জীবন খাতার ৩০টি বছর হাতে বই নিয়ে কাটাচ্ছে। চারদিকে গাড়ির শব্দ। লোকাল কিংবা দূর পাল্লা ছোট কিংবা বড় সব বাহনে সবার কাছে ছুটে চলা। হাতে রকমারি বই। বই পড়ার আহ্বান জানান দেয় মার্জিত নরম কন্ঠে। তুলে ধরেন বইয়ের গুরুত্ব প্রয়োজনীয়তা। নামাজ শিক্ষা, শিশুদের বই, গল্পসহ নানা ধরেন বই। বাসস্ট্যান্ডের এপার ওপার করে নিত্য সন্ধ্যা নামে। দিন শেষে বই বিক্রির অর্থে পরিবারের আহার আর মৌলিক মানবিক চাহিদার যোগান। এভাবেই তার জীবন পাতার ৩০টি বছর পেড়িয়ে গেছে নিভৃতেই। নানা চড়াই উৎড়াই পাড়ি দিতে সেই কচি দেহ শরীরের মানুষটি আজ পাকা হাঁড় মাংসে বৃদ্ধের পথ ধরেছে। তবুও থামেনি তার জ্ঞান বিপনি ফেরিওয়ালা জীবন। কর্ম পেশাকে শ্রদ্ধা ভালোবাসায় জড়িয়ে নিয়েছে জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্বন হিসেবে। বলছিলাম বইয়ের ফেরিওয়ালা মো. আয়াতুল্লাহর কথা। সে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার বানাড় পাড় বাসুরি গ্রামের অধিবাসী। তার বাবার নাম মৃত জবেদ আলী। মা মৃত জোবেদা খাতুন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে টাঙ্গাইলের মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে বসে কথা হয় তার সঙ্গে। গল্পে গল্পে জানা গেল তার বই বিক্রি করে সংসার চালানোর ৩০ বছরের মজার কথা। তখন তিনি ছাত্র। তার বাবা তৎকালীন সময়ে স্থানীয় কাশেমপুর ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে। এ নির্বাচনে তার বাবার জমিজমা সম্পদ হ্রাস পায়। সে থেকে অভাবের কারণে আর পড়াশোনা শেষ হয়ে উঠেনি। কি করবে? মজুরি কাজও করতে পারে না! রিকশাও চালাতে লোকলজ্জা। ভেবে চিন্তে মধুপুর এসে বাংলাদেশ লাইব্রেরিতে যোগাযোগ করে। প্রথমে ইংরেজি অক্সফোর্ট ডিক্সেনারী হাতে নিয়ে ঘুরে ঘুরে বিক্রি শুরু করে। পরে নামাজ শিক্ষা, শিশুদের বইসহ অন্যান্য বই বিক্রি করতে থাকে। এভাবে ধীরে ধীরে বই বিক্রি পেশা নেশায় পরিনত হয়। ব্যক্তিগত জীবনে আয়াতুল্লাহ দুই সন্তানের জনক। বড় ছেলে ডিপ্লেমা পাস করে চাকরি নিয়েছে। আরেক ছেলে ময়মনসিংহ পলিটেকনিকলে পড়াশোনা করছে। স্ত্রী গৃহিণী। জীবনের হিসাবমতে তার কাছে দুইটা সময় খুব প্রিয় একটি ছিল ছাত্র জীবন অপরটি কর্মজীবন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই নেশার এত ছুটে আসেন মধুপুর বই বিক্রি করতে। শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকা যেন তার প্রিয় কর্মস্থল। জীবনের তিন দশক কাটানোর নানা স্মৃতি ঘিরে আছে। নামাজ খাওয়াদাওয়া এ শহরেই। শহরের সবার পরিচিত এ মানুষটি। রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিদিন ছুটে চলে গাড়িতে গাড়িতে যাত্রীদের নিকট বইয়ের উপকারিতার নানা গল্প বলা এ যেন তার নিত্যদিনের রুটিন ওর্য়াক।
মো. আয়াতুল্লাহ এ প্রতিবেদককে জানান, এক সময় বই বিক্রি কম হলেও এখন প্রতিদিন গড়ে হাজার পনেরশ টাকা বিক্রি করতে পারে। বই বিক্রির টাকায় সংসার চলে। রুটি রোজী যেন বই। জ্ঞানের আলো ছড়াতে ছড়াতে বাকিটা সময় পাড়ি দেয়ার ইচ্ছে তার।
এ পেশায় নেই তার কোন কষ্ট, নেই কোনো অনুসূচনা। বই ফেরিওয়ালা জীবনটা তার কাছে খুব আনন্দের। বড় প্রেরণার।
তিনি আরও জানান, তাকে সবাই বইওয়ালা হিসেবেই চিনে জানে। কি তার নিজ এলাকা। কি আবার মধুপুর শহর। সবাই তাকে একই নামে চিনে জানে।
গাবতলি কলেজের শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, তাকে অনেক বছর ধরে মধুপুরে গাড়িতে ঘুরে ঘুরে বই বিক্রি দেখছেন। একভাবেই প্রতিদিন এসে বই বিক্রি করে বাড়ি ফিরেন।
কনফেকশনারি দোকানদার ওয়াদুদ বলেন, ছোট থেকে দেখে আসছে এবং এখন দেখছেন বই হাতে প্রতিদিন শহরের প্রাণকেন্দ্রে ঘুরে বেড়ান। বিক্রি করেন নানা রকমের বই। মাঝে মধ্যে তার দোকানে এসে বিস্কুট চা খেতে আসে।
জহুর আলী নামের এক লোক জানালেন, অন্য পেশার চেয়ে এ পেশা অনেক ভালো। তার বিক্রিত বই পড়ে অনেকেই বর্ণ শিখে, আরবি শিখে। বই পড়লে মানুষের জ্ঞান বাড়ে। আর যারা খাদ্য দ্রব্যে ভেজাল মিশিয়ে বিক্রি করে তাদের চেয়ে এ লোক অতি উত্তম।
মো. আয়াতুল্লাহর এ পেশা ছাড়া অন্য কিছু মোটেও ভালোলাগে না। রাত পোহালে মনে ছটফট শুরু হয় কখন যাবে তার কর্মস্থলে। দীর্ঘ ৩০ বছর বই বিক্রি করেও তার কোনো ক্লান্তি নেই। লাভ লোকসানের হিসেব নেই। নেই কোনো আপসোস, নেই কোনো অনুসূচনা। জীবনের বাকিটা পথ বইয়ের ফেরিওয়ালা হিসেবে কাটিয়ে দিতে চান সাদা মাঠা শান্ত ভদ্র স্বভাবের এই মানুষটি।
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
জীবন খাতার ৩০টি বছর হাতে বই নিয়ে কাটাচ্ছে। চারদিকে গাড়ির শব্দ। লোকাল কিংবা দূর পাল্লা ছোট কিংবা বড় সব বাহনে সবার কাছে ছুটে চলা। হাতে রকমারি বই। বই পড়ার আহ্বান জানান দেয় মার্জিত নরম কন্ঠে। তুলে ধরেন বইয়ের গুরুত্ব প্রয়োজনীয়তা। নামাজ শিক্ষা, শিশুদের বই, গল্পসহ নানা ধরেন বই। বাসস্ট্যান্ডের এপার ওপার করে নিত্য সন্ধ্যা নামে। দিন শেষে বই বিক্রির অর্থে পরিবারের আহার আর মৌলিক মানবিক চাহিদার যোগান। এভাবেই তার জীবন পাতার ৩০টি বছর পেড়িয়ে গেছে নিভৃতেই। নানা চড়াই উৎড়াই পাড়ি দিতে সেই কচি দেহ শরীরের মানুষটি আজ পাকা হাঁড় মাংসে বৃদ্ধের পথ ধরেছে। তবুও থামেনি তার জ্ঞান বিপনি ফেরিওয়ালা জীবন। কর্ম পেশাকে শ্রদ্ধা ভালোবাসায় জড়িয়ে নিয়েছে জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্বন হিসেবে। বলছিলাম বইয়ের ফেরিওয়ালা মো. আয়াতুল্লাহর কথা। সে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার বানাড় পাড় বাসুরি গ্রামের অধিবাসী। তার বাবার নাম মৃত জবেদ আলী। মা মৃত জোবেদা খাতুন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে টাঙ্গাইলের মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে বসে কথা হয় তার সঙ্গে। গল্পে গল্পে জানা গেল তার বই বিক্রি করে সংসার চালানোর ৩০ বছরের মজার কথা। তখন তিনি ছাত্র। তার বাবা তৎকালীন সময়ে স্থানীয় কাশেমপুর ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে। এ নির্বাচনে তার বাবার জমিজমা সম্পদ হ্রাস পায়। সে থেকে অভাবের কারণে আর পড়াশোনা শেষ হয়ে উঠেনি। কি করবে? মজুরি কাজও করতে পারে না! রিকশাও চালাতে লোকলজ্জা। ভেবে চিন্তে মধুপুর এসে বাংলাদেশ লাইব্রেরিতে যোগাযোগ করে। প্রথমে ইংরেজি অক্সফোর্ট ডিক্সেনারী হাতে নিয়ে ঘুরে ঘুরে বিক্রি শুরু করে। পরে নামাজ শিক্ষা, শিশুদের বইসহ অন্যান্য বই বিক্রি করতে থাকে। এভাবে ধীরে ধীরে বই বিক্রি পেশা নেশায় পরিনত হয়। ব্যক্তিগত জীবনে আয়াতুল্লাহ দুই সন্তানের জনক। বড় ছেলে ডিপ্লেমা পাস করে চাকরি নিয়েছে। আরেক ছেলে ময়মনসিংহ পলিটেকনিকলে পড়াশোনা করছে। স্ত্রী গৃহিণী। জীবনের হিসাবমতে তার কাছে দুইটা সময় খুব প্রিয় একটি ছিল ছাত্র জীবন অপরটি কর্মজীবন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই নেশার এত ছুটে আসেন মধুপুর বই বিক্রি করতে। শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকা যেন তার প্রিয় কর্মস্থল। জীবনের তিন দশক কাটানোর নানা স্মৃতি ঘিরে আছে। নামাজ খাওয়াদাওয়া এ শহরেই। শহরের সবার পরিচিত এ মানুষটি। রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিদিন ছুটে চলে গাড়িতে গাড়িতে যাত্রীদের নিকট বইয়ের উপকারিতার নানা গল্প বলা এ যেন তার নিত্যদিনের রুটিন ওর্য়াক।
মো. আয়াতুল্লাহ এ প্রতিবেদককে জানান, এক সময় বই বিক্রি কম হলেও এখন প্রতিদিন গড়ে হাজার পনেরশ টাকা বিক্রি করতে পারে। বই বিক্রির টাকায় সংসার চলে। রুটি রোজী যেন বই। জ্ঞানের আলো ছড়াতে ছড়াতে বাকিটা সময় পাড়ি দেয়ার ইচ্ছে তার।
এ পেশায় নেই তার কোন কষ্ট, নেই কোনো অনুসূচনা। বই ফেরিওয়ালা জীবনটা তার কাছে খুব আনন্দের। বড় প্রেরণার।
তিনি আরও জানান, তাকে সবাই বইওয়ালা হিসেবেই চিনে জানে। কি তার নিজ এলাকা। কি আবার মধুপুর শহর। সবাই তাকে একই নামে চিনে জানে।
গাবতলি কলেজের শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, তাকে অনেক বছর ধরে মধুপুরে গাড়িতে ঘুরে ঘুরে বই বিক্রি দেখছেন। একভাবেই প্রতিদিন এসে বই বিক্রি করে বাড়ি ফিরেন।
কনফেকশনারি দোকানদার ওয়াদুদ বলেন, ছোট থেকে দেখে আসছে এবং এখন দেখছেন বই হাতে প্রতিদিন শহরের প্রাণকেন্দ্রে ঘুরে বেড়ান। বিক্রি করেন নানা রকমের বই। মাঝে মধ্যে তার দোকানে এসে বিস্কুট চা খেতে আসে।
জহুর আলী নামের এক লোক জানালেন, অন্য পেশার চেয়ে এ পেশা অনেক ভালো। তার বিক্রিত বই পড়ে অনেকেই বর্ণ শিখে, আরবি শিখে। বই পড়লে মানুষের জ্ঞান বাড়ে। আর যারা খাদ্য দ্রব্যে ভেজাল মিশিয়ে বিক্রি করে তাদের চেয়ে এ লোক অতি উত্তম।
মো. আয়াতুল্লাহর এ পেশা ছাড়া অন্য কিছু মোটেও ভালোলাগে না। রাত পোহালে মনে ছটফট শুরু হয় কখন যাবে তার কর্মস্থলে। দীর্ঘ ৩০ বছর বই বিক্রি করেও তার কোনো ক্লান্তি নেই। লাভ লোকসানের হিসেব নেই। নেই কোনো আপসোস, নেই কোনো অনুসূচনা। জীবনের বাকিটা পথ বইয়ের ফেরিওয়ালা হিসেবে কাটিয়ে দিতে চান সাদা মাঠা শান্ত ভদ্র স্বভাবের এই মানুষটি।