নওগাঁর মহাদেবপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের সময়মত হাজির হওয়া, নিয়মিত উপজেলা, জেলা ও মন্ত্রণালয়ের সাথে সংযুক্ত থাকার জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট টাইম এটেন্ডেন্স মেশিন ক্রয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার একশ’টির বেশি বিদ্যালয়ে এসব মেশিন বাজারে প্রচলিত দামের চেয়ে তিনগুণ বেশি দামে কেনা দেখানো হয়েছে। এতে আত্মসাৎ করা হয়েছে ১২ লাখ টাকার বেশি। বিষয়টি জানাজানি হলেও অজ্ঞাত কারণে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোনই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
২০ লাখ টাকার মেশিন কিনলেও উপজেলার কোন বিদ্যালয়ে এখনও এটি চালুই হয়নি। স্থানীয়রা বলছেন সরকারি অর্থ তছরুপ করতেই এই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় বিদ্যালয়গুলোতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা মুখ থুবড়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলায় মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৩৫টি। এগুলোর প্রত্যেকটির বিবিধ ব্যয় পরিচালনার জন্য প্রতিবছর ৫০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ করা হয়। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের যাবতীয় খুটিনাটি কাজে স্লিপের মাধ্যমে এ টাকা ব্যয় করে থাকেন। ২০১৯ সালে কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দেন ওই স্লিপের টাকা থেকে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট টাইম মেশিন কেনার। সেসময় উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে দুটি গ্রুপ বিদ্যমান ছিল। এক গ্রুপের নেতৃত্ব দিতেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সহকারি প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন। অপর গ্রুপে নেতৃত্ব দিতেন সহকারি প্রধান শিক্ষক বাণী ইসরাইল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, তখন শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনের মনোনীত কোম্পানীর কাছ থেকে একশ’র বেশি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কে৫০এ মডেলের ফিঙ্গারপ্রিন্ট টাইম এটেন্ডেন্স মেশিন কেনেন চড়া দামে। অপরদিকে শিক্ষক বাণী ইসরাইলের মনোনীত কোম্পানীর কাছ থেকে ২০টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একই মডেলের ওই মেশিন কেনেন এক তৃতীয়াংশ দামে।
উপজেলার নুরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেশিন কেনার রশিদে দেখা যায়, মেশিনটি কেনা হয়েছে মহাদেবপুর উপজেলা সদরের শাবি এন্টারপ্রাইজ থেকে। ওই দোকানের ১৫.৫.২০১৯ তারিখের ৬৫৫ নং ক্যাশমেমোতে দেখা যায় জেডকেটিইসিও কে৫০এ মডেলের ফিঙ্গারপ্রিন্ট টাইম এটেন্ডেন্স মেশিনটির দাম ধরা হয়েছে ছয় হাজার টাকা। এই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন বাণী ইসরাইল। অপরদিকে উপজেলার চকরাজা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এ মেশিন কেনার রশিদে দেখা যায়, চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার নয়ালাভাঙ্গা এলাকার ইউনিফিক্স টেকনোলজিক্স নামক দোকানের একটি নম্বরবিহীন ক্যাশমেমো। তারিখের ঘর কাটাকাটি করে লেখা ২৯.৭.২০১৯। একই মডেলের মেশিনের দাম লেখা হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। তখন এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন আলতাফ হোসেন।
বর্তমানে বামনসাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি ট্রেনিংয়ে থাকার সময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রওশন আরা মেশিনটি কিনেছিলেন। রওশন আরা সম্পর্কে শিক্ষক নেতা দেলোয়ার হোসেনের ভাগ্নি। ট্রেনিং থেকে ফিরে দায়িত্ব নিয়ে তিনি এই ভূয়া ভাউচার দাখিলের প্রতিবাদ করলে রওশন আরা ছয় হাজার টাকা বিদ্যালয়ের তহবিলে ফেরৎ দেন। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে রওশন আরা আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে মিথ্যা শ্লিলতাহানির অভিযোগ দেন। তদন্তে সে অভিযোগ প্রমাণ না হলে রওশন আরা চাকরি ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যান।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিষয়টি জানতে উপজেলার পাহাড়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন ওই বিদ্যালয়ে কেনা মেশিনটি আলমারি থেকে বের করে নতুন প্যাকেট খুলে দেখান। তিনি বলেন এটি নষ্ট। কিন্তু স্লুইচে চাপ দিলে মেশিনটি চালু হয়। এটি কেন চালানো হয়না সেবিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি। তার মনোনীত কোম্পানিতে মেশিনগুলোর দাম এত বেশি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার মেশিনের সাথে সফ্টওয়্যার রয়েছে। তাই দাম বেশি। কিন্তু সে সফ্টওয়ার কেন সরবরাহ করা হয়নি, কিংবা মহাদেবপুরেই এই মেশিন পাওয়া গেলেও সুদুর চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে কেন কিনতে হলো এসবের কোন জবাব তিনি দিতে পারেননি। তিনি দাবি করেন যে, দেশের কোথাও এই প্রকল্প চালু নেই।
জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাফিয়া আকতার অপু বলেন, এই মেশিন কেনার সময় তিনি মহাদেবপুরে কর্মরত ছিলেন না। সুতরাং বিষয়টি সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, তখন বিষয়টি গুরুত্বহীন হয়ে পড়ায় প্রকল্পটি চালুর ব্যাপারে আর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অনিয়মের ব্যাপারেও কেউ দেখভালের উদ্যোগ নেয়নি।
বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করে ভুয়া ভাউচার দিয়ে সরকারের সাথে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রকল্পটি অবিলম্বে চালুর দাবি স্থানীয়দের।
রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
নওগাঁর মহাদেবপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের সময়মত হাজির হওয়া, নিয়মিত উপজেলা, জেলা ও মন্ত্রণালয়ের সাথে সংযুক্ত থাকার জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট টাইম এটেন্ডেন্স মেশিন ক্রয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার একশ’টির বেশি বিদ্যালয়ে এসব মেশিন বাজারে প্রচলিত দামের চেয়ে তিনগুণ বেশি দামে কেনা দেখানো হয়েছে। এতে আত্মসাৎ করা হয়েছে ১২ লাখ টাকার বেশি। বিষয়টি জানাজানি হলেও অজ্ঞাত কারণে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোনই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
২০ লাখ টাকার মেশিন কিনলেও উপজেলার কোন বিদ্যালয়ে এখনও এটি চালুই হয়নি। স্থানীয়রা বলছেন সরকারি অর্থ তছরুপ করতেই এই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় বিদ্যালয়গুলোতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা মুখ থুবড়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলায় মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৩৫টি। এগুলোর প্রত্যেকটির বিবিধ ব্যয় পরিচালনার জন্য প্রতিবছর ৫০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ করা হয়। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের যাবতীয় খুটিনাটি কাজে স্লিপের মাধ্যমে এ টাকা ব্যয় করে থাকেন। ২০১৯ সালে কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দেন ওই স্লিপের টাকা থেকে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট টাইম মেশিন কেনার। সেসময় উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে দুটি গ্রুপ বিদ্যমান ছিল। এক গ্রুপের নেতৃত্ব দিতেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সহকারি প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন। অপর গ্রুপে নেতৃত্ব দিতেন সহকারি প্রধান শিক্ষক বাণী ইসরাইল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, তখন শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনের মনোনীত কোম্পানীর কাছ থেকে একশ’র বেশি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কে৫০এ মডেলের ফিঙ্গারপ্রিন্ট টাইম এটেন্ডেন্স মেশিন কেনেন চড়া দামে। অপরদিকে শিক্ষক বাণী ইসরাইলের মনোনীত কোম্পানীর কাছ থেকে ২০টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একই মডেলের ওই মেশিন কেনেন এক তৃতীয়াংশ দামে।
উপজেলার নুরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেশিন কেনার রশিদে দেখা যায়, মেশিনটি কেনা হয়েছে মহাদেবপুর উপজেলা সদরের শাবি এন্টারপ্রাইজ থেকে। ওই দোকানের ১৫.৫.২০১৯ তারিখের ৬৫৫ নং ক্যাশমেমোতে দেখা যায় জেডকেটিইসিও কে৫০এ মডেলের ফিঙ্গারপ্রিন্ট টাইম এটেন্ডেন্স মেশিনটির দাম ধরা হয়েছে ছয় হাজার টাকা। এই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন বাণী ইসরাইল। অপরদিকে উপজেলার চকরাজা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এ মেশিন কেনার রশিদে দেখা যায়, চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার নয়ালাভাঙ্গা এলাকার ইউনিফিক্স টেকনোলজিক্স নামক দোকানের একটি নম্বরবিহীন ক্যাশমেমো। তারিখের ঘর কাটাকাটি করে লেখা ২৯.৭.২০১৯। একই মডেলের মেশিনের দাম লেখা হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। তখন এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন আলতাফ হোসেন।
বর্তমানে বামনসাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি ট্রেনিংয়ে থাকার সময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রওশন আরা মেশিনটি কিনেছিলেন। রওশন আরা সম্পর্কে শিক্ষক নেতা দেলোয়ার হোসেনের ভাগ্নি। ট্রেনিং থেকে ফিরে দায়িত্ব নিয়ে তিনি এই ভূয়া ভাউচার দাখিলের প্রতিবাদ করলে রওশন আরা ছয় হাজার টাকা বিদ্যালয়ের তহবিলে ফেরৎ দেন। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে রওশন আরা আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে মিথ্যা শ্লিলতাহানির অভিযোগ দেন। তদন্তে সে অভিযোগ প্রমাণ না হলে রওশন আরা চাকরি ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যান।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিষয়টি জানতে উপজেলার পাহাড়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন ওই বিদ্যালয়ে কেনা মেশিনটি আলমারি থেকে বের করে নতুন প্যাকেট খুলে দেখান। তিনি বলেন এটি নষ্ট। কিন্তু স্লুইচে চাপ দিলে মেশিনটি চালু হয়। এটি কেন চালানো হয়না সেবিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি। তার মনোনীত কোম্পানিতে মেশিনগুলোর দাম এত বেশি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার মেশিনের সাথে সফ্টওয়্যার রয়েছে। তাই দাম বেশি। কিন্তু সে সফ্টওয়ার কেন সরবরাহ করা হয়নি, কিংবা মহাদেবপুরেই এই মেশিন পাওয়া গেলেও সুদুর চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে কেন কিনতে হলো এসবের কোন জবাব তিনি দিতে পারেননি। তিনি দাবি করেন যে, দেশের কোথাও এই প্রকল্প চালু নেই।
জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাফিয়া আকতার অপু বলেন, এই মেশিন কেনার সময় তিনি মহাদেবপুরে কর্মরত ছিলেন না। সুতরাং বিষয়টি সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, তখন বিষয়টি গুরুত্বহীন হয়ে পড়ায় প্রকল্পটি চালুর ব্যাপারে আর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অনিয়মের ব্যাপারেও কেউ দেখভালের উদ্যোগ নেয়নি।
বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করে ভুয়া ভাউচার দিয়ে সরকারের সাথে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রকল্পটি অবিলম্বে চালুর দাবি স্থানীয়দের।