বান্দরবানে প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের নজরদারি থাকা সত্ত্বেও নানা অজুহাতে প্রতিনিয়ত চলছে অবৈধভাবে পাহাড় কর্তনের কাজ। স্থানীয়দের দাবি, পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পাহাড়খেকো সিন্ডিকেট দিন রাত কাটছে পাহাড়। এর ফলে ধ্বংস হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ, হুমকির মুখে পড়ছে জীব বৈচিত্র। তাই পাহাড়ের প্রাণ প্রকৃতি রক্ষায় পাহাড় কাটা বন্ধের দাবি স্থানীয়দের। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে সমতলের চেয়ে আলাদা পার্বত্য জেলা বান্দরবান। এই জেলায় রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য পাহাড়, বনাঞ্চল ও প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র। চারিদিকে উঁচু নিচু এবং বড় বড় পাহাড় হওয়ায় সমতল ভূমির পরিমাণ খুবই কম। তাই বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে পাহাড় কেটে বসতি গড়ে তুলেছেন জেলার লক্ষাধিক মানুষ। শুধু তাই নয়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, পুকুর ও জলাশয় ভরাট, বাঁধ নির্মাণ, ইটভাটায় মাটি ব্যবহার এবং সড়ক নির্মাণসহ নানা অজুহাত ও প্রভাব খাটিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে স্কেভেটর দিয়ে অবৈধভাবে পাহাড় কর্তনের কাজ। বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গেল ১ বছরে জেলায় পাহাড় কাটার দায়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ৭২টি মামলাসহ অর্ধকোটি টাকার অধিক জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
বান্দরবান জেলা শহরের বনরূপা, ছিদ্দিকনগর, রূপনগর, ক্যাচিংঘাটা, নতুন পাড়া, বালাঘাটা, কালাঘাটা, লেমুঝিড়ি, সুয়ালক এবং টংকাবতীসহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় চলছে পাহাড় কাটার এই মহোৎসব। অবৈধভাবে পাহাড় কাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের নজরদারি থাকা সত্ত্বেও পাহাড় খেকো সিন্ডিকেটরা দিন-রাত সমানতালে কাটছে পাহাড়। তবে স্থানীয়দের দাবি পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সবাইকে ম্যানেজ করেই চলে সিন্ডিকেটের পাহাড় কাটার কাজ। অবাধে পাহাড় কাটার ফলে এক দিকে ধ্বংস হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ, হুমকির মুখে পড়ছে জীব বৈচিত্র, অন্যদিকে বর্ষায় পাহাড় ধসে ঘটে প্রাণহানির ঘটনা। তাই পাহাড়ের প্রাণ পরিবেশ রক্ষা ও পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা এড়াতে অবৈধভাবে পাহাড় কাটা বন্ধের দাবি স্থানীয়দের। এদিকে বনরূপা, কালাঘাটা এবং বীর বাহাদুর নগরসহ জেলা শহরের বেশ কয়েকটি এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে উঁচু উঁচু পাহাড়। দেখে মনে হবে কারো বসতঘর বা অন্য কোনো স্থাপনা। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে পাহাড় কাটার জন্য এভাবে টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে পাহাড়টি। তারপরও রাতের অন্ধকারে স্কেভেটর দিয়ে কাটা হয় সুবিশাল পাহাড়। পরে ডাম্পার ট্রাকে করে পাহাড়ের মাটিগুলো নিয়ে যাওয়া হয় জলাশয় ও কৃষি জমি ভরাট করার জন্য। প্রতি গাড়ি মাটি বিক্রি করে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত। আর এসব কাজের দায়িত্ব নেয় বান্দরবান শহরের পাহাড় কাটার কাজে জড়িত বেশ কয়েকজন পাহাড় কাটার সিন্ডিকেট চক্র। মূলত, ভূমি বা পাহাড়ের মালিকরা তাদেরকে মোটা অংকের বিনিময়ে পাহাড় কাটার কন্ট্রাক দিয়ে দেয় এসব সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যদের। বনরূপা পাড়ার বাসিন্দা মো. করিম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের পাড়ার বিভিন্ন জায়গায় উঁচু উঁচু পাহাড় কাটতেছে একটি চক্র। তাদেরকে পাহাড় না কাটার জন্য বাঁধা দিলেও তরা আমাদের কথা শোনেনে না। রাতের অন্ধকারে স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করতেছে একর একর জায়গা। তাদের এসব অবৈধ কর্মকর্তাদের জন্য আমরা রাতে ঘুমাতে পারি না, আমাদের চলাচলের রাস্তা পর্যন্ত নষ্ট করে ফেলেছে। এভাবে পাহাড় কাটা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে এই এলাকায় পাহাড় বলতে কিছুই থাকবে না, সব সমতল হয়ে যাবে। তাই আমরা চাই অবৈধভাবে পাহাড় কর্তন দ্রুত বন্ধ করা হোক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একই এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, তারা তো প্রকাশ্যেই পাহাড় কাটছেন। আমরা জানি পাহাড় কাটতে প্রশাসনের অনুমতি লাগে। আমরা জিজ্ঞেস করলে তারা বলে, পরিবেশ অধিদপ্তর, সাংবাদিক, পুলিশসহ সবাইকে টাকা দিয়ে পাহাড় কাটতেছি। আমরা বাঁধা দেওয়ার কে। যেভাবে উঁচু উঁচু পাহাড় কাটছেন। যে কোন মুহূর্তে পাহাড় ধসে মানুষ মারা যাবে। তিনি আরও বলেন, অনেকবার প্রশাসনের লোক আসছিল, তারপরও তারা একদিন পর পর পাহাড় কেটেই যাচ্ছেন। হয়ত প্রশাসনকে ম্যানেজ করেছেন তারা। না হয় প্রশাসন কেন বাঁধা দিচ্ছে না। আমরা চাই, এসব পাহাড় কাটা বন্ধ করা হোক এবং জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান তিনি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট মো. রেজাউল করিম বলেন, জেলা শহরের যেসব এলাকায় পাহাড় কাটতেছে সব জায়গায় আমরা পরিদর্শনে গিয়েছি। মূল সমস্যা হচ্ছে একদিকে আমাদের পর্যাপ্ত জনবল নেই। আমরা এখানে মাত্র দুই জন কর্মরত আছি। অন্যদিকে যেসব সিন্ডিকেট পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত তারা মূলত গভীররাতে পাহাড় কাটেন। যার কারণে আমরা ওই সময় ঘটনাস্থলে যেতে পারি না। পরদিন সকালে ঘটনাস্থলে গেলে কাউকে পাওয়া যায় না। এছাড়াও কর্তনকৃত জায়গার আশপাশের কেউ তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন না। আমাদের তথ্য যোগাড় করতে অনেক সময় লেগে যায়। তারপরেও আমরা অবৈধভাবে পাহাড় কাটা বন্ধে অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে মামলার পাশাপাশি জরিমানা প্রদান করছি। এছাড়াও যেসব সিন্ডিকেট চক্র পাহাড় কাটার কাজে জড়িত তাদেরকে শনাক্তের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫
বান্দরবানে প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের নজরদারি থাকা সত্ত্বেও নানা অজুহাতে প্রতিনিয়ত চলছে অবৈধভাবে পাহাড় কর্তনের কাজ। স্থানীয়দের দাবি, পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পাহাড়খেকো সিন্ডিকেট দিন রাত কাটছে পাহাড়। এর ফলে ধ্বংস হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ, হুমকির মুখে পড়ছে জীব বৈচিত্র। তাই পাহাড়ের প্রাণ প্রকৃতি রক্ষায় পাহাড় কাটা বন্ধের দাবি স্থানীয়দের। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে সমতলের চেয়ে আলাদা পার্বত্য জেলা বান্দরবান। এই জেলায় রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য পাহাড়, বনাঞ্চল ও প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র। চারিদিকে উঁচু নিচু এবং বড় বড় পাহাড় হওয়ায় সমতল ভূমির পরিমাণ খুবই কম। তাই বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে পাহাড় কেটে বসতি গড়ে তুলেছেন জেলার লক্ষাধিক মানুষ। শুধু তাই নয়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, পুকুর ও জলাশয় ভরাট, বাঁধ নির্মাণ, ইটভাটায় মাটি ব্যবহার এবং সড়ক নির্মাণসহ নানা অজুহাত ও প্রভাব খাটিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে স্কেভেটর দিয়ে অবৈধভাবে পাহাড় কর্তনের কাজ। বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গেল ১ বছরে জেলায় পাহাড় কাটার দায়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ৭২টি মামলাসহ অর্ধকোটি টাকার অধিক জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
বান্দরবান জেলা শহরের বনরূপা, ছিদ্দিকনগর, রূপনগর, ক্যাচিংঘাটা, নতুন পাড়া, বালাঘাটা, কালাঘাটা, লেমুঝিড়ি, সুয়ালক এবং টংকাবতীসহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় চলছে পাহাড় কাটার এই মহোৎসব। অবৈধভাবে পাহাড় কাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের নজরদারি থাকা সত্ত্বেও পাহাড় খেকো সিন্ডিকেটরা দিন-রাত সমানতালে কাটছে পাহাড়। তবে স্থানীয়দের দাবি পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সবাইকে ম্যানেজ করেই চলে সিন্ডিকেটের পাহাড় কাটার কাজ। অবাধে পাহাড় কাটার ফলে এক দিকে ধ্বংস হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ, হুমকির মুখে পড়ছে জীব বৈচিত্র, অন্যদিকে বর্ষায় পাহাড় ধসে ঘটে প্রাণহানির ঘটনা। তাই পাহাড়ের প্রাণ পরিবেশ রক্ষা ও পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা এড়াতে অবৈধভাবে পাহাড় কাটা বন্ধের দাবি স্থানীয়দের। এদিকে বনরূপা, কালাঘাটা এবং বীর বাহাদুর নগরসহ জেলা শহরের বেশ কয়েকটি এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে উঁচু উঁচু পাহাড়। দেখে মনে হবে কারো বসতঘর বা অন্য কোনো স্থাপনা। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে পাহাড় কাটার জন্য এভাবে টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে পাহাড়টি। তারপরও রাতের অন্ধকারে স্কেভেটর দিয়ে কাটা হয় সুবিশাল পাহাড়। পরে ডাম্পার ট্রাকে করে পাহাড়ের মাটিগুলো নিয়ে যাওয়া হয় জলাশয় ও কৃষি জমি ভরাট করার জন্য। প্রতি গাড়ি মাটি বিক্রি করে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত। আর এসব কাজের দায়িত্ব নেয় বান্দরবান শহরের পাহাড় কাটার কাজে জড়িত বেশ কয়েকজন পাহাড় কাটার সিন্ডিকেট চক্র। মূলত, ভূমি বা পাহাড়ের মালিকরা তাদেরকে মোটা অংকের বিনিময়ে পাহাড় কাটার কন্ট্রাক দিয়ে দেয় এসব সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যদের। বনরূপা পাড়ার বাসিন্দা মো. করিম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের পাড়ার বিভিন্ন জায়গায় উঁচু উঁচু পাহাড় কাটতেছে একটি চক্র। তাদেরকে পাহাড় না কাটার জন্য বাঁধা দিলেও তরা আমাদের কথা শোনেনে না। রাতের অন্ধকারে স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করতেছে একর একর জায়গা। তাদের এসব অবৈধ কর্মকর্তাদের জন্য আমরা রাতে ঘুমাতে পারি না, আমাদের চলাচলের রাস্তা পর্যন্ত নষ্ট করে ফেলেছে। এভাবে পাহাড় কাটা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে এই এলাকায় পাহাড় বলতে কিছুই থাকবে না, সব সমতল হয়ে যাবে। তাই আমরা চাই অবৈধভাবে পাহাড় কর্তন দ্রুত বন্ধ করা হোক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একই এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, তারা তো প্রকাশ্যেই পাহাড় কাটছেন। আমরা জানি পাহাড় কাটতে প্রশাসনের অনুমতি লাগে। আমরা জিজ্ঞেস করলে তারা বলে, পরিবেশ অধিদপ্তর, সাংবাদিক, পুলিশসহ সবাইকে টাকা দিয়ে পাহাড় কাটতেছি। আমরা বাঁধা দেওয়ার কে। যেভাবে উঁচু উঁচু পাহাড় কাটছেন। যে কোন মুহূর্তে পাহাড় ধসে মানুষ মারা যাবে। তিনি আরও বলেন, অনেকবার প্রশাসনের লোক আসছিল, তারপরও তারা একদিন পর পর পাহাড় কেটেই যাচ্ছেন। হয়ত প্রশাসনকে ম্যানেজ করেছেন তারা। না হয় প্রশাসন কেন বাঁধা দিচ্ছে না। আমরা চাই, এসব পাহাড় কাটা বন্ধ করা হোক এবং জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান তিনি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট মো. রেজাউল করিম বলেন, জেলা শহরের যেসব এলাকায় পাহাড় কাটতেছে সব জায়গায় আমরা পরিদর্শনে গিয়েছি। মূল সমস্যা হচ্ছে একদিকে আমাদের পর্যাপ্ত জনবল নেই। আমরা এখানে মাত্র দুই জন কর্মরত আছি। অন্যদিকে যেসব সিন্ডিকেট পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত তারা মূলত গভীররাতে পাহাড় কাটেন। যার কারণে আমরা ওই সময় ঘটনাস্থলে যেতে পারি না। পরদিন সকালে ঘটনাস্থলে গেলে কাউকে পাওয়া যায় না। এছাড়াও কর্তনকৃত জায়গার আশপাশের কেউ তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন না। আমাদের তথ্য যোগাড় করতে অনেক সময় লেগে যায়। তারপরেও আমরা অবৈধভাবে পাহাড় কাটা বন্ধে অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে মামলার পাশাপাশি জরিমানা প্রদান করছি। এছাড়াও যেসব সিন্ডিকেট চক্র পাহাড় কাটার কাজে জড়িত তাদেরকে শনাক্তের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।