বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরণ করতে গিয়ে ঝড়-বৃষ্টির সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে নির্দয় ঝড়ের কাছে হেরে গিয়ে মৃত্যুর কাছেও হার মানলেন বাঁশখালীর শেখেরখীল ইউনিয়নের বাসিন্দা বোটের মাঝি আব্দুন নুর, বোটের নায়া মোহাম্মদ হোসেন ও নুরুল আমিন।
মোহাম্মদ হোসেনকে অন্যত্র দাফন করা হলেও মাঝি আব্দুন নুর ও নায়া নুরুল আমিনকে শনিবার আলাদা আলাদা জানাযা শেষে মসজিদ ভিটার পাশে জোড়া কবরে দাফন করা হয়।
আব্দুন নুর (৩৫) দক্ষ মাঝি ছিলেন, দীর্ঘদিন ধরে সাগরে ফিশিং বোট নিয়ে মাছ ধরার অভিজ্ঞতা তার। সেদিনের ঝড়ের কবলে প্রাণ হারাতে হলো তাকেও।
আব্দুন নুর শেখেরখীল টেকপাড়ার খালেদা বাপের বাড়ির আব্দুল আজিজের পুত্র। ছয় বছর আগে তার সাথে বিয়ে হয় রুবি আক্তারের। তিন সন্তানের জনক আব্দুন নুর। প্রথম কন্যা সন্তান জন্নাতুল মাওয়ার বয়স ছয় বছর, দ্বিতীয় কন্যা সন্তান জান্নাতুল নাঈমের বয়স আড়াই বছর। সর্বশেষ তার ঘরে জন্ম নেয় পুত্র সন্তান মো. মাসুমের। মাসুমের বয়স সবেমাত্র ১০ মাস।
মাসুম জন্ম থেকেই হার্টের (হৃদরোগ) রোগী। তাকে করাতে হবে বড় চিকিৎসা। বাবা নেই। কে করাবে তার চিকিৎসা, কে ধরবে তার পরিবারের হাল। বাচ্চারা কাকে গলা জড়িয়ে বাবা বলে ডাকবে এমন আত্মচিৎকার করে কেঁদে কেঁদে বলে যাচ্ছেন আব্দুন নুরের স্ত্রী রুবি আক্তার। বঙ্গোপসাগর যেন স্বপ্ন কেড়ে নিলো তার। ‘আমরা কি নিয়ে বাঁচবো, কাকে নিয়ে বাঁচবো’ — রুবির এমন আত্মচিৎকারে ভারী হয়ে গেল এলাকার আকাশ-বাতাস।
আর নুর আমিন (৪৫) বোটের নায়া (জেলে) হিসেবে জীবনের তাগিদে সমুদ্রে পাড়ি দেন। তিনিও মাছ আহরণ করতে খালেকের সাথে একই বোটে পাড়ি দেন বঙ্গোপসাগরে। সে একই এলাকার শেখেরখীল টেক পাড়া সিরাম্মদের বাড়ীর ছৈয়দ নুরের পুত্র। তিনিও তিন সন্তানের জনক। তার বড় মেয়ে সাদিয়া শেখেরখীল ইসলামীয়া দাখিল মাদরাসায় নবম শ্রেণিতে পড়েন। দুই ছেলের মধ্যে শাকিব শেখেরখীল ইসলামীয়া দাখিল মাদরাসায় ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ও ছোট সন্তান রাকিব পার্শ্ববর্তী এলাহী বক্স সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণিতে পড়ে।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তাদের বাবাকে হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা। পরিবারের হাল ধরার মতো কেউ নেই। থেমে যেতে পারে তাদের পড়ালেখা। একটিমাত্র দুর্ঘটনায় মুহূর্তেই ভেঙ্গে পড়লো সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন।
বাঁশখালীর উপকূলীয় অঞ্চল শেখেরখীল ইউনিয়ন। এখানকার অধিকাংশ লোকজনের জীবন ও জীবিকার একমাত্র ভরসা বঙ্গোপসাগর। বঙ্গোপসাগরের সাথে এখানকার লোকদের আর্থিক সম্পর্ক। সাগরে মৎস্য আহরণ করতে গিয়ে অনেক সময় ঝড়-বৃষ্টির সাথে যুদ্ধ করতে হয় তাদের। কখনো জলদস্যুদের কবলে, কখনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দুর্ঘটনায় পড়তে হয় । জীবনের তাগিদে তাদের জীবনসংগ্রাম যেন থেমে থাকে না।
মাছ ধরবে, বোটভর্তি মাছ নিয়ে ফিরবে এমন আশায় বুক বেঁধে গত বুধবার গভীর রাতে ১৭ মাঝি-মাল্লাসহ শেখেরখীল ইউপির মেম্বার আব্দুল খালেকের মালিকানাধীন আল্লাহ মালিক ফিশিং বোটটি শেখেরখীল ফাঁড়ির মুখ থেকে বঙ্গোপসাগরে রওয়ানা দেয়। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, বোটটি কক্সবাজারের ইনানী পয়েন্টে পৌঁছালে প্রচন্ড ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়। ১৭ জনের মধ্যে ১৪ জন কোনো রকম জীবন নিয়ে ফিরে আসলেও নিখোঁজ হন মাঝি আব্দুন নুর, বোটের নায়া মোহাম্মদ হোসেন ও নুরুল আমিন।
গত শনিবার তাদের লাশ ফিরে পান স্বজনরা। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে, নিভে যায় দুই পরিবারের বেঁচে থাকার স্বপ্ন।
রোববার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরণ করতে গিয়ে ঝড়-বৃষ্টির সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে নির্দয় ঝড়ের কাছে হেরে গিয়ে মৃত্যুর কাছেও হার মানলেন বাঁশখালীর শেখেরখীল ইউনিয়নের বাসিন্দা বোটের মাঝি আব্দুন নুর, বোটের নায়া মোহাম্মদ হোসেন ও নুরুল আমিন।
মোহাম্মদ হোসেনকে অন্যত্র দাফন করা হলেও মাঝি আব্দুন নুর ও নায়া নুরুল আমিনকে শনিবার আলাদা আলাদা জানাযা শেষে মসজিদ ভিটার পাশে জোড়া কবরে দাফন করা হয়।
আব্দুন নুর (৩৫) দক্ষ মাঝি ছিলেন, দীর্ঘদিন ধরে সাগরে ফিশিং বোট নিয়ে মাছ ধরার অভিজ্ঞতা তার। সেদিনের ঝড়ের কবলে প্রাণ হারাতে হলো তাকেও।
আব্দুন নুর শেখেরখীল টেকপাড়ার খালেদা বাপের বাড়ির আব্দুল আজিজের পুত্র। ছয় বছর আগে তার সাথে বিয়ে হয় রুবি আক্তারের। তিন সন্তানের জনক আব্দুন নুর। প্রথম কন্যা সন্তান জন্নাতুল মাওয়ার বয়স ছয় বছর, দ্বিতীয় কন্যা সন্তান জান্নাতুল নাঈমের বয়স আড়াই বছর। সর্বশেষ তার ঘরে জন্ম নেয় পুত্র সন্তান মো. মাসুমের। মাসুমের বয়স সবেমাত্র ১০ মাস।
মাসুম জন্ম থেকেই হার্টের (হৃদরোগ) রোগী। তাকে করাতে হবে বড় চিকিৎসা। বাবা নেই। কে করাবে তার চিকিৎসা, কে ধরবে তার পরিবারের হাল। বাচ্চারা কাকে গলা জড়িয়ে বাবা বলে ডাকবে এমন আত্মচিৎকার করে কেঁদে কেঁদে বলে যাচ্ছেন আব্দুন নুরের স্ত্রী রুবি আক্তার। বঙ্গোপসাগর যেন স্বপ্ন কেড়ে নিলো তার। ‘আমরা কি নিয়ে বাঁচবো, কাকে নিয়ে বাঁচবো’ — রুবির এমন আত্মচিৎকারে ভারী হয়ে গেল এলাকার আকাশ-বাতাস।
আর নুর আমিন (৪৫) বোটের নায়া (জেলে) হিসেবে জীবনের তাগিদে সমুদ্রে পাড়ি দেন। তিনিও মাছ আহরণ করতে খালেকের সাথে একই বোটে পাড়ি দেন বঙ্গোপসাগরে। সে একই এলাকার শেখেরখীল টেক পাড়া সিরাম্মদের বাড়ীর ছৈয়দ নুরের পুত্র। তিনিও তিন সন্তানের জনক। তার বড় মেয়ে সাদিয়া শেখেরখীল ইসলামীয়া দাখিল মাদরাসায় নবম শ্রেণিতে পড়েন। দুই ছেলের মধ্যে শাকিব শেখেরখীল ইসলামীয়া দাখিল মাদরাসায় ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ও ছোট সন্তান রাকিব পার্শ্ববর্তী এলাহী বক্স সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণিতে পড়ে।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তাদের বাবাকে হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা। পরিবারের হাল ধরার মতো কেউ নেই। থেমে যেতে পারে তাদের পড়ালেখা। একটিমাত্র দুর্ঘটনায় মুহূর্তেই ভেঙ্গে পড়লো সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন।
বাঁশখালীর উপকূলীয় অঞ্চল শেখেরখীল ইউনিয়ন। এখানকার অধিকাংশ লোকজনের জীবন ও জীবিকার একমাত্র ভরসা বঙ্গোপসাগর। বঙ্গোপসাগরের সাথে এখানকার লোকদের আর্থিক সম্পর্ক। সাগরে মৎস্য আহরণ করতে গিয়ে অনেক সময় ঝড়-বৃষ্টির সাথে যুদ্ধ করতে হয় তাদের। কখনো জলদস্যুদের কবলে, কখনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দুর্ঘটনায় পড়তে হয় । জীবনের তাগিদে তাদের জীবনসংগ্রাম যেন থেমে থাকে না।
মাছ ধরবে, বোটভর্তি মাছ নিয়ে ফিরবে এমন আশায় বুক বেঁধে গত বুধবার গভীর রাতে ১৭ মাঝি-মাল্লাসহ শেখেরখীল ইউপির মেম্বার আব্দুল খালেকের মালিকানাধীন আল্লাহ মালিক ফিশিং বোটটি শেখেরখীল ফাঁড়ির মুখ থেকে বঙ্গোপসাগরে রওয়ানা দেয়। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, বোটটি কক্সবাজারের ইনানী পয়েন্টে পৌঁছালে প্রচন্ড ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়। ১৭ জনের মধ্যে ১৪ জন কোনো রকম জীবন নিয়ে ফিরে আসলেও নিখোঁজ হন মাঝি আব্দুন নুর, বোটের নায়া মোহাম্মদ হোসেন ও নুরুল আমিন।
গত শনিবার তাদের লাশ ফিরে পান স্বজনরা। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে, নিভে যায় দুই পরিবারের বেঁচে থাকার স্বপ্ন।