alt

সারাদেশ

ইতিহাসের সাক্ষী নকিপুর জমিদার বাড়ি

হুসাইন বিন আফতাব, শ্যামনগর : রোববার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) : স্থাপত্যশৈলীর এক অপূর্ব সংমিশ্রণ নকিপুর জমিদার বাড়ি -সংবাদ

দেড়শ বছর আগে নির্মিত রাজকীয় স্থাপনা আজও দাঁড়িয়ে আছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নকিপুর গ্রামে। ইতিহাস, ঐতিহ্য আর স্থাপত্যশৈলীর এক অপূর্ব সংমিশ্রণ নকিপুর জমিদার বাড়ি, যা স্থানীয়দের কাছে পরিচিত রায় চৌধুরীর বাড়ি বা জমিদার হরিচরণ রায়ের জমিদার বাড়ি নামে।

১৮৮৮ সালে জমিদার হরিচরণ রায় চৌধুরী তাঁর ঐশ্বর্য আর রুচিবোধের অনন্য নিদর্শন হিসেবে গড়ে তোলেন ইংরেজি ‘এল’ প্যাটার্নে নির্মিত ৪১ কক্ষবিশিষ্ট এই তিনতলা ভবনটি। শ্যামনগর থানার সদর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এ জমিদার বাড়ি ছিল একসময় স্থানীয় জনজীবনের কেন্দ্রস্থল। জেলা শহর সাতক্ষীরা থেকে প্রায় ৫২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই বাড়ির অবস্থান ভৌগলিকভাবেও তাৎপর্যপূর্ণ।

জমিদার বাড়িটির বিস্তার ছিল প্রায় ১২ বিঘা জমির ওপর। এর মধ্যে মূল প্রাসাদটি নির্মিত হয় সাড়ে তিন বিঘা জমিতে, যা দেড় হাত প্রস্থের শক্ত প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছিল। প্রবেশপথে ছিল এক বিশাল সিংহদ্বার। কিছুটা সামনে ছিলো বিশাল শান বাঁধানো পুকুর।পুকুরটিতে সারাবছর পানিতে পরিপূর্ণ থাকতো এমনকি গ্রীষ্মকালেও পানি শুকাত না। পুকুরঘাটের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল ৩৬ ইঞ্চি সিঁড়ির একটি নহবতখানা, যার আটটি স্তম্ভ আজও ঠাঁই দাঁড়িয়ে অতীতকে স্মরণ করিয়ে।

ভবনের দৈর্ঘ্য ২১০ ফুট এবং প্রস্থ ৩৭ ফুট। নিচতলায় ছিল অফিস কক্ষ, পূজার ঘরসহ ১৭টি কক্ষ এবং উপরতলায় ছিল আরও ৫টি কক্ষ।

প্রতিটি কক্ষ ছিল কাঠের শৈল্পিক আসবাব, কার্পেট ও চন্দন কাঠের পালঙ্ক দিয়ে সুসজ্জিত। দরজা-জানালা ছিল শাল, সেগুন কাঠ এবং লোহার তৈরি। ছাদগুলো ছিল ১০ ইঞ্চি পুরু চুন-সুরকির। এই স্থাপনার অলিন্দ, খিলান, কলাম ও পেডিমেন্টে স্পষ্ট ছাপ আছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের। প্রতিটি প্রবেশপথ ছিল ২০ ফুট অন্তর, চারটি গেট দিয়ে প্রবেশের সুযোগ থাকায় বাড়িটি ছিল সুবিন্যস্ত ও সুরক্ষিত।

জমিদার হরিচরণ রায় ছিলেন একাধারে জনহিতৈষী ও প্রতাপশালী শাসক। তাঁর আমলে শ্যামনগর তথা সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় জনকল্যাণমূলক বহু কাজ সম্পন্ন হয়। লোককথা অনুযায়ী, তাঁর মা ঘুমে স্বপ্নে গুপ্তধনের অবস্থান পেতেন- এ থেকেই নাকি হরিচরণ বিপুল সম্পদের মালিক হন এবং সূর্যাস্ত আইন প্রয়োগ করে তিনি বহু জমি কিনে স্বতন্ত্র জমিদারিতে পরিণত হন।

জমিদার হরিচরণ ১৯১৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তাঁর দুই পুত্র ১৯৩৭ ও ১৯৪৯ সালে মারা যান। ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর ১৯৫৪ সালে জমিদার পরিবার স্বজনদের নিয়ে ভারতে পাড়ি জমায়। তারপর থেকেই বাড়িটি অবহেলা আর লুটতরাজের শিকার হতে থাকে। মূল্যবান সব আসবাব ও স্থাপত্য উপকরণ চলে যায় চোর ও লুটেরাদের হাতে।

বর্তমানে জমিদার বাড়ির অধিকাংশ কক্ষ ধ্বংসপ্রাপ্ত। দেয়ালের চুন-সুরকি খসে পড়ছে, ছাদে ফাটল ধরেছে, আর গাছ-লতাপাতা জড়িয়ে ধরেছে পুরো কাঠামোকে। এককালে জমিদার পরিবারের দুর্গাপূজার আয়োজনের জন্য নির্মিত বিশেষ পাকা প্যান্ডেলটিও আজ শুধুই স্মৃতি।

তবে আশার কথা হলো, জমিদার বাড়িটি রক্ষায় সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

যে প্রাসাদ একসময় ছিল রাজকীয়তার প্রতীক, তা আজ দাঁড়িয়ে আছে একরাশ ধুলো আর ভগ্নদশার মাঝে। তবে এটি কেবল অতীতের স্মারক নয়, বরং ভবিষ্যতের সম্ভাবনার এক উজ্জ্বল দিগন্তও।

প্রয়োজন শুধু যথাযথ সংরক্ষণ ও প্রশাসনিক সদিচ্ছার। তাহলেই হয়তো আবারও প্রাণ ফিরে পাবে সাতক্ষীরার নকিপুর জমিদার বাড়ি, ফিরে পাবে তার হারানো গৌরব।

নরসিংদীতে ট্রেনের ধাক্কায় স্কুল ছাত্রী নিহত

ছবি

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ৫০ লাখ টাকার সরকারি ঔষধ মেয়াদ উত্তীর্ণ

মধুখালীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুই

সোনাইমুড়িতে আগুনে পুড়ল ৮ দোকান

ছবি

নগরকান্দায় সড়কের জায়গায় পাকা ঘর নির্মাণের অভিযোগ

মোরেলগঞ্জে মৃত ভাইয়ের লাশ দেখতে এসে সড়কে প্রাণ গেল এক ভাইয়ের

সোনাইমুড়ীতে জমি বিবাদে বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা

ছবি

দামুড়হুদায় হেলিপ্যাড এখন ভুট্টার চাতাল

ছবি

উলিপুরে ব্রিজের মুখে মাটি, ক্ষতির মুখে ফসলি জমি

টুঙ্গিপাড়ায় থানার পাশে দোকানে চুরি

কিশোরগঞ্জ-মরিচখালী বাজার সড়কে অটোর ভাড়া বৃদ্ধিতে ভোগান্তি

অবৈধভাবে মাটি পরিবহনের সময় ১০ ট্রাক জব্দ

নির্বাচন ছাড়া কোন সরকার দীর্ঘদিন থাকলে স্বৈরাচার জন্ম নেয়-আব্দুস সালাম

চাঁদপুরে আগুনে পুড়ল ১১ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

সিরাজগঞ্জে জলাশয়ে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু

মতলবে ভিমরুলের কামড়ে মৃত্যু এক, স্ত্রী ও সন্তান আইসিইউতে

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক ঐক্যজোটের মানববন্ধন

ছবি

ভুট্টা চাষে সফল নবীনগরের কৃষক

তরমুজ চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত শরণখোলার শিপন

মোরেলগঞ্জে ৩০ বছর ধরে পাখা বিক্রি করে চলে যাদের জীবন

দৌলতদিয়ায় নদী থেকে বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার

চাঁদপুরে পাইপ গান ও কার্তুজ উদ্ধার

রাঙ্গুনিয়ায় ওয়ালটন শো-রুমের মালামাল পুড়ে ছাই

ছবি

পাহাড়, নদী, ঝরনা আর পাথরে সৌন্দর্যের লীলাভূমি বিছনাকান্দি

ছবি

দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে ভালুকার গ্রীণ অরণ্য পার্ক

ছবি

নিক্সন চৌধুরীর স্ত্রী তারিন হোসেনের গুলশানের ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ

রংপুরের গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ২ আসামি নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার

জগন্নাথপুরে সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ গ্রেপ্তার ৭

বড়াইগ্রামে খ্রিস্টান ধর্মপল্লীতে স্টার সানডে পালিত

বাগেরহাটের সুন্দরবনে হরিণের মাংস জব্দ

বেগমগঞ্জে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার

রাজশাহীতে মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদে বাবাকে হত্যার আসামি গ্রেপ্তার

চান্দিনায় শীর্ষ ডাকাত কাউছার আটক

রাউজানে যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যা

ছবি

প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম বার্তা দেয়া ‘হিরালি’ পরিবারগুলোর চরম কষ্টে দিন কাটছে

দুমকিতে বৃদ্ধাকে ধর্ষণের পর হত্যা, আটক ১

tab

সারাদেশ

ইতিহাসের সাক্ষী নকিপুর জমিদার বাড়ি

হুসাইন বিন আফতাব, শ্যামনগর

শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) : স্থাপত্যশৈলীর এক অপূর্ব সংমিশ্রণ নকিপুর জমিদার বাড়ি -সংবাদ

রোববার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

দেড়শ বছর আগে নির্মিত রাজকীয় স্থাপনা আজও দাঁড়িয়ে আছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নকিপুর গ্রামে। ইতিহাস, ঐতিহ্য আর স্থাপত্যশৈলীর এক অপূর্ব সংমিশ্রণ নকিপুর জমিদার বাড়ি, যা স্থানীয়দের কাছে পরিচিত রায় চৌধুরীর বাড়ি বা জমিদার হরিচরণ রায়ের জমিদার বাড়ি নামে।

১৮৮৮ সালে জমিদার হরিচরণ রায় চৌধুরী তাঁর ঐশ্বর্য আর রুচিবোধের অনন্য নিদর্শন হিসেবে গড়ে তোলেন ইংরেজি ‘এল’ প্যাটার্নে নির্মিত ৪১ কক্ষবিশিষ্ট এই তিনতলা ভবনটি। শ্যামনগর থানার সদর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এ জমিদার বাড়ি ছিল একসময় স্থানীয় জনজীবনের কেন্দ্রস্থল। জেলা শহর সাতক্ষীরা থেকে প্রায় ৫২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই বাড়ির অবস্থান ভৌগলিকভাবেও তাৎপর্যপূর্ণ।

জমিদার বাড়িটির বিস্তার ছিল প্রায় ১২ বিঘা জমির ওপর। এর মধ্যে মূল প্রাসাদটি নির্মিত হয় সাড়ে তিন বিঘা জমিতে, যা দেড় হাত প্রস্থের শক্ত প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছিল। প্রবেশপথে ছিল এক বিশাল সিংহদ্বার। কিছুটা সামনে ছিলো বিশাল শান বাঁধানো পুকুর।পুকুরটিতে সারাবছর পানিতে পরিপূর্ণ থাকতো এমনকি গ্রীষ্মকালেও পানি শুকাত না। পুকুরঘাটের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল ৩৬ ইঞ্চি সিঁড়ির একটি নহবতখানা, যার আটটি স্তম্ভ আজও ঠাঁই দাঁড়িয়ে অতীতকে স্মরণ করিয়ে।

ভবনের দৈর্ঘ্য ২১০ ফুট এবং প্রস্থ ৩৭ ফুট। নিচতলায় ছিল অফিস কক্ষ, পূজার ঘরসহ ১৭টি কক্ষ এবং উপরতলায় ছিল আরও ৫টি কক্ষ।

প্রতিটি কক্ষ ছিল কাঠের শৈল্পিক আসবাব, কার্পেট ও চন্দন কাঠের পালঙ্ক দিয়ে সুসজ্জিত। দরজা-জানালা ছিল শাল, সেগুন কাঠ এবং লোহার তৈরি। ছাদগুলো ছিল ১০ ইঞ্চি পুরু চুন-সুরকির। এই স্থাপনার অলিন্দ, খিলান, কলাম ও পেডিমেন্টে স্পষ্ট ছাপ আছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের। প্রতিটি প্রবেশপথ ছিল ২০ ফুট অন্তর, চারটি গেট দিয়ে প্রবেশের সুযোগ থাকায় বাড়িটি ছিল সুবিন্যস্ত ও সুরক্ষিত।

জমিদার হরিচরণ রায় ছিলেন একাধারে জনহিতৈষী ও প্রতাপশালী শাসক। তাঁর আমলে শ্যামনগর তথা সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় জনকল্যাণমূলক বহু কাজ সম্পন্ন হয়। লোককথা অনুযায়ী, তাঁর মা ঘুমে স্বপ্নে গুপ্তধনের অবস্থান পেতেন- এ থেকেই নাকি হরিচরণ বিপুল সম্পদের মালিক হন এবং সূর্যাস্ত আইন প্রয়োগ করে তিনি বহু জমি কিনে স্বতন্ত্র জমিদারিতে পরিণত হন।

জমিদার হরিচরণ ১৯১৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তাঁর দুই পুত্র ১৯৩৭ ও ১৯৪৯ সালে মারা যান। ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর ১৯৫৪ সালে জমিদার পরিবার স্বজনদের নিয়ে ভারতে পাড়ি জমায়। তারপর থেকেই বাড়িটি অবহেলা আর লুটতরাজের শিকার হতে থাকে। মূল্যবান সব আসবাব ও স্থাপত্য উপকরণ চলে যায় চোর ও লুটেরাদের হাতে।

বর্তমানে জমিদার বাড়ির অধিকাংশ কক্ষ ধ্বংসপ্রাপ্ত। দেয়ালের চুন-সুরকি খসে পড়ছে, ছাদে ফাটল ধরেছে, আর গাছ-লতাপাতা জড়িয়ে ধরেছে পুরো কাঠামোকে। এককালে জমিদার পরিবারের দুর্গাপূজার আয়োজনের জন্য নির্মিত বিশেষ পাকা প্যান্ডেলটিও আজ শুধুই স্মৃতি।

তবে আশার কথা হলো, জমিদার বাড়িটি রক্ষায় সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

যে প্রাসাদ একসময় ছিল রাজকীয়তার প্রতীক, তা আজ দাঁড়িয়ে আছে একরাশ ধুলো আর ভগ্নদশার মাঝে। তবে এটি কেবল অতীতের স্মারক নয়, বরং ভবিষ্যতের সম্ভাবনার এক উজ্জ্বল দিগন্তও।

প্রয়োজন শুধু যথাযথ সংরক্ষণ ও প্রশাসনিক সদিচ্ছার। তাহলেই হয়তো আবারও প্রাণ ফিরে পাবে সাতক্ষীরার নকিপুর জমিদার বাড়ি, ফিরে পাবে তার হারানো গৌরব।

back to top