ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও কসবা উপজেলায় পরিবেশ আইন উপেক্ষা করে বছরের পর বছর ধরে পরিচালিত হচ্ছে অসংখ্য অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম। এসব ভাটার কারণে এলাকায় বায়ুদূষণ বেড়েছে। ইটভাটার সুবিধার্থে মাটি দিয়ে ভরাট করে তিতাসের বুক চিরে তৈরী করা হয়েছে রাস্তা। ফলে নদীর স্বাভাবিক পরিবেশ ও জলপ্রবাহ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
১ জানুয়ারি বুধবার কসবা এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, “কসবা ব্রিকস” নামে একটি ইটভাটা জনবসতির একেবারে কাছাকাছি স্থাপিত। এর পাশেই একটি বিদ্যালয় রয়েছে। ইটভাটার কালো ধোঁয়া আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। স্থানীয় বাসিন্দারা ভাটার মালিকের প্রভাবশালী পরিচয়ের কারণে মুখ খুলতে সাহস পান না।
নাম প্রকাশ না কারার শর্তে এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা বলেন,‘আমাদের ঘরে ধোঁয়া ঢুকে যায়। ছোট বাচ্চারা সবসময় কাশে। এই বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী। বিদ্যালয় ও জনবসতির কাছাকাছি ইটভাটা স্থাপন করায় শিক্ষার্থীরাও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে।
আখাউড়ার উজানিসার ব্রিজের কাছ থেকে দেখা যায়, তিতাস নদীর পাড় দখল করে মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। মাটি দিয়ে ভরাট করে নদীর বুক চিরে রাস্তা তৈরি করে ‘মেসার্স সনি ব্রিকস’, ‘রাইফা ব্রিকস’ ও ‘আশরাফ ব্রিকস’-সহ কয়েকটি ইটভাটা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
উজানিসার এলাকার বাসিন্দা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তিতাস নদী আমাদের জীবনরেখা। এখানকার ইটভাটাগুলো নদীর পাড় দখল করে রাস্তা বানিয়েছে। যদি এভাবে নদী দখল চলতে থাকে, কয়েক বছরের মধ্যে তিতাসের অস্তিত্ব থাকবে না।’
পরিবেশ কর্মীদের মতে, ইটভাটাগুলোর ওপর কঠোর নজরদারি এবং অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ প্রয়োজন। এভাবে চলতে থাকলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য ভয়াবহ সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যলয়ে এই বিষয় জানতে চাইলে তারা জানান, ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ কসবা ব্রিকসকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির মালিক ইসমাইল একজন ছাত্রলীগ নেতা এবং সাবেক আইনমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় দলীয় প্রভাব খাটিয়ে জরিমানার টাকা জমা দেননি। ২০২৪ সালের ১২ আগস্ট নতুন করে চিঠি দেওয়া হলেও তিনি তাতে সাড়া দেননি। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৩ সাল থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নবায়ন করেনি।
এই বিষয়ে জানতে ইসমাইল হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকার কল দিলে তিনি রিসিভ করেনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো কর্মকর্তা মংসাচিং মারমা জানান, ‘কসবা ব্রিকস’ ভ্যাট প্রদান করছেন না। তাকে ভ্যাট পরিশোধ করার জন্য একাধিক বার বলা জানানো হয়েছে। যারা ভ্যাট দিচিছ না তাদের বিরোদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ১৭৭টি ইটভাটার মধ্যে ১০৭টিই অনুমোদনহীন। এসব ভাটায় নিম্নমানের কয়লা ব্যবহার করে ইট পোড়ানোর কারণে ব্যাপক বায়ুদূষণ ঘটছে।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, কোনো বিদ্যালয় বা জনবসতির এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। তবে অনেকেই বলছে রাজনৈতিক প্রভাব এবং প্রশাসনিক উদাসীনতার সুযোগে এসব অবৈধ ভাটার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নয়ন মিয়া জানান, ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। তিনি ব্লক ইটের ব্যবহার বাড়িয়ে পরিবেশ সুরক্ষার আহবান জানান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘যদি ইটভাটাগুলো পরিবেশ আইনের নিয়ম পূরণ করতে পারে, তাহলে তাদের কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে। অন্যথায়, অবৈধ ভাটাগুলো ধ্বংস করার নির্দেশনা আমাদের দেওয়া আছে।’
শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও কসবা উপজেলায় পরিবেশ আইন উপেক্ষা করে বছরের পর বছর ধরে পরিচালিত হচ্ছে অসংখ্য অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম। এসব ভাটার কারণে এলাকায় বায়ুদূষণ বেড়েছে। ইটভাটার সুবিধার্থে মাটি দিয়ে ভরাট করে তিতাসের বুক চিরে তৈরী করা হয়েছে রাস্তা। ফলে নদীর স্বাভাবিক পরিবেশ ও জলপ্রবাহ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
১ জানুয়ারি বুধবার কসবা এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, “কসবা ব্রিকস” নামে একটি ইটভাটা জনবসতির একেবারে কাছাকাছি স্থাপিত। এর পাশেই একটি বিদ্যালয় রয়েছে। ইটভাটার কালো ধোঁয়া আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। স্থানীয় বাসিন্দারা ভাটার মালিকের প্রভাবশালী পরিচয়ের কারণে মুখ খুলতে সাহস পান না।
নাম প্রকাশ না কারার শর্তে এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা বলেন,‘আমাদের ঘরে ধোঁয়া ঢুকে যায়। ছোট বাচ্চারা সবসময় কাশে। এই বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী। বিদ্যালয় ও জনবসতির কাছাকাছি ইটভাটা স্থাপন করায় শিক্ষার্থীরাও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে।
আখাউড়ার উজানিসার ব্রিজের কাছ থেকে দেখা যায়, তিতাস নদীর পাড় দখল করে মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। মাটি দিয়ে ভরাট করে নদীর বুক চিরে রাস্তা তৈরি করে ‘মেসার্স সনি ব্রিকস’, ‘রাইফা ব্রিকস’ ও ‘আশরাফ ব্রিকস’-সহ কয়েকটি ইটভাটা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
উজানিসার এলাকার বাসিন্দা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তিতাস নদী আমাদের জীবনরেখা। এখানকার ইটভাটাগুলো নদীর পাড় দখল করে রাস্তা বানিয়েছে। যদি এভাবে নদী দখল চলতে থাকে, কয়েক বছরের মধ্যে তিতাসের অস্তিত্ব থাকবে না।’
পরিবেশ কর্মীদের মতে, ইটভাটাগুলোর ওপর কঠোর নজরদারি এবং অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ প্রয়োজন। এভাবে চলতে থাকলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য ভয়াবহ সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যলয়ে এই বিষয় জানতে চাইলে তারা জানান, ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ কসবা ব্রিকসকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির মালিক ইসমাইল একজন ছাত্রলীগ নেতা এবং সাবেক আইনমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় দলীয় প্রভাব খাটিয়ে জরিমানার টাকা জমা দেননি। ২০২৪ সালের ১২ আগস্ট নতুন করে চিঠি দেওয়া হলেও তিনি তাতে সাড়া দেননি। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৩ সাল থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নবায়ন করেনি।
এই বিষয়ে জানতে ইসমাইল হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকার কল দিলে তিনি রিসিভ করেনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো কর্মকর্তা মংসাচিং মারমা জানান, ‘কসবা ব্রিকস’ ভ্যাট প্রদান করছেন না। তাকে ভ্যাট পরিশোধ করার জন্য একাধিক বার বলা জানানো হয়েছে। যারা ভ্যাট দিচিছ না তাদের বিরোদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ১৭৭টি ইটভাটার মধ্যে ১০৭টিই অনুমোদনহীন। এসব ভাটায় নিম্নমানের কয়লা ব্যবহার করে ইট পোড়ানোর কারণে ব্যাপক বায়ুদূষণ ঘটছে।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, কোনো বিদ্যালয় বা জনবসতির এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। তবে অনেকেই বলছে রাজনৈতিক প্রভাব এবং প্রশাসনিক উদাসীনতার সুযোগে এসব অবৈধ ভাটার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নয়ন মিয়া জানান, ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। তিনি ব্লক ইটের ব্যবহার বাড়িয়ে পরিবেশ সুরক্ষার আহবান জানান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘যদি ইটভাটাগুলো পরিবেশ আইনের নিয়ম পূরণ করতে পারে, তাহলে তাদের কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে। অন্যথায়, অবৈধ ভাটাগুলো ধ্বংস করার নির্দেশনা আমাদের দেওয়া আছে।’