ভিক্ষাবৃত্তিকে নিরুৎসাহিত করতে সারাদেশের মতো মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে ভিক্ষুক পুর্নবাসন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয় ছয় বছর আগে। এর অংশ হিসেবে কাউকে দেওয়া হয় উন্নতজাতের ছাগল, ভ্যান,সেলাই মেশিন, হুইল চেয়ার, বাঁশের দ্রব্য সামগ্রী, পান ও চায়ের টলি, দোকান ও দোকান ঘরের মালপত্র দেওয়া হয়েছে। এত কিছু দেওয়ার পরও ভাগ্য ফেরেনি অনেকেরই। কারণ হিসেবে দেখছেন বিতরণ সংশ্লিষ্ট কর্তাদের অনিয়ম ও দুনীর্তির কথা বলছেন প্রকল্পের সুফলভোগী পরিবারের সদস্যরা।
ভিক্ষুক পুর্নবাসনের পর সুফলভোগীরা কেমন আছেন— জানতে সরেজমিনে অনুন্ধান করে দেখা যায়, প্রকল্পের বরাদ্দ সঠিকভাবে করা হয়নি।
পুনর্বাসন পরবর্তী করণীয় বিষয়েও উদাসীন ছিল দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি। তাদের মধ্যে ছিল সমন্বয়হীনতা। এ রকম নানা কারণে প্রকল্প সফলতার মুখ দেখেনি। তাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার কথা থাকলেও অনেকেই সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি।
সাটুরিয়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের উত্তর কাওন্নারা গ্রামের গেদুমিয়া ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। তাকে এ প্রকল্পের আওতায় এনে দেওয়া হয় একটি দোকান ঘর ও কিছু মালপত্র। ভিক্ষুক গেদুমিয়া মারা যাওয়ার এক বছর আগে বলেন, ঘরসহ আমাকে সব মিলিয়ে হাজার দশেক টাকার মালপত্র দিয়েছিল সমাজসেবা অফিস। যারমধ্যে ছিল চকলেট,চিপস,বিড়ি সিগারেট,সাবান ও দিয়াসলাই। মালপত্র দেওয়ার পর আমার পরিবার কেমন আছে সরকারি অফিসের কেউ আর খোঁজ নেননি। তার মৃত্যুর পর লাল সবুজ টিনের দোকানটি বন্ধ রয়েছে।
প্রকল্পের আরেক সুফলভোগী হরগজ ইউনিয়নের নয়াপাড়া চাটনি বাধা গ্রামের সরস্বতী রানী দাস জানান, সমাজসেবা অফিস থেকে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার মালপত্র দেওয়া হয়েছে।সেখানে বেশির ভাগ চিপস ছিলো। তার খোঁজ পর্যন্ত নেননি কেউ দোকান কিভাবে চলবে। টুকরি একটি ঘর তৈরী করে একটি সাইনবোর্ড দিয়ে ছবি তোলেই দায় সেরেছেন সংশ্লিষ্ট অফিস।
সাটুরিয়া উপজেলার সুবিধা বঞ্চিত তিল্লি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ২৩ জন ভিক্ষুকদের দেওয়া হয়েছে উন্নতজাতের ছাগল।
এসব ছাগল দেশীয় হলেও কাগজ কলমে দেখানো হয়েছে উন্নতজাতের। কাকে কত টাকার মূল্যের উন্নতজাতের ছাগল দেওয়া হয়েছে,কয়টা ছাগল দেওয়া হয়েছে,তার কোন হিসেব নেই। যাদেরকে ছাগল দেওয়া হয়েছে তারা ভিক্ষুক কিনা যাছাই বাছাই না করে ইউপি চেয়ারম্যানদের তালিকা অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, যাদের ছাগল দেওয়া হয়েছে তাদের বেশির ভাগ সুফলভোগীর ঘরে ছাগল নেই।
একই অভিযোগ বালিয়াটি এলাকার গোপালনগরের ভিক্ষুক মো. আইয়ুব আলীর। এই ভিক্ষুক জানান, আমার টুকরি দোকানের পাশে রয়েছে আরেকটি দোকান। এলাকার মানুষ সেই দোকান থেকে মালপত্র নগদ ও বাকিতে নিয়ে থাকেন।
ওই দোকানের কারণে আমার দোকান চলে না। পুঁজি যা দিয়েছিল তা খেয়ে পূর্বে পেশায় ফিরে গেছি। স্থানীয়ভাবে একটি দোকান চালাতে হলে লক্ষাধিক টাকার দরকার হয়। শুনেছি একজন ভিক্ষুক পুনর্বাসনের জন্য বরাদ্দ ছিল ২০ হাজার টাকা। প্রকল্পের বরাদ্ধের পরিমানের চেয়ে অর্ধেক টাকা দিয়ে তারা নিজেরাই মালপত্র কিনে দিয়েছিল।
সাটুরিয়া উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ৭০ জন ভিক্ষুকের নামের তালিকা করে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভিক্ষুকদের পুর্নবাসন করেছেন। এসব ভিক্ষুকদের পুর্ণবাসনের নামে বরাদ্ধ আসে ১৫ লক্ষ টাকা।
২০১৭-১৮ অর্থ বছরে তাদের পুর্নবাসনের প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এতে চলতি বছর পর্যন্ত ৭০ জন ভিক্ষুককের পুর্ণবাসনের নামে ব্যয় করা হয় সাড়ে ১৪ লক্ষ টাকা। সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর সেই টাকা দিয়ে উন্নতজাতের ছাগল, ভ্যান,সেলাই মেশিন, হুইল চেয়ার, বাঁশের দ্রব্য সামগ্রী, পান ও চায়ের টলি, দোকান ও দোকান ঘর এবং মালপত্র দেওয়া হয়েছে।
ভিক্ষুক পুর্নবাসন প্রকল্পের সদস্য সচিব ও সাটুরিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সিরাজউদ্দিন বলেন, আমার উপজেলায় ৭০ জন ভিক্ষুককে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এ প্রকল্পের সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। তাদের পুর্নবাসন সঠিকভাবে করা হয়েছে।
কাকে কত টাকার মালপত্র দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাকে কত টাকা দিয়েছি তা আমার জানা নেই। এর কোন বিল ভাউচার আমার কাছে নেই। প্রকল্পের সভাপতি যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন সেইভাবে কাজ করেছি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রকল্পের কিছু ভুলক্রুটি থাকতে পারে। যেসব ভিক্ষককে ঘর ও মালপত্র দেওয়া হয়েছে তারা ৩৫ হাজার টাকা করে পেয়েছে।
সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ভুক্তভোগীদের কেউ এখন পর্যন্ত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে সরেজমিনে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
ভিক্ষাবৃত্তিকে নিরুৎসাহিত করতে সারাদেশের মতো মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে ভিক্ষুক পুর্নবাসন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয় ছয় বছর আগে। এর অংশ হিসেবে কাউকে দেওয়া হয় উন্নতজাতের ছাগল, ভ্যান,সেলাই মেশিন, হুইল চেয়ার, বাঁশের দ্রব্য সামগ্রী, পান ও চায়ের টলি, দোকান ও দোকান ঘরের মালপত্র দেওয়া হয়েছে। এত কিছু দেওয়ার পরও ভাগ্য ফেরেনি অনেকেরই। কারণ হিসেবে দেখছেন বিতরণ সংশ্লিষ্ট কর্তাদের অনিয়ম ও দুনীর্তির কথা বলছেন প্রকল্পের সুফলভোগী পরিবারের সদস্যরা।
ভিক্ষুক পুর্নবাসনের পর সুফলভোগীরা কেমন আছেন— জানতে সরেজমিনে অনুন্ধান করে দেখা যায়, প্রকল্পের বরাদ্দ সঠিকভাবে করা হয়নি।
পুনর্বাসন পরবর্তী করণীয় বিষয়েও উদাসীন ছিল দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি। তাদের মধ্যে ছিল সমন্বয়হীনতা। এ রকম নানা কারণে প্রকল্প সফলতার মুখ দেখেনি। তাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার কথা থাকলেও অনেকেই সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি।
সাটুরিয়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের উত্তর কাওন্নারা গ্রামের গেদুমিয়া ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। তাকে এ প্রকল্পের আওতায় এনে দেওয়া হয় একটি দোকান ঘর ও কিছু মালপত্র। ভিক্ষুক গেদুমিয়া মারা যাওয়ার এক বছর আগে বলেন, ঘরসহ আমাকে সব মিলিয়ে হাজার দশেক টাকার মালপত্র দিয়েছিল সমাজসেবা অফিস। যারমধ্যে ছিল চকলেট,চিপস,বিড়ি সিগারেট,সাবান ও দিয়াসলাই। মালপত্র দেওয়ার পর আমার পরিবার কেমন আছে সরকারি অফিসের কেউ আর খোঁজ নেননি। তার মৃত্যুর পর লাল সবুজ টিনের দোকানটি বন্ধ রয়েছে।
প্রকল্পের আরেক সুফলভোগী হরগজ ইউনিয়নের নয়াপাড়া চাটনি বাধা গ্রামের সরস্বতী রানী দাস জানান, সমাজসেবা অফিস থেকে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার মালপত্র দেওয়া হয়েছে।সেখানে বেশির ভাগ চিপস ছিলো। তার খোঁজ পর্যন্ত নেননি কেউ দোকান কিভাবে চলবে। টুকরি একটি ঘর তৈরী করে একটি সাইনবোর্ড দিয়ে ছবি তোলেই দায় সেরেছেন সংশ্লিষ্ট অফিস।
সাটুরিয়া উপজেলার সুবিধা বঞ্চিত তিল্লি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ২৩ জন ভিক্ষুকদের দেওয়া হয়েছে উন্নতজাতের ছাগল।
এসব ছাগল দেশীয় হলেও কাগজ কলমে দেখানো হয়েছে উন্নতজাতের। কাকে কত টাকার মূল্যের উন্নতজাতের ছাগল দেওয়া হয়েছে,কয়টা ছাগল দেওয়া হয়েছে,তার কোন হিসেব নেই। যাদেরকে ছাগল দেওয়া হয়েছে তারা ভিক্ষুক কিনা যাছাই বাছাই না করে ইউপি চেয়ারম্যানদের তালিকা অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, যাদের ছাগল দেওয়া হয়েছে তাদের বেশির ভাগ সুফলভোগীর ঘরে ছাগল নেই।
একই অভিযোগ বালিয়াটি এলাকার গোপালনগরের ভিক্ষুক মো. আইয়ুব আলীর। এই ভিক্ষুক জানান, আমার টুকরি দোকানের পাশে রয়েছে আরেকটি দোকান। এলাকার মানুষ সেই দোকান থেকে মালপত্র নগদ ও বাকিতে নিয়ে থাকেন।
ওই দোকানের কারণে আমার দোকান চলে না। পুঁজি যা দিয়েছিল তা খেয়ে পূর্বে পেশায় ফিরে গেছি। স্থানীয়ভাবে একটি দোকান চালাতে হলে লক্ষাধিক টাকার দরকার হয়। শুনেছি একজন ভিক্ষুক পুনর্বাসনের জন্য বরাদ্দ ছিল ২০ হাজার টাকা। প্রকল্পের বরাদ্ধের পরিমানের চেয়ে অর্ধেক টাকা দিয়ে তারা নিজেরাই মালপত্র কিনে দিয়েছিল।
সাটুরিয়া উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ৭০ জন ভিক্ষুকের নামের তালিকা করে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভিক্ষুকদের পুর্নবাসন করেছেন। এসব ভিক্ষুকদের পুর্ণবাসনের নামে বরাদ্ধ আসে ১৫ লক্ষ টাকা।
২০১৭-১৮ অর্থ বছরে তাদের পুর্নবাসনের প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এতে চলতি বছর পর্যন্ত ৭০ জন ভিক্ষুককের পুর্ণবাসনের নামে ব্যয় করা হয় সাড়ে ১৪ লক্ষ টাকা। সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর সেই টাকা দিয়ে উন্নতজাতের ছাগল, ভ্যান,সেলাই মেশিন, হুইল চেয়ার, বাঁশের দ্রব্য সামগ্রী, পান ও চায়ের টলি, দোকান ও দোকান ঘর এবং মালপত্র দেওয়া হয়েছে।
ভিক্ষুক পুর্নবাসন প্রকল্পের সদস্য সচিব ও সাটুরিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সিরাজউদ্দিন বলেন, আমার উপজেলায় ৭০ জন ভিক্ষুককে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এ প্রকল্পের সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। তাদের পুর্নবাসন সঠিকভাবে করা হয়েছে।
কাকে কত টাকার মালপত্র দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাকে কত টাকা দিয়েছি তা আমার জানা নেই। এর কোন বিল ভাউচার আমার কাছে নেই। প্রকল্পের সভাপতি যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন সেইভাবে কাজ করেছি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রকল্পের কিছু ভুলক্রুটি থাকতে পারে। যেসব ভিক্ষককে ঘর ও মালপত্র দেওয়া হয়েছে তারা ৩৫ হাজার টাকা করে পেয়েছে।
সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ভুক্তভোগীদের কেউ এখন পর্যন্ত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে সরেজমিনে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।