মানিকগঞ্জে বর্তমানে ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। বৃহত্তম পদ্মা-যমুনা নদীতে মিলছে না কাক্সিক্ষত ইলিশ। প্রতিদিন শত শত জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে গেলে ফিরছেন হতাশ হয়ে। তাদের জালে উঠে আসছে ২-৪টি ছোট আকারের ইলিশ মিললেও দাম আকাশচুম্মী। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে ইলিশ। এতে জেলেরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে হতাশ হয়ে পরেছে। অনেকে আর্থিক সংকটে পেশা বদলাচ্ছে।
জানা গেছে, মানিকগঞ্জের পদ্মা-যমুনা নদীতে এক সময়ে প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পরতো। কিন্তু চলতি বছরে নদীতে মাছ একেবারে কমে গেছে। জেলেদের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। দিনভর পরিশ্রম করে নূন্যতম খরচ তুলতে পারছেন না তারা। বর্তমানে নদীতে যে ইলিশ মিলছে তা বেশিরভাগই ১৫০ গ্রাম থেকে ২০০ গ্রাম। বড় আকারের ইলিশ মিলছে না। তবে আহরন কম হলেও মানিকগঞ্জ ও শিবালয় আরদে পিস, হালি কেজিতে বিক্রি হয় ইলিশ। প্রতিটি ঘাটে জেলেরা নদী থেকে সামান্য ইলিশ মাছ ধরে ঘাটের আড়তদারদের কাছে রাখে। পরে উম্মুক্তভাবে মাছ বিক্রি হয়। এবার নদীতে মাছ না থাকায় তারা হতাশ হয়ে পরেছে।
শিবালয় উপজেলা জফিরগঞ্জ গ্রামের অমল হালদার বলেন, এক সময়ে এই আরিচা পদ্মা নদীতে ইলিশের ভরপুর ছিল। সন্ধ্যার পর থেকে আমরা জাল দিয়ে কেজি কেজি মাছ ধরেছি। সকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রয় করেছি। অনেক টাকা রোজগার হতো। জেলে পাড়ার প্রতিটি বাড়িতে আনন্দ উদ্দীপনা থাকতো। কিন্তু কয়েক বছর যাবত নদীতে মাছ ধরছে না। বর্তমানে সারা রাত জাল ফেলেও অনেক সময়ে একটা মাছ পাওয়া যায় না। জ্বালানি তেল, বরফ, খাবারসহ দিন রাতে প্রায় প্রতিদিন ১৫০০ টাকা খরচ হয়। রোজগার একে বারে নেই বললেই চলে। দুই চারটি পাওয়া গেলে দাম দিন দিন চড়া হচ্ছে। ইলিশের মৌসুমে আসি ৪-৫ জন জেলে রাখি। এবারও রেখেছিলাম। কিন্তু করচের তুলনায় মাছ না পাওয়ায় তাদের ছাটাই করে দিয়েছি। মানিকগঞ্জ, শিবালয়, হরিরামপুর দৌলতপুর হাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ২৫০-৩০০ গ্রাম প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। ৪০০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। দাম বৃদ্ধি হবার কারণে মধ্যবিত্ত ও নি¤œ আয়ের লোকজন ইলিশ কিনতে পারছেন না।
শিবালয়ের ইলিশ মাছ ব্যবসায়ী যাদপ হালদার বলেন, আমরা চাহিদা অনুযায়ী মাছ পাচ্ছি না। জেলেরা ইলিশ ধরতে নদীতে যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু তাদের জালে ধরছে না। ফলে বাজারে মাছের সংকট দেখা দিচ্ছে। তাও দাম বেড়েছে কয়েকগুণ।
ট্রলার মালেক আজগর আলী বলেন, পদ্মা-যমুনা গভীর নদীতে জাল ফেলে মাছ পাওয়া যাচ্ছেনা। ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞার পরে দফায় দফায় বৈরি আবহাওয়ার কবলে পরেছি। ফলে আমরা দিশেহারা হয়ে পরেছি। তবে আবহাওয়া ও পরিবেশ ভালো থাকলে সামনে মাসে নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া যাবে। এদিকে, মৎস্য ব্যবসায়ীসহ একাধিক জেলেরা বলেন, পদ্মা ও যমুনা নদীতে বালুচর জমে নাব্যতা হারিয়েছে। এ ছাড়া নদীর প্রবাহ কমে যাওয়া ও অবৈধ জালের ব্যবহার ইলিশের আবাসস্থল নষ্ট করে ফেলেছে। এসব কারণে প্রজননের সময় মাছ নদীতে আসতে পারে না। ফলে ইলিশের বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে না।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাইফুর রহমান জানান, ইলিশ প্রজনন ও আবাস্থল যাতে নষ্ট না হয়। সে বিষয়ে বিভিন্ন জেলেদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। মাছ সঠিক পথে চলাচলে বাঁধা সৃষ্টিকারী বিষয়ে আমরা কাজ করছি। এ ছাড়া জেলেদের মাঝে প্রচারনা ও কর্মসংস্থান ও সচেতনতা বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ইলিশের সময়ে উপজেলা প্রশাসন ও গঠিত টাস্ক ফোর্স কমিটি মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। অবৈধ মৎস্য শিকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে জনগনকে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
শনিবার, ০২ আগস্ট ২০২৫
মানিকগঞ্জে বর্তমানে ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। বৃহত্তম পদ্মা-যমুনা নদীতে মিলছে না কাক্সিক্ষত ইলিশ। প্রতিদিন শত শত জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে গেলে ফিরছেন হতাশ হয়ে। তাদের জালে উঠে আসছে ২-৪টি ছোট আকারের ইলিশ মিললেও দাম আকাশচুম্মী। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে ইলিশ। এতে জেলেরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে হতাশ হয়ে পরেছে। অনেকে আর্থিক সংকটে পেশা বদলাচ্ছে।
জানা গেছে, মানিকগঞ্জের পদ্মা-যমুনা নদীতে এক সময়ে প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পরতো। কিন্তু চলতি বছরে নদীতে মাছ একেবারে কমে গেছে। জেলেদের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। দিনভর পরিশ্রম করে নূন্যতম খরচ তুলতে পারছেন না তারা। বর্তমানে নদীতে যে ইলিশ মিলছে তা বেশিরভাগই ১৫০ গ্রাম থেকে ২০০ গ্রাম। বড় আকারের ইলিশ মিলছে না। তবে আহরন কম হলেও মানিকগঞ্জ ও শিবালয় আরদে পিস, হালি কেজিতে বিক্রি হয় ইলিশ। প্রতিটি ঘাটে জেলেরা নদী থেকে সামান্য ইলিশ মাছ ধরে ঘাটের আড়তদারদের কাছে রাখে। পরে উম্মুক্তভাবে মাছ বিক্রি হয়। এবার নদীতে মাছ না থাকায় তারা হতাশ হয়ে পরেছে।
শিবালয় উপজেলা জফিরগঞ্জ গ্রামের অমল হালদার বলেন, এক সময়ে এই আরিচা পদ্মা নদীতে ইলিশের ভরপুর ছিল। সন্ধ্যার পর থেকে আমরা জাল দিয়ে কেজি কেজি মাছ ধরেছি। সকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রয় করেছি। অনেক টাকা রোজগার হতো। জেলে পাড়ার প্রতিটি বাড়িতে আনন্দ উদ্দীপনা থাকতো। কিন্তু কয়েক বছর যাবত নদীতে মাছ ধরছে না। বর্তমানে সারা রাত জাল ফেলেও অনেক সময়ে একটা মাছ পাওয়া যায় না। জ্বালানি তেল, বরফ, খাবারসহ দিন রাতে প্রায় প্রতিদিন ১৫০০ টাকা খরচ হয়। রোজগার একে বারে নেই বললেই চলে। দুই চারটি পাওয়া গেলে দাম দিন দিন চড়া হচ্ছে। ইলিশের মৌসুমে আসি ৪-৫ জন জেলে রাখি। এবারও রেখেছিলাম। কিন্তু করচের তুলনায় মাছ না পাওয়ায় তাদের ছাটাই করে দিয়েছি। মানিকগঞ্জ, শিবালয়, হরিরামপুর দৌলতপুর হাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ২৫০-৩০০ গ্রাম প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। ৪০০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। দাম বৃদ্ধি হবার কারণে মধ্যবিত্ত ও নি¤œ আয়ের লোকজন ইলিশ কিনতে পারছেন না।
শিবালয়ের ইলিশ মাছ ব্যবসায়ী যাদপ হালদার বলেন, আমরা চাহিদা অনুযায়ী মাছ পাচ্ছি না। জেলেরা ইলিশ ধরতে নদীতে যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু তাদের জালে ধরছে না। ফলে বাজারে মাছের সংকট দেখা দিচ্ছে। তাও দাম বেড়েছে কয়েকগুণ।
ট্রলার মালেক আজগর আলী বলেন, পদ্মা-যমুনা গভীর নদীতে জাল ফেলে মাছ পাওয়া যাচ্ছেনা। ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞার পরে দফায় দফায় বৈরি আবহাওয়ার কবলে পরেছি। ফলে আমরা দিশেহারা হয়ে পরেছি। তবে আবহাওয়া ও পরিবেশ ভালো থাকলে সামনে মাসে নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া যাবে। এদিকে, মৎস্য ব্যবসায়ীসহ একাধিক জেলেরা বলেন, পদ্মা ও যমুনা নদীতে বালুচর জমে নাব্যতা হারিয়েছে। এ ছাড়া নদীর প্রবাহ কমে যাওয়া ও অবৈধ জালের ব্যবহার ইলিশের আবাসস্থল নষ্ট করে ফেলেছে। এসব কারণে প্রজননের সময় মাছ নদীতে আসতে পারে না। ফলে ইলিশের বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে না।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাইফুর রহমান জানান, ইলিশ প্রজনন ও আবাস্থল যাতে নষ্ট না হয়। সে বিষয়ে বিভিন্ন জেলেদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। মাছ সঠিক পথে চলাচলে বাঁধা সৃষ্টিকারী বিষয়ে আমরা কাজ করছি। এ ছাড়া জেলেদের মাঝে প্রচারনা ও কর্মসংস্থান ও সচেতনতা বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ইলিশের সময়ে উপজেলা প্রশাসন ও গঠিত টাস্ক ফোর্স কমিটি মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। অবৈধ মৎস্য শিকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে জনগনকে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।