দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) : ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত ভাঙা ভাসমান সেতু -সংবাদ
দেওয়ানগঞ্জ পৌর শহরের ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত ভাসমান সেতুটি তিন গ্রামের হাজারো মানুষকে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার যতটুকু আশা দেখিয়েছিল তারও বেশি নিরাশ করেছে। কারণ সেতুটি সারাবছর ভাঙা থাকে। পারাপারে ভোগান্তির শেষ নেই।
দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার আওতাধীন চরকালিকাপুর, মাইছেনিরচর, বানিয়ানিরচর গ্রাম তিনটি যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব দিক থেকে পিছিয়ে ছিল। পৌর শহরের সঙ্গে গ্রামগুলোর কানেক্টিভিটি তৈরি করতে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর কাঠ ও ড্রাম দিয়ে একটি ভাসমান সেতু নির্মাণ করে। যার দৈর্ঘ্য ১৪৫ মিটার, প্রস্থ ১.৫২ মিটার। সেতুটি নির্মাণের বছর থেকেই বারো মাস ভাঙা থাকে। অতঃপর ২০২৩ সালে সংস্কার করে স্টিলের পাটাতন ও রেলিং বসানো হয়।
নিয়মিত দেখভালের অভাবে কয়েক মাস পরেই জায়গায় জায়গায় রেলিং ও পাটাতন ভেঙে যায়। আরো বড় ধরনের মরণ ফাঁদ তৈরি হয়। পূর্ব-পশ্চিমমুখী সেতুটির দু’পাড়ের কোন এক পাড়ের সংযোগ আজ অবধি ঠিক নেই। সেতুতে উঠতে পূর্ব পাড়ে ৩০ মিটার নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করতে হয়। এবং পশ্চিম পাড়ে কখনো লাফিয়ে লাফিয়ে আবার কখনো হাঁটু পানি ডিঙাতে হয়। সেতুর মাঝে এসে রেলিংয়ের খোঁচা ও পাটাতনের ভাঙা অংশে হোঁচট অনেকটাই নিশ্চিত।
বর্তমানে সেতুটির পশ্চিম পাড়ের সংযোগ বিচ্ছিন্ন। পূর্ব পাড় ঘেঁষে কচুরিপানায় আবদ্ধ অবস্থায় আছে। দু’পাড়ের মানুষের যোগাযোগ সম্পূর্ণরুপে বন্ধ। এতে তিন গ্রামের হাজারো মানুষ প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সেতুটি ভেঙে যাওয়াই পারাপারের সুযোগ নেই বিধায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য যেতে পারছেন না চরকালিকাপুর বাসিন্দা নূরেজা বেগম। তার মতোই ভাবছেন তার প্রতিবেশী শরিফা, মাহমুদা সহ অনেকেই। তাদের ভাষ্য, সেতু ঠিক হলেই হাসপাতাল যাবেন চিকিৎসা নিতে। এবং নিয়মিত হাসপাতাল থেকে ওষুধ নিয়ে আসবেন। তারা আরো বলেন, সেতুটির অভাবে নিয়মিত বাজার সদাই করা হয় না । আত্মীয়-স্বজনদের আসা যাওয়া একেবারে বন্ধ। গ্রামের একটা মানুষ মারা গেলেও কেউ দেখতে আসতে পারবে না । গেল সপ্তাহে বছরের একটা ঈদের দিন ছিল। যাতায়াত অসুবিধায় মাঠের নামাজ পর্যন্ত পড়তে পারেনি গ্রামের মুসল্লিরা । সেতু আছে বিধায় মাঝিরা নৌকা তুলে নিয়ে গেছে। এখন সেতু ভাঙা, নদে নৌকা নেই, যোগাযোগ বন্ধ।
ভাসমান সেতুটি নিয়মিত ব্যবহার করেন হুমায়ুন, রায়হান, আবীর, রিশাদ ও নিজাম উদ্দিন। তাদের ভাষ্য, সেতুটির কল্যাণে তিন গ্রামের মানুষ পায়ে হেঁটে দশ-পনের মিনিট সময় ব্যয় করে পৌর শহরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। সেতুটি ভেঙে যাওয়াই দশ মিনিটের পথ এখন ৩-৪ কি. মি. ঘুরে ঘুরে আসা যাওয়া করতে হয়। একটি অটো রিকশা পেতেও ঘণ্টা তিনেক অপেক্ষা করতে হয়। ভোগান্তি মনে করিয়ে দেয় সেতু নির্মাণের আগে রশিটানা নৌকাতেই ভালো ছিলাম ।
ভাসমান সেতুটির বেহাল দশার বিষয়ে দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদে প্রচুর কচুরিপানা। কচুরিপানার চাপে প্রতি বছর তিন-চার বার সেতুটি ভেঙে যায়। কচুরিপানা না সড়িয়ে সেতুটি সংস্কার করলে আবারো ভেঙে যাবে। কচুরিপানা সরিয়েই সেতুটি সংস্কার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য ভাসমান সেতুটি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে ব্যর্থ। তাই একটি স্থায়ী সেতু পৌরবাসীর সময়ের দাবি।
দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) : ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত ভাঙা ভাসমান সেতু -সংবাদ
মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
দেওয়ানগঞ্জ পৌর শহরের ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত ভাসমান সেতুটি তিন গ্রামের হাজারো মানুষকে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার যতটুকু আশা দেখিয়েছিল তারও বেশি নিরাশ করেছে। কারণ সেতুটি সারাবছর ভাঙা থাকে। পারাপারে ভোগান্তির শেষ নেই।
দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার আওতাধীন চরকালিকাপুর, মাইছেনিরচর, বানিয়ানিরচর গ্রাম তিনটি যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব দিক থেকে পিছিয়ে ছিল। পৌর শহরের সঙ্গে গ্রামগুলোর কানেক্টিভিটি তৈরি করতে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর কাঠ ও ড্রাম দিয়ে একটি ভাসমান সেতু নির্মাণ করে। যার দৈর্ঘ্য ১৪৫ মিটার, প্রস্থ ১.৫২ মিটার। সেতুটি নির্মাণের বছর থেকেই বারো মাস ভাঙা থাকে। অতঃপর ২০২৩ সালে সংস্কার করে স্টিলের পাটাতন ও রেলিং বসানো হয়।
নিয়মিত দেখভালের অভাবে কয়েক মাস পরেই জায়গায় জায়গায় রেলিং ও পাটাতন ভেঙে যায়। আরো বড় ধরনের মরণ ফাঁদ তৈরি হয়। পূর্ব-পশ্চিমমুখী সেতুটির দু’পাড়ের কোন এক পাড়ের সংযোগ আজ অবধি ঠিক নেই। সেতুতে উঠতে পূর্ব পাড়ে ৩০ মিটার নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করতে হয়। এবং পশ্চিম পাড়ে কখনো লাফিয়ে লাফিয়ে আবার কখনো হাঁটু পানি ডিঙাতে হয়। সেতুর মাঝে এসে রেলিংয়ের খোঁচা ও পাটাতনের ভাঙা অংশে হোঁচট অনেকটাই নিশ্চিত।
বর্তমানে সেতুটির পশ্চিম পাড়ের সংযোগ বিচ্ছিন্ন। পূর্ব পাড় ঘেঁষে কচুরিপানায় আবদ্ধ অবস্থায় আছে। দু’পাড়ের মানুষের যোগাযোগ সম্পূর্ণরুপে বন্ধ। এতে তিন গ্রামের হাজারো মানুষ প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সেতুটি ভেঙে যাওয়াই পারাপারের সুযোগ নেই বিধায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য যেতে পারছেন না চরকালিকাপুর বাসিন্দা নূরেজা বেগম। তার মতোই ভাবছেন তার প্রতিবেশী শরিফা, মাহমুদা সহ অনেকেই। তাদের ভাষ্য, সেতু ঠিক হলেই হাসপাতাল যাবেন চিকিৎসা নিতে। এবং নিয়মিত হাসপাতাল থেকে ওষুধ নিয়ে আসবেন। তারা আরো বলেন, সেতুটির অভাবে নিয়মিত বাজার সদাই করা হয় না । আত্মীয়-স্বজনদের আসা যাওয়া একেবারে বন্ধ। গ্রামের একটা মানুষ মারা গেলেও কেউ দেখতে আসতে পারবে না । গেল সপ্তাহে বছরের একটা ঈদের দিন ছিল। যাতায়াত অসুবিধায় মাঠের নামাজ পর্যন্ত পড়তে পারেনি গ্রামের মুসল্লিরা । সেতু আছে বিধায় মাঝিরা নৌকা তুলে নিয়ে গেছে। এখন সেতু ভাঙা, নদে নৌকা নেই, যোগাযোগ বন্ধ।
ভাসমান সেতুটি নিয়মিত ব্যবহার করেন হুমায়ুন, রায়হান, আবীর, রিশাদ ও নিজাম উদ্দিন। তাদের ভাষ্য, সেতুটির কল্যাণে তিন গ্রামের মানুষ পায়ে হেঁটে দশ-পনের মিনিট সময় ব্যয় করে পৌর শহরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। সেতুটি ভেঙে যাওয়াই দশ মিনিটের পথ এখন ৩-৪ কি. মি. ঘুরে ঘুরে আসা যাওয়া করতে হয়। একটি অটো রিকশা পেতেও ঘণ্টা তিনেক অপেক্ষা করতে হয়। ভোগান্তি মনে করিয়ে দেয় সেতু নির্মাণের আগে রশিটানা নৌকাতেই ভালো ছিলাম ।
ভাসমান সেতুটির বেহাল দশার বিষয়ে দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদে প্রচুর কচুরিপানা। কচুরিপানার চাপে প্রতি বছর তিন-চার বার সেতুটি ভেঙে যায়। কচুরিপানা না সড়িয়ে সেতুটি সংস্কার করলে আবারো ভেঙে যাবে। কচুরিপানা সরিয়েই সেতুটি সংস্কার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য ভাসমান সেতুটি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে ব্যর্থ। তাই একটি স্থায়ী সেতু পৌরবাসীর সময়ের দাবি।