সরকারের ‘সমতল ভূমিতে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন প্রকল্প’ ভাগ্য বদলে দিয়েছে রাজশাহীর পবা ও গোদাগাড়ি উপজেলার অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মানুষের। প্রকল্প বাস্তবায়নে এ পর্যন্ত গোদাগাড়ির ও পবা এলাকার ৬ হাজার ১টি পরিবারকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। ইতোমধ্যেই সুফল ভোগী ৩ হাজার ৮৩৩টি পরিবারের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে হাঁস-মুরগি, হাঁস-মুরগি পালনের ঘরসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে গোদাগাড়িতে সুফলভোগীর স্যংখা ৫ হাজার ৩২২ ও পবা উপজেলায় ৬৫৬টি পরিবার। প্রণিসম্পদ বিভাগের সূত্রমতে গোদাগাড়ি উপজেলার সুফলভোগী পরিবারগুলোর মধ্যে ইতোমধ্যেই অনুদান প্রাপ্ত হয়েছে ৩ হাজার ৩৭৭টি পরিবার। অন্যদিকে পবার ৪৫৬টি পরিবার পেয়েছেন এই অনুদান। তৃতীয় দফায় গোদাগাড়ির বাকি ১ হাজার ৯৪৫টি এবং পবার ২২৩টি পরিবারের মধ্যে অনুদান বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন এই দুই উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।
গোদাগাড়ি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শায়লা শারমিন জানান, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে গৃহিত এই প্রকল্পের আওতায় দুই দফায় ১৮০টি পরিবারকে বকনা বাছুর, ১১১টি পরিবারকে এঁড়ে বাছুর, ৭৩৪টি পরিবারকে ২০টি করে ডিমের মুরগি ও ৫৩৫ পরিবারের মাঝে ২০টি করে হাঁসসহ বকনা বাছুরের জন্য ১৭৯.৬ কেজি, এঁড়ে বাছুরের জন্য ২৬৯.৬ কেজি, মুরগীর জন্য ৮৯.৯ কেজি ও হাঁসের জন্য ৮৯.৯ কেজি দানাদার খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া হাঁস মুরগির ঘর, গরুর শেড নির্মাণের জন্য টিন, ইট, পিলার ও প্রয়োজনীয় ওষুধসমগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। পরবর্তী ধাপে উপজেলার বাকি ১ হাজার ৯৪৫টি পরিবার অনুদান সামগ্রী পাবেন।
এ দিকে রাজশাহীর পবা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুব্রত কুমার সরকার জানান, উপজেলার মোট ৬৭৯টি পরিবারকে এই প্রকল্পের আওতায় নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২ দফায় ৪৫৬টি পরিবারের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে হাঁস-মুরগি, গরু, ভেড়াসহ পশুখাদ্য, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ঘর নির্মাণসামগ্রী।
সরজমিনে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে দেখা মিলে গোদাগাড়ি উপজেলার আদর্শ গ্রামের উপকারভোগী সোমিত মারান্ডি দম্পতির সঙ্গে। সোমিত মারান্ডি জানান, ২ বছর আগে তিনি পেয়েছিলেন একটি বকনা বাছুর। সেখান থেকেই আর অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তনের শুরু। অনুদানের এই বকনা পালন করেই তিনি আজ অর্থনৈতিক সাবলম্বি হয়েছেন। তিনি একটি এঁড়ে বিক্রি করে ছেলের বিয়ে দিয়েছেন এবং তার স্ত্রীকে বানিয়ে দিয়েছেন একটি কানের ঝুমনা। এখনও তার রয়েছে গাভিন গাভিসহ আরও ১টি এঁড়ে। তিনি গাভির দুধ বিক্রির পাশাপাশি এই দুধ থেকেই মিটাচ্ছেন পরিবারের সদস্যদের পুষ্টি চাহিদা।
পবা উপজেলার সন্তষপুর খৃষ্টানপাড়া এলাকার উপকারভোগী শাকিলা মার্ডি জানান, ২ বছর পূর্বে প্রকল্প থেকে ২টি ভেড়া পেয়ে তিনি ১৪টি ভেড়ার মালিক হন। সেখান থেকে ৪টি ভেড়া বিক্রি করে সেই অর্থ পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা ও সন্তানদের লেখাপড়ার কাজে লাগিয়েছেন। বর্তমানে তার ছোট বড় মিলিয়ে আরও ১০টি ভেড়া রয়েছে। তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা প্রায়ই পরিদর্শনে আসেন। ভেড়াগুলোর নিয়মিত টিকা, কৃমিনাষক ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ পাওয়ায় উল্লেখযোগ্য রোগবালাই নেই। এতে আগামীতে পারিবারিক আরও সচ্ছলতার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা।
একই গ্রামের আরেক উপকারভোগী কিসলু মার্ডি। তিনি তার জীবন বদলানোর গল্প বলতে গিয়ে আবেগে কেঁদে ফেলেন। তিনি জানান, ২ বছর পূর্বে তিনি পেয়েছিলেন একটি বকনা বাছুর। ইতোমধ্যেই তিনি সেখান থেকে ১টি এঁড়ে বাছুর ও ১টি বকনা বাছুর পেয়েছেন। অনুদানপ্রাপ্ত গাভিটি আবারও গাভিনে রয়েছে। পূর্বের ২টি এঁড়ে ও বকনা বিক্রি করে সেই অর্থ সংসারের উন্নয়নে কাজে লাগিয়েছেন তিনি। পরিবারে ফিরেছে সচ্ছলতা। দৈনিক দুধ বিক্রির টাকা দিয়েই চলে গরুর খাবারসহ তাদের সংসারের দৈনন্দিন খরচ। আর গরু বিক্রির মোট অর্থ কাজে লাগিয়েছেন ঘরবাড়ির উন্নয়নে।
উপকারভোগীদের সফলতা দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এই দুই উপজেলার সদ্য অনুদানপ্রাপ্ত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ। প্রকল্প থেকে অনুদান প্রাপ্ত হাঁস-মুরগি, গরু-ভেড়া পালনের মাধ্যমে তারা অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। তবে সরকারের এই সেবা হতদরিদ্র সকল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়ার দাবি করেছেন এসব এলাকার সুবিধা বঞ্চিতরা।
বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
সরকারের ‘সমতল ভূমিতে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন প্রকল্প’ ভাগ্য বদলে দিয়েছে রাজশাহীর পবা ও গোদাগাড়ি উপজেলার অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মানুষের। প্রকল্প বাস্তবায়নে এ পর্যন্ত গোদাগাড়ির ও পবা এলাকার ৬ হাজার ১টি পরিবারকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। ইতোমধ্যেই সুফল ভোগী ৩ হাজার ৮৩৩টি পরিবারের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে হাঁস-মুরগি, হাঁস-মুরগি পালনের ঘরসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে গোদাগাড়িতে সুফলভোগীর স্যংখা ৫ হাজার ৩২২ ও পবা উপজেলায় ৬৫৬টি পরিবার। প্রণিসম্পদ বিভাগের সূত্রমতে গোদাগাড়ি উপজেলার সুফলভোগী পরিবারগুলোর মধ্যে ইতোমধ্যেই অনুদান প্রাপ্ত হয়েছে ৩ হাজার ৩৭৭টি পরিবার। অন্যদিকে পবার ৪৫৬টি পরিবার পেয়েছেন এই অনুদান। তৃতীয় দফায় গোদাগাড়ির বাকি ১ হাজার ৯৪৫টি এবং পবার ২২৩টি পরিবারের মধ্যে অনুদান বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন এই দুই উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।
গোদাগাড়ি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শায়লা শারমিন জানান, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে গৃহিত এই প্রকল্পের আওতায় দুই দফায় ১৮০টি পরিবারকে বকনা বাছুর, ১১১টি পরিবারকে এঁড়ে বাছুর, ৭৩৪টি পরিবারকে ২০টি করে ডিমের মুরগি ও ৫৩৫ পরিবারের মাঝে ২০টি করে হাঁসসহ বকনা বাছুরের জন্য ১৭৯.৬ কেজি, এঁড়ে বাছুরের জন্য ২৬৯.৬ কেজি, মুরগীর জন্য ৮৯.৯ কেজি ও হাঁসের জন্য ৮৯.৯ কেজি দানাদার খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া হাঁস মুরগির ঘর, গরুর শেড নির্মাণের জন্য টিন, ইট, পিলার ও প্রয়োজনীয় ওষুধসমগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। পরবর্তী ধাপে উপজেলার বাকি ১ হাজার ৯৪৫টি পরিবার অনুদান সামগ্রী পাবেন।
এ দিকে রাজশাহীর পবা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুব্রত কুমার সরকার জানান, উপজেলার মোট ৬৭৯টি পরিবারকে এই প্রকল্পের আওতায় নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২ দফায় ৪৫৬টি পরিবারের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে হাঁস-মুরগি, গরু, ভেড়াসহ পশুখাদ্য, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ঘর নির্মাণসামগ্রী।
সরজমিনে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে দেখা মিলে গোদাগাড়ি উপজেলার আদর্শ গ্রামের উপকারভোগী সোমিত মারান্ডি দম্পতির সঙ্গে। সোমিত মারান্ডি জানান, ২ বছর আগে তিনি পেয়েছিলেন একটি বকনা বাছুর। সেখান থেকেই আর অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তনের শুরু। অনুদানের এই বকনা পালন করেই তিনি আজ অর্থনৈতিক সাবলম্বি হয়েছেন। তিনি একটি এঁড়ে বিক্রি করে ছেলের বিয়ে দিয়েছেন এবং তার স্ত্রীকে বানিয়ে দিয়েছেন একটি কানের ঝুমনা। এখনও তার রয়েছে গাভিন গাভিসহ আরও ১টি এঁড়ে। তিনি গাভির দুধ বিক্রির পাশাপাশি এই দুধ থেকেই মিটাচ্ছেন পরিবারের সদস্যদের পুষ্টি চাহিদা।
পবা উপজেলার সন্তষপুর খৃষ্টানপাড়া এলাকার উপকারভোগী শাকিলা মার্ডি জানান, ২ বছর পূর্বে প্রকল্প থেকে ২টি ভেড়া পেয়ে তিনি ১৪টি ভেড়ার মালিক হন। সেখান থেকে ৪টি ভেড়া বিক্রি করে সেই অর্থ পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা ও সন্তানদের লেখাপড়ার কাজে লাগিয়েছেন। বর্তমানে তার ছোট বড় মিলিয়ে আরও ১০টি ভেড়া রয়েছে। তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা প্রায়ই পরিদর্শনে আসেন। ভেড়াগুলোর নিয়মিত টিকা, কৃমিনাষক ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ পাওয়ায় উল্লেখযোগ্য রোগবালাই নেই। এতে আগামীতে পারিবারিক আরও সচ্ছলতার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা।
একই গ্রামের আরেক উপকারভোগী কিসলু মার্ডি। তিনি তার জীবন বদলানোর গল্প বলতে গিয়ে আবেগে কেঁদে ফেলেন। তিনি জানান, ২ বছর পূর্বে তিনি পেয়েছিলেন একটি বকনা বাছুর। ইতোমধ্যেই তিনি সেখান থেকে ১টি এঁড়ে বাছুর ও ১টি বকনা বাছুর পেয়েছেন। অনুদানপ্রাপ্ত গাভিটি আবারও গাভিনে রয়েছে। পূর্বের ২টি এঁড়ে ও বকনা বিক্রি করে সেই অর্থ সংসারের উন্নয়নে কাজে লাগিয়েছেন তিনি। পরিবারে ফিরেছে সচ্ছলতা। দৈনিক দুধ বিক্রির টাকা দিয়েই চলে গরুর খাবারসহ তাদের সংসারের দৈনন্দিন খরচ। আর গরু বিক্রির মোট অর্থ কাজে লাগিয়েছেন ঘরবাড়ির উন্নয়নে।
উপকারভোগীদের সফলতা দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এই দুই উপজেলার সদ্য অনুদানপ্রাপ্ত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ। প্রকল্প থেকে অনুদান প্রাপ্ত হাঁস-মুরগি, গরু-ভেড়া পালনের মাধ্যমে তারা অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। তবে সরকারের এই সেবা হতদরিদ্র সকল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়ার দাবি করেছেন এসব এলাকার সুবিধা বঞ্চিতরা।