বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের দারিদ্র্য মানচিত্র ২০২২’ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন মাদারীপুরের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। মানচিত্রে প্রবাসী অধ্যুষিত এই জেলাকে দেশের সবচেয়ে দরিদ্র জেলা এবং দেশের সবচেয়ে গরিব উপজেলা হিসেবে জেলার ডাসার উপজেলাকে উল্লেখ করা হয়েছে। বিবিএসের প্রতিবেদনে সঠিক তথ্য উঠে আসেনি বলে অভিযোগ তুলেছেন জেলার বাসিন্দারা। নতুন করে পুনরায় জরিপের দাবি তাদের।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য দেখে রীতিমতো অবাক হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মাদারীপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সহসভাপতি এনায়েত হোসেন। তিনি বলেন, ‘জেলায় প্রবাসী আয় ছাড়া তেমন কোনো কর্মসংস্থান নেই এটি সত্য। কৃষি খাতেও চাষিরা সচ্ছল নন। জেলায় এখন পর্যন্ত কোনো অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে ওঠেনি। তবে রেমিটেন্সের দিক থেকে এই জেলা অনেক এগিয়ে আছে। এই হিসাবে কোনোভাবেই এই জেলা সবচেয়ে দরিদ্র জেলা হিসেবে উপস্থাপিত হতে পারে না।’
রাজৈর সরকারি কলেজের সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষক নিত্যানন্দ হালদার মতে, মাদারীপুরে এমন কোনো গ্রাম নেই যে গ্রামে প্রবাসী নেই। রাস্তাঘাট, স্কুল কলেজ সবকিছুই অন্য অনেক জেলার তুলনায় উন্নত। সেখানে দরিদ্র জেলা হয় কীভাবে? বিবিএসের এই জরিপ যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে করা হয়নি। এটা হতাশাজনক।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ বিবিএসের দারিদ্র্য মানচিত্র নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সানাউল হক নামের একজন চাকরিজীবী তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করছি, পুরো জেলা ঘুরে ৫৬০টি গরিব পরিবার দেখান? জেলার অন্তত ৯০ ভাগ পরিবারে এক বা একাধিক সদস্য বিদেশে থাকেন। কোনো কোনো পরিবারে দেশে শুধু একজন সদস্য থাকেন, বাকিরা সবাই থাকেন বিদেশে এবং বিদেশে থাকার ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্য নয়, ইতালি-ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের প্রাধান্য বেশি। ইয়াং মানুষ গ্রামেই থাকেন না। যাদের পরিবারে বিদেশে নেই, তাঁদের পরিবারে কর্মক্ষম পুরুষ নেই। সবচেয়ে গরিব উপজেলা নাকি ডাসার। বিবিএসের কর্মকর্তাদের অনুরোধ করব, কোনো দিন ইউরোপ না গেলে গরীবের ইউরোপ হিসেবে ডাসার উপজেলা সদর ঘুরে আসেন।’
মো. বায়েজীদ নামের আরও একজন তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন মনগড়া ও অগ্রহণযোগ্য। কিসের ভিত্তিতে, কাদের তথ্য নিয়ে এই অর্থনৈতিক জরিপ করা হয়েছে, তা প্রশ্নবিদ্ধ!’
এটা একটা ধারণাগত জরিপের ফলাফল উল্লেখ করে সিনহা কমপিউটার ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের স্বত্বাধিকারী ইমদাদুল হক মিলন তার ফেসবুক ব্যবহার করে লিখেছেন, ‘আমার এক ভাই ফ্রান্সে থাকে। আরেক ভাই কানাডা যাচেছ। মাদারীপুর জেলার শিক্ষার হার ৭৫ শতাংশ। দেশের মোট রেমিটেন্সে তৃতীয় অবস্থানে মাদারীপুর। সেই হিসেবে এই জেলা সবচেয়ে দরিদ্র হয় কীভাবে?
বিবিএসের দারিদ্র্য মানচিত্রের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মাদারীপুর জেলার দারিদ্র্যের হার ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে ডাসার উপজেলার দারিদ্র্যের হার ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ। এ ছাড়া মাদারীপুরের উপজেলাগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন দারিদ্র্য ৫০ শতাংশ।
মানচিত্রে দেখা গেছে, দেশের গ্রাম এলাকায় দারিদ্র্য কমেছে, কিন্তু শহর এলাকার দারিদ্র্য বেড়েছে। ২০২২ সালের খানা আয় ব্যয় জরিপে গ্রাম এলাকার দারিদ্র্য ছিল ২০ দশমিক ৫; দারিদ্র্য মানচিত্রে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৩ শতাংশ। খানা জরিপে শহর এলাকায় দারিদ্র্য ছিল ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ; দারিদ্র্য মানচিত্রে তা কমে হয়েছে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুর জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, তিনি ২০২২ সালের ২ অক্টোবর এখানে যোগদান করেন। যোগদানে আগেই এই প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। আর্থসামাজিক নানা বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে এ ধরনের প্রতিবেদন দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘মাদারীপুর জেলাকে সারা দেশের মধ্যে দরিদ্র জেলা ঘোষণা করার প্রতিবেদনটি আমি নিজে দেখছি। আমি নিজেও বিব্রতকর অবস্থায় আছি। কেন এ রকম হলো তা আমিও বুঝতে পারছি না। দেখি, স্যারদের সঙ্গে এ বিষয় কথা বলতে হবে আমার।’
রোববার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের দারিদ্র্য মানচিত্র ২০২২’ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন মাদারীপুরের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। মানচিত্রে প্রবাসী অধ্যুষিত এই জেলাকে দেশের সবচেয়ে দরিদ্র জেলা এবং দেশের সবচেয়ে গরিব উপজেলা হিসেবে জেলার ডাসার উপজেলাকে উল্লেখ করা হয়েছে। বিবিএসের প্রতিবেদনে সঠিক তথ্য উঠে আসেনি বলে অভিযোগ তুলেছেন জেলার বাসিন্দারা। নতুন করে পুনরায় জরিপের দাবি তাদের।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য দেখে রীতিমতো অবাক হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মাদারীপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সহসভাপতি এনায়েত হোসেন। তিনি বলেন, ‘জেলায় প্রবাসী আয় ছাড়া তেমন কোনো কর্মসংস্থান নেই এটি সত্য। কৃষি খাতেও চাষিরা সচ্ছল নন। জেলায় এখন পর্যন্ত কোনো অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে ওঠেনি। তবে রেমিটেন্সের দিক থেকে এই জেলা অনেক এগিয়ে আছে। এই হিসাবে কোনোভাবেই এই জেলা সবচেয়ে দরিদ্র জেলা হিসেবে উপস্থাপিত হতে পারে না।’
রাজৈর সরকারি কলেজের সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষক নিত্যানন্দ হালদার মতে, মাদারীপুরে এমন কোনো গ্রাম নেই যে গ্রামে প্রবাসী নেই। রাস্তাঘাট, স্কুল কলেজ সবকিছুই অন্য অনেক জেলার তুলনায় উন্নত। সেখানে দরিদ্র জেলা হয় কীভাবে? বিবিএসের এই জরিপ যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে করা হয়নি। এটা হতাশাজনক।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ বিবিএসের দারিদ্র্য মানচিত্র নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সানাউল হক নামের একজন চাকরিজীবী তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করছি, পুরো জেলা ঘুরে ৫৬০টি গরিব পরিবার দেখান? জেলার অন্তত ৯০ ভাগ পরিবারে এক বা একাধিক সদস্য বিদেশে থাকেন। কোনো কোনো পরিবারে দেশে শুধু একজন সদস্য থাকেন, বাকিরা সবাই থাকেন বিদেশে এবং বিদেশে থাকার ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্য নয়, ইতালি-ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের প্রাধান্য বেশি। ইয়াং মানুষ গ্রামেই থাকেন না। যাদের পরিবারে বিদেশে নেই, তাঁদের পরিবারে কর্মক্ষম পুরুষ নেই। সবচেয়ে গরিব উপজেলা নাকি ডাসার। বিবিএসের কর্মকর্তাদের অনুরোধ করব, কোনো দিন ইউরোপ না গেলে গরীবের ইউরোপ হিসেবে ডাসার উপজেলা সদর ঘুরে আসেন।’
মো. বায়েজীদ নামের আরও একজন তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন মনগড়া ও অগ্রহণযোগ্য। কিসের ভিত্তিতে, কাদের তথ্য নিয়ে এই অর্থনৈতিক জরিপ করা হয়েছে, তা প্রশ্নবিদ্ধ!’
এটা একটা ধারণাগত জরিপের ফলাফল উল্লেখ করে সিনহা কমপিউটার ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের স্বত্বাধিকারী ইমদাদুল হক মিলন তার ফেসবুক ব্যবহার করে লিখেছেন, ‘আমার এক ভাই ফ্রান্সে থাকে। আরেক ভাই কানাডা যাচেছ। মাদারীপুর জেলার শিক্ষার হার ৭৫ শতাংশ। দেশের মোট রেমিটেন্সে তৃতীয় অবস্থানে মাদারীপুর। সেই হিসেবে এই জেলা সবচেয়ে দরিদ্র হয় কীভাবে?
বিবিএসের দারিদ্র্য মানচিত্রের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মাদারীপুর জেলার দারিদ্র্যের হার ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে ডাসার উপজেলার দারিদ্র্যের হার ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ। এ ছাড়া মাদারীপুরের উপজেলাগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন দারিদ্র্য ৫০ শতাংশ।
মানচিত্রে দেখা গেছে, দেশের গ্রাম এলাকায় দারিদ্র্য কমেছে, কিন্তু শহর এলাকার দারিদ্র্য বেড়েছে। ২০২২ সালের খানা আয় ব্যয় জরিপে গ্রাম এলাকার দারিদ্র্য ছিল ২০ দশমিক ৫; দারিদ্র্য মানচিত্রে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৩ শতাংশ। খানা জরিপে শহর এলাকায় দারিদ্র্য ছিল ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ; দারিদ্র্য মানচিত্রে তা কমে হয়েছে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুর জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, তিনি ২০২২ সালের ২ অক্টোবর এখানে যোগদান করেন। যোগদানে আগেই এই প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। আর্থসামাজিক নানা বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে এ ধরনের প্রতিবেদন দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘মাদারীপুর জেলাকে সারা দেশের মধ্যে দরিদ্র জেলা ঘোষণা করার প্রতিবেদনটি আমি নিজে দেখছি। আমি নিজেও বিব্রতকর অবস্থায় আছি। কেন এ রকম হলো তা আমিও বুঝতে পারছি না। দেখি, স্যারদের সঙ্গে এ বিষয় কথা বলতে হবে আমার।’