পশ্চিম বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী রেলওয়ে জংশন স্টেশন সান্তাহার। ব্রিটিশ সরকারের আমলে গড়ে ওঠা এই স্টেশনটি এক সময় হাজারো রেল কর্মচারীদের পদচারণায় মুখরিত থাকলেও পরবর্তীতে নানা কারণে এবং বিভিন্ন সরকারের অবহেলায় এটি অনেকটা ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। বর্তমানে স্টেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শাখা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই শাখার জায়গাগুলো চলে গেছে অবৈধ দখলদারদের দখলে। সান্তাহার জংশন স্টেশনের কর্মচারীদের বসবাসের জন্য এই শহরে প্রায় আট থেকে নয়শত বাসা ছিল। বর্তমানে রেল জমির পাশাপশি দখলে চলে গেছে সে সকল বাসা। এ ছাড়া শহরের চার থেকে পাঁচটি জায়গায় গড়ে উঠেছে অবৈধ বস্তি। সান্তাহার রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সান্তাহার শহরের পরিত্যক্ত জমির পরিমাণ প্রায় ১০৬ বিঘা।
সান্তাহার স্টেশনকে কেন্দ্র করে সান্তাহার ইয়ার্ড কলোনি, লোকো কলোনি, সাহেবপাড়া, চাবাগান, স্টেশন কলোনি মহল্লায় প্রচুর রেল কর্মচারী বসবাস করতেন। এই কর্মচারীদের বসবাস করার জন্য সারি সারি একতলা বাসা নির্মাণ করা হয়। পাকিস্তানি আমলে সান্তাহার রেলওয়ের বেশিরভাগ কর্মচারী ছিলেন অবাঙালি (বিহারী)।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে বাঙালি-অবাঙালির সংঘর্ষে অবাঙালীরা উচ্ছেদ হলে বাসাগুলো জনমানব শূন্য হয়ে পড়ে। পরে এ সব বাসার টিন, ইট থেকে শুরু করে সবকিছু লুট হয়ে যায়। এক পর্যায়ে জায়গাগুলো পতিত জমিতে পরিণত হয়। রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং অবহেলার কারণে এই বিশাল এলাকা অবৈধ দখল শুরু হয়। বর্তমানে সেখানে শত শত ঘর নির্মাণ করে বিভিন্ন ব্যক্তি অবৈধভাবে বসবাস করছেন।
সরেজমিন সান্তাহার শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পূর্বের দখল করা জায়গা ছাড়াও বর্তমানে নতুন করে রেলভূমি দখল করে পাকা ও আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। এ সকল বাসা নির্মাণে পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদন না লাগায় গড়ে উঠছে একের পর এক বাসা। সান্তাহার জংশন স্টেশনের দক্ষিণ পাশে ছিল বিশাল আকারের ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানী আমলে সান্তাহার ইয়ার্ডে ট্রান্সসিপমেন্ট কাজের জন্য বিশাল এই এলাকা ব্যবহৃত হত। হাজারো রেলওয়ে কর্মচারীদের কর্মব্যস্ততায় এই এলাকা মুখরিত থাকত। সান্তাহার ৭নং ইয়ার্ডে বিশাল এলাকাজুড়ে নানা পণ্যে এই এলাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গোডাউনে চলে যেত। রেলওয়ের আধুনিকায়ন হওয়ায় এই এলাকার অথিকাংশ কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার বর্তমানে এই এলাকা বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এই এলাকার প্রায় ৩০ বিঘা রেলওয়ের জমি বর্তমানে পতিত অবস্থায় পড়ে আছে।
সান্তাহার সাহেবপাড়াখ্যাত এক সময়ের অভিজাত এলাকা বর্তমানে বস্তি এলাকায় পরিণত হয়ে অনেক পতিত জমি স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। এখানেও কয়েকশত রেলওয়ে বাসা বেদখলে চলে গেছে। এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, এখানকার রেলওয়ের ১৮৫ কোয়াটারের ৭৮৭ ইউনিটের ৬৪৭টি ইউনিটই বহিরাগতদের দখলে রয়েছে। সম্প্রতি বগুড়ার সান্তাহার রেলওয়ের জংশনে কোয়াটারে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের অভিযানেও মিলেছে এমন অভিযোগের সত্যতা।
সান্তাহারের লোকো কলোনি এলাকাজুড়ে পততি অবস্থায় পড়ে আছে প্রায় ৩০-৪০ বিঘা জমি। এই এলাকার রেললাইনের কোল ঘেঁসে গড়ে উঠেছে বিশাল বস্তি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভাসমান মানুষ এসব বস্তিতে বসবাস করেন। এই এলাকার বাসিন্দা রহিম উদ্দীন বলেন. রেল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলে এইসব জমি, বাসা, পরিত্যক্ত স্থাপনা ইজারা দিতে পারত। তাহলে সরকারের রাজস্ব আসত। বছরের পর বছর এসব জমি বেদখলে চলে গেছে।
সান্তাহার রেলওয়ের পরিত্যক্ত ১৯ একর জমিতে পুকুর খনন করে অবৈধভাবে চাষাবাদ করতেন কিছু ব্যক্তি। সম্মতি রেল কর্তৃপক্ষের এক ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযানে এসব পুকুর দখলমুক্ত হয়। এ বিষয়ে সান্তাহার রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি বিভাগের কানুনগো মনোয়ার হোসেন বলেন, সান্তাহার রেলওয়ের যে সব জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় অবৈধ দখলদাদের কাছে চলে গেছে, তা উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে। অবিলম্বে সান্তাহার শহরের সকল অবৈধ দখলদারদের দখল থেকে উদ্ধার করা হবে।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে বাংলাদেশ রেলওয়ে, রাজশাহীর মহাব্যস্থাপক (পশ্চিম), অসিম কুমার তালুকদার বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি ভূসম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা আছে। রেলওয়ের যে সব পরিতাক্ত জমি রয়েছে সেই সব জমি ওই নীতিমালার আলোকে পরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
রোববার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
পশ্চিম বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী রেলওয়ে জংশন স্টেশন সান্তাহার। ব্রিটিশ সরকারের আমলে গড়ে ওঠা এই স্টেশনটি এক সময় হাজারো রেল কর্মচারীদের পদচারণায় মুখরিত থাকলেও পরবর্তীতে নানা কারণে এবং বিভিন্ন সরকারের অবহেলায় এটি অনেকটা ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। বর্তমানে স্টেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শাখা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই শাখার জায়গাগুলো চলে গেছে অবৈধ দখলদারদের দখলে। সান্তাহার জংশন স্টেশনের কর্মচারীদের বসবাসের জন্য এই শহরে প্রায় আট থেকে নয়শত বাসা ছিল। বর্তমানে রেল জমির পাশাপশি দখলে চলে গেছে সে সকল বাসা। এ ছাড়া শহরের চার থেকে পাঁচটি জায়গায় গড়ে উঠেছে অবৈধ বস্তি। সান্তাহার রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সান্তাহার শহরের পরিত্যক্ত জমির পরিমাণ প্রায় ১০৬ বিঘা।
সান্তাহার স্টেশনকে কেন্দ্র করে সান্তাহার ইয়ার্ড কলোনি, লোকো কলোনি, সাহেবপাড়া, চাবাগান, স্টেশন কলোনি মহল্লায় প্রচুর রেল কর্মচারী বসবাস করতেন। এই কর্মচারীদের বসবাস করার জন্য সারি সারি একতলা বাসা নির্মাণ করা হয়। পাকিস্তানি আমলে সান্তাহার রেলওয়ের বেশিরভাগ কর্মচারী ছিলেন অবাঙালি (বিহারী)।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে বাঙালি-অবাঙালির সংঘর্ষে অবাঙালীরা উচ্ছেদ হলে বাসাগুলো জনমানব শূন্য হয়ে পড়ে। পরে এ সব বাসার টিন, ইট থেকে শুরু করে সবকিছু লুট হয়ে যায়। এক পর্যায়ে জায়গাগুলো পতিত জমিতে পরিণত হয়। রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং অবহেলার কারণে এই বিশাল এলাকা অবৈধ দখল শুরু হয়। বর্তমানে সেখানে শত শত ঘর নির্মাণ করে বিভিন্ন ব্যক্তি অবৈধভাবে বসবাস করছেন।
সরেজমিন সান্তাহার শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পূর্বের দখল করা জায়গা ছাড়াও বর্তমানে নতুন করে রেলভূমি দখল করে পাকা ও আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। এ সকল বাসা নির্মাণে পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদন না লাগায় গড়ে উঠছে একের পর এক বাসা। সান্তাহার জংশন স্টেশনের দক্ষিণ পাশে ছিল বিশাল আকারের ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানী আমলে সান্তাহার ইয়ার্ডে ট্রান্সসিপমেন্ট কাজের জন্য বিশাল এই এলাকা ব্যবহৃত হত। হাজারো রেলওয়ে কর্মচারীদের কর্মব্যস্ততায় এই এলাকা মুখরিত থাকত। সান্তাহার ৭নং ইয়ার্ডে বিশাল এলাকাজুড়ে নানা পণ্যে এই এলাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গোডাউনে চলে যেত। রেলওয়ের আধুনিকায়ন হওয়ায় এই এলাকার অথিকাংশ কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার বর্তমানে এই এলাকা বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এই এলাকার প্রায় ৩০ বিঘা রেলওয়ের জমি বর্তমানে পতিত অবস্থায় পড়ে আছে।
সান্তাহার সাহেবপাড়াখ্যাত এক সময়ের অভিজাত এলাকা বর্তমানে বস্তি এলাকায় পরিণত হয়ে অনেক পতিত জমি স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। এখানেও কয়েকশত রেলওয়ে বাসা বেদখলে চলে গেছে। এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, এখানকার রেলওয়ের ১৮৫ কোয়াটারের ৭৮৭ ইউনিটের ৬৪৭টি ইউনিটই বহিরাগতদের দখলে রয়েছে। সম্প্রতি বগুড়ার সান্তাহার রেলওয়ের জংশনে কোয়াটারে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের অভিযানেও মিলেছে এমন অভিযোগের সত্যতা।
সান্তাহারের লোকো কলোনি এলাকাজুড়ে পততি অবস্থায় পড়ে আছে প্রায় ৩০-৪০ বিঘা জমি। এই এলাকার রেললাইনের কোল ঘেঁসে গড়ে উঠেছে বিশাল বস্তি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভাসমান মানুষ এসব বস্তিতে বসবাস করেন। এই এলাকার বাসিন্দা রহিম উদ্দীন বলেন. রেল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলে এইসব জমি, বাসা, পরিত্যক্ত স্থাপনা ইজারা দিতে পারত। তাহলে সরকারের রাজস্ব আসত। বছরের পর বছর এসব জমি বেদখলে চলে গেছে।
সান্তাহার রেলওয়ের পরিত্যক্ত ১৯ একর জমিতে পুকুর খনন করে অবৈধভাবে চাষাবাদ করতেন কিছু ব্যক্তি। সম্মতি রেল কর্তৃপক্ষের এক ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযানে এসব পুকুর দখলমুক্ত হয়। এ বিষয়ে সান্তাহার রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি বিভাগের কানুনগো মনোয়ার হোসেন বলেন, সান্তাহার রেলওয়ের যে সব জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় অবৈধ দখলদাদের কাছে চলে গেছে, তা উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে। অবিলম্বে সান্তাহার শহরের সকল অবৈধ দখলদারদের দখল থেকে উদ্ধার করা হবে।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে বাংলাদেশ রেলওয়ে, রাজশাহীর মহাব্যস্থাপক (পশ্চিম), অসিম কুমার তালুকদার বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি ভূসম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা আছে। রেলওয়ের যে সব পরিতাক্ত জমি রয়েছে সেই সব জমি ওই নীতিমালার আলোকে পরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনা চলছে।