা যায়নি। ২৪ ঘণ্টার ভেতর ছয়-সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ও প্রতি মাসে প্রায় লাখ টাকা লোকসান হচ্ছিল। সবমিলিয়ে লোকসান হয়েছে কয়েক কোটি টাকা।
জানা গেছে, আভা মিনি-গ্রীড প্রজেক্টের প্লান্ট ব্যবস্থাপক হিসেবে শুরু থেকেই কর্মরত ছিলেন মিল্লাত হোসেন। এছাড়া আরও দুজন কর্মচারী সেখানে থাকতেন। গত বৃহস্পতিবার মিল্লাত হোসেন ৪৮ হাজার টাকা বেতনের এই চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে প্লান্ট বন্ধ করে চলে আসেন। যোগাযোগ করা হলে মিল্লাত হোসেন বলেন, ‘চাহিদা ১২০ কিলো ওয়াটের। আর আমরা সরবরাহ করতে পারছিলাম মাত্র ৬০ কিলোওয়াট। সে কারণে প্লান্ট বন্ধ করে চলে এসেছি।’
জানতে চাইলে গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল বলেন, ‘কালকেই আমি শুনেছি যে আভা তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে। এতে চরের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। দ্রুত যেন এ প্লান্ট চালু করা হয় তার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। সাব-মেরিনক্যাবলের মাধ্যমে যদি বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে সেটাও যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে করা হয়। তানাহলে চরেরজীবন-জীবিকা আবার থমকে যাবে।’
নেসকোর নির্বাহী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মোহাম্মদ শহীদ হোসেন বলেন সাংবাদিকদের বলেন , ‘সৌরবিদ্যুৎ স্থায়ী সমাধান নয়। এটি যুগযুগ চলবেওনা। দুর্গম অঞ্চলে বিদ্যুৎ দিতে সরকারের অগ্রাধিকার ছিল বলে নেসকো বিনা মূল্যেই আভাকে নানা সহযোগিতা করেছে। কিন্তু নদী পার করে সাব-মেরিনক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়া সহজ কাজ নয়। আভা সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিলে আমাকে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তারপর দেখি কী করা যায়!’
শনিবার, ২২ জুন ২০২৪
বরেন্দ্র অঞ্চলে দির্ঘদিন ধরেই বিশেষ করে পদ্মা নিকটবর্তী চরঅঞ্চলে যেখোনে বিদ্যুতের কোন ব্যাবস্থা নেই , সেখানে সৌর বিদ্যুতের ব্যাবহার দিনের পর দিন বিদ্ধি পাচ্ছে । ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা চরআষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন। গোদাগাড়ী উপজেলার একটি ইউনিয়ন। গোদাগাড়ীর বিদিরপুর থেকে আধা ঘণ্টায় উত্তাল পদ্মা নদী পার হয়ে সেখানে পৌঁছাতে হয়। সেইগ্রামে খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসার সংকট থাকলেও সৌর বিদ্যৎ থেকে উৎপন্ন আলোয় আলোকিত হচ্ছে তাদের গ্রাম। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতের ছোঁয়ায় পরিবর্তন এসেছে তাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনেও।
কিন্তু রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পদ্মা নদীর ওপারে চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে থাকা একমাত্র সৌরবিদ্যুতের প্লান্টটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া এই চরের ১ হাজার ৩০০ পরিবারে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেনে।
প্রায় ৯ বছর আগে সরকারের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিলিমিটেডের (ইডকল)কারিগরি সহযোগিতায় চর আষাড়িয়াদহে সৌর বিদ্যুতের প্লান্ট স্থাপন করেছিল বেসরকারী সংস্থা আভা। প্লান্টটির নাম দেওয়া হয়েছিল আভা মিনি-গ্রীডপ্রজেক্ট। কোন ঘোষণা ছাড়াই বৃহস্পতিবার এই গ্রীডটি বন্ধকরে দেওয়া হয়েছে। এতে বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
চর কানাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রমজান আলী বলেন, ‘প্রথমদিকে প্লান্ট থেকে ২৪ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। বছর দুয়েক থেকে শুধু দুপুরে জোহরের নামাজের সময় ১ ঘণ্টা, আসরের নামাজের সময় ৩০ মিনিট, মাগরিবের নামাজের সময় থেকে রাত ১০টা, রাত ১২টা থেকে ২টা পর্যš Íবিদ্যুৎ দেওয়া হতো। এতে কোন রকমে ফ্রিজটা চলত। কাল থেকে একেবারেই বন্ধ। ফ্রিজের ভেতরপ্রায় ৬০ কেজি মাংস ছিল। এগুলো বের করে রান্না করাহচ্ছে। খাওয়া যাবে কিনা জানিনা।’
আভার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুর্গম চরাঞ্চলের ঘরেঘরে সৌরবিদ্যুৎদিতে ২০১৫ সালের ৬ নভেম্বর এ প্লান্ট স্থাপন করা হয়। এরপর চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের আষাড়িয়াদহ, পানিপার, ভুবনপাড়া, কানপাড়া, হনুমন্তনগর ও নওশেরা গ্রামের প্রায় ১ হাজার ৩০০ পরিবারকে সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। প্রি-পেইড মিটারে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য গ্রাহককে দিতে হতো ৩০ টাকা। এরপরও লোকসান হচ্ছিল বলে আভার দাবি।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারের টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ¦ালানিউন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (¯্রডে এই প্লান্ট স্থাপনে প্রণোদনাও দেয়। আর কারিগারি সহায়তা করে সরকারের আরেক সংস্থা ইডকল। এই সংস্থাটি একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সমীক্ষাও করেছিল। প্রতিষ্ঠানটি বলেছিল,প্লান্টটি চালালে প্রতিমাসে ১৫ লাখ টাকাকরে লাভ করতে পারবে আভা।কিন্তু এখনও পর্যন্ত লাভের মুখ দেখা যায়নি। ২৪ ঘণ্টার ভেতর ছয়-সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ও প্রতি মাসে প্রায় লাখ টাকা লোকসান হচ্ছিল। সবমিলিয়ে লোকসান হয়েছে কয়েক কোটি টাকা।
জানা গেছে, আভা মিনি-গ্রীড প্রজেক্টের প্লান্ট ব্যবস্থাপক হিসেবে শুরু থেকেই কর্মরত ছিলেন মিল্লাত হোসেন। এছাড়া আরও দুজন কর্মচারী সেখানে থাকতেন। গত বৃহস্পতিবার মিল্লাত হোসেন ৪৮ হাজার টাকা বেতনের এই চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে প্লান্ট বন্ধ করে চলে আসেন। যোগাযোগ করা হলে মিল্লাত হোসেন বলেন, ‘চাহিদা ১২০ কিলো ওয়াটের। আর আমরা সরবরাহ করতে পারছিলাম মাত্র ৬০ কিলোওয়াট। সে কারণে প্লান্ট বন্ধ করে চলে এসেছি।’
জানতে চাইলে গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল বলেন, ‘কালকেই আমি শুনেছি যে আভা তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে। এতে চরের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। দ্রুত যেন এ প্লান্ট চালু করা হয় তার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। সাব-মেরিনক্যাবলের মাধ্যমে যদি বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে সেটাও যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে করা হয়। তানাহলে চরেরজীবন-জীবিকা আবার থমকে যাবে।’
নেসকোর নির্বাহী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মোহাম্মদ শহীদ হোসেন বলেন সাংবাদিকদের বলেন , ‘সৌরবিদ্যুৎ স্থায়ী সমাধান নয়। এটি যুগযুগ চলবেওনা। দুর্গম অঞ্চলে বিদ্যুৎ দিতে সরকারের অগ্রাধিকার ছিল বলে নেসকো বিনা মূল্যেই আভাকে নানা সহযোগিতা করেছে। কিন্তু নদী পার করে সাব-মেরিনক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়া সহজ কাজ নয়। আভা সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিলে আমাকে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তারপর দেখি কী করা যায়!’