বিদায়ী বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরেই নরসিংদীতে জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীসহ ১০ জনকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত ৩০ ডিসেম্বর বিকেলে মাধবদী থানায় হামলা ও ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। একই দিন জেলা জজ আদালতের গেটে পুলিশের কাছ থেকে হত্যা মামলার দুই আসামি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টার ঘটনায় আহত হয়েছেন মনোহরদী থানার উপ-পরিদর্শক টুটুল হোসাইন। এছাড়া, চুরি, ডাকাতির ঘটনা তো রয়েছেই।
নরসিংদী আদালত পুলিশের পরিদর্শক খন্দকার জাকির হোসেন জানান, গত ৩০ ডিসেম্বর বিকেলে মাধবদীতে ডাকাতি মামলার আসামি ছিনিয়ে নিতে থানায় হামলা ও ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। যদিও আসামিদের ছিনিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে। একই দিন জেলা জজ আদালতের গেটে পুলিশের কাছ থেকে হত্যা মামলার দুই আসামি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন স্বজনরা। এ সময় আসামিকে হেফাজতে রাখতে ধস্তাধস্তিতে আহত হয়েছেন মনোহরদী থানার উপ-পরিদর্শক টুটুল হোসাইন।
পুলিশের নথি ঘেটে দেখা যায়, গত ২১ ডিসেম্বর বেলা উপজেলার বটেশ্বর গ্রামে সাফিয়া বেগমকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন তোফাজ্জল হোসেন। একই দিন রাতে সদরের পাঁচদোনায় ছাত্রদল কর্মী হুমায়ূন কবিরকে (৩৫) গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
গত ২০ ডিসেম্বর রাতে মাধবদীতে চাঁদা না দেয়ায় পাওয়ারলুম কারখানার মালিক নুর মোহাম্মদ (৪৮)-কে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। গুমের উদ্দেশ্যে মরদেহ ফেলতে গিয়ে জনতার হাতে আটক হয় অভিযুক্তরা। একই দিন মাধবদী পৌর এলাকার কাশিপুর মহল্লায় বাড়ির চিলেকোঠা থেকে সাদির হোসেন (৩৩) নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে পাঁচদোনায়; পাঁচদোনা ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি লাল মিয়া মেম্বার ও যুবদল নেতা মোসাদ্দেক গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে দু’জন গুলিবিদ্ধসহ ১০ জন আহত হয়। আহত পাঁচদোনা ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক আলম মিয়া ঘটনার ছয়দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
১০ ডিসেম্বর নরসিংদী শহরের বাসাইলে ছাত্রাবাস সিটি হাউস থেকে মিফতাউল হাসান প্রতীক (১৮) নামে এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিলেন। একই দিন দুপুরে রায়পুরা উপজেলার মেধিকান্দা রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন স্থান থেকে অজ্ঞাত যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ।
৭ ডিসেম্বর রায়পুরা উপজেলার মেথিকান্দা এলাকায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে চান্দেরকান্দির ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মানিক মিয়া ও কল্পনা বেগম গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এ ঘটনায় কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়।
২ ডিসেম্বর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে শিবপুরের যোশরের সৃষ্টিগড় মধ্যপাড়া গ্রামের একটি বাঁশঝাড় থেকে অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে হত্যার পর বাঁশঝাড়ে ফেলে রেখে চলে যায় দুর্বৃত্তরা।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে স্বস্তিতে নেই স্থানীয়রা। শেখেরচর-বাবুরহাট বাজারের ব্যবসায়ী আসাদ বলেন, ‘৫ আগস্টের পর ভেবেছিলাম শান্তিতে ব্যবসা করতে পারব। কিন্তু নরসিংদীতে আধিপত্য, চাঁদাবাজি ও দখলবাজি নিয়ে যে খুন-খারাবি শুরু হয়েছে, তাতে নিজ প্রতিষ্ঠানেও আমরা নিরাপদ নই। নরসিংদীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে দখল ও চাঁদাবাজির খেলা আগের মতোই আছে। বদলেছে শুধু খেলোয়াড় ও জার্সি।’
জেলার বর্তমান পরিস্থিতি থেকে দ্রুত উত্তরণ করতে না পারলে গৃহযুদ্ধ শুরু হতে পারে বলে মনে করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. মশিউর রহমান মৃধা। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি শুধু নরসিংদী জেলা নয়, সারাদেশেই একই চিত্র। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর পুলিশ বাহিনীর মনোবল দুর্বল হয়ে পড়েছে। অপরাধপ্রবণতা রোধ করতে না পারলে, মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নেবে। তখনই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। তাই মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন।
এ বিষয় নরসিংদীর পুলিশ সুপার আবদুল হান্নান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণে সময় প্রয়োজন। এখানে পুলিশের কোনো ব্যর্থতা নেই বা প্রতিবন্ধকতাও নেই। কোনো ঘটনার পর পুলিশ কিন্তু থেমে নেই। মাধবদী থানা আদালত প্রাঙ্গণে হামলাকারীদের শনাক্ত করে এরই মধ্যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। বাকিরা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় সময় লাগছে।
শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫
বিদায়ী বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরেই নরসিংদীতে জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীসহ ১০ জনকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত ৩০ ডিসেম্বর বিকেলে মাধবদী থানায় হামলা ও ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। একই দিন জেলা জজ আদালতের গেটে পুলিশের কাছ থেকে হত্যা মামলার দুই আসামি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টার ঘটনায় আহত হয়েছেন মনোহরদী থানার উপ-পরিদর্শক টুটুল হোসাইন। এছাড়া, চুরি, ডাকাতির ঘটনা তো রয়েছেই।
নরসিংদী আদালত পুলিশের পরিদর্শক খন্দকার জাকির হোসেন জানান, গত ৩০ ডিসেম্বর বিকেলে মাধবদীতে ডাকাতি মামলার আসামি ছিনিয়ে নিতে থানায় হামলা ও ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। যদিও আসামিদের ছিনিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে। একই দিন জেলা জজ আদালতের গেটে পুলিশের কাছ থেকে হত্যা মামলার দুই আসামি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন স্বজনরা। এ সময় আসামিকে হেফাজতে রাখতে ধস্তাধস্তিতে আহত হয়েছেন মনোহরদী থানার উপ-পরিদর্শক টুটুল হোসাইন।
পুলিশের নথি ঘেটে দেখা যায়, গত ২১ ডিসেম্বর বেলা উপজেলার বটেশ্বর গ্রামে সাফিয়া বেগমকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন তোফাজ্জল হোসেন। একই দিন রাতে সদরের পাঁচদোনায় ছাত্রদল কর্মী হুমায়ূন কবিরকে (৩৫) গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
গত ২০ ডিসেম্বর রাতে মাধবদীতে চাঁদা না দেয়ায় পাওয়ারলুম কারখানার মালিক নুর মোহাম্মদ (৪৮)-কে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। গুমের উদ্দেশ্যে মরদেহ ফেলতে গিয়ে জনতার হাতে আটক হয় অভিযুক্তরা। একই দিন মাধবদী পৌর এলাকার কাশিপুর মহল্লায় বাড়ির চিলেকোঠা থেকে সাদির হোসেন (৩৩) নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে পাঁচদোনায়; পাঁচদোনা ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি লাল মিয়া মেম্বার ও যুবদল নেতা মোসাদ্দেক গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে দু’জন গুলিবিদ্ধসহ ১০ জন আহত হয়। আহত পাঁচদোনা ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক আলম মিয়া ঘটনার ছয়দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
১০ ডিসেম্বর নরসিংদী শহরের বাসাইলে ছাত্রাবাস সিটি হাউস থেকে মিফতাউল হাসান প্রতীক (১৮) নামে এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিলেন। একই দিন দুপুরে রায়পুরা উপজেলার মেধিকান্দা রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন স্থান থেকে অজ্ঞাত যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ।
৭ ডিসেম্বর রায়পুরা উপজেলার মেথিকান্দা এলাকায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে চান্দেরকান্দির ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মানিক মিয়া ও কল্পনা বেগম গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এ ঘটনায় কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়।
২ ডিসেম্বর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে শিবপুরের যোশরের সৃষ্টিগড় মধ্যপাড়া গ্রামের একটি বাঁশঝাড় থেকে অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে হত্যার পর বাঁশঝাড়ে ফেলে রেখে চলে যায় দুর্বৃত্তরা।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে স্বস্তিতে নেই স্থানীয়রা। শেখেরচর-বাবুরহাট বাজারের ব্যবসায়ী আসাদ বলেন, ‘৫ আগস্টের পর ভেবেছিলাম শান্তিতে ব্যবসা করতে পারব। কিন্তু নরসিংদীতে আধিপত্য, চাঁদাবাজি ও দখলবাজি নিয়ে যে খুন-খারাবি শুরু হয়েছে, তাতে নিজ প্রতিষ্ঠানেও আমরা নিরাপদ নই। নরসিংদীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে দখল ও চাঁদাবাজির খেলা আগের মতোই আছে। বদলেছে শুধু খেলোয়াড় ও জার্সি।’
জেলার বর্তমান পরিস্থিতি থেকে দ্রুত উত্তরণ করতে না পারলে গৃহযুদ্ধ শুরু হতে পারে বলে মনে করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. মশিউর রহমান মৃধা। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি শুধু নরসিংদী জেলা নয়, সারাদেশেই একই চিত্র। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর পুলিশ বাহিনীর মনোবল দুর্বল হয়ে পড়েছে। অপরাধপ্রবণতা রোধ করতে না পারলে, মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নেবে। তখনই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। তাই মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন।
এ বিষয় নরসিংদীর পুলিশ সুপার আবদুল হান্নান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণে সময় প্রয়োজন। এখানে পুলিশের কোনো ব্যর্থতা নেই বা প্রতিবন্ধকতাও নেই। কোনো ঘটনার পর পুলিশ কিন্তু থেমে নেই। মাধবদী থানা আদালত প্রাঙ্গণে হামলাকারীদের শনাক্ত করে এরই মধ্যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। বাকিরা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় সময় লাগছে।