মাদারগঞ্জ (জামালপুর) পাকরুল নামক গ্রাম মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার পথে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের তাগিদ এলাকাবাসীর -সংবাদ
জামালপুরের মাদারগঞ্জে সর্বগ্রাসী যমুনা নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে স্থায়ী বাঁধ চায় পাকরুল এলাকাবাসী।
জানা যায়, জামালপুরের মাদারগঞ্জ ১ নং চর পাকেরদহ ইউনিয়নের পাকরুল এলাকা বিগত ২ বছরে ভেঙে দুই-তৃতীয়াংশ নদীতে চলে গেছে। এ সময় ১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫টি মসজিদ, ২টি আশ্রয়ন কেন্দ্র, প্রায় ৫০০টি পরিবার ও ৩০০ একর তিন ফসলি আবাদি জমি এবং বিভিন্ন স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে করে মাদারগঞ্জের মানচিত্র থেকে পাকরুল নামক গ্রামটি মুছে যাওয়ার পথে।
বর্তমান সময়ে সর্বগ্রাসী যমুনা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে, পাকরুলের অবশিষ্ট অংশটুকু ভেঙে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে করে গত ১ মাসে প্রায় ৫০ একর ফসলি জমি ও প্রায় ১৫টি বাড়ি ঘর ভেঙে গেছে (চান্দু ফকির, আবু বক্কর, বিচ্ছু ফকির, জাকির মন্ডল, শফিকুল মন্ডল, সেকান্দর, তালুকদার, সুজন, লুৎফর ফকির, লোকমান ফকির, আবেদ আলী মন্ডল ও আবিজল মন্ডল)। পাকরুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুনরায় ভেঙ্গে যাওয়ার পথে (নদী থেকে স্কুলের দূরত্ব ১০০-১৫০ মিটার)। পার্শ্ববর্তী ১টি গ্রাম, ২টি আশ্রয়ন, ১টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ১টি প্রাথমকি বিদ্যালয় হুমকির মুখে।
পাকরুলবাসী এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সংবাদকে বলেন, মাদারগঞ্জে সর্বগ্রাসী যমুনা নদী ভাঙন প্রতিরোধে পাকরুল এলাকায় সরকারি অনুদানে একটা স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করার দাবি করছি।
এ বিষয়ে পাকরুল এলাকার স্থানীয় মেম্বার আকবর হোসেন সংবাদকে বলেন, সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিলেও এবারের চিত্র ব্যতিক্রম। আগাম ভাঙনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকায়। নদীপাড়ের পরিবারগুলো ঘরবাড়ি খুলে অন্যত্র সরিয়ে নিতে শুরু করেছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা রিপন মিয়া বলেন, আস্তে আস্তে নদী আমার ঘরের কাছে চলে এলো। তাই বাধ্য হয়ে ঘরবাড়ি ভেঙে দূরে চলে যাচ্ছি। বাপ-দাদার শত বছরের চিহ্নটুকু আর রইলো না।
এ বিষয়ে পাকরুলের মেম্বার আহাজ উদ্দিন জানান, মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে ১০টি ঘর নদীতে তলিয়ে গেছে। যেভাবে ভাঙন এগোচ্ছে, তাতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পুরো গ্রামই বিলীন হয়ে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, নদী ভাঙন রোধে গত কয়েক বছরেও কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ নেয়নি সরকার। সাময়িক প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তা ছিল অপর্যাপ্ত ও অকার্যকর। বরং এসব প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে।
এবিষয়ে পাকরুলের আশরাফ অভিযোগ করে বলেন, একদিকে যমুনায় হারিয়ে যাচ্ছে তাদের শেষ সম্বল, অন্যদিকে দুর্নীতির দায়ে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো হচ্ছে লোক দেখানো। ফলে প্রতিবছরই তারা নতুন করে নিঃস্ব হচ্ছেন।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড জামালপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান বলেন, পাকরুল এলাকায় নদীভাঙন ঠেকাতে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষ হয়েছে। খুব শিগগিরই প্রকল্পটি প্রণয়ন করা হবে।
তবে ভুক্তভোগীদের মতে, কেবল পরিকল্পনার আশ্বাস নয়, এখনই দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন, নইলে মানচিত্র থেকে মুছে যেতে পারে তাদের প্রিয় গ্রাম পাকরুল। এরই ধারাবাহিকতায় যমুনা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে একটি সমন্বিত ও টেকসই প্রকল্প গ্রহণ করে স্থায়ী প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের কাছে নদী ভাঙনকবলিত সাধারণ জনগণের পক্ষে একটি স্বারকলিপি জমা দিয়েছেন বলে মাদারগঞ্জ জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির এক নেতা সংবাদকে একথা বলেন।
মাদারগঞ্জ (জামালপুর) পাকরুল নামক গ্রাম মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার পথে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের তাগিদ এলাকাবাসীর -সংবাদ
মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
জামালপুরের মাদারগঞ্জে সর্বগ্রাসী যমুনা নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে স্থায়ী বাঁধ চায় পাকরুল এলাকাবাসী।
জানা যায়, জামালপুরের মাদারগঞ্জ ১ নং চর পাকেরদহ ইউনিয়নের পাকরুল এলাকা বিগত ২ বছরে ভেঙে দুই-তৃতীয়াংশ নদীতে চলে গেছে। এ সময় ১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫টি মসজিদ, ২টি আশ্রয়ন কেন্দ্র, প্রায় ৫০০টি পরিবার ও ৩০০ একর তিন ফসলি আবাদি জমি এবং বিভিন্ন স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে করে মাদারগঞ্জের মানচিত্র থেকে পাকরুল নামক গ্রামটি মুছে যাওয়ার পথে।
বর্তমান সময়ে সর্বগ্রাসী যমুনা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে, পাকরুলের অবশিষ্ট অংশটুকু ভেঙে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে করে গত ১ মাসে প্রায় ৫০ একর ফসলি জমি ও প্রায় ১৫টি বাড়ি ঘর ভেঙে গেছে (চান্দু ফকির, আবু বক্কর, বিচ্ছু ফকির, জাকির মন্ডল, শফিকুল মন্ডল, সেকান্দর, তালুকদার, সুজন, লুৎফর ফকির, লোকমান ফকির, আবেদ আলী মন্ডল ও আবিজল মন্ডল)। পাকরুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুনরায় ভেঙ্গে যাওয়ার পথে (নদী থেকে স্কুলের দূরত্ব ১০০-১৫০ মিটার)। পার্শ্ববর্তী ১টি গ্রাম, ২টি আশ্রয়ন, ১টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ১টি প্রাথমকি বিদ্যালয় হুমকির মুখে।
পাকরুলবাসী এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সংবাদকে বলেন, মাদারগঞ্জে সর্বগ্রাসী যমুনা নদী ভাঙন প্রতিরোধে পাকরুল এলাকায় সরকারি অনুদানে একটা স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করার দাবি করছি।
এ বিষয়ে পাকরুল এলাকার স্থানীয় মেম্বার আকবর হোসেন সংবাদকে বলেন, সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিলেও এবারের চিত্র ব্যতিক্রম। আগাম ভাঙনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকায়। নদীপাড়ের পরিবারগুলো ঘরবাড়ি খুলে অন্যত্র সরিয়ে নিতে শুরু করেছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা রিপন মিয়া বলেন, আস্তে আস্তে নদী আমার ঘরের কাছে চলে এলো। তাই বাধ্য হয়ে ঘরবাড়ি ভেঙে দূরে চলে যাচ্ছি। বাপ-দাদার শত বছরের চিহ্নটুকু আর রইলো না।
এ বিষয়ে পাকরুলের মেম্বার আহাজ উদ্দিন জানান, মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে ১০টি ঘর নদীতে তলিয়ে গেছে। যেভাবে ভাঙন এগোচ্ছে, তাতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পুরো গ্রামই বিলীন হয়ে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, নদী ভাঙন রোধে গত কয়েক বছরেও কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ নেয়নি সরকার। সাময়িক প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তা ছিল অপর্যাপ্ত ও অকার্যকর। বরং এসব প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে।
এবিষয়ে পাকরুলের আশরাফ অভিযোগ করে বলেন, একদিকে যমুনায় হারিয়ে যাচ্ছে তাদের শেষ সম্বল, অন্যদিকে দুর্নীতির দায়ে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো হচ্ছে লোক দেখানো। ফলে প্রতিবছরই তারা নতুন করে নিঃস্ব হচ্ছেন।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড জামালপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান বলেন, পাকরুল এলাকায় নদীভাঙন ঠেকাতে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষ হয়েছে। খুব শিগগিরই প্রকল্পটি প্রণয়ন করা হবে।
তবে ভুক্তভোগীদের মতে, কেবল পরিকল্পনার আশ্বাস নয়, এখনই দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন, নইলে মানচিত্র থেকে মুছে যেতে পারে তাদের প্রিয় গ্রাম পাকরুল। এরই ধারাবাহিকতায় যমুনা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে একটি সমন্বিত ও টেকসই প্রকল্প গ্রহণ করে স্থায়ী প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের কাছে নদী ভাঙনকবলিত সাধারণ জনগণের পক্ষে একটি স্বারকলিপি জমা দিয়েছেন বলে মাদারগঞ্জ জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির এক নেতা সংবাদকে একথা বলেন।