রংপুরের বদরগঞ্জ পৌর এলাকায় অবস্থিত ভাড়ার দহ বিলে গতবছরের শীতকালে দর্শনার্থীদের কারণে সরগরম থাকলেও এবারে দেখা দিয়েছে তার উল্টো চিত্র। সেখানে দর্শনার্থীদের পরিবর্তে স্থান দখল করে নিয়েছে মাদকসেবীরা। সেখানে প্রতিনিয়ত বসে মাদকসেবীদের আড্ডা। সকাল থেকে গভীররাত পর্যন্ত চলে সেই আড্ডা। আর আড্ডা শেষে চলে অতিথি পাখি নিধন ও নির্যাতন। ফলে অযতœ আর অবহেলায় বিলের পানি কচুরিপানার দখলে চলে যাচ্ছে। এ কারণে ভাড়ার দহ বিলের সৌন্দর্য অনেকটাই হারিয়ে গেছে।
জানা যায়, ভাড়ার দহ বিলের আয়তন সাড়ে ১১ একর। বিলটি এক সময়ে দামোদরপুর ইউনিয়নের অংশ ছিল। কিন্তু বদরগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হওয়ার পর তা’ পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত হয়। দু’যুগেরও অধিককাল থেকে পৌরসভা পরিচালিত হলেও এটি জলাশয় হিসেবে উপজেলা প্রশাসনের হাতেই রয়েছে। এটিকে কখনোই পৌরসভার কাছে ন্যস্ত করা হয়নি। এটি নদীর মোহনা হওয়ায় সেখানে পলি জমতে জমতে এক সময়ে তা উঁচু ভূমিতে পরিণত হয় এবং প্রভাবশালীদের দখলে চলে যায়। ফলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই বিলকে জলাশয় হিসেবেও লিজ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ কারণে সেখান থেকে সরকার প্রতিবছর রাজস্ব হারাতে থাকে। এমন অবস্থায় ২০২০ সালে তৎকালীন উপজেলা প্রশাসন ভাড়ার দহ বিল উদ্ধার করতে তৎপর হয়ে ওঠে এবং তা’ উদ্ধারের পাশাপাশি খননের উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) বিলটি খনন করে। এতে ব্যয় হয় ৪৯ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। এরপর সেটির সৌন্দর্য বাড়াতে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ১০১ প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করা হয়। পরে আরও ১০৬ প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বিলের পানিতে উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা ছেড়ে দেয়। ফলে দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে ভাড়ারদহ বিল। এরপর শীতকালে অতিথি পাখিরা বিলের পানিতে আশ্রয় নিলে সেটি আরো নান্দনিক হয়ে ওঠে। একারণে সেখানে দর্শনার্থীদের যাতায়াত শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বিলটি বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানেই রয়েছে। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিলের গাছ রক্ষণাবেক্ষণ ও পাখিদের রক্ষায় সেখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে নামমাত্র পারিশ্রমিকে ২ জন শ্রমিক নিয়োগ দিলেও হঠাৎ করেই তাদের প্রত্যাহার করে নেয়। আর এই সুযোগে এলাকার প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় সেখানে পাখি নিধনসহ বিলের মাছ লুট করা হয়। এর পাশাপাশি আওয়ামী সরকারের পতনের পর আরেক দফা লুটপাট চালানোর পাশাপাশি ভেঙে ফেলা হয় পাখি বসার মাচা ও দর্শনার্থীদের বসার স্থানগুলো। এমনকি লুটেরাদের কবল থেকে রক্ষা পায়নি বিরল প্রজাতির গাছের চারা ও বিলের পাড়ে স্থাপিত একমাত্র সাইনবোর্ডটি। পরবর্তীতে সেখানে একজন শ্রমিককে বহাল করা হলে আবারো পাখি বসতে শুরু করে। কিন্তু বিলের অভ্যন্তরে নদীর পানি প্রবেশ করায় সেখানে জন্ম নিয়েছে কচুরিপানা। সেগুলো পরিষ্কার না করায় তা’ ছড়িয়ে পড়ছে গোটা এলাকায়।
সম্প্রতি সরেজমিন ভাড়ার দহ বিল এলাকা পরিদর্শনকালে কথা হয় ওই এলাকায় বসবাসকারী আব্দুল খালেকের সঙ্গে। তিনি বলেন, গতবছর এ সময় পাখির কলতানে এই এলাকা মুখরিত ছিল। এ বছরও পাখি এসেছে, কিন্তু বিলের পানিতে থাকা কচুরিপানা পানির সৌন্দর্য কেড়ে নিয়েছে। এছাড়া মাদকসেবীরা তো রয়েছেই। তিনি বলেন, বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় দিন দিন এলাকাটি সৌন্দর্য হারাচ্ছে। পাহারাদার আতিয়ার রহমান বলেন, মাদকসেবীরা সব সময় ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তাদের কিছু বলতে গেলেই জীবন নাশের হুমকি দেওয়া হয়।
এই ব্যাপারে জানতে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বদরগঞ্জে দায়িত্ব প্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদের সাথে মুঠোফোনে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান সেলফোনে বলেন, কচুরিপানা ইচ্ছে করেই রাখা হয়েছে। কেননা সেখানে পাখি বসে। সেখানে দর্শনার্থীদের বসার স্থান নির্মাণসহ টয়লেট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। অচিরেই সেগুলোর কাজ শুরু হবে। বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সেখানে কিছু কাজ করা হচ্ছে। যা চলমান রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তবে যোগদানের পর এই স্বল্প সময়ে সেখানে যাওয়া এখনো সম্ভব হয়নি।
বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫
রংপুরের বদরগঞ্জ পৌর এলাকায় অবস্থিত ভাড়ার দহ বিলে গতবছরের শীতকালে দর্শনার্থীদের কারণে সরগরম থাকলেও এবারে দেখা দিয়েছে তার উল্টো চিত্র। সেখানে দর্শনার্থীদের পরিবর্তে স্থান দখল করে নিয়েছে মাদকসেবীরা। সেখানে প্রতিনিয়ত বসে মাদকসেবীদের আড্ডা। সকাল থেকে গভীররাত পর্যন্ত চলে সেই আড্ডা। আর আড্ডা শেষে চলে অতিথি পাখি নিধন ও নির্যাতন। ফলে অযতœ আর অবহেলায় বিলের পানি কচুরিপানার দখলে চলে যাচ্ছে। এ কারণে ভাড়ার দহ বিলের সৌন্দর্য অনেকটাই হারিয়ে গেছে।
জানা যায়, ভাড়ার দহ বিলের আয়তন সাড়ে ১১ একর। বিলটি এক সময়ে দামোদরপুর ইউনিয়নের অংশ ছিল। কিন্তু বদরগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হওয়ার পর তা’ পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত হয়। দু’যুগেরও অধিককাল থেকে পৌরসভা পরিচালিত হলেও এটি জলাশয় হিসেবে উপজেলা প্রশাসনের হাতেই রয়েছে। এটিকে কখনোই পৌরসভার কাছে ন্যস্ত করা হয়নি। এটি নদীর মোহনা হওয়ায় সেখানে পলি জমতে জমতে এক সময়ে তা উঁচু ভূমিতে পরিণত হয় এবং প্রভাবশালীদের দখলে চলে যায়। ফলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই বিলকে জলাশয় হিসেবেও লিজ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ কারণে সেখান থেকে সরকার প্রতিবছর রাজস্ব হারাতে থাকে। এমন অবস্থায় ২০২০ সালে তৎকালীন উপজেলা প্রশাসন ভাড়ার দহ বিল উদ্ধার করতে তৎপর হয়ে ওঠে এবং তা’ উদ্ধারের পাশাপাশি খননের উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) বিলটি খনন করে। এতে ব্যয় হয় ৪৯ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। এরপর সেটির সৌন্দর্য বাড়াতে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ১০১ প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করা হয়। পরে আরও ১০৬ প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বিলের পানিতে উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা ছেড়ে দেয়। ফলে দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে ভাড়ারদহ বিল। এরপর শীতকালে অতিথি পাখিরা বিলের পানিতে আশ্রয় নিলে সেটি আরো নান্দনিক হয়ে ওঠে। একারণে সেখানে দর্শনার্থীদের যাতায়াত শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বিলটি বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানেই রয়েছে। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিলের গাছ রক্ষণাবেক্ষণ ও পাখিদের রক্ষায় সেখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে নামমাত্র পারিশ্রমিকে ২ জন শ্রমিক নিয়োগ দিলেও হঠাৎ করেই তাদের প্রত্যাহার করে নেয়। আর এই সুযোগে এলাকার প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় সেখানে পাখি নিধনসহ বিলের মাছ লুট করা হয়। এর পাশাপাশি আওয়ামী সরকারের পতনের পর আরেক দফা লুটপাট চালানোর পাশাপাশি ভেঙে ফেলা হয় পাখি বসার মাচা ও দর্শনার্থীদের বসার স্থানগুলো। এমনকি লুটেরাদের কবল থেকে রক্ষা পায়নি বিরল প্রজাতির গাছের চারা ও বিলের পাড়ে স্থাপিত একমাত্র সাইনবোর্ডটি। পরবর্তীতে সেখানে একজন শ্রমিককে বহাল করা হলে আবারো পাখি বসতে শুরু করে। কিন্তু বিলের অভ্যন্তরে নদীর পানি প্রবেশ করায় সেখানে জন্ম নিয়েছে কচুরিপানা। সেগুলো পরিষ্কার না করায় তা’ ছড়িয়ে পড়ছে গোটা এলাকায়।
সম্প্রতি সরেজমিন ভাড়ার দহ বিল এলাকা পরিদর্শনকালে কথা হয় ওই এলাকায় বসবাসকারী আব্দুল খালেকের সঙ্গে। তিনি বলেন, গতবছর এ সময় পাখির কলতানে এই এলাকা মুখরিত ছিল। এ বছরও পাখি এসেছে, কিন্তু বিলের পানিতে থাকা কচুরিপানা পানির সৌন্দর্য কেড়ে নিয়েছে। এছাড়া মাদকসেবীরা তো রয়েছেই। তিনি বলেন, বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় দিন দিন এলাকাটি সৌন্দর্য হারাচ্ছে। পাহারাদার আতিয়ার রহমান বলেন, মাদকসেবীরা সব সময় ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তাদের কিছু বলতে গেলেই জীবন নাশের হুমকি দেওয়া হয়।
এই ব্যাপারে জানতে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বদরগঞ্জে দায়িত্ব প্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদের সাথে মুঠোফোনে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান সেলফোনে বলেন, কচুরিপানা ইচ্ছে করেই রাখা হয়েছে। কেননা সেখানে পাখি বসে। সেখানে দর্শনার্থীদের বসার স্থান নির্মাণসহ টয়লেট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। অচিরেই সেগুলোর কাজ শুরু হবে। বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সেখানে কিছু কাজ করা হচ্ছে। যা চলমান রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তবে যোগদানের পর এই স্বল্প সময়ে সেখানে যাওয়া এখনো সম্ভব হয়নি।