alt

সারাদেশ

সিএইচটি রেগুলেশন ১৯০০ বাতিলের ‘ষড়যন্ত্র’ বন্ধের দাবিতে রাঙামাটিতে মানববন্ধন

প্রতিনিধি, পার্বত্যাঞ্চল : বুধবার, ১০ জুলাই ২০২৪

আদালতের মাধ্যমে সিএইচটি রেগুলেশন ১৯০০ বাতিলের ‘ষড়যন্ত্র’ বন্ধের দাবিতে গতকাল রাঙামাটিতে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া একই দাবিতে ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের উদ্যোগে রাঙামাটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।

জেলা প্রশাসন কার্যালয় চত্বরের সামনে চাকমা সার্কেলের প্রথাগত প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন চলাকালে সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ানের সভাপতিত্বে অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্যে দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান, আদিবাসী ফোরামের পার্বত্যাঞ্চল শাখার সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, সিএইচটি হেডম্যান অ্যাসোসিয়েশনের রাঙামাটি সভাপতি চিংকিউ রোয়াজা, কালাপাকুজ্জ্য হেডম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্যে রাখেন সিএইচটি হেডম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শান্তিবিজয় চাকমা। মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণীর কয়েক হাজার নারী-পুরুষ অংশ নেন। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যেম প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন নেতারা।

সমাবেশে নেতারা অভিযোগ করে বলেন, আগামী ১১ জুলাই উচ্চতর আদালতের মাধ্যমে রাষ্ট্রের একটি অংশ সিএইচটি রেগুলেশন ১৯০০ বাতিলের ষড়যন্ত্র করছে। এটি বাতিল করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রীতিপ্রার প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের পাশাপাশি পাহাড়ে প্রচ- অশান্তি সৃষ্টি হবে। পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে যে শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তা ব্যাহত হবে, অরাজকতা দেখা দেবে। সিএইচটি রেগুলেশন ১৯০০ শাসনবিধি বাতিল হলে পাহাড়ি জনগণের অনুভুতিতে মারাত্মক আঘাত হানবে।

প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে দেয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০, যা হিল ট্র্যাক্টস ম্যানুয়াল নামেও পরিচিত, যেটি কিনা ১৯ জানুয়ারি ১৯০০ সালে কার্যকর হয়। তারপর থেকে এটি পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রশাসন সংক্রান্ত প্রধান আইনি দলিল হিসেবে কাজ করে চলেছে। পাশাপাশি এই প্রবিধানে বিভিন্ন বিধানসমূহ রয়েছে যা এই অঞ্চলের সুশাসন, ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ এবং এই অঞ্চলের জনগণের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সুরক্ষা এবং আন্তঃপ্রজন্মগত চর্চার জন্য অপরিহার্য। ২০০৩ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল এ. এফ. হাসান আরিফের আবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্টের একটি বিভাগীয় বেঞ্চ ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশনকে একটি ‘মৃত আইন’ হিসেবে ঘোষণা করেন। পরবর্তীকালে এই প্রেক্ষিতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ শুনানি শেষে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০’- কে একটি সম্পূর্ণ ‘জীবিত ও বৈধ’ আইন হিসেবে বলবৎ রাখেন। কিন্তু ২০১৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ি জেলার বসতি স্থাপনকারী, যথাক্রমে আবদুল আজিজ আখন্দ এবং আবদুর মালেক নামের দুই ব্যক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন, ১৯০০ বিষয়ক সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে দুটি রিভিউ পিটিশন দাখিল করেন। তাদের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী ছিলেন তৎকালীন বিএনপি সরকারের পূর্বেকার নিয়োগপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব এ. এফ. হাসান আরিফ। উল্লেখ্য যে, রিভিশনকারী ব্যক্তিদ্বয় এ রেগুলেশন সংক্রান্ত উপরোক্ত মামলা সমুহে কোনো পক্ষভুক্ত ছিলেন না। সাধারণরীতি অনুসারে সরকারের অনুকূলে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া উক্ত রায়ের পক্ষে বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেলের অবস্থান গ্রহণ করার কথা। কিন্তু তার পরিবর্তে তিনি ‘রাজা’ আদিবাসী শব্দসহ আরও কিছু শব্দ ও বাক্যাংশ বাদ দেওয়াসহ প্রথাগত আইনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা সম্বলিত সর্বমোট দশটিরও অধিক অনুচ্ছেদ বাদ দেয়ার জন্য আদালতের কাছে মৌখিক ও লিখিতভাবে প্রার্থনা করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, ২০২৩ সালের ২৬ জুলাই পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। সেই স্মারকলিপিতে সুপ্রিম কোর্ট এর আপিল বিভাগে পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০ সংক্রান্ত চলমান দুটি রিভিউ মামলায়, রেগুলেশন ও এতে স্বীকৃত আদিবাসীদের অধিকার সম্বলিত প্রচলিত আইন, প্রথা ও রীতির জোরালো ও চলমান কার্যকারিতার পক্ষে অবস্থান গ্রহণের জন্য বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেলকে যথাযথ নির্দেশের প্রার্থনা জানান। গত ৯ মে মামলাগুলি শুনানির তালিকার শীর্ষে আসলে বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে আবারও তার পূর্বের আবেদনের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট শব্দসমূহ, বাক্যাংশ ও প্রথাগত আইনের অনুচ্ছেদসমূহ বাতিল করার জন্য প্রার্থনা করেন। স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ ও পরামর্শ প্রদান করে সংশ্লিষ্ট মামলাসমূহে পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০ এর পক্ষ অবলম্বন করেন, যার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনমানুষের অধিকার রক্ষিত হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম ১৯৯৭ এর শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়া যায় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সমগ্র দেশের বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করা হয়।

এদিকে, একই দাবিতে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও সহযোগী সংগঠনসমূহের উদ্যোগে রাঙামাটির সদরের কতুকছড়ি, বাঘাইছড়ি, কাউখালী ও নানিয়ারচর উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। এসব সমাবেশে ইউপিডিএফ নেতারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণ যুগ যুগ ধরে নিজেদের প্রথাগত আইন মেনে এ অঞ্চলে বসবাস করে আসছে। এ শাসনবিধি বাতিলে মাধ্যমে এ অঞ্চলের রাজা, হেডম্যান ও কার্বারীর পদবি বিলুপ্তিসহ পাহাড়িদের প্রথাগত আইন, রীতি-নীতি ও ঐতিহ্য-সংস্কৃতি চিরতরে মুছে দিতে চাইছে। সরকার যদি এ শাসনবিধি বাতিলের মাধ্যমে এ প্রথাগত রীতি-নীতি পদ্ধতি ও অধিকার হরণ করতে চায় তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ তা কখনই মেনে নেবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। কতুকছড়িতে বড় মহাপুরুম উচ্চ বিদ্যালয় মূল ফটকে সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের রাঙামাটি জেলা সভাপতি রিনিশা চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ধর্মশিং চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা সভাপতি রিমি চাকমা ও পিসিপির জেলা সভাপতি তনুময় চাকমা। সমাবেশ একটি একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

ছবি

মুরাদনগরে ধর্ষণ-নির্যাতনের ঘটনার নিন্দা, সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি ৩৮ বিশিষ্ট নাগরিকের

ছবি

নওগাঁয় ৯০টি খামারে তৈরি হচ্ছে কেঁচো সার

বরমচাল চা বাগানের ইতি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী

সিরাজগঞ্জে হত্যা মামলায় ৬ জনের যাবজ্জীবন

ছবি

তারাগঞ্জ প্রাণীসম্পদ অফিস চত্বরে ফুলের চারাগাছ রোপন

বটিয়াঘাটায় ব্যবসায়ীদের মাঝে পরিবেশ বান্ধব ব্যাগ বিতরণ

কলারোয়ায় আইসক্রিম ফ্যাক্টরিতে অভিযান

পীরগাছায় ছেলের অপরাধে মধ্যযুগীয় কায়দায় বাবার ওপর নির্যাতন

নোয়াখালীতে বিধবাকে গণধর্ষণ

কাজে ফিরেছেন হিলি কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

ছবি

প্লাস্টিকের বস্তায় চাল বাজারজাত করার জরিমানা

শিক্ষার্থীকে বস্তায় ভরে নির্যাতনের ঘটনায় শিক্ষক কারাগারে

সমিতির জমানো টাকা ফেরত না পেয়ে শোকে মৃত্যু

ছবি

নবীগঞ্জে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ১৩

কুষ্টিয়ায় সেতুর টোল আদায় বন্ধে দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ, যানজট, ভোগান্তি

নড়াইলে এইচএসসিতে সেট পরিবর্তন কেন্দ্র সচিব ও ট্যাগ অফিসারকে অব্যাহতি

ছবি

ভৈরবে তুচ্ছ ঘটনায় সংঘর্ষ বাড়িঘর ভাঙচুর, আহত ১০

চিলমারী তেল ডিপো রক্ষায় কুড়িগ্রামে শ্রমিকদের মানববন্ধন

মোহনগঞ্জে হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্পের জৌলুস

ছবি

চিলমারীতে অসময়ের বন্যা পাটচাষিরা চিন্তিত

ছবি

সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার পণ্য আটক করল সুনামগঞ্জ বিজিবি

প্রেমের টানে ভারতীয় যুবক লালমনিরহাটে

মহাদেবপুরে অতিরিক্ত ধানচাল মজুদ জেল-জরিমানা, ধান কেনা বন্ধ

ছবি

৬৭০ টাকার বীজ ধান ৭’শ ৫০ টাকা বিক্রি!

সন্তান জন্ম দিয়ে পরীক্ষা দিলেন অদম্য ইশা

জেলা আ.লীগের সভাপতি নাছির দুই দিনের রিমান্ডে

ছবি

বেনাপোল বন্দরে পানি নিষ্কাশনের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে পণ্য খালাস

চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার

সিদ্ধিরগঞ্জে ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে ফারিহা

ছবি

বেড়িবাঁধের দুই কিলোমিটার রাস্তাটি এখন গলার কাঁটায়

কালীগঞ্জে হোল্ডিং ট্যাক্স ইস্যুতে পৌরবাসীর সঙ্গে ইউএনওর সরাসরি সংলাপ

ছবি

এনবিআরের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়ায় বেনাপোল বন্দরে কার্যক্রম শুরু

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে বিজিবির অভিযানে ৯,৬২০ পিস ইয়াবা উদ্ধার

চট্টগ্রামে জন্ম থেকে ১৫ মাস বয়সী শিশুদের জন্য নতুন প্রকল্প : কার্যক্রম চলবে ৬ জেলায়

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অভিযান আটক ৩

ছবি

নেত্রকোনায় চক্ষু চিকিৎসার নামে প্রতারণা

tab

সারাদেশ

সিএইচটি রেগুলেশন ১৯০০ বাতিলের ‘ষড়যন্ত্র’ বন্ধের দাবিতে রাঙামাটিতে মানববন্ধন

প্রতিনিধি, পার্বত্যাঞ্চল

বুধবার, ১০ জুলাই ২০২৪

আদালতের মাধ্যমে সিএইচটি রেগুলেশন ১৯০০ বাতিলের ‘ষড়যন্ত্র’ বন্ধের দাবিতে গতকাল রাঙামাটিতে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া একই দাবিতে ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের উদ্যোগে রাঙামাটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।

জেলা প্রশাসন কার্যালয় চত্বরের সামনে চাকমা সার্কেলের প্রথাগত প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন চলাকালে সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ানের সভাপতিত্বে অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্যে দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান, আদিবাসী ফোরামের পার্বত্যাঞ্চল শাখার সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, সিএইচটি হেডম্যান অ্যাসোসিয়েশনের রাঙামাটি সভাপতি চিংকিউ রোয়াজা, কালাপাকুজ্জ্য হেডম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্যে রাখেন সিএইচটি হেডম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শান্তিবিজয় চাকমা। মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণীর কয়েক হাজার নারী-পুরুষ অংশ নেন। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যেম প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন নেতারা।

সমাবেশে নেতারা অভিযোগ করে বলেন, আগামী ১১ জুলাই উচ্চতর আদালতের মাধ্যমে রাষ্ট্রের একটি অংশ সিএইচটি রেগুলেশন ১৯০০ বাতিলের ষড়যন্ত্র করছে। এটি বাতিল করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রীতিপ্রার প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের পাশাপাশি পাহাড়ে প্রচ- অশান্তি সৃষ্টি হবে। পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে যে শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তা ব্যাহত হবে, অরাজকতা দেখা দেবে। সিএইচটি রেগুলেশন ১৯০০ শাসনবিধি বাতিল হলে পাহাড়ি জনগণের অনুভুতিতে মারাত্মক আঘাত হানবে।

প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে দেয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০, যা হিল ট্র্যাক্টস ম্যানুয়াল নামেও পরিচিত, যেটি কিনা ১৯ জানুয়ারি ১৯০০ সালে কার্যকর হয়। তারপর থেকে এটি পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রশাসন সংক্রান্ত প্রধান আইনি দলিল হিসেবে কাজ করে চলেছে। পাশাপাশি এই প্রবিধানে বিভিন্ন বিধানসমূহ রয়েছে যা এই অঞ্চলের সুশাসন, ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ এবং এই অঞ্চলের জনগণের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সুরক্ষা এবং আন্তঃপ্রজন্মগত চর্চার জন্য অপরিহার্য। ২০০৩ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল এ. এফ. হাসান আরিফের আবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্টের একটি বিভাগীয় বেঞ্চ ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশনকে একটি ‘মৃত আইন’ হিসেবে ঘোষণা করেন। পরবর্তীকালে এই প্রেক্ষিতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ শুনানি শেষে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০’- কে একটি সম্পূর্ণ ‘জীবিত ও বৈধ’ আইন হিসেবে বলবৎ রাখেন। কিন্তু ২০১৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ি জেলার বসতি স্থাপনকারী, যথাক্রমে আবদুল আজিজ আখন্দ এবং আবদুর মালেক নামের দুই ব্যক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন, ১৯০০ বিষয়ক সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে দুটি রিভিউ পিটিশন দাখিল করেন। তাদের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী ছিলেন তৎকালীন বিএনপি সরকারের পূর্বেকার নিয়োগপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব এ. এফ. হাসান আরিফ। উল্লেখ্য যে, রিভিশনকারী ব্যক্তিদ্বয় এ রেগুলেশন সংক্রান্ত উপরোক্ত মামলা সমুহে কোনো পক্ষভুক্ত ছিলেন না। সাধারণরীতি অনুসারে সরকারের অনুকূলে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া উক্ত রায়ের পক্ষে বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেলের অবস্থান গ্রহণ করার কথা। কিন্তু তার পরিবর্তে তিনি ‘রাজা’ আদিবাসী শব্দসহ আরও কিছু শব্দ ও বাক্যাংশ বাদ দেওয়াসহ প্রথাগত আইনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা সম্বলিত সর্বমোট দশটিরও অধিক অনুচ্ছেদ বাদ দেয়ার জন্য আদালতের কাছে মৌখিক ও লিখিতভাবে প্রার্থনা করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, ২০২৩ সালের ২৬ জুলাই পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। সেই স্মারকলিপিতে সুপ্রিম কোর্ট এর আপিল বিভাগে পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০ সংক্রান্ত চলমান দুটি রিভিউ মামলায়, রেগুলেশন ও এতে স্বীকৃত আদিবাসীদের অধিকার সম্বলিত প্রচলিত আইন, প্রথা ও রীতির জোরালো ও চলমান কার্যকারিতার পক্ষে অবস্থান গ্রহণের জন্য বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেলকে যথাযথ নির্দেশের প্রার্থনা জানান। গত ৯ মে মামলাগুলি শুনানির তালিকার শীর্ষে আসলে বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে আবারও তার পূর্বের আবেদনের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট শব্দসমূহ, বাক্যাংশ ও প্রথাগত আইনের অনুচ্ছেদসমূহ বাতিল করার জন্য প্রার্থনা করেন। স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ ও পরামর্শ প্রদান করে সংশ্লিষ্ট মামলাসমূহে পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০ এর পক্ষ অবলম্বন করেন, যার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনমানুষের অধিকার রক্ষিত হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম ১৯৯৭ এর শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়া যায় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সমগ্র দেশের বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করা হয়।

এদিকে, একই দাবিতে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও সহযোগী সংগঠনসমূহের উদ্যোগে রাঙামাটির সদরের কতুকছড়ি, বাঘাইছড়ি, কাউখালী ও নানিয়ারচর উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। এসব সমাবেশে ইউপিডিএফ নেতারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণ যুগ যুগ ধরে নিজেদের প্রথাগত আইন মেনে এ অঞ্চলে বসবাস করে আসছে। এ শাসনবিধি বাতিলে মাধ্যমে এ অঞ্চলের রাজা, হেডম্যান ও কার্বারীর পদবি বিলুপ্তিসহ পাহাড়িদের প্রথাগত আইন, রীতি-নীতি ও ঐতিহ্য-সংস্কৃতি চিরতরে মুছে দিতে চাইছে। সরকার যদি এ শাসনবিধি বাতিলের মাধ্যমে এ প্রথাগত রীতি-নীতি পদ্ধতি ও অধিকার হরণ করতে চায় তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ তা কখনই মেনে নেবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। কতুকছড়িতে বড় মহাপুরুম উচ্চ বিদ্যালয় মূল ফটকে সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের রাঙামাটি জেলা সভাপতি রিনিশা চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ধর্মশিং চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা সভাপতি রিমি চাকমা ও পিসিপির জেলা সভাপতি তনুময় চাকমা। সমাবেশ একটি একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

back to top