চাটমোহর : ডেফলচড়া এলাকার শাঁখারি পাড়ায় শঙ্খ কেটে শাঁখা তৈরি করছেন কারিগররা -সংবাদ
বিবাহিত হিন্দু নারীদের হাতে থাকা সাদা শাঁখা শুধু অলংকার নয়, বাংলা সংস্কৃতি ও ধর্মীয় পরিচয়ের প্রতীক শাঁখা। এক সময় এই শিল্পে মমতা, নিপুণতা আর সৃজনশীলতায় ভরপুর ছিল চাটমোহরের হান্ডিয়াল ও ডেফলচড়া এলাকার শাঁখারী পাড়া। আজ সেই শিল্প সংকটের মুখে। কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন খরচ, মূলধনের অভাব, আর বাজারে আগ্রহ কমে যাওয়ার ফলে দিনকে দিন এই শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কারিগরেরা।
জানা গেছে, পাবনার এই অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে শাঁখা শিল্পের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। পরিবার ভিত্তিক এই শিল্পে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও যুক্ত রয়েছেন। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে শঙ্খ কেটে শাঁখা তৈরির কাজ। তৈরি হয় ধলা, জাজী, কড়ি, মনিপুরী ও ভিআইপি ডিজাইনের শাঁখা। প্রতিটির দাম মানভেদে ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে।
প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় থাকা শ্রী বাবলু ধর সংবাদকে জানান, আগে লাভজনক হলেও এখন টিকে থাকাই কঠিন। তিনি বলেন, এখনকার বাজারে চাহিদা নেই, খরচ বেড়ে গেছে। তার মতো অনেকেই এখন বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। পরিতস ধর বলেন, একসময় এই পাড়ার প্রায় প্রতিটি পরিবার এই শিল্পে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে মাত্র ৩৪টি পরিবার কোনোভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কাঁচামাল মূলত ভারত থেকে আনতে হয়, ফলে খরচও বেশি পড়ে। নিজেদের তৈরি শাঁখা বিক্রি করতে তারা ছুটে যান বিভিন্ন জেলায়। নারী কারিগর নীলা বতী সেন জানান, ছোটবেলায় বাবার বাড়িতে শিখেছিলেন এই শিল্প। এখন শ্বশুরবাড়িতে করছেন শাঁখার কাজ, সংসারের পাশাপাশি বাড়তি আয় হচ্ছে। তিনি মনে করেন, সরকারি সহায়তা পেলে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা সম্ভব।
চাটমোহর ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী মনজিৎসেন শুভ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এই শিল্পের টিকে থাকার জন্য সহজ শর্তে ঋণ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা জরুরি। পণ্যের মান উন্নয়ন ও রপ্তানির সুযোগ থাকলে এটি জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে। অনেকেই জানান, এই পেশায় আর আগের মতো কর্মসংস্থান নেই।
মৃত্যুঞ্জয় জয় সেন, দীপ্ত সেন, অন্তু কুমার ও ষষ্ঠী সেন বলেন, তারা এখন দিনমজুরি কিংবা অন্য কাজ করছেন। কিন্তু মনে আশা রয়েছে, সরকার সহযোগিতা করলে আবারও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) উপ-মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) মো. শামীম হোসেন জানান, বিসিক শুধু আর্থিক নয়, ডিজাইন, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি উন্নয়নেও এই শিল্পের পাশে থাকবে। প্রাচীন এই লোকশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন যুগোপযোগী প্রদক্ষেপ। না হলে একদিন হয়তো হারিয়ে যাবে বাপ-দাদার ঐতিহ্য শাঁখার শিল্প।
চাটমোহর : ডেফলচড়া এলাকার শাঁখারি পাড়ায় শঙ্খ কেটে শাঁখা তৈরি করছেন কারিগররা -সংবাদ
সোমবার, ১২ মে ২০২৫
বিবাহিত হিন্দু নারীদের হাতে থাকা সাদা শাঁখা শুধু অলংকার নয়, বাংলা সংস্কৃতি ও ধর্মীয় পরিচয়ের প্রতীক শাঁখা। এক সময় এই শিল্পে মমতা, নিপুণতা আর সৃজনশীলতায় ভরপুর ছিল চাটমোহরের হান্ডিয়াল ও ডেফলচড়া এলাকার শাঁখারী পাড়া। আজ সেই শিল্প সংকটের মুখে। কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন খরচ, মূলধনের অভাব, আর বাজারে আগ্রহ কমে যাওয়ার ফলে দিনকে দিন এই শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কারিগরেরা।
জানা গেছে, পাবনার এই অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে শাঁখা শিল্পের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। পরিবার ভিত্তিক এই শিল্পে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও যুক্ত রয়েছেন। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে শঙ্খ কেটে শাঁখা তৈরির কাজ। তৈরি হয় ধলা, জাজী, কড়ি, মনিপুরী ও ভিআইপি ডিজাইনের শাঁখা। প্রতিটির দাম মানভেদে ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে।
প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় থাকা শ্রী বাবলু ধর সংবাদকে জানান, আগে লাভজনক হলেও এখন টিকে থাকাই কঠিন। তিনি বলেন, এখনকার বাজারে চাহিদা নেই, খরচ বেড়ে গেছে। তার মতো অনেকেই এখন বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। পরিতস ধর বলেন, একসময় এই পাড়ার প্রায় প্রতিটি পরিবার এই শিল্পে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে মাত্র ৩৪টি পরিবার কোনোভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কাঁচামাল মূলত ভারত থেকে আনতে হয়, ফলে খরচও বেশি পড়ে। নিজেদের তৈরি শাঁখা বিক্রি করতে তারা ছুটে যান বিভিন্ন জেলায়। নারী কারিগর নীলা বতী সেন জানান, ছোটবেলায় বাবার বাড়িতে শিখেছিলেন এই শিল্প। এখন শ্বশুরবাড়িতে করছেন শাঁখার কাজ, সংসারের পাশাপাশি বাড়তি আয় হচ্ছে। তিনি মনে করেন, সরকারি সহায়তা পেলে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা সম্ভব।
চাটমোহর ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী মনজিৎসেন শুভ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এই শিল্পের টিকে থাকার জন্য সহজ শর্তে ঋণ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা জরুরি। পণ্যের মান উন্নয়ন ও রপ্তানির সুযোগ থাকলে এটি জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে। অনেকেই জানান, এই পেশায় আর আগের মতো কর্মসংস্থান নেই।
মৃত্যুঞ্জয় জয় সেন, দীপ্ত সেন, অন্তু কুমার ও ষষ্ঠী সেন বলেন, তারা এখন দিনমজুরি কিংবা অন্য কাজ করছেন। কিন্তু মনে আশা রয়েছে, সরকার সহযোগিতা করলে আবারও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) উপ-মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) মো. শামীম হোসেন জানান, বিসিক শুধু আর্থিক নয়, ডিজাইন, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি উন্নয়নেও এই শিল্পের পাশে থাকবে। প্রাচীন এই লোকশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন যুগোপযোগী প্রদক্ষেপ। না হলে একদিন হয়তো হারিয়ে যাবে বাপ-দাদার ঐতিহ্য শাঁখার শিল্প।