সাঘাটা : উপজেলার কালুরপাড়া চরে নদীভাঙনের চিত্র -সংবাদ
গাইবান্ধার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনার ভাঙনে চলতি বছর ১৫টি গ্রামের অস্তিত্ব বিলীন হয়েছে। এতে করে বাস্তুহীন হয়েছে অন্ততপক্ষে ৪হাজার পরিবারের ২০ হাজার মানুষ।
সাংবাৎসরিক নদীভ্ঙানে জেলা সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ২৮টি ইউনিয়নের তিস্তা ব্রহ্মপুত্র-যুমনার ১৩৪টি চর-গ্রামের প্রায় ৩০হাজার হেক্টর আবাদী জমিও এখন নদীর পেটে। স্থানান্তরিত হয়েছে ১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন অবকাঠামো। প্রতিনিয়ত স্থায়ী চরগুলো নদীভ্ঙানের কবলে পড়লেও প্রতিরোধ পদক্ষেপ না থাকায় উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন চরের হাজারো পরিবারের মানুষ।
গাইবান্ধা সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের কালুরপাড়া, কুমারপাড়া, পাতিলবাড়ি, ঘুয়াবাড়ি গ্রামের অস্তিত্ব আর নেই। এই চরের গ্রামগুলোতে শতশতস পরিবারের বসবাস থাকলেও এখন জনসবতিহীন বালুর চর আর নদী।
ঘুড়িদহ ইউনিয়নের চিনিরপটল, চকপাড়া, নইকারচরেও ঠিকানাও এখন যমুনাতে। হলদিয়া ইউনিয়নের পাতিলবাড়ি চরের শামসুল হক সরকার জানান, এই চরের বয়স অন্ততপক্ষে ৪০ বছর। এখানের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্র, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ নানা অবকাঠামোসহ প্রায় ৪শতাধিক পরিবারের বসতি গড়ে ওঠে। কিন্তু গত তিন বছর ধরে ক্রমাগ্রত ভ্ঙানে চলতি সপ্তাহে পুরোপুরিভাবে বিলীন হয় এই গ্রামটি। কাগজে কলমে এই গ্রামের নাম থাকলেও মানুষজনের বসতির কোন চিহ্ন এখানে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই গ্রামের বাসিন্দা সাইদুর রহমান মন্ডল জানান, এই গ্রামের আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। কিন্তু চলতি বছর আমার বাড়িসহ বংশের প্রায় ৮০টি পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে। তিনি আরো জানান বংশের পারিবারিক বন্ধন এই নদী কেড়ে নিলো।
কালুরপাড়া গ্রামের নুর ইসলাম প্রামানিক জানান, দশ বিঘা জমিসহ বসতভিটা নদীগর্ভে যাওয়ায় আমি এখন নিঃশ্ব। শুধু টিনের চালাসহ আর কিছুই নিতে পারিনি। সবই নদীগর্ভে। এই ইউনিয়নের অন্ততপক্ষে ১৫শ পরিবারের নিজ গ্রামের ঠিকানা আর নেই।
ফুলছড়ি উপজেলার গাবগাছি, টেংরাকান্দি, পিপুলিয়া, পারুল, ফজলুপুর, খাটিয়ামারী, নিশ্চিতপুর গ্রামের পুরোপুরি এখন নদীর মধ্যে। এরেন্ডারবাড়ি ইউনিয়নে মৌলভির চরে অস্তিত্বও শেষ পর্যায়ে।
সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের খারজানি, কুন্দেরপাড়া, গুপ্তমনি, মোল্লারচর ইউনিয়নের ছেরিমারার চর, মৌলভির চরেও ভ্ঙান দেখা দিয়েছে। এতে এসব গ্রামের মানুষজন নিজ গ্রাম থেকে বিভিন্ন চরে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর, বেলকা, কাপাসিয়া ও চন্ডিপুরের ৬টি গ্রামে নদীভ্ঙানের প্রায় ২হাজার পরিবারের বসতভিটা এখন নদীগর্ভে।
সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান জানান, চরের গ্রামগুলো রক্ষায় সরকারের কোন পদদেক্ষ না থাকায় প্রতিনিয়ত নদীভ্ঙানে শতশত পরিবার বসতভিটা হারিয়ে নিঃশ্ব হচ্ছে। ফুলছড়ি উপজেলার পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাঈদ বলেন, চরের মানুষের অন্যতম সম্পদ কৃষি জমি। সেগুলোও নদীতে গিয়ে বালুতে পরিণত হচ্ছে, এতে করে মানুষজনের জীবনযাত্রার উন্নয়নে মারাত্মক বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে।
এদিকে, চরাঞ্চলগুলোতে ভ্ঙান ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন পরিকল্পনা না নেই বলে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সুত্রে জানা গেছে।
নদী গবেষক ড. আইনুন নিশাত বলেন, নদী তার স্বাভাবিক গতিতে চলাচলে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। এজন্য তিনি মানুষজনকে দায়ী করে বলেন, নদীগুলোকে আমরা রক্ষা করতে পারছিনা। একারণে নদী অসময়ে ভ্ঙাছে এবং এর প্রভাব পড়ছে জনজীবনে। তিনি বলেন, নদীর নাব্য রক্ষায় সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকলে ভয়াবহতা আরো বাড়বে।
সাঘাটা : উপজেলার কালুরপাড়া চরে নদীভাঙনের চিত্র -সংবাদ
সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
গাইবান্ধার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনার ভাঙনে চলতি বছর ১৫টি গ্রামের অস্তিত্ব বিলীন হয়েছে। এতে করে বাস্তুহীন হয়েছে অন্ততপক্ষে ৪হাজার পরিবারের ২০ হাজার মানুষ।
সাংবাৎসরিক নদীভ্ঙানে জেলা সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ২৮টি ইউনিয়নের তিস্তা ব্রহ্মপুত্র-যুমনার ১৩৪টি চর-গ্রামের প্রায় ৩০হাজার হেক্টর আবাদী জমিও এখন নদীর পেটে। স্থানান্তরিত হয়েছে ১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন অবকাঠামো। প্রতিনিয়ত স্থায়ী চরগুলো নদীভ্ঙানের কবলে পড়লেও প্রতিরোধ পদক্ষেপ না থাকায় উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন চরের হাজারো পরিবারের মানুষ।
গাইবান্ধা সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের কালুরপাড়া, কুমারপাড়া, পাতিলবাড়ি, ঘুয়াবাড়ি গ্রামের অস্তিত্ব আর নেই। এই চরের গ্রামগুলোতে শতশতস পরিবারের বসবাস থাকলেও এখন জনসবতিহীন বালুর চর আর নদী।
ঘুড়িদহ ইউনিয়নের চিনিরপটল, চকপাড়া, নইকারচরেও ঠিকানাও এখন যমুনাতে। হলদিয়া ইউনিয়নের পাতিলবাড়ি চরের শামসুল হক সরকার জানান, এই চরের বয়স অন্ততপক্ষে ৪০ বছর। এখানের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্র, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ নানা অবকাঠামোসহ প্রায় ৪শতাধিক পরিবারের বসতি গড়ে ওঠে। কিন্তু গত তিন বছর ধরে ক্রমাগ্রত ভ্ঙানে চলতি সপ্তাহে পুরোপুরিভাবে বিলীন হয় এই গ্রামটি। কাগজে কলমে এই গ্রামের নাম থাকলেও মানুষজনের বসতির কোন চিহ্ন এখানে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই গ্রামের বাসিন্দা সাইদুর রহমান মন্ডল জানান, এই গ্রামের আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। কিন্তু চলতি বছর আমার বাড়িসহ বংশের প্রায় ৮০টি পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে। তিনি আরো জানান বংশের পারিবারিক বন্ধন এই নদী কেড়ে নিলো।
কালুরপাড়া গ্রামের নুর ইসলাম প্রামানিক জানান, দশ বিঘা জমিসহ বসতভিটা নদীগর্ভে যাওয়ায় আমি এখন নিঃশ্ব। শুধু টিনের চালাসহ আর কিছুই নিতে পারিনি। সবই নদীগর্ভে। এই ইউনিয়নের অন্ততপক্ষে ১৫শ পরিবারের নিজ গ্রামের ঠিকানা আর নেই।
ফুলছড়ি উপজেলার গাবগাছি, টেংরাকান্দি, পিপুলিয়া, পারুল, ফজলুপুর, খাটিয়ামারী, নিশ্চিতপুর গ্রামের পুরোপুরি এখন নদীর মধ্যে। এরেন্ডারবাড়ি ইউনিয়নে মৌলভির চরে অস্তিত্বও শেষ পর্যায়ে।
সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের খারজানি, কুন্দেরপাড়া, গুপ্তমনি, মোল্লারচর ইউনিয়নের ছেরিমারার চর, মৌলভির চরেও ভ্ঙান দেখা দিয়েছে। এতে এসব গ্রামের মানুষজন নিজ গ্রাম থেকে বিভিন্ন চরে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর, বেলকা, কাপাসিয়া ও চন্ডিপুরের ৬টি গ্রামে নদীভ্ঙানের প্রায় ২হাজার পরিবারের বসতভিটা এখন নদীগর্ভে।
সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান জানান, চরের গ্রামগুলো রক্ষায় সরকারের কোন পদদেক্ষ না থাকায় প্রতিনিয়ত নদীভ্ঙানে শতশত পরিবার বসতভিটা হারিয়ে নিঃশ্ব হচ্ছে। ফুলছড়ি উপজেলার পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাঈদ বলেন, চরের মানুষের অন্যতম সম্পদ কৃষি জমি। সেগুলোও নদীতে গিয়ে বালুতে পরিণত হচ্ছে, এতে করে মানুষজনের জীবনযাত্রার উন্নয়নে মারাত্মক বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে।
এদিকে, চরাঞ্চলগুলোতে ভ্ঙান ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন পরিকল্পনা না নেই বলে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সুত্রে জানা গেছে।
নদী গবেষক ড. আইনুন নিশাত বলেন, নদী তার স্বাভাবিক গতিতে চলাচলে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। এজন্য তিনি মানুষজনকে দায়ী করে বলেন, নদীগুলোকে আমরা রক্ষা করতে পারছিনা। একারণে নদী অসময়ে ভ্ঙাছে এবং এর প্রভাব পড়ছে জনজীবনে। তিনি বলেন, নদীর নাব্য রক্ষায় সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকলে ভয়াবহতা আরো বাড়বে।