alt

সারাদেশ

সিএইচটি রেগুলেশন ১৯০০ বাতিলের ‘ষড়যন্ত্র’ বন্ধের দাবিতে রাঙামাটিতে মানববন্ধন

প্রতিনিধি, পার্বত্যাঞ্চল : বুধবার, ১০ জুলাই ২০২৪

আদালতের মাধ্যমে সিএইচটি রেগুলেশন ১৯০০ বাতিলের ‘ষড়যন্ত্র’ বন্ধের দাবিতে গতকাল রাঙামাটিতে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া একই দাবিতে ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের উদ্যোগে রাঙামাটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।

জেলা প্রশাসন কার্যালয় চত্বরের সামনে চাকমা সার্কেলের প্রথাগত প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন চলাকালে সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ানের সভাপতিত্বে অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্যে দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান, আদিবাসী ফোরামের পার্বত্যাঞ্চল শাখার সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, সিএইচটি হেডম্যান অ্যাসোসিয়েশনের রাঙামাটি সভাপতি চিংকিউ রোয়াজা, কালাপাকুজ্জ্য হেডম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্যে রাখেন সিএইচটি হেডম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শান্তিবিজয় চাকমা। মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণীর কয়েক হাজার নারী-পুরুষ অংশ নেন। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যেম প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন নেতারা।

সমাবেশে নেতারা অভিযোগ করে বলেন, আগামী ১১ জুলাই উচ্চতর আদালতের মাধ্যমে রাষ্ট্রের একটি অংশ সিএইচটি রেগুলেশন ১৯০০ বাতিলের ষড়যন্ত্র করছে। এটি বাতিল করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রীতিপ্রার প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের পাশাপাশি পাহাড়ে প্রচ- অশান্তি সৃষ্টি হবে। পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে যে শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তা ব্যাহত হবে, অরাজকতা দেখা দেবে। সিএইচটি রেগুলেশন ১৯০০ শাসনবিধি বাতিল হলে পাহাড়ি জনগণের অনুভুতিতে মারাত্মক আঘাত হানবে।

প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে দেয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০, যা হিল ট্র্যাক্টস ম্যানুয়াল নামেও পরিচিত, যেটি কিনা ১৯ জানুয়ারি ১৯০০ সালে কার্যকর হয়। তারপর থেকে এটি পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রশাসন সংক্রান্ত প্রধান আইনি দলিল হিসেবে কাজ করে চলেছে। পাশাপাশি এই প্রবিধানে বিভিন্ন বিধানসমূহ রয়েছে যা এই অঞ্চলের সুশাসন, ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ এবং এই অঞ্চলের জনগণের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সুরক্ষা এবং আন্তঃপ্রজন্মগত চর্চার জন্য অপরিহার্য। ২০০৩ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল এ. এফ. হাসান আরিফের আবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্টের একটি বিভাগীয় বেঞ্চ ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশনকে একটি ‘মৃত আইন’ হিসেবে ঘোষণা করেন। পরবর্তীকালে এই প্রেক্ষিতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ শুনানি শেষে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০’- কে একটি সম্পূর্ণ ‘জীবিত ও বৈধ’ আইন হিসেবে বলবৎ রাখেন। কিন্তু ২০১৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ি জেলার বসতি স্থাপনকারী, যথাক্রমে আবদুল আজিজ আখন্দ এবং আবদুর মালেক নামের দুই ব্যক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন, ১৯০০ বিষয়ক সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে দুটি রিভিউ পিটিশন দাখিল করেন। তাদের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী ছিলেন তৎকালীন বিএনপি সরকারের পূর্বেকার নিয়োগপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব এ. এফ. হাসান আরিফ। উল্লেখ্য যে, রিভিশনকারী ব্যক্তিদ্বয় এ রেগুলেশন সংক্রান্ত উপরোক্ত মামলা সমুহে কোনো পক্ষভুক্ত ছিলেন না। সাধারণরীতি অনুসারে সরকারের অনুকূলে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া উক্ত রায়ের পক্ষে বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেলের অবস্থান গ্রহণ করার কথা। কিন্তু তার পরিবর্তে তিনি ‘রাজা’ আদিবাসী শব্দসহ আরও কিছু শব্দ ও বাক্যাংশ বাদ দেওয়াসহ প্রথাগত আইনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা সম্বলিত সর্বমোট দশটিরও অধিক অনুচ্ছেদ বাদ দেয়ার জন্য আদালতের কাছে মৌখিক ও লিখিতভাবে প্রার্থনা করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, ২০২৩ সালের ২৬ জুলাই পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। সেই স্মারকলিপিতে সুপ্রিম কোর্ট এর আপিল বিভাগে পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০ সংক্রান্ত চলমান দুটি রিভিউ মামলায়, রেগুলেশন ও এতে স্বীকৃত আদিবাসীদের অধিকার সম্বলিত প্রচলিত আইন, প্রথা ও রীতির জোরালো ও চলমান কার্যকারিতার পক্ষে অবস্থান গ্রহণের জন্য বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেলকে যথাযথ নির্দেশের প্রার্থনা জানান। গত ৯ মে মামলাগুলি শুনানির তালিকার শীর্ষে আসলে বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে আবারও তার পূর্বের আবেদনের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট শব্দসমূহ, বাক্যাংশ ও প্রথাগত আইনের অনুচ্ছেদসমূহ বাতিল করার জন্য প্রার্থনা করেন। স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ ও পরামর্শ প্রদান করে সংশ্লিষ্ট মামলাসমূহে পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০ এর পক্ষ অবলম্বন করেন, যার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনমানুষের অধিকার রক্ষিত হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম ১৯৯৭ এর শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়া যায় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সমগ্র দেশের বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করা হয়।

এদিকে, একই দাবিতে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও সহযোগী সংগঠনসমূহের উদ্যোগে রাঙামাটির সদরের কতুকছড়ি, বাঘাইছড়ি, কাউখালী ও নানিয়ারচর উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। এসব সমাবেশে ইউপিডিএফ নেতারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণ যুগ যুগ ধরে নিজেদের প্রথাগত আইন মেনে এ অঞ্চলে বসবাস করে আসছে। এ শাসনবিধি বাতিলে মাধ্যমে এ অঞ্চলের রাজা, হেডম্যান ও কার্বারীর পদবি বিলুপ্তিসহ পাহাড়িদের প্রথাগত আইন, রীতি-নীতি ও ঐতিহ্য-সংস্কৃতি চিরতরে মুছে দিতে চাইছে। সরকার যদি এ শাসনবিধি বাতিলের মাধ্যমে এ প্রথাগত রীতি-নীতি পদ্ধতি ও অধিকার হরণ করতে চায় তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ তা কখনই মেনে নেবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। কতুকছড়িতে বড় মহাপুরুম উচ্চ বিদ্যালয় মূল ফটকে সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের রাঙামাটি জেলা সভাপতি রিনিশা চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ধর্মশিং চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা সভাপতি রিমি চাকমা ও পিসিপির জেলা সভাপতি তনুময় চাকমা। সমাবেশ একটি একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

ছবি

বাজিতপুরে বাবাকে হত্যা: টাকা না পাওয়ার জেরে ছেলে ও বন্ধুদের গ্রেপ্তার

ছবি

বি‌জি‌বির অ‌ভিযা‌নে আড়াই কোটি টাকার জব্দ মোবাইল ডিসপ্লে জব্দ

ছবি

পার্বত্য উপদেষ্টার পদত্যাগ সহ ৩ দফা দাবীতে বাইশারীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

ছবি

শিশুদের জীবন মান উন্নয়নে হিউম্যান রিলিফ ফাউন্ডেশনের Walk for Hope

ছবি

ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাব কেটে গেলেও কৃষকের মনে বিষাদ

যৌথ বাহিনীর অভিযান : গাজীপুরে রাম দা-চাপাতিসহ ৮ জন গ্রেপ্তার

ছবি

আরাকান আর্মির থেকে ২ কিশোরকে বিজিবির উদ্ধার

ছবি

সৈকতে গোসলে নেমে কিশোরের মৃত্যু

ছবি

নরসিংদীতে ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজির ৬ যাত্রী নিহত

ছবি

চট্টগ্রামে সনাতন জাগরণ মঞ্চের সমাবেশ, ৮ দাবিতে লংমার্চের ঘোষণা

ছবি

টেকসই বেড়িবাঁধের অভাবে অনিশ্চয়তায় দিন পার করছে মহেশখালীর উপকূলের মানুষ

ছবি

সুবিধাবাদীদের চিহ্নিত করে আলাদা করার আহ্বান সারজিস আলমের

ছবি

সাবেক হুইপ কমলের বডিগার্ড খোকন যৌথ অভিযানে গ্রেফতার

ছবি

রামুর রাংকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব অনুষ্টিত

ছবি

ভারতে পালানোর সময় এস আলম গ্রুপের কর্মকর্তা আটক

ছবি

ইসরায়েলী গণহত্যার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জে আলেমদের বিক্ষোভ

ছবি

আত্মগোপনে থাকা ঢাবি ছাত্রলীগ নেতা জাহিদুল গ্রেপ্তার

ছবি

শারদায় এবার ৫৯ জন এসআইকে শোকজ

ছবি

কক্সবাজারে মা-মেয়েকে গলা কেটে হত্যা

ছবি

গাজীপুরে রাস্তাগুলোর বেহাল দশা, ‘অতিরিক্ত ভারী যানবাহনই দায়ী’

ছবি

ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে উত্তাল সমুদ্র

ছবি

ইউক্রেনে সেনা মোতায়েন প্রশ্নে উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিককে তলব

ছবি

ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে নৌ মহড়ার জেটি দ্বিখণ্ডিত

ছবি

রাজধানীতে গাঁজাসহ মাদককারবারি গ্রেপ্তার

ছবি

শেরপুরে ছাত্র হত্যা মামলায় সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

‘দানা’ : প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা, ৪ বন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত

ময়মনসিংহে ধর্ষণের শিকার শিশুটি

ছবি

কৃষকের অজান্তেই ঈশ্বরদী ছেড়ে গেছে কৃষি স্পেশাল ট্রেন!

ছবি

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে রিয়্যাক্টর এসেম্বলির কাজ সম্পন্ন

ছবি

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই পদ্মায় ইলিশ নিধন, চরাঞ্চলের পাড়জুড়ে হাট বসিয়ে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত বিক্রির ধুম

হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন আরঙ্গজেব নান্নু

ছবি

৭ম আন্তর্জাতিক Flight Safety Seminar 2024 এর সমাপনী অনুষ্ঠান

ছবি

স্বস্তি নিয়েই দিন পার বাংলাদেশের

ছবি

চুয়াডাঙ্গায় তেলবাহী ট্রেনের ট্যাঙ্কার লাইনচ্যুত, যোগাযোগ বন্ধ

ছবি

গাজীপুরে দুই যুগে কমেছে দুই তৃতীয়াংশ বন ও জলাশয়

ছবি

‘নাশতা নিয়ে হইচই করায়’ ২৫২ জন প্রশিক্ষণরত এসআইকে অব্যাহতি

tab

সারাদেশ

সিএইচটি রেগুলেশন ১৯০০ বাতিলের ‘ষড়যন্ত্র’ বন্ধের দাবিতে রাঙামাটিতে মানববন্ধন

প্রতিনিধি, পার্বত্যাঞ্চল

বুধবার, ১০ জুলাই ২০২৪

আদালতের মাধ্যমে সিএইচটি রেগুলেশন ১৯০০ বাতিলের ‘ষড়যন্ত্র’ বন্ধের দাবিতে গতকাল রাঙামাটিতে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া একই দাবিতে ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের উদ্যোগে রাঙামাটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।

জেলা প্রশাসন কার্যালয় চত্বরের সামনে চাকমা সার্কেলের প্রথাগত প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন চলাকালে সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ানের সভাপতিত্বে অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্যে দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান, আদিবাসী ফোরামের পার্বত্যাঞ্চল শাখার সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, সিএইচটি হেডম্যান অ্যাসোসিয়েশনের রাঙামাটি সভাপতি চিংকিউ রোয়াজা, কালাপাকুজ্জ্য হেডম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্যে রাখেন সিএইচটি হেডম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শান্তিবিজয় চাকমা। মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণীর কয়েক হাজার নারী-পুরুষ অংশ নেন। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যেম প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন নেতারা।

সমাবেশে নেতারা অভিযোগ করে বলেন, আগামী ১১ জুলাই উচ্চতর আদালতের মাধ্যমে রাষ্ট্রের একটি অংশ সিএইচটি রেগুলেশন ১৯০০ বাতিলের ষড়যন্ত্র করছে। এটি বাতিল করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রীতিপ্রার প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের পাশাপাশি পাহাড়ে প্রচ- অশান্তি সৃষ্টি হবে। পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে যে শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তা ব্যাহত হবে, অরাজকতা দেখা দেবে। সিএইচটি রেগুলেশন ১৯০০ শাসনবিধি বাতিল হলে পাহাড়ি জনগণের অনুভুতিতে মারাত্মক আঘাত হানবে।

প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে দেয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০, যা হিল ট্র্যাক্টস ম্যানুয়াল নামেও পরিচিত, যেটি কিনা ১৯ জানুয়ারি ১৯০০ সালে কার্যকর হয়। তারপর থেকে এটি পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রশাসন সংক্রান্ত প্রধান আইনি দলিল হিসেবে কাজ করে চলেছে। পাশাপাশি এই প্রবিধানে বিভিন্ন বিধানসমূহ রয়েছে যা এই অঞ্চলের সুশাসন, ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ এবং এই অঞ্চলের জনগণের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সুরক্ষা এবং আন্তঃপ্রজন্মগত চর্চার জন্য অপরিহার্য। ২০০৩ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল এ. এফ. হাসান আরিফের আবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্টের একটি বিভাগীয় বেঞ্চ ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশনকে একটি ‘মৃত আইন’ হিসেবে ঘোষণা করেন। পরবর্তীকালে এই প্রেক্ষিতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ শুনানি শেষে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০’- কে একটি সম্পূর্ণ ‘জীবিত ও বৈধ’ আইন হিসেবে বলবৎ রাখেন। কিন্তু ২০১৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ি জেলার বসতি স্থাপনকারী, যথাক্রমে আবদুল আজিজ আখন্দ এবং আবদুর মালেক নামের দুই ব্যক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন, ১৯০০ বিষয়ক সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে দুটি রিভিউ পিটিশন দাখিল করেন। তাদের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী ছিলেন তৎকালীন বিএনপি সরকারের পূর্বেকার নিয়োগপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব এ. এফ. হাসান আরিফ। উল্লেখ্য যে, রিভিশনকারী ব্যক্তিদ্বয় এ রেগুলেশন সংক্রান্ত উপরোক্ত মামলা সমুহে কোনো পক্ষভুক্ত ছিলেন না। সাধারণরীতি অনুসারে সরকারের অনুকূলে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া উক্ত রায়ের পক্ষে বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেলের অবস্থান গ্রহণ করার কথা। কিন্তু তার পরিবর্তে তিনি ‘রাজা’ আদিবাসী শব্দসহ আরও কিছু শব্দ ও বাক্যাংশ বাদ দেওয়াসহ প্রথাগত আইনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা সম্বলিত সর্বমোট দশটিরও অধিক অনুচ্ছেদ বাদ দেয়ার জন্য আদালতের কাছে মৌখিক ও লিখিতভাবে প্রার্থনা করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, ২০২৩ সালের ২৬ জুলাই পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। সেই স্মারকলিপিতে সুপ্রিম কোর্ট এর আপিল বিভাগে পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০ সংক্রান্ত চলমান দুটি রিভিউ মামলায়, রেগুলেশন ও এতে স্বীকৃত আদিবাসীদের অধিকার সম্বলিত প্রচলিত আইন, প্রথা ও রীতির জোরালো ও চলমান কার্যকারিতার পক্ষে অবস্থান গ্রহণের জন্য বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেলকে যথাযথ নির্দেশের প্রার্থনা জানান। গত ৯ মে মামলাগুলি শুনানির তালিকার শীর্ষে আসলে বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে আবারও তার পূর্বের আবেদনের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট শব্দসমূহ, বাক্যাংশ ও প্রথাগত আইনের অনুচ্ছেদসমূহ বাতিল করার জন্য প্রার্থনা করেন। স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ ও পরামর্শ প্রদান করে সংশ্লিষ্ট মামলাসমূহে পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০ এর পক্ষ অবলম্বন করেন, যার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনমানুষের অধিকার রক্ষিত হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম ১৯৯৭ এর শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়া যায় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সমগ্র দেশের বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করা হয়।

এদিকে, একই দাবিতে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও সহযোগী সংগঠনসমূহের উদ্যোগে রাঙামাটির সদরের কতুকছড়ি, বাঘাইছড়ি, কাউখালী ও নানিয়ারচর উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। এসব সমাবেশে ইউপিডিএফ নেতারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণ যুগ যুগ ধরে নিজেদের প্রথাগত আইন মেনে এ অঞ্চলে বসবাস করে আসছে। এ শাসনবিধি বাতিলে মাধ্যমে এ অঞ্চলের রাজা, হেডম্যান ও কার্বারীর পদবি বিলুপ্তিসহ পাহাড়িদের প্রথাগত আইন, রীতি-নীতি ও ঐতিহ্য-সংস্কৃতি চিরতরে মুছে দিতে চাইছে। সরকার যদি এ শাসনবিধি বাতিলের মাধ্যমে এ প্রথাগত রীতি-নীতি পদ্ধতি ও অধিকার হরণ করতে চায় তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ তা কখনই মেনে নেবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। কতুকছড়িতে বড় মহাপুরুম উচ্চ বিদ্যালয় মূল ফটকে সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের রাঙামাটি জেলা সভাপতি রিনিশা চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ধর্মশিং চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা সভাপতি রিমি চাকমা ও পিসিপির জেলা সভাপতি তনুময় চাকমা। সমাবেশ একটি একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

back to top