হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার স্বজনগ্রামের শহিদ মিয়ার মেয়ে রড ও লাঠি দিয়ে, আবার ছেকা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নির্যাতন চালায় ১৩ বছরের কল্পনা বেগম নামে এক গৃহকর্মীকে। ভেঙে দেয়া হয়েছে ৪টি দাঁত। ওই গৃহকর্মী ২০ অক্টোবর শনিবার রাজধানীর ভাটারা এলাকার আই ব্লকের ৩ নম্বর রোডের ৪৬৬ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয় তাকে। মধ্যরাতে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ভাটারা থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, শনিবার রাতে খবর পেয়ে ওই গৃহকর্মীকে উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার সারা শরীরে পোড়া ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। এদিন রাতেই গৃহকর্মীর মা আফিয়া বেগম বাদী হয়ে নারী শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন। মামলায় গ্রেপ্তার গৃহকর্ত্রী দিনাত জাহান আদরকে (২১) ২১ অক্টোবর রবিবার তাকে আদলতে তোলা হয়। আদালত তার একদিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছেন।
জানাযায়, রবিবার দুপুরে মেয়েটিকে দেখতে যান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনার ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। সাংবাদিকেদের তিনি বলেন, অনেক পরিবার দারিদ্রতার জন্য অন্যের বাসায় কাজ করে। তাই বলে নির্মমতার শিকার হবে এটাতো মেনে নেয়া যায় না। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এই মেয়েটিকে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। মেরে তার চারটি দাঁত ফেলে দেয়া হয়েছে। তার শরীরে সব ধরনের আঘাত রয়েছে। কোনো সুস্থ মানুষ এ ধরনের নির্যাতন করতে পারে না। আমাদের দেশে পাঁচ লাখ শিশু শ্রমিক ও গৃহকর্মী আছে। এই মেয়েটা পাঁচবছর ধরে একটা পরিবারে কাজ করে। সাড়ে চার বছর ধরে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, অথচ কেউ জানেও না। এরকম আরও কত হচ্ছে অনেকেই তা জানি না। তিনি বলেন, এটি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন, এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, এটা বন্ধ করা উচিৎ। আমরা সর্বশেষ গৃহকর্মী নিরাপত্তা আইনের একটা খসড়া প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে সাবমিট করেছি। আমরা বারবার বলছি অতিশিগগির প্রস্তুত করে আইনটি পাস করা দরকার। কারণ পূর্ণাঙ্গ আইনে গৃহকর্মী নির্যাতনের বিষয়টিকে দেখা হয় না। এরকম নিষ্ঠুর আচরণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নির্যাতনের শিকার মেয়েটিকে আমাদের হাসপাতাল থেকে যতটুকু সাপোর্ট দরকার তার সব টুকুই দেয়া হবে। বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসকরা তাকে দেখতেছেন। এ ছাড়া অন্যান্য চিকিৎসকরাও তাকে দেখবে।
ঢাকা মেডিকেল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহযোগী অধ্যপক ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, মেয়েটির শরীরের বিভন্ন জায়গায় পোড়া ক্ষত আছে। মেটাল কোনো জিনিস দিয়ে বিভিন্ন সময় তাকে ছ্যাকা দেয়া হয়েছে। যখন তার চিকিৎসার দরকার ছিল তা পায়নি। নিজে নিজে চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করেছে। যার ফলে ইনফেকশন হয়ে গেছে। মেয়েটির মুখ থেকে শুরু করে হাত, পা, বুক, পিঠসহ বিভিন্ন জায়গায় পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এটা একদিনে করা হয় নাই। বিভিন্ন সময় এই কাজ করা হয়েছে।
গৃহকর্মী কল্পনার মা আফিয়া বেগম বলেন, ওই বাসায় পাঁচ বছর ধরে কাজ করে কল্পনা। কাজের ভুল ধরে তাকে বিভিন্ন সময় চুল স্ট্রেইটনার দিয়ে ছ্যাকা দিত। রড দিয়ে মারধর করতো। এই পাঁচ বছর আমাদের সঙ্গে দেখা করতে দেয় নাই। শুধু বিকাশের মাধ্যমে মাসে পাঁচ হাজার টাকা পাঠাইতো। শনিবার রাতে পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে মেয়েকে দেখতে পাই।
ভুক্তভোগী কল্পনা আক্তার জানায়, সবসময় কাজের ভুল ধরে তাকে মারধর করতো গৃহকর্ত্রী আদর। ২ মাস আগে কাঠের ব্রাশ দিয়ে তার ৪টি দাঁত ভেঙে দেয়। দুইদিন আগে হেয়ার স্ট্রেইটনার গরম করে মুখে ছ্যাকা দেয়া হয়। চিকিৎসার জন্যও কখনও যেতে দেয়া হতো না বাসার বাইরে। একবেলা খাবার খেতে পারতো সে। তবে গৃহকর্ত্রী বাসার বাইরে থেকে খাবার এনে খেত। সে আরও বলে, শনিবার বাসার একটি বিড়ালকে চিকিৎসার জন্য গাড়ি দিয়ে কল্পনাকে পাঠায় চিকিৎসকের কাছে সেখানেই ওই চিকিৎসক তার শরীরের যখম দেখে তার বাসার ঠিকানা রেখে দেন। পরবর্তীতে তিনিই সাংবাদিক ও পুলিশের সাহায্য নেন। উদ্ধার হয় কল্পনা।
মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪
হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার স্বজনগ্রামের শহিদ মিয়ার মেয়ে রড ও লাঠি দিয়ে, আবার ছেকা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নির্যাতন চালায় ১৩ বছরের কল্পনা বেগম নামে এক গৃহকর্মীকে। ভেঙে দেয়া হয়েছে ৪টি দাঁত। ওই গৃহকর্মী ২০ অক্টোবর শনিবার রাজধানীর ভাটারা এলাকার আই ব্লকের ৩ নম্বর রোডের ৪৬৬ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয় তাকে। মধ্যরাতে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ভাটারা থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, শনিবার রাতে খবর পেয়ে ওই গৃহকর্মীকে উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার সারা শরীরে পোড়া ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। এদিন রাতেই গৃহকর্মীর মা আফিয়া বেগম বাদী হয়ে নারী শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন। মামলায় গ্রেপ্তার গৃহকর্ত্রী দিনাত জাহান আদরকে (২১) ২১ অক্টোবর রবিবার তাকে আদলতে তোলা হয়। আদালত তার একদিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছেন।
জানাযায়, রবিবার দুপুরে মেয়েটিকে দেখতে যান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনার ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। সাংবাদিকেদের তিনি বলেন, অনেক পরিবার দারিদ্রতার জন্য অন্যের বাসায় কাজ করে। তাই বলে নির্মমতার শিকার হবে এটাতো মেনে নেয়া যায় না। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এই মেয়েটিকে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। মেরে তার চারটি দাঁত ফেলে দেয়া হয়েছে। তার শরীরে সব ধরনের আঘাত রয়েছে। কোনো সুস্থ মানুষ এ ধরনের নির্যাতন করতে পারে না। আমাদের দেশে পাঁচ লাখ শিশু শ্রমিক ও গৃহকর্মী আছে। এই মেয়েটা পাঁচবছর ধরে একটা পরিবারে কাজ করে। সাড়ে চার বছর ধরে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, অথচ কেউ জানেও না। এরকম আরও কত হচ্ছে অনেকেই তা জানি না। তিনি বলেন, এটি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন, এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, এটা বন্ধ করা উচিৎ। আমরা সর্বশেষ গৃহকর্মী নিরাপত্তা আইনের একটা খসড়া প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে সাবমিট করেছি। আমরা বারবার বলছি অতিশিগগির প্রস্তুত করে আইনটি পাস করা দরকার। কারণ পূর্ণাঙ্গ আইনে গৃহকর্মী নির্যাতনের বিষয়টিকে দেখা হয় না। এরকম নিষ্ঠুর আচরণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নির্যাতনের শিকার মেয়েটিকে আমাদের হাসপাতাল থেকে যতটুকু সাপোর্ট দরকার তার সব টুকুই দেয়া হবে। বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসকরা তাকে দেখতেছেন। এ ছাড়া অন্যান্য চিকিৎসকরাও তাকে দেখবে।
ঢাকা মেডিকেল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহযোগী অধ্যপক ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, মেয়েটির শরীরের বিভন্ন জায়গায় পোড়া ক্ষত আছে। মেটাল কোনো জিনিস দিয়ে বিভিন্ন সময় তাকে ছ্যাকা দেয়া হয়েছে। যখন তার চিকিৎসার দরকার ছিল তা পায়নি। নিজে নিজে চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করেছে। যার ফলে ইনফেকশন হয়ে গেছে। মেয়েটির মুখ থেকে শুরু করে হাত, পা, বুক, পিঠসহ বিভিন্ন জায়গায় পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এটা একদিনে করা হয় নাই। বিভিন্ন সময় এই কাজ করা হয়েছে।
গৃহকর্মী কল্পনার মা আফিয়া বেগম বলেন, ওই বাসায় পাঁচ বছর ধরে কাজ করে কল্পনা। কাজের ভুল ধরে তাকে বিভিন্ন সময় চুল স্ট্রেইটনার দিয়ে ছ্যাকা দিত। রড দিয়ে মারধর করতো। এই পাঁচ বছর আমাদের সঙ্গে দেখা করতে দেয় নাই। শুধু বিকাশের মাধ্যমে মাসে পাঁচ হাজার টাকা পাঠাইতো। শনিবার রাতে পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে মেয়েকে দেখতে পাই।
ভুক্তভোগী কল্পনা আক্তার জানায়, সবসময় কাজের ভুল ধরে তাকে মারধর করতো গৃহকর্ত্রী আদর। ২ মাস আগে কাঠের ব্রাশ দিয়ে তার ৪টি দাঁত ভেঙে দেয়। দুইদিন আগে হেয়ার স্ট্রেইটনার গরম করে মুখে ছ্যাকা দেয়া হয়। চিকিৎসার জন্যও কখনও যেতে দেয়া হতো না বাসার বাইরে। একবেলা খাবার খেতে পারতো সে। তবে গৃহকর্ত্রী বাসার বাইরে থেকে খাবার এনে খেত। সে আরও বলে, শনিবার বাসার একটি বিড়ালকে চিকিৎসার জন্য গাড়ি দিয়ে কল্পনাকে পাঠায় চিকিৎসকের কাছে সেখানেই ওই চিকিৎসক তার শরীরের যখম দেখে তার বাসার ঠিকানা রেখে দেন। পরবর্তীতে তিনিই সাংবাদিক ও পুলিশের সাহায্য নেন। উদ্ধার হয় কল্পনা।