চাঁদপুরে এবার বেশি জমিতে আলু চাষাবাদ হবার পর কোল্ডস্টোরেজে উঠা শুরু করেছে কৃষকের সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমির উৎপাদিত ২ লাখ মে.টন আলু। চলতি রবি মৌসুমে সাড়ে ৭ হাজার হেক্টরে আলু উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার মে.টন। ট্রাক বা ছোট ছোট পিকাপ করে জেলার ১২ টি কোল্ড স্টোরেজে পাঠানো হচ্ছে। দিন-রাত চাষীরা আলু ঘরে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। চালকরা চলতি রমজান ও আসন্ন ঈদুল ফিতরের জন্যে আয়-রোজগার করার লক্ষ্যে রাত-বেরাত আলু ভর্তি ট্রাক মিনি ট্রাক ,পিকাপ ও অটো দিয়ে পরিবহন করে কোল্ডস্টোরেজ নিয়ে যাচ্ছে ।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, কৃষকরা এখন মাঠ থেকে আলু বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা গেলেও, দাম নিয়ে রয়েছেন ব্যাপক দুশ্চিন্তায়।
আলু উৎপাদনে চাঁদপুর দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। মুন্সিগঞ্জের পরেই চাঁদপুর জেলা রয়েছে- উৎপাদনের তুলনামূলক হিসেবের তালিকায়। এ বছর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৭ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয় আলু। এ জেলা একটি নদীবিধৌত কৃষিভিক্তিক অঞ্চল বিধায় কৃষকরা সময়মত চাষাবাদ,বীজবপন ও সঠিক পরিচর্যায় পারদর্শী বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
তথ্য মতে,উপজেলাওয়ারী দেখা যায় - এবার চাঁদপুর সদরে এবার আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৭শ হেক্টর ও উৎপাদন ৪৪ হাজার ২শ মে.টন। মতলব উত্তরে ৬শ ৫০ হেক্টর ও উৎপাদন ১৬ হাজার ৯শ মে.টন। মতলব দক্ষিণে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৩শ হেক্টর ও উৎপাদন ৫৯ হাজার ৮শ মে.টন, হাজীগঞ্জে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৫শ ২৫ হেক্টর ও উৎপাদন ১৩ হাজার ৬শ ৫০ মে.টন, শাহরাস্তিতে চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রা ৪০ হেক্টর ও উৎপাদন ১ হাজার ৪শ মে.টন এবং কচুয়ায় চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ২০ হেক্টর ও উৎপাদন ৫২ হাজার ৫শ ২০ মে.টন,ফরিদগঞ্জে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৯৫ হেক্টর ও উৎপাদন ২ হাজার ৪শ ৯০ মে.টন এবং হাইমচরে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১শ ৭০ হেক্টর ও উৎপাদন ৪ হাজার ২শ ৩০ মে.টন। এ সব আলু দু’ থেকে আড়াই মাস পর খেত থেকে উঠানো হয়েছে।
এদিকে জেলা ব্যাংকগুলো যথারীতি ফসল ঋণ প্রদান করে কৃষিপণ্য উৎপাদনে ব্যাপক সহায়তা দিচ্ছে। বর্তমানে নতুন আলু উঠেছে বাজারে। যার কেজি খুচরা মূল্য ২০-২৫ টাকা। নতুন আলু মুন্সিগঞ্জ, বগুড়া, রংপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকেও চাঁদপুরে আসতে দেখা যায়। চাঁদপুরে মৌসুমের শুরুতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা তাদের জমিতে কিছুটা বিলম্বে আলু আবাদ করেছে। বিগত ক’বছর ধরেই চাঁদপুরে ব্যাপক আলু উৎপাদন হচ্ছে।
বিশেষ করে আলু বেশি উৎপাদনকারী স্থানগুলো হচ্ছে, সফরমালী, রালদিয়া, মুন্সীরহাট, কুমারডুগি, শাহাতলী, শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন, মহামায়া, বালিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে। হাজীগঞ্জের বলাখাল ও মতলব দক্ষিণের নারায়নপুর, কাশিমপুর, খাদেরগাও এলাকায়। কৃষকরা জানান, বর্তমান তারা লাঙ্গলের পরিবর্তে ট্রাক্টর, হোচার পরিবর্তে বিদ্যুৎ চালিত স্যালো সেচ ব্যবস্থায়, গোবরের সারের পরিবর্তে বিভিন্ন প্রকার উন্নত রাসায়নিক সার ব্যবহার, উন্নত বীজ,পরিমিত কীটনাশকের ব্যবহার,নতুন নতুন জাতের উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশে থাকলে আলুর বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চাঁদপুরে ১২টি হিমাগারে ৭০ হাজার মে.টন আলু সংরক্ষণ করার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। বাকি আলু হিমাগারের বাহিরে রাখা হয়ে থাকে। এর মধ্যে কিছু পরিমাণ আলু উৎপাদন মৌসুম থেকে বিক্রি হয়ে আসছে এবং বাকি আলু কৃষকগণ কৃষি বিভাগের পরামর্শে কৃত্রিমভাবে মাচায় সংরক্ষণ করবে বলে কৃষি অফিস জানিয়েছে।
চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো. মোবারক হোসেন জানান, চাঁদপুরে এবারও ব্যাপক আলুর চাষাবাদ হয়েছে। আশা করি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী হবে । সরকার এবার বীজ,সার ও নগদ অর্থ প্রণোদনা হিসেবে দিয়েছে। এবার প্রায় ৮০ হাজার কৃষক প্রণোদনা গ্রহণ করে কৃষি উৎপাদন কাজে লাগাতে পারবে।
আলুর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে পর্যবেক্ষকমহল বলেন, প্রচুর আলু উৎপাদিত হয়েছে। উদ্বৃত্ত আলু কিংবা দেশের চাহিদার জন্য প্রয়োজনীয় আলু যথাযথভাবে সংরক্ষণ জরুরি। ঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না গেলে কৃষকেরা আগামীতে নিরুৎসাহিত হবেন, যা দেশের কৃষক এবং কৃষিখাতকে বড় সংকটের মুখে ফেলে দেবে। আলুর মতো একটি অর্থকরী ফসল এবং দেশের কৃষি সেক্টরের জন্য এক্ষেত্রে সরকারকে বিশেষ মনোযোগ দেয়া দরকার।
মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫
চাঁদপুরে এবার বেশি জমিতে আলু চাষাবাদ হবার পর কোল্ডস্টোরেজে উঠা শুরু করেছে কৃষকের সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমির উৎপাদিত ২ লাখ মে.টন আলু। চলতি রবি মৌসুমে সাড়ে ৭ হাজার হেক্টরে আলু উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার মে.টন। ট্রাক বা ছোট ছোট পিকাপ করে জেলার ১২ টি কোল্ড স্টোরেজে পাঠানো হচ্ছে। দিন-রাত চাষীরা আলু ঘরে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। চালকরা চলতি রমজান ও আসন্ন ঈদুল ফিতরের জন্যে আয়-রোজগার করার লক্ষ্যে রাত-বেরাত আলু ভর্তি ট্রাক মিনি ট্রাক ,পিকাপ ও অটো দিয়ে পরিবহন করে কোল্ডস্টোরেজ নিয়ে যাচ্ছে ।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, কৃষকরা এখন মাঠ থেকে আলু বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা গেলেও, দাম নিয়ে রয়েছেন ব্যাপক দুশ্চিন্তায়।
আলু উৎপাদনে চাঁদপুর দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। মুন্সিগঞ্জের পরেই চাঁদপুর জেলা রয়েছে- উৎপাদনের তুলনামূলক হিসেবের তালিকায়। এ বছর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৭ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয় আলু। এ জেলা একটি নদীবিধৌত কৃষিভিক্তিক অঞ্চল বিধায় কৃষকরা সময়মত চাষাবাদ,বীজবপন ও সঠিক পরিচর্যায় পারদর্শী বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
তথ্য মতে,উপজেলাওয়ারী দেখা যায় - এবার চাঁদপুর সদরে এবার আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৭শ হেক্টর ও উৎপাদন ৪৪ হাজার ২শ মে.টন। মতলব উত্তরে ৬শ ৫০ হেক্টর ও উৎপাদন ১৬ হাজার ৯শ মে.টন। মতলব দক্ষিণে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৩শ হেক্টর ও উৎপাদন ৫৯ হাজার ৮শ মে.টন, হাজীগঞ্জে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৫শ ২৫ হেক্টর ও উৎপাদন ১৩ হাজার ৬শ ৫০ মে.টন, শাহরাস্তিতে চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রা ৪০ হেক্টর ও উৎপাদন ১ হাজার ৪শ মে.টন এবং কচুয়ায় চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ২০ হেক্টর ও উৎপাদন ৫২ হাজার ৫শ ২০ মে.টন,ফরিদগঞ্জে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৯৫ হেক্টর ও উৎপাদন ২ হাজার ৪শ ৯০ মে.টন এবং হাইমচরে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১শ ৭০ হেক্টর ও উৎপাদন ৪ হাজার ২শ ৩০ মে.টন। এ সব আলু দু’ থেকে আড়াই মাস পর খেত থেকে উঠানো হয়েছে।
এদিকে জেলা ব্যাংকগুলো যথারীতি ফসল ঋণ প্রদান করে কৃষিপণ্য উৎপাদনে ব্যাপক সহায়তা দিচ্ছে। বর্তমানে নতুন আলু উঠেছে বাজারে। যার কেজি খুচরা মূল্য ২০-২৫ টাকা। নতুন আলু মুন্সিগঞ্জ, বগুড়া, রংপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকেও চাঁদপুরে আসতে দেখা যায়। চাঁদপুরে মৌসুমের শুরুতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা তাদের জমিতে কিছুটা বিলম্বে আলু আবাদ করেছে। বিগত ক’বছর ধরেই চাঁদপুরে ব্যাপক আলু উৎপাদন হচ্ছে।
বিশেষ করে আলু বেশি উৎপাদনকারী স্থানগুলো হচ্ছে, সফরমালী, রালদিয়া, মুন্সীরহাট, কুমারডুগি, শাহাতলী, শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন, মহামায়া, বালিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে। হাজীগঞ্জের বলাখাল ও মতলব দক্ষিণের নারায়নপুর, কাশিমপুর, খাদেরগাও এলাকায়। কৃষকরা জানান, বর্তমান তারা লাঙ্গলের পরিবর্তে ট্রাক্টর, হোচার পরিবর্তে বিদ্যুৎ চালিত স্যালো সেচ ব্যবস্থায়, গোবরের সারের পরিবর্তে বিভিন্ন প্রকার উন্নত রাসায়নিক সার ব্যবহার, উন্নত বীজ,পরিমিত কীটনাশকের ব্যবহার,নতুন নতুন জাতের উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশে থাকলে আলুর বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চাঁদপুরে ১২টি হিমাগারে ৭০ হাজার মে.টন আলু সংরক্ষণ করার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। বাকি আলু হিমাগারের বাহিরে রাখা হয়ে থাকে। এর মধ্যে কিছু পরিমাণ আলু উৎপাদন মৌসুম থেকে বিক্রি হয়ে আসছে এবং বাকি আলু কৃষকগণ কৃষি বিভাগের পরামর্শে কৃত্রিমভাবে মাচায় সংরক্ষণ করবে বলে কৃষি অফিস জানিয়েছে।
চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো. মোবারক হোসেন জানান, চাঁদপুরে এবারও ব্যাপক আলুর চাষাবাদ হয়েছে। আশা করি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী হবে । সরকার এবার বীজ,সার ও নগদ অর্থ প্রণোদনা হিসেবে দিয়েছে। এবার প্রায় ৮০ হাজার কৃষক প্রণোদনা গ্রহণ করে কৃষি উৎপাদন কাজে লাগাতে পারবে।
আলুর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে পর্যবেক্ষকমহল বলেন, প্রচুর আলু উৎপাদিত হয়েছে। উদ্বৃত্ত আলু কিংবা দেশের চাহিদার জন্য প্রয়োজনীয় আলু যথাযথভাবে সংরক্ষণ জরুরি। ঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না গেলে কৃষকেরা আগামীতে নিরুৎসাহিত হবেন, যা দেশের কৃষক এবং কৃষিখাতকে বড় সংকটের মুখে ফেলে দেবে। আলুর মতো একটি অর্থকরী ফসল এবং দেশের কৃষি সেক্টরের জন্য এক্ষেত্রে সরকারকে বিশেষ মনোযোগ দেয়া দরকার।