ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) : জমি থেকে মুখি কচুর ছড়া উত্তোলন করছেন এক কৃষক - সংবাদ
ভৈরব উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে এ বছর আগাম জাতের মুখি কচু চাষ করে লাভবান হয়েছেন কৃষকরা। মুখি কচু লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এর আবাদ। মুখি কচু চাষ করে কৃষক মাত্র ছয় মাসেই প্রতি বিঘা জমি থেকে আয় করছেন লক্ষাধিক টাকা। ধানসহ অন্যান্য ফসলের চেয়ে মুখি কচু লাভজনক। কৃষকরা বলছেন সরকারের সহযোগিতা পেলে এর আবাদ আরও বৃদ্ধি পাবে।
সরেজমিনে জানা যায়, গজারিয়া ইউনিয়নের মানিকদী গ্রামের অধিকাংশ ফসলি জমিতে দেখা যায় ধুল খাচ্ছে মুখি কচুর সবুজ পাতা।
জমির দিকে তাকালেই চোখ জুড়িয়ে যায়। জমিতে পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও কাজ করছেন। কেউ গাছের গোড়া থেকে মাটি খুঁড়ে মুখির ছড়া তুলছেন আবার কেউবা ছড়া থেকে মুখি খসাচ্ছে। প্রক্রিয়া শেষ করে জমি থেকেই বস্তায় ভরছেন বাজার জাত করার জন্য। একদিকে মুখির বাজার দর ভালো অন্যদিকে আবার কালবৈশাখির বৈরী আবহাওয়ার আশঙ্কা।
তাই দ্রুত সময়ের মধ্যেই জমি থেকে মুখি উত্তোলন করছেন কৃষকরা। প্রতি বিঘা জমিতে মুখি কচু চাষে খরচ হয় ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা, আর বিক্রি করা যায় ৯০ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা। প্রতি কেজি মুখির বর্তমান বাজার দর আছে ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা।
বিচ রোপণ থেকে শুরু করে ফলন উত্তোলন পর্যন্ত খরচ বাদ দিয়ে কৃষকরা লাভ প্রতি বিঘায় লাভ করছেন এক লাখ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। মুখি চাষে খরচ ও পরিশ্রম বেশি হলেও এতে লাভ বেশি। তাই এখানকার উৎপাদিত মুখি কচু নিজ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা উপজেলায়। কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের সহযোগিতা বাড়াবে এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয় কৃষকদের।
গজারিয়া ইউনিয়ন ব্লক সুপার ভাইজার বায়তুল হক বলেন, এ বছর শুধু মানিকদী ব্লকেই ৮ হেক্টর জমিতে মুখি কচুর আবাদ হয়েছে। মাত্র ছয় মাসেই মুখি কচুর আবাদ করে খরচ বাদে বিঘাপ্রতি এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করছেন কৃষকরা। মুখি কচু চাষে তেমন কোনো রোগবালাই হয় না।
জমিতে কিছু দানাদার বিষ আর কিছু সার ব্যবহার করলেই মুখি কচুর উৎপাদন ভালো হয়। মানিকদী পাড়াতলা গ্রামের কৃষক রেনু মিয়া জানান, আমাদের মুখি চাষ দেখে অত্র অঞ্চলের অনেক কৃষক এর আবাদ শুরু করেছে। প্রতি বিঘা জমিতে ষাট থেকে সত্তর মণ ফলন হচ্ছে। পাইকাররা জমি থেকেই প্রতি কেজি মুখি কচু ১১০ থেকে ১২০ টাকা দরে কিনে নিচ্ছেন।
কৃষক আসাবুদ্দিন বলেন, মুখি কচু চাষে খরচ আর পরিশ্রম বেশি হলেও লাভ হয় অনেক টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে সত্তর থেকে আশি মণ মুখি উৎপাদন হয়। আমাদের আট বিঘা জমিতে মোট খরচ হয়েছে আনুমানিক ৫ লক্ষাধিক টাকা। বাজার দর ভালো থাকলে আট বিঘা জমির মুখি পনেরো থেকে ষোল লাখ টাকা বিক্রি করতে পারব। সব খরচ বাদে আমার আট থেকে নয় কচু টাকা লাভ হতে পারে।
অন্য কৃষক আরমান মিয়া বলেন, গত বছর আমি এক বিঘা জমিতে ৩২ হাজার টাকা খরচ করে মুখির চাষ করেছিলাম। বিক্রি করেছিলাম ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। মাত্র ছয় মাস মেয়াদে আমার প্রায় ৮০ হাজার টাকা লাভ হয়েছিল। এ বছর আমি ৬ বিঘা জমিতে মুখির চাষ করেছি। খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা। ৬ বিঘা জমির মুখি বিক্রি করতে পারবো আশা করছি ১০ লাখ টাকা।
মানিকদী নয়া হাটির রায়হান মিয়া বলেন, গত বছর আরমান মিয়া তার এক বিঘা জমিতে ৬৫ হাজার টাকা খরচ করে মুখি কচুর চাষ করেছে।
বিক্রি হয়েছে লাখ টাকারও বেশি। এতে তার ভালো টাকা লাভ হয়েছে। এ বছর তার ৬ বিঘা জমিতে মুখি কচু চাষ করেছে। ফলন উত্তোলন শুরু হওয়ায় জমি থেকেই পাইকাররা কিনে নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে শ্রমিক আবুল কালামের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ধান চাষ থেকে মুখি কচুতে অনেক লাভ। ধান চাষে অনেক সময় ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, মুখিতে সেটা থাকে না। জমি থেকে মুখি উত্তোলন করে আমরা প্রতিদিন মজুরি হিসেবে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা পাচ্ছি।
অন্য শ্রমিক আব্দুর রহমান বলেন, আমি এখানে প্রতিদিন ৮০০ টাকা হারে দেড় মাস যাবত কাছ করছি। প্রতি মাসে ২৪ হাজার টাকা রোজি হচ্ছে। এভাবে দুই থেকে তিন মাস মুখির জমিতে কাজ করা যায়। এখানে আমার মতো অনেক শ্রমিকই কাজ করছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার আকলিমা বেগম বলেন, ভৈরব উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে আগাম জাতের মুখি কচুর আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মুখি কচু লাভজনক ফসল হওয়ায় পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নগুলোর কৃষকরাও মুখি কচু আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের মাঝে বিভিন্ন রকমের কৃষি উপকরণ বিতরণসহ মাঠ পর্যায়ে কৃষি অফিসাররা কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। এখানকার উৎপাদিত মুখি কচু পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা উপজেলায়ও বাজার জাত করছেন কৃষকরা।
কৃষকদের চাষাবাদে আগ্রহী করতে মাঠ পর্যায়ের কৃষি অফিসাররা কৃষকদের সার্বিক পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। আশা করছি আগামীতে মুখি কচুর চাষাবাদ আরও বাড়বে।
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) : জমি থেকে মুখি কচুর ছড়া উত্তোলন করছেন এক কৃষক - সংবাদ
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
ভৈরব উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে এ বছর আগাম জাতের মুখি কচু চাষ করে লাভবান হয়েছেন কৃষকরা। মুখি কচু লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এর আবাদ। মুখি কচু চাষ করে কৃষক মাত্র ছয় মাসেই প্রতি বিঘা জমি থেকে আয় করছেন লক্ষাধিক টাকা। ধানসহ অন্যান্য ফসলের চেয়ে মুখি কচু লাভজনক। কৃষকরা বলছেন সরকারের সহযোগিতা পেলে এর আবাদ আরও বৃদ্ধি পাবে।
সরেজমিনে জানা যায়, গজারিয়া ইউনিয়নের মানিকদী গ্রামের অধিকাংশ ফসলি জমিতে দেখা যায় ধুল খাচ্ছে মুখি কচুর সবুজ পাতা।
জমির দিকে তাকালেই চোখ জুড়িয়ে যায়। জমিতে পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও কাজ করছেন। কেউ গাছের গোড়া থেকে মাটি খুঁড়ে মুখির ছড়া তুলছেন আবার কেউবা ছড়া থেকে মুখি খসাচ্ছে। প্রক্রিয়া শেষ করে জমি থেকেই বস্তায় ভরছেন বাজার জাত করার জন্য। একদিকে মুখির বাজার দর ভালো অন্যদিকে আবার কালবৈশাখির বৈরী আবহাওয়ার আশঙ্কা।
তাই দ্রুত সময়ের মধ্যেই জমি থেকে মুখি উত্তোলন করছেন কৃষকরা। প্রতি বিঘা জমিতে মুখি কচু চাষে খরচ হয় ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা, আর বিক্রি করা যায় ৯০ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা। প্রতি কেজি মুখির বর্তমান বাজার দর আছে ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা।
বিচ রোপণ থেকে শুরু করে ফলন উত্তোলন পর্যন্ত খরচ বাদ দিয়ে কৃষকরা লাভ প্রতি বিঘায় লাভ করছেন এক লাখ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। মুখি চাষে খরচ ও পরিশ্রম বেশি হলেও এতে লাভ বেশি। তাই এখানকার উৎপাদিত মুখি কচু নিজ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা উপজেলায়। কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের সহযোগিতা বাড়াবে এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয় কৃষকদের।
গজারিয়া ইউনিয়ন ব্লক সুপার ভাইজার বায়তুল হক বলেন, এ বছর শুধু মানিকদী ব্লকেই ৮ হেক্টর জমিতে মুখি কচুর আবাদ হয়েছে। মাত্র ছয় মাসেই মুখি কচুর আবাদ করে খরচ বাদে বিঘাপ্রতি এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করছেন কৃষকরা। মুখি কচু চাষে তেমন কোনো রোগবালাই হয় না।
জমিতে কিছু দানাদার বিষ আর কিছু সার ব্যবহার করলেই মুখি কচুর উৎপাদন ভালো হয়। মানিকদী পাড়াতলা গ্রামের কৃষক রেনু মিয়া জানান, আমাদের মুখি চাষ দেখে অত্র অঞ্চলের অনেক কৃষক এর আবাদ শুরু করেছে। প্রতি বিঘা জমিতে ষাট থেকে সত্তর মণ ফলন হচ্ছে। পাইকাররা জমি থেকেই প্রতি কেজি মুখি কচু ১১০ থেকে ১২০ টাকা দরে কিনে নিচ্ছেন।
কৃষক আসাবুদ্দিন বলেন, মুখি কচু চাষে খরচ আর পরিশ্রম বেশি হলেও লাভ হয় অনেক টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে সত্তর থেকে আশি মণ মুখি উৎপাদন হয়। আমাদের আট বিঘা জমিতে মোট খরচ হয়েছে আনুমানিক ৫ লক্ষাধিক টাকা। বাজার দর ভালো থাকলে আট বিঘা জমির মুখি পনেরো থেকে ষোল লাখ টাকা বিক্রি করতে পারব। সব খরচ বাদে আমার আট থেকে নয় কচু টাকা লাভ হতে পারে।
অন্য কৃষক আরমান মিয়া বলেন, গত বছর আমি এক বিঘা জমিতে ৩২ হাজার টাকা খরচ করে মুখির চাষ করেছিলাম। বিক্রি করেছিলাম ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। মাত্র ছয় মাস মেয়াদে আমার প্রায় ৮০ হাজার টাকা লাভ হয়েছিল। এ বছর আমি ৬ বিঘা জমিতে মুখির চাষ করেছি। খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা। ৬ বিঘা জমির মুখি বিক্রি করতে পারবো আশা করছি ১০ লাখ টাকা।
মানিকদী নয়া হাটির রায়হান মিয়া বলেন, গত বছর আরমান মিয়া তার এক বিঘা জমিতে ৬৫ হাজার টাকা খরচ করে মুখি কচুর চাষ করেছে।
বিক্রি হয়েছে লাখ টাকারও বেশি। এতে তার ভালো টাকা লাভ হয়েছে। এ বছর তার ৬ বিঘা জমিতে মুখি কচু চাষ করেছে। ফলন উত্তোলন শুরু হওয়ায় জমি থেকেই পাইকাররা কিনে নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে শ্রমিক আবুল কালামের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ধান চাষ থেকে মুখি কচুতে অনেক লাভ। ধান চাষে অনেক সময় ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, মুখিতে সেটা থাকে না। জমি থেকে মুখি উত্তোলন করে আমরা প্রতিদিন মজুরি হিসেবে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা পাচ্ছি।
অন্য শ্রমিক আব্দুর রহমান বলেন, আমি এখানে প্রতিদিন ৮০০ টাকা হারে দেড় মাস যাবত কাছ করছি। প্রতি মাসে ২৪ হাজার টাকা রোজি হচ্ছে। এভাবে দুই থেকে তিন মাস মুখির জমিতে কাজ করা যায়। এখানে আমার মতো অনেক শ্রমিকই কাজ করছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার আকলিমা বেগম বলেন, ভৈরব উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে আগাম জাতের মুখি কচুর আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মুখি কচু লাভজনক ফসল হওয়ায় পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নগুলোর কৃষকরাও মুখি কচু আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের মাঝে বিভিন্ন রকমের কৃষি উপকরণ বিতরণসহ মাঠ পর্যায়ে কৃষি অফিসাররা কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। এখানকার উৎপাদিত মুখি কচু পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা উপজেলায়ও বাজার জাত করছেন কৃষকরা।
কৃষকদের চাষাবাদে আগ্রহী করতে মাঠ পর্যায়ের কৃষি অফিসাররা কৃষকদের সার্বিক পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। আশা করছি আগামীতে মুখি কচুর চাষাবাদ আরও বাড়বে।