ভাঙা কুঁড়ে ঘর, চোখে অশ্রু, মুখে একরাশ ক্লান্তি। এক সময় দুবেলা খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খাওয়া প্রতিবন্ধী ফাতেমা এখনও হাল ছাড়েননি। স্বামীহারা জীবনের যন্ত্রণাকে সঙ্গী করে তিন মেয়েকে মানুষ করেছেন, তাদের বিয়ে দিয়েছেন। একসময় মানুষের কাছে হাত পেতে চলা সেই ফাতেমা এখন নিজের একটি ছোট দোকান চালিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের দামাইক্ষেত্র গ্রামের বাসিন্দা ফাতেমা বেগম (৭৫)। প্রায় ৩৫ বছর আগে স্বামী হারানোর পর থেকেই জীবন যেন হয়ে ওঠে এক নির্মম সংগ্রামের নাম। তখন ছোট ছোট তিন কন্যা সন্তান নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন একটি জরাজীর্ণ কুঁড়ে ঘরে। প্রতিবন্ধী শরীর নিয়ে রোজ রোজ মানুষের বাড়িতে গিয়ে ভিক্ষা করে যে যা দিত, তাই দিয়েই কোনোরকমে দিন চলে যেত।
ফাতেমা বলেন, ভিক্ষা করে খাইতাম। লজ্জা লাগত, কিন্তু বাচ্চাগুলার মুখের দিকে তাকাইলে কিছু করার ছিল না। মানুষ সাহায্য করছে বলেই মেয়েগুলার বিয়ে দিতে পারছি। এখন ওরা যার যার ঘরে, আমি একা।
বর্তমানে তিনি একটি ছোট্ট মুদির দোকান চালান। এটি কোনো স্থায়ী দোকান নয়, একটিটিনের ছাপড়ার নিচে সামান্য কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য রেখেই দোকানটি চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন খুব সামান্য আয় হয়, যা দিয়ে ঠিকভাবে চলা সম্ভব নয়। তবু আত্মসম্মান বোধে আর কারো কাছে হাত পাতেন না।
একই এলাকার মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, ফাতেমা আপা আগে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাহায্য চাইত। এখন দেখলে খুব কষ্ট হয়, কিন্তু গর্বও লাগে। দোকানটা ছোট হলেও ওর আত্মবিশ্বাস অনেক বড়।
স্থানীয় ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গোবিন্দ সাহা বলেন, ফাতেমা খুব পরিশ্রমী। আমরা ওনাকে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে কিছু সহযোগিতা করেছি। তবে সেটা খুবই সীমিত। এ ধরনের অসহায়দের জন্য সরকারিভাবে আরও বড় উদ্যোগ নেয়া দরকার।
স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান আনিস বলেন, ফাতেমার এত অসহায় অনেক মানুষ আমাদের সমাজে আছে। আমরা চাই তার এত সংগ্রামী নারীদের পাশে সবাই দাঁড়াক। আমি ব্যক্তিগতভাবেও চেষ্টা করছি, তাকে কোনো স্থায়ী দোকানের জন্য সহযোগিতা করার। পাশাপাশি ফাতেমাকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বয়স্কভাতার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।
বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর আহমেদ বলেন, আমি ফাতেমা বেগমের ব্যাপারে অবগত হয়েছি। খুব শিগগিরই উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে সর্বোচ্চ সম্মান ও প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে, যাতে তার জীবনমান আরও উন্নত হয় এবং তিনি অনুপ্রাণিত হয়ে এগিয়ে যেতে পারেন। তার এত মানুষ আমাদের সমাজের জন্য প্রেরণা। ফাতেমার জীবনচিত্র আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় একজন মানুষ চাইলেই হাল না ছেড়ে দাঁড়াতে পারে। তার সংগ্রাম কেবল একটি মায়ের গল্প নয়, এটি সাহস, আত্মসম্মান আর বেঁচে থাকার জেদে ভরা এক মহাকাব্য।
সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
ভাঙা কুঁড়ে ঘর, চোখে অশ্রু, মুখে একরাশ ক্লান্তি। এক সময় দুবেলা খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খাওয়া প্রতিবন্ধী ফাতেমা এখনও হাল ছাড়েননি। স্বামীহারা জীবনের যন্ত্রণাকে সঙ্গী করে তিন মেয়েকে মানুষ করেছেন, তাদের বিয়ে দিয়েছেন। একসময় মানুষের কাছে হাত পেতে চলা সেই ফাতেমা এখন নিজের একটি ছোট দোকান চালিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের দামাইক্ষেত্র গ্রামের বাসিন্দা ফাতেমা বেগম (৭৫)। প্রায় ৩৫ বছর আগে স্বামী হারানোর পর থেকেই জীবন যেন হয়ে ওঠে এক নির্মম সংগ্রামের নাম। তখন ছোট ছোট তিন কন্যা সন্তান নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন একটি জরাজীর্ণ কুঁড়ে ঘরে। প্রতিবন্ধী শরীর নিয়ে রোজ রোজ মানুষের বাড়িতে গিয়ে ভিক্ষা করে যে যা দিত, তাই দিয়েই কোনোরকমে দিন চলে যেত।
ফাতেমা বলেন, ভিক্ষা করে খাইতাম। লজ্জা লাগত, কিন্তু বাচ্চাগুলার মুখের দিকে তাকাইলে কিছু করার ছিল না। মানুষ সাহায্য করছে বলেই মেয়েগুলার বিয়ে দিতে পারছি। এখন ওরা যার যার ঘরে, আমি একা।
বর্তমানে তিনি একটি ছোট্ট মুদির দোকান চালান। এটি কোনো স্থায়ী দোকান নয়, একটিটিনের ছাপড়ার নিচে সামান্য কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য রেখেই দোকানটি চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন খুব সামান্য আয় হয়, যা দিয়ে ঠিকভাবে চলা সম্ভব নয়। তবু আত্মসম্মান বোধে আর কারো কাছে হাত পাতেন না।
একই এলাকার মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, ফাতেমা আপা আগে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাহায্য চাইত। এখন দেখলে খুব কষ্ট হয়, কিন্তু গর্বও লাগে। দোকানটা ছোট হলেও ওর আত্মবিশ্বাস অনেক বড়।
স্থানীয় ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গোবিন্দ সাহা বলেন, ফাতেমা খুব পরিশ্রমী। আমরা ওনাকে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে কিছু সহযোগিতা করেছি। তবে সেটা খুবই সীমিত। এ ধরনের অসহায়দের জন্য সরকারিভাবে আরও বড় উদ্যোগ নেয়া দরকার।
স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান আনিস বলেন, ফাতেমার এত অসহায় অনেক মানুষ আমাদের সমাজে আছে। আমরা চাই তার এত সংগ্রামী নারীদের পাশে সবাই দাঁড়াক। আমি ব্যক্তিগতভাবেও চেষ্টা করছি, তাকে কোনো স্থায়ী দোকানের জন্য সহযোগিতা করার। পাশাপাশি ফাতেমাকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বয়স্কভাতার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।
বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর আহমেদ বলেন, আমি ফাতেমা বেগমের ব্যাপারে অবগত হয়েছি। খুব শিগগিরই উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে সর্বোচ্চ সম্মান ও প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে, যাতে তার জীবনমান আরও উন্নত হয় এবং তিনি অনুপ্রাণিত হয়ে এগিয়ে যেতে পারেন। তার এত মানুষ আমাদের সমাজের জন্য প্রেরণা। ফাতেমার জীবনচিত্র আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় একজন মানুষ চাইলেই হাল না ছেড়ে দাঁড়াতে পারে। তার সংগ্রাম কেবল একটি মায়ের গল্প নয়, এটি সাহস, আত্মসম্মান আর বেঁচে থাকার জেদে ভরা এক মহাকাব্য।