আজ ৬ মার্চ, মেধাবী ছাত্র তারভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার একযুগ পূর্ণ হল। ১২ বছর আগে ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে ভেসে উঠেছিল ত্বকীর নিস্তেজ মরদেহ। কিন্তু এতগুলো বছরেও শুরু হয়নি এ হত্যাকান্ডের বিচারকাজ।
দীর্ঘদিন মামলার তদন্ত কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে ছয়জন গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে গতিশীল হয় মামলাটি। যা নিহতের পরিবারের মাঝে ন্যায়বিচারের আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু ফের কোনো এক অজানা কারণে স্থবির হয়ে আছে তদন্ত কার্যক্রম। অন্তবর্তী সরকারের গত ৭ মাসেও তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)।
তবু বিচারের অপেক্ষায় ত্বকীর স্বজনরা। বিশ্বাস করেন, বিচার একদিন হবেই। তাই ত্বকীরসহ সকল হত্যা ও অবিচারের কথা তুলে ধরে প্রতিমাসের ৮ তারিখ নিয়মিত কর্মসূচী পালন ও বিচারের দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন তারা।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকেলে শহরের শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয় মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। পরদিন মেধাবী এই কিশোরের এ লেভেল পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। ত্বকী পদার্থবিজ্ঞানে সারাবিশ্বে ও রসায়নে বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পায়। তবে রেজাল্টশিট দেখার সৌভাগ্য হয়নি তার। দুই দিন পর ৮ মার্চ সকালে শহরের পাঁচ নম্বর ঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যার শাখা খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়। সেদিন রাতেই অজ্ঞাত আসামি করে সদর থানায় মামলা হয়।
পরে ১৮ মার্চ সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, জেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা জহিরুল ইসলাম পারভেজ ওরফে ক্যাঙারু পারভেজ, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাজীব দাস, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সালেহ রহমান সীমান্ত ও রিফাতকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে একটি অবগতিপত্র দেন রফিউর রাব্বি।
শুরুতে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা তদন্ত করলেও উচ্চ আদালতের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব-১১। হত্যাকান্ডের এক বছরের মাথায় সংবাদ সম্মেলন করে র্যাবের তৎকালীন ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, ত্বকী হত্যার কারণ স্পষ্ট, আসামিও চিহ্নিত। অভিযোগপত্রও প্রায় তৈরি। অল্প সময়ের মধ্যে তা আদালতে দাখিল করা হবে।
নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক সংগঠক রফিউর রাব্বিকে ‘শায়েস্তা করতেই’ তার বড় ছেলে ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানায় র্যাবের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। র্যাব জানায়, ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন রফিউর রাব্বি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন একেএম শামীম ওসমান। এছাড়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহনের মালিকেরা ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন। রাব্বি এই চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। এসব কারণেই বাবার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে শায়েস্তা করতে ছেলেকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়।
আজমেরী ওসমানের ‘পরিকল্পনা, নির্দেশ ও সক্রিয় অংশগ্রহণে’ এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে বলেও জানায় র্যাব। আজমেরী সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির নেতা প্রয়াত নাসিম ওসমানের ছেলে এবং বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাতিজা।
খসড়া অভিযোগপত্রে এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ১১ জনের নাম উল্লেখ করে র্যাব। যার মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত থাকায় কথা জানিয়ে ইউসুফ হোসেন লিটন ও সুলতান শওকত ভ্রমর ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয়। পরবর্তীতে তারা জামিনে বেড়িয়ে আসে।
ত্বকী হত্যায় প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সম্পৃক্ততা থাকায় তাদের বাঁচাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নির্দেশে’ এই তদন্ত আটকে ছিল বলে বরাবরই অভিযোগ করেছেন ত্বকীর পরিবার।
গত ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলাটি গতি পায়। গত সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। র্যাব জানিয়েছিল তারা সবাই আজমেরী ওসমানের ঘনিষ্ঠজন। আজমেরী ওসমান প্রয়াত সংসদ সদস্য একেএম নাসিম ওসমানের ছেলে ও সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ভাতিজা।
তাদের মধ্যে আজমেরীর সহযোগী কাজল হাওলাদার একজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া, আজমেরীর গাড়িচালক মো. জামশেদ, আত্মীয় আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে জামাই মামুন, সহযোগী শাফায়েত হোসেন শিপন, মামুন মিয়া ও ইয়ার মোহাম্মদ রিমাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পর কারাগারে আছেন।
গত সেপ্টেম্বরে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা জানিয়েছিলেন ‘প্রচ্ছন্ন চাপে’ অনেক বছর আটকে থাকলেও তারা এখন মামলাটির তদন্ত দ্রুত শেষ করতে চান। তিন মাসের মধ্যে মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তা আর হয়নি, তদন্তকারী সংস্থাটির অধিনায়ক এবং মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা দু’জনই বদলি হয়েছেন।
তবে বর্তমান অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন মামলাটি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে এখনও আশাবাদী ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি। তিনি বলেন, ‘একবছরের মাথায় র্যাবের তদন্তে সব বেরিয়ে এসেছিল। ওসমান পরিবারের টর্চার সেলে ত্বকীকে কীভাবে হত্যা করে শীতলক্ষ্যায় লাশ ফেলা হলো সবই সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল র্যাব। কিন্তু যখনই শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে ওসমান পরিবারের পাশে থাকার ঘোষণা দিলেন, তখনই এই মামলার সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।’
‘অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এই মামলায় ছয়জন গ্রেপ্তার হয়েছেন, একজন আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে। মামলাটা এগোচ্ছে, আশা করি দ্রুতই শেষ হবে। তবে, দায়সারা নয়, দোষি সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে নির্ভুল অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিতে হবে। প্রয়োজনে সময় নিক। এতদিন যেহেতু অপেক্ষা করা গেছে, আরও কিছুদিন যাবে।’
গত ২ মার্চ দ্রুত অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়ে বিচার শুরুর দাবি জানিয়েছেন বিবৃতি দেন দেশের ১৫ জন বিশিষ্ট নাগরিক। বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর অপরাধীদের কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিলে মামলাটি নতুন গতি পায়, যা আমাদের আশাবাদী করেছিল। কিন্তু বর্তমানে আবারও বিচার প্রক্রিয়ায় স্থবিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমরা দ্রুত অভিযোগপত্র জমা দিয়ে, বিচার কার্যক্রম শুরুর দাবি জানাই।’
বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ ২০২৫
আজ ৬ মার্চ, মেধাবী ছাত্র তারভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার একযুগ পূর্ণ হল। ১২ বছর আগে ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে ভেসে উঠেছিল ত্বকীর নিস্তেজ মরদেহ। কিন্তু এতগুলো বছরেও শুরু হয়নি এ হত্যাকান্ডের বিচারকাজ।
দীর্ঘদিন মামলার তদন্ত কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে ছয়জন গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে গতিশীল হয় মামলাটি। যা নিহতের পরিবারের মাঝে ন্যায়বিচারের আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু ফের কোনো এক অজানা কারণে স্থবির হয়ে আছে তদন্ত কার্যক্রম। অন্তবর্তী সরকারের গত ৭ মাসেও তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)।
তবু বিচারের অপেক্ষায় ত্বকীর স্বজনরা। বিশ্বাস করেন, বিচার একদিন হবেই। তাই ত্বকীরসহ সকল হত্যা ও অবিচারের কথা তুলে ধরে প্রতিমাসের ৮ তারিখ নিয়মিত কর্মসূচী পালন ও বিচারের দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন তারা।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকেলে শহরের শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয় মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। পরদিন মেধাবী এই কিশোরের এ লেভেল পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। ত্বকী পদার্থবিজ্ঞানে সারাবিশ্বে ও রসায়নে বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পায়। তবে রেজাল্টশিট দেখার সৌভাগ্য হয়নি তার। দুই দিন পর ৮ মার্চ সকালে শহরের পাঁচ নম্বর ঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যার শাখা খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়। সেদিন রাতেই অজ্ঞাত আসামি করে সদর থানায় মামলা হয়।
পরে ১৮ মার্চ সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, জেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা জহিরুল ইসলাম পারভেজ ওরফে ক্যাঙারু পারভেজ, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাজীব দাস, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সালেহ রহমান সীমান্ত ও রিফাতকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে একটি অবগতিপত্র দেন রফিউর রাব্বি।
শুরুতে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা তদন্ত করলেও উচ্চ আদালতের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব-১১। হত্যাকান্ডের এক বছরের মাথায় সংবাদ সম্মেলন করে র্যাবের তৎকালীন ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, ত্বকী হত্যার কারণ স্পষ্ট, আসামিও চিহ্নিত। অভিযোগপত্রও প্রায় তৈরি। অল্প সময়ের মধ্যে তা আদালতে দাখিল করা হবে।
নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক সংগঠক রফিউর রাব্বিকে ‘শায়েস্তা করতেই’ তার বড় ছেলে ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানায় র্যাবের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। র্যাব জানায়, ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন রফিউর রাব্বি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন একেএম শামীম ওসমান। এছাড়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহনের মালিকেরা ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন। রাব্বি এই চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। এসব কারণেই বাবার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে শায়েস্তা করতে ছেলেকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়।
আজমেরী ওসমানের ‘পরিকল্পনা, নির্দেশ ও সক্রিয় অংশগ্রহণে’ এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে বলেও জানায় র্যাব। আজমেরী সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির নেতা প্রয়াত নাসিম ওসমানের ছেলে এবং বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাতিজা।
খসড়া অভিযোগপত্রে এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ১১ জনের নাম উল্লেখ করে র্যাব। যার মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত থাকায় কথা জানিয়ে ইউসুফ হোসেন লিটন ও সুলতান শওকত ভ্রমর ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয়। পরবর্তীতে তারা জামিনে বেড়িয়ে আসে।
ত্বকী হত্যায় প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সম্পৃক্ততা থাকায় তাদের বাঁচাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নির্দেশে’ এই তদন্ত আটকে ছিল বলে বরাবরই অভিযোগ করেছেন ত্বকীর পরিবার।
গত ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলাটি গতি পায়। গত সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। র্যাব জানিয়েছিল তারা সবাই আজমেরী ওসমানের ঘনিষ্ঠজন। আজমেরী ওসমান প্রয়াত সংসদ সদস্য একেএম নাসিম ওসমানের ছেলে ও সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ভাতিজা।
তাদের মধ্যে আজমেরীর সহযোগী কাজল হাওলাদার একজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া, আজমেরীর গাড়িচালক মো. জামশেদ, আত্মীয় আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে জামাই মামুন, সহযোগী শাফায়েত হোসেন শিপন, মামুন মিয়া ও ইয়ার মোহাম্মদ রিমাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পর কারাগারে আছেন।
গত সেপ্টেম্বরে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা জানিয়েছিলেন ‘প্রচ্ছন্ন চাপে’ অনেক বছর আটকে থাকলেও তারা এখন মামলাটির তদন্ত দ্রুত শেষ করতে চান। তিন মাসের মধ্যে মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তা আর হয়নি, তদন্তকারী সংস্থাটির অধিনায়ক এবং মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা দু’জনই বদলি হয়েছেন।
তবে বর্তমান অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন মামলাটি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে এখনও আশাবাদী ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি। তিনি বলেন, ‘একবছরের মাথায় র্যাবের তদন্তে সব বেরিয়ে এসেছিল। ওসমান পরিবারের টর্চার সেলে ত্বকীকে কীভাবে হত্যা করে শীতলক্ষ্যায় লাশ ফেলা হলো সবই সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল র্যাব। কিন্তু যখনই শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে ওসমান পরিবারের পাশে থাকার ঘোষণা দিলেন, তখনই এই মামলার সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।’
‘অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এই মামলায় ছয়জন গ্রেপ্তার হয়েছেন, একজন আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে। মামলাটা এগোচ্ছে, আশা করি দ্রুতই শেষ হবে। তবে, দায়সারা নয়, দোষি সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে নির্ভুল অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিতে হবে। প্রয়োজনে সময় নিক। এতদিন যেহেতু অপেক্ষা করা গেছে, আরও কিছুদিন যাবে।’
গত ২ মার্চ দ্রুত অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়ে বিচার শুরুর দাবি জানিয়েছেন বিবৃতি দেন দেশের ১৫ জন বিশিষ্ট নাগরিক। বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর অপরাধীদের কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিলে মামলাটি নতুন গতি পায়, যা আমাদের আশাবাদী করেছিল। কিন্তু বর্তমানে আবারও বিচার প্রক্রিয়ায় স্থবিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমরা দ্রুত অভিযোগপত্র জমা দিয়ে, বিচার কার্যক্রম শুরুর দাবি জানাই।’