রোগীর চাপে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বহিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা অনেকটাই ভাগ্যের বিষয়। প্রতিদিন গড়ে প্রায় দু’হাজার রোগী এ হাসপাতালটির অন্তত ২২টি বিভাগে চিকিৎসার জন্য আসলেও চিকিৎসক পর্যন্ত পৌঁছাতে তাদেও নানা ধরনের ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।
৫শ’ শয্যার জনবল নিয়ে ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করা এ হাসপাতালে ২২৪ জন চিকিৎসকের অন্তত ৩০টি পদে কোনো জনবল নেই। এমনকি হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭শ’ রোগী আসলেও সেখানেও মাত্র ১০ জন ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসারের ৩টি পদ শূন্য। এমনকি ৫শ’ শয্যার অবকাঠামো জনবল নিয়ে হাসপাতালটিকে ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করা হলেও প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১৮শ’ রোগী ইনডোরে চিকিৎসাধীন থাকছেন। অথচ সাধারণ জনবলসহ চিকিৎসক আছেন মাত্র ৩শ’ রোগীর। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত এ সরকারী হাসপাতালটি এখন আর সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে সন্তুষ্ট করতে পারছে না। ১৯৬৮ সালে নির্মাণ কাজ শুরু করে ১৯৭৮ সালে এ হাসপাতাল ভবনে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম শুরু হবার পরে এর কলেবর আর বাড়েনি।
কিন্তু ১৯৭৮ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুনেরও বেশি। হাসপাতালটির নিচতলার ৩টি ব্লকে ২২টি বিভাগে চিকিৎসা গ্রহণে শুধু বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলাই নয়, মাদারীপুর, শরিয়তপুর ও গোপালগঞ্জ থেকেও প্রতিদিন রোগী আসছেন। কিন্তু শরীর ও মনের অত্যন্ত দুর্বল সময়ে যে মানুষগুলো একটু চিকিৎসা সেবার জন্য এ হাসপাতালে আসছেন সেখানে তাদের নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বহিঃবিভাগ সব ধরনের রোগীদের জন্য উন্মুক্ত থাকার কথা। কিন্তু অনেক বিভাগের চিকিৎসকই সাড়ে ৯টার আগে আসেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার দুপুর ১টার আগেই টিকেট কাউন্টারগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে অনেক সময়ই দূর দুরান্ত থেকে আসা রোগীরা কাক্সিক্ষত চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হন।
এমনকি হাসপাতালটির নিচতলার বারান্দার বিহঃবিভাগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসকের কাছে পৌঁছার আগেই অনেক রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিপুল সংখ্যক রোগীর সাচ্ছন্দে বসাসহ শৌচাগারের ব্যবস্থাও এখানে অনুপস্থিতি। এমনকি বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা প্রায় ২ হাজার রোগীর টিকেট সংগ্রহের জন্য কাউন্টার মাত্র ১টি। হাসপাতাল ভবনের নিচতলার পূর্ব প্রান্তের কাউন্টারে ৩টি বুথে টিকেট প্রদানের ব্যবস্থা থাকলেও কখনোই সেখানে দুজনের বেশি কর্মীকে দেখা যায় না। ফলে এ হাসপাতালের বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষগুলোকে সরকারী ফি দিতে গিয়েই প্রথমে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। সকালের দিকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ নারী-পুরুষ ও শিশুদের টিকেট সংগ্রহের বিড়ম্বনা রোগ ভোগের চেয়েও অনেক কষ্টকর হয়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। অথচ এ হাসপাতালের আউটডোরে টিকেট প্রদানের জন্য নির্ধারিত ৬ কর্মীর সাহায্যেই নিচতলার তথ্য কেন্দ্রসহ পশ্চিমপ্রান্তে আরও দুটি টিকেট কাউন্টার স্থাপন করলে পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব বলেই মনে করছেন চিকিৎসা প্রার্থীরা।
এ ব্যাপারে হাসপাতালটির ছুটিতে থাকা পরিচালকের সঙ্গে সেলফোনে কথা বলা হলে তিনি কর্মস্থলে ফিরে এসেই এ লক্ষ্যে ‘রোগী বান্ধব পদক্ষেপ’ গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, প্রায় ৫০ বছর পূর্বে স্থাপিত দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির বহিঃবিভাগে বর্তমানে অর্থোপেডিক, মানসিক, সার্জারি, ইউরোলজি, শিশু রক্ত রোগ ও ক্যান্সার, নেফ্রোলজি, কার্ডিও ভাসকুলার এন্ড থেরোসিক সার্জারি, রিউমাটোলজি, হৃদরোগ, গ্যাস্ট্রাএন্টারোলজি, চর্ম ও যৌন রোগ, নাক-কান-গলা, চক্ষু, দন্ত, শিশু, গাইনী বহিঃবিভাগ, নিউরো সার্জরি, নেফ্রোলজি, হেপাটোলজি ও নিউরোলজি বহিঃবিভাগে বিপুল সংখ্যক মানুষ চিকিৎসার জন্য আসছেন। এ হাসপাতালের বহিঃবিভাগের ভায়া কল্পোস্কপি পারীক্ষা কেন্দ্র ও যক্ষ্মা পরিক্ষা কেন্দ্রেও প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রোগীকে নানা বিড়ম্বনা সহ্য করেই চিকিৎসা সেবা লাভ করতে হচ্ছে। এমনকি বহিঃবিভাগের রোগীরা চিকিৎসকের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র লাভের পরে হাসপাতালটির ডিসপেন্সারির একমাত্র কাউন্টার থেকে ওষুধ সংগ্রহেও লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে অনির্দিষ্ট সময়।
বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
রোগীর চাপে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বহিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা অনেকটাই ভাগ্যের বিষয়। প্রতিদিন গড়ে প্রায় দু’হাজার রোগী এ হাসপাতালটির অন্তত ২২টি বিভাগে চিকিৎসার জন্য আসলেও চিকিৎসক পর্যন্ত পৌঁছাতে তাদেও নানা ধরনের ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।
৫শ’ শয্যার জনবল নিয়ে ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করা এ হাসপাতালে ২২৪ জন চিকিৎসকের অন্তত ৩০টি পদে কোনো জনবল নেই। এমনকি হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭শ’ রোগী আসলেও সেখানেও মাত্র ১০ জন ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসারের ৩টি পদ শূন্য। এমনকি ৫শ’ শয্যার অবকাঠামো জনবল নিয়ে হাসপাতালটিকে ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করা হলেও প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১৮শ’ রোগী ইনডোরে চিকিৎসাধীন থাকছেন। অথচ সাধারণ জনবলসহ চিকিৎসক আছেন মাত্র ৩শ’ রোগীর। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত এ সরকারী হাসপাতালটি এখন আর সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে সন্তুষ্ট করতে পারছে না। ১৯৬৮ সালে নির্মাণ কাজ শুরু করে ১৯৭৮ সালে এ হাসপাতাল ভবনে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম শুরু হবার পরে এর কলেবর আর বাড়েনি।
কিন্তু ১৯৭৮ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুনেরও বেশি। হাসপাতালটির নিচতলার ৩টি ব্লকে ২২টি বিভাগে চিকিৎসা গ্রহণে শুধু বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলাই নয়, মাদারীপুর, শরিয়তপুর ও গোপালগঞ্জ থেকেও প্রতিদিন রোগী আসছেন। কিন্তু শরীর ও মনের অত্যন্ত দুর্বল সময়ে যে মানুষগুলো একটু চিকিৎসা সেবার জন্য এ হাসপাতালে আসছেন সেখানে তাদের নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বহিঃবিভাগ সব ধরনের রোগীদের জন্য উন্মুক্ত থাকার কথা। কিন্তু অনেক বিভাগের চিকিৎসকই সাড়ে ৯টার আগে আসেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার দুপুর ১টার আগেই টিকেট কাউন্টারগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে অনেক সময়ই দূর দুরান্ত থেকে আসা রোগীরা কাক্সিক্ষত চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হন।
এমনকি হাসপাতালটির নিচতলার বারান্দার বিহঃবিভাগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসকের কাছে পৌঁছার আগেই অনেক রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিপুল সংখ্যক রোগীর সাচ্ছন্দে বসাসহ শৌচাগারের ব্যবস্থাও এখানে অনুপস্থিতি। এমনকি বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা প্রায় ২ হাজার রোগীর টিকেট সংগ্রহের জন্য কাউন্টার মাত্র ১টি। হাসপাতাল ভবনের নিচতলার পূর্ব প্রান্তের কাউন্টারে ৩টি বুথে টিকেট প্রদানের ব্যবস্থা থাকলেও কখনোই সেখানে দুজনের বেশি কর্মীকে দেখা যায় না। ফলে এ হাসপাতালের বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষগুলোকে সরকারী ফি দিতে গিয়েই প্রথমে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। সকালের দিকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ নারী-পুরুষ ও শিশুদের টিকেট সংগ্রহের বিড়ম্বনা রোগ ভোগের চেয়েও অনেক কষ্টকর হয়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। অথচ এ হাসপাতালের আউটডোরে টিকেট প্রদানের জন্য নির্ধারিত ৬ কর্মীর সাহায্যেই নিচতলার তথ্য কেন্দ্রসহ পশ্চিমপ্রান্তে আরও দুটি টিকেট কাউন্টার স্থাপন করলে পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব বলেই মনে করছেন চিকিৎসা প্রার্থীরা।
এ ব্যাপারে হাসপাতালটির ছুটিতে থাকা পরিচালকের সঙ্গে সেলফোনে কথা বলা হলে তিনি কর্মস্থলে ফিরে এসেই এ লক্ষ্যে ‘রোগী বান্ধব পদক্ষেপ’ গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, প্রায় ৫০ বছর পূর্বে স্থাপিত দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির বহিঃবিভাগে বর্তমানে অর্থোপেডিক, মানসিক, সার্জারি, ইউরোলজি, শিশু রক্ত রোগ ও ক্যান্সার, নেফ্রোলজি, কার্ডিও ভাসকুলার এন্ড থেরোসিক সার্জারি, রিউমাটোলজি, হৃদরোগ, গ্যাস্ট্রাএন্টারোলজি, চর্ম ও যৌন রোগ, নাক-কান-গলা, চক্ষু, দন্ত, শিশু, গাইনী বহিঃবিভাগ, নিউরো সার্জরি, নেফ্রোলজি, হেপাটোলজি ও নিউরোলজি বহিঃবিভাগে বিপুল সংখ্যক মানুষ চিকিৎসার জন্য আসছেন। এ হাসপাতালের বহিঃবিভাগের ভায়া কল্পোস্কপি পারীক্ষা কেন্দ্র ও যক্ষ্মা পরিক্ষা কেন্দ্রেও প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রোগীকে নানা বিড়ম্বনা সহ্য করেই চিকিৎসা সেবা লাভ করতে হচ্ছে। এমনকি বহিঃবিভাগের রোগীরা চিকিৎসকের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র লাভের পরে হাসপাতালটির ডিসপেন্সারির একমাত্র কাউন্টার থেকে ওষুধ সংগ্রহেও লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে অনির্দিষ্ট সময়।